অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল এবং জোয়ারের পানিতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মৎস্য খামার ও ফসলি জমির সাড়ে ১৪ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে মৎস্য খাতে ৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং কৃষি খাতে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। যদিও সরকারি হিসাবের সঙ্গে মাঠের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে বলে ধারণা কৃষকের।
সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি বিভাগ কর্তৃক চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর চট্টগ্রামের উপপরিচালক বরাবরে পাঠানো প্রতিবেদন এবং উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল এবং জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৮২০ কৃষি পরিবার। মোট রোপা আউশ ৫ হাজার ৩০ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৫০ হেক্টর। শরৎকালীন সবজি মোট ৩০৫ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৫০ হেক্টর। রোপা আমনের বীজতলা ২৩৪ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮০ হেক্টর এবং রোপা আমন ৩০ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০ হেক্টর। টাকার অঙ্কে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখ ৮শ টাকা।
অন্যদিকে, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সীতাকুণ্ডে মোট পুকুর রয়েছে ৬ হাজার ২০৪টি। এর মধ্যে ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫শ টি। সব মিলিয়ে ২৩৪ হেক্টর পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
উপজেলার বারৈয়ারঢালা থেকে সলিমপুর পর্যন্ত ৯ ইউনিয়ন এবং ১ পৌরসভায় দীর্ঘদিন পানি জমে থাকায় গ্রীষ্মকালীন শিম, ঢেড়স, তিতা করলা, ঝিঙে ও বরবটির গাছ পচে যাচ্ছে। রোপা আমনের বীজতলার চারা এবং টমেটোর ক্ষেত একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। যদিও কৃষকরা মাঠ আবার প্রস্তুত করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
টেরিয়াইল এলাকার কৃষক ইকবাল হোসেন বলেন, তিনি তার ৮০ শতক জমিতে ৭০ হাজার টাকা খরচ করে ঢ্যাঁড়স ও গ্রীষ্মকালীন শিম লাগিয়েছিলেন। পাহাড়ি ঢলে জমে থাকা পানিতে সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কী করবেন বুঝতে পারছেন না।
সৈয়দপুর ইউনিয়নের শেখের হাট এলাকার কৃষক নুরুল আবছার বলেন, তিনবার বীজতলা করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু বর্ষার পানিতে ডুবে গেছে। আমাদের ফসলি জমি মনে হয় এবার পড়ে থাকবে। সৈয়দপুর ইউনিয়নের মধ্যে প্রতিবছর বর্ষায় একই চিত্র থাকে। কারণ বেশ কয়েক বছর ধরে সৈয়দপুর ইউনিয়নের উপকূল এলাকার দুটি স্লুইসগেটই পলি জমে অকেজো হয়ে রয়েছে। যার কারণে পানি প্রবাহে বাধার পড়েছে। এতে চাষের জমিতে জলাবদ্ধতা হয়ে যায়। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
তিনি বলেন, স্লুইসগেট যতদিন ঠিক হবে না ততদিন এলাকার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, এবারের অতি বৃষ্টির পাশাপাশি সাগরের পানির উচ্চতাও সাড়ে ৫ ফুটের মতো বেড়ে যায়। জোয়ারের ঢেউয়ের ধাক্কায় বাঁশবাড়িয়া ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ঘোড়ামারা এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ও ফসলের মাঠে লবণাক্ত পানি ঢুকেছে। সৈয়দপুর এলাকায় ঢলের জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচার জন্য রিং বাঁধ কেটে দিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ফলে সেখানেও কৃষিজমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকেছে। অন্যদিকে যুক্ত হয়েছে পাহাড়ি ঢল।
বাঁশবাড়িয়া এলাকার কৃষক আইয়ুব আলী জানান, তিনি তার প্রায় ৭০ শতক জমিতে ৬০ হাজার টাকা খরচ করে গ্রীষ্মকালীন শিম ও তিতা করলা লাগিয়েছিলেন। কিন্তু পাহাড়ি ঢল সাগরের জমে থাকা পানিতে সব নষ্ট হয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, উপজেলার বারৈয়ারঢালা, সৈয়দপুর, মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড ও পৌর সদরের আংশিক এলাকার কৃষিজমি পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে এসব এলাকার কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। যদি সরকারি সহযোগিতা আসে, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।
অন্যদিকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, টানা বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুকুর ডুবে মাছ চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে উপজেলার উত্তর অংশে পুকুরগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তারা মাঠপর্যায়ে গিয়ে একটা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন বলে জানান তিনি।


























