সম্ভবত লিওনেল মেসিই এই ধরণীর প্রথম এবং একমাত্র ফুটবলার, যাকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনেক ব্যক্তি ও সংবাদমাধ্যম যেসব নেতিবাচক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, সেগুলোর বেশিরভাগই ভুল বা মিথ্যে প্রমাণ করেছেন মেসি। সেগুলোর মধ্যে শীর্ষ পাঁচটি নিয়ে আলোচনা করা যাক।
* ভবিষ্যদ্বাণী-১ : ২০১৫ সালে কিংবদন্তী স্কটিশ কোচ স্যার এ্যালেক্স ফার্গুসন মন্তব্য করেছিলেন, ‘মেসি বার্সেলোনা ছাড়া অন্য কোন ক্লাবের হয়ে কিছু জিততে পারবে না।’
# মিথ্যে প্রমাণ : বার্সা ছেড়ে মেসি ফরাসি ক্লাব পিএসজিতে ৩টি এবং মার্কিন ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে (বিশ্বের ৮৭৫ নম্বর র্যাংকধারী ক্লাব, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ফুটবল ক্লাবগুলোর একদম তলানিতে) এখন পর্যন্ত ২টি শিরোপা জিতেছেন।
* ভবিষ্যদ্বাণী-২ : ফ্রান্সের সাবেক কিংবদন্তী ফুটবলার মিশেল প্লাতিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘জাভি এবং ইনিয়েস্তা ছাড়া মেসি ঠিকমতো খেলতে পারবে না এবং কখনও সফল হবে না।’
# মিথ্যে প্রমাণ : ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ মৌসুমের পরিসংখ্যান : জাভি-ইনিয়েস্তার সঙ্গে ১৫৩ ম্যাচ খেলে ১৫৯ গোল, ৬২ এ্যাসিস্ট; ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ মৌসুমে শুধু ইনিয়েস্তাকে নিয়ে ১৫৫ ম্যাচ খেলে ১৪০ গোল, ৬৪ এ্যাসিস্ট এবং ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ মৌসুমে জাভি-ইনিয়েস্তাকে ছাড়া ১৪১ ম্যাচ খেলে ১২০ গোল ও ৬৩ এ্যাসিস্ট করেছিলেন মেসি। এ পরিসংখ্যানে এটা সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে জাভি-ইনিয়েস্তাকে ছাড়া খেলেও মেসির জাদুকরি পারফর্মেন্সে মোটেও ভাটা পড়েনি।
* ভবিষ্যদ্বাণী-৩ : ‘মেসি হচ্ছে এক ক্লাবের (বার্সেলোনা) প্লেয়ার (বিভিন্ন পশ্চিমা গণমাধ্যম)।
# মিথ্যে প্রমাণ : স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা ছেড়ে মেসি এখন পর্যন্ত আরও দুটি ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। এবং ক্যারিয়ারে যতগুলো ক্লাব-ট্রফি জিতেছেন (৪০টি), সেগুলোর ৬টিই জিতেছেন বার্সার ছাড়ার পর। কাজেই মেসি বার্সা বাদে অন্য কোন ক্লাবে সফল হবেন না, এই ধারণাও ভুল প্রমাণ করেছেন এলএম টেন।
* ভবিষ্যদ্বাণী-৪ : ‘বার্সার হয়ে মেসি প্রচুর ট্রফি জিতেছে, কারণ ওই দলে মেসির সঙ্গে জাভি-ইনিয়স্তা ছিল। কিন্তু আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে তারা না থাকায় মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে কিছু জিততে পারেনি। আগামীতেও পারবে না’ (বিভিন্ন পশ্চিমা গণমাধ্যম)।
# মিথ্যে প্রমাণ : তিনটি কোপা ও একটি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও হেরেছিলেন মেসি। অন্যদিকে তার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ এবং উয়েফা নেশন্স লিগ জিতে সেরা ফুটবলারের লড়াইয়ে এগিয়ে যান অনেকটাই। কিন্তু ২০২১ সালে কোপা আমেরিকা ও ২০২২ সালে ফিনালিসিমা জিতে মেসি এই অপবাদ গা থেকে ঝেড়ে ফেলতে সক্ষম হন। এরপর ২০২৪ সালে জেতেন আরেকটি কোপার শিরোপা।
* ভবিষ্যদ্বাণী-৫ : ‘জাতীয় দলের হয়ে ট্রফি (কোপা আমেরিকা) জিতলেও এটা ইউরোর চেয়ে অনেক কম মর্যাদাপূর্ণ এবং কম পরিশ্রমেই এটা লাভ করা যায়। তাছাড়া সবচেয়ে বড় মর্যাদাপূর্ণ ট্রফি হচ্ছে বিশ্বকাপ, যা মেসি কখনই জিততে পারবেন না। সেই সামর্থ্য তার নেই’ (বিভিন্ন পশ্চিমা গণমাধ্যম)।
# মিথ্যে প্রমাণ : ২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপ জিতে এই ভবিষ্যদ্বাণীকেও মিথ্যে প্রমাণ করেন মেসি। ৭ ম্যাচে ৭ গোল, ৩ এসিস্ট, টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার, ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার হিসেবে গ্রুপ পর্ব থেকে ফাইনাল পর্যন্ত প্রতিটি রাউন্ডেই গোল করাসহ একাধিক বিশ্বরেকর্ড করেন।
মেসির একসময়ের বার্সার স্প্যানিশ সতীর্থ সেস ফ্যাব্রেগাস বলেছেন, ‘মেসিকে নিয়ে আজ পর্যন্ত যেসব নেতিবাচক ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, সেগুলো সবই ভুল প্রমাণ করেছে লিও। কাজেই তাকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কিছু বলতে গেলে সবাইকে দ্বিতীয়বার ভাবা উচিত।’
আরকে/সবা
শিরোনাম
মেসিই সঠিক, বাকিরা বেঠিক!
জনপ্রিয় সংবাদ


























