০৮:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নারায়ণগঞ্জে মন্দির রক্ষার দাবিতে  ডিসি এসপিকে স্মারকলিপি

  • সবুজ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৫:১৯:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৩
  • 108

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১০ নং ওয়ার্ডের শতবর্ষী পুরাতন নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের অভ্যন্তরে অবস্থিত দুর্গা মন্দির রক্ষার দাবিতে  নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল হক ও পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলে বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলস দুর্গা মন্দির পরিচালনা পর্ষদ। বৃহস্পতিবার ৫ অক্টোবর স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় নিট কনসার্ন গ্রুপ জোরপূর্বক দুর্গা মন্দির, পুকুর ও মাঠের জায়গা দখল করেছে।
নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলস দুর্গা মন্দির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বকুল বিশ^াস ও সাধারণ সম্পাদক তরুন বেগী সাক্ষরিত স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১০ নং ওয়ার্ডের শতবর্ষী পুরাতন নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের অভ্যন্তরে দুর্গা মন্দির, পুকুর ও মাঠ ২০১২ সাল থেকে শিল্প প্রতিষ্ঠান নিট কনসার্ন গ্রুপ জোরপূর্বক দখলের পায়তারা করছে। মিলটি দখলের পাশাপাশি চারিদিকে বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করে সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তবৃন্দের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে ভক্তবৃন্দের পুজা অর্চনাসহ সকল ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বন্ধ করে রেখেছে। নিট কনসার্ন গ্রুপ অবৈধভাবে মন্দিরের ধৌতকাজে ব্যবহৃত পুকুর, প্রতিমা বিসর্জনের ঘাট এবং মন্দির প্রাঙ্গন দখলের চেষ্টা এবং ভক্তবৃন্দের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে রেখেছে। চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারী এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে অবহিত করতে একটি দরখাস্ত দেয়া হয়েছিল। গত ১৭ জুন প্রার্থনার স্থানটির স্মৃতি চিহ্ন গুড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে বুলড্রোজার দিয়ে ভাংচুর করে স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে।
স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়, লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলসটি প্রতিষ্ঠানর পর থেকেই মিলের ভেতরে প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে এলাকাবাসী ও ভক্তবৃন্দরা দূর্গাপুজা, কালীপুজা, লক্ষ্মীপুজাসহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান করে আসছিল। ১৯৭২ সালে মিলটি রাষ্ট্রীয়করণ করা হলেও ভক্তবৃন্দরা নির্বিঘেœ পুজা অর্চনা করেছেন। পরবর্তীতে ২০০০ সাল মিলের মালিকানা শ্রমিক কর্মচারীদের নিকট হস্তান্তরের পরেও নির্বিঘেœ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সকল অনুষ্ঠান এই মন্দিরে করেছেন। কিন্তু ২০১২ সালে কয়েকজন শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার ক্রয় করেছে দাবি করে লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলসটির অধিকাংশ দখল করে নেয় নিট কনসার্ন গ্রুপ। এরপর থেকে বিভিন্নভাবে নীট কনসার্ন গ্রুপ হিন্দুদের মন্দিরের প্রবেশ ও নির্বিঘেœ পুজা অর্চনায় বাধা সৃষ্টি করছে। প্রতিবছর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সহায়তায় পুজা করতে হচ্ছে। এবারও পুজার সময় ঘনিয়ে আসলেও মন্দিরের ভক্তবৃন্দের প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছে। মন্দিরটি ভেঙ্গে দেয়ার ফলে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই মন্দিরে নির্বিঘেœ ভক্তবৃন্দের প্রবেশ ও মন্দির সংস্তার ও পুজা আয়োজনে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সহযোগিতা কামনা করেছেন মিলটির মিলস দুর্গা মন্দির পরিচালনা পর্ষদ।
স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ২০০০ সালে সরকার মিলটি শ্রমিকদের কাছে হস্তান্তরের সময় মসজিদ, মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জলাশয় এর মালিকানা সংরক্ষণ করেছেন। অবশিষ্ট জমির মালিকানা শ্রমিকদের শেয়ারহোল্ডার করে হস্তান্তর করেছে। তাই সংরক্ষিত জায়গা ক্রয়-বিক্রয়ের সুযোগ নেই। নিট কনসার্ন ক্রয়কৃত শেয়ারের মালিকানার সঙ্গে মন্দিরের জমি, পুকুর ও মাঠের সম্পর্ক নেই। নিট কনসার্ন গ্রুপ অবৈধভাবে জোরপূর্বক মন্দিরের জায়গা দখলের চেষ্টা বন্ধে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ একান্ত আবশ্যক বলে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য গত ১৮ জুন মিলটির অভ্যন্তরে মন্দিরের অবকাঠামো ভেঙ্গে ফেলার খবর পেয়ে ছুটে যান পুজা উদযাপন পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য সচিব শিখন সরকার শিপন, মহানগর কমিটির সদস্য সচিব সুশীল দাস, প্রদীপ দাস, রঞ্জিত মন্ডলসহ কয়েকজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী নেতা। এসময় পুজা উদযাপন পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর কমিটির নেতাদের সঙ্গে নিট কনসার্ন গ্রুপের পরিচালক মনির হোসেন মনা অসদাচরণ করেন এবং পুজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সামনেই শেয়ারহোল্ডারদের হুমকী দিয়ে বলেন, ‘গ্যানজাম লাগাইয়েন না। যদি জিদ উঠে তাইলে বাহির থেকে লোক খবর দিমু। সব পিডাইয়া ভাইঙ্গা দিমু।’
গত ১৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন, দেবোত্তর বোর্ড ও হিন্দু ফাউন্ডেশন বাস্তবায়নের দাবীতে পূজা উদযাপন পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত এক সমাবেশে হিন্দু নেতারা লক্ষ¥ীনারায়ণ কটন মিল দখল ও মিলের শতবর্ষী পুরনো মন্দির ভেঙে ফেলার অভিযোগ তুলে নিট কনসার্নের বিরুদ্ধে কথা বলেন। পাশাপাশি এ সময় নীট কনসার্ন গ্রুপকে ভুমিদস্যু উল্লেখ করে তারা পুলিশ সুপারকে মামলা দায়েরের সাথে দখলকারীদের আইনের আওতায় আনারও দাবি করেন। একই সাথে লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলে পূজা বন্ধ থাকলে নারায়ণগঞ্জের সমস্ত পূজা বন্ধ থাকবে বলেও হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন তারা।
গত ১ অক্টোবর নিট কনসার্ন গ্রুপের দখলদারিত্ব থেকে ঐতিহ্যবাহী নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলটির সম্পদ রক্ষার দাবিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করে আন্দোলনরত শেয়ারহোল্ডাররা।
সর্বশেষ ৪ অক্টোবর নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের ভেতরে ভেঙ্গে ফেলা মন্দির পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, মিলটির ভেতরের মন্দিরে ভেঙ্গে এটা সাম্প্রদায়িক উস্কানী দেয়ার সামিল বলে আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি। আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে ভূমিখেকোরা যা খুশি করতে পারবেনা। আমরা পরিস্কার ভাষায় বলে দিতে চাই নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের ভেতরে আগে যেখানে পুজা হতো সেখানেই পুজা হবে আর যদি সেটা না হয় তাহলে অধিকার কিভাবে আদায় করতে হয় সেটা আমরা জানি। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ডি এন চ্যাটার্জি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মন্ডল, কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক রজত কুমার সুর রাজু, পুজা উদযাপন পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সেক্রেটারী শিখন সরকার শিপন, মহানগর কমিটির সেক্রেটারী সুশীল দাস, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের জেলা সভাপতি প্রদীপ দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল হক ও পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ।
পুজা উদযাপন পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সেক্রেটারী শিখন সরকার শিপন বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের ভেতরে মন্দিরের স্থান পরিদর্শন করেছেন ও সেখানকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। পরে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করি। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার আমাদেরকে আশ^স্ত করেছেন নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের ভেতরে শান্তিপূর্ণভাবে পুজা উদযাপনের জন্য যা কিছু করণীয় সেটা করবেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

নারায়ণগঞ্জে মন্দির রক্ষার দাবিতে  ডিসি এসপিকে স্মারকলিপি

আপডেট সময় : ০৫:১৯:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৩

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১০ নং ওয়ার্ডের শতবর্ষী পুরাতন নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের অভ্যন্তরে অবস্থিত দুর্গা মন্দির রক্ষার দাবিতে  নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল হক ও পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলে বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলস দুর্গা মন্দির পরিচালনা পর্ষদ। বৃহস্পতিবার ৫ অক্টোবর স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় নিট কনসার্ন গ্রুপ জোরপূর্বক দুর্গা মন্দির, পুকুর ও মাঠের জায়গা দখল করেছে।
নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলস দুর্গা মন্দির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বকুল বিশ^াস ও সাধারণ সম্পাদক তরুন বেগী সাক্ষরিত স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১০ নং ওয়ার্ডের শতবর্ষী পুরাতন নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের অভ্যন্তরে দুর্গা মন্দির, পুকুর ও মাঠ ২০১২ সাল থেকে শিল্প প্রতিষ্ঠান নিট কনসার্ন গ্রুপ জোরপূর্বক দখলের পায়তারা করছে। মিলটি দখলের পাশাপাশি চারিদিকে বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করে সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তবৃন্দের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে ভক্তবৃন্দের পুজা অর্চনাসহ সকল ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বন্ধ করে রেখেছে। নিট কনসার্ন গ্রুপ অবৈধভাবে মন্দিরের ধৌতকাজে ব্যবহৃত পুকুর, প্রতিমা বিসর্জনের ঘাট এবং মন্দির প্রাঙ্গন দখলের চেষ্টা এবং ভক্তবৃন্দের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে রেখেছে। চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারী এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে অবহিত করতে একটি দরখাস্ত দেয়া হয়েছিল। গত ১৭ জুন প্রার্থনার স্থানটির স্মৃতি চিহ্ন গুড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে বুলড্রোজার দিয়ে ভাংচুর করে স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে।
স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়, লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলসটি প্রতিষ্ঠানর পর থেকেই মিলের ভেতরে প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে এলাকাবাসী ও ভক্তবৃন্দরা দূর্গাপুজা, কালীপুজা, লক্ষ্মীপুজাসহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান করে আসছিল। ১৯৭২ সালে মিলটি রাষ্ট্রীয়করণ করা হলেও ভক্তবৃন্দরা নির্বিঘেœ পুজা অর্চনা করেছেন। পরবর্তীতে ২০০০ সাল মিলের মালিকানা শ্রমিক কর্মচারীদের নিকট হস্তান্তরের পরেও নির্বিঘেœ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সকল অনুষ্ঠান এই মন্দিরে করেছেন। কিন্তু ২০১২ সালে কয়েকজন শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার ক্রয় করেছে দাবি করে লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলসটির অধিকাংশ দখল করে নেয় নিট কনসার্ন গ্রুপ। এরপর থেকে বিভিন্নভাবে নীট কনসার্ন গ্রুপ হিন্দুদের মন্দিরের প্রবেশ ও নির্বিঘেœ পুজা অর্চনায় বাধা সৃষ্টি করছে। প্রতিবছর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সহায়তায় পুজা করতে হচ্ছে। এবারও পুজার সময় ঘনিয়ে আসলেও মন্দিরের ভক্তবৃন্দের প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছে। মন্দিরটি ভেঙ্গে দেয়ার ফলে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই মন্দিরে নির্বিঘেœ ভক্তবৃন্দের প্রবেশ ও মন্দির সংস্তার ও পুজা আয়োজনে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সহযোগিতা কামনা করেছেন মিলটির মিলস দুর্গা মন্দির পরিচালনা পর্ষদ।
স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ২০০০ সালে সরকার মিলটি শ্রমিকদের কাছে হস্তান্তরের সময় মসজিদ, মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জলাশয় এর মালিকানা সংরক্ষণ করেছেন। অবশিষ্ট জমির মালিকানা শ্রমিকদের শেয়ারহোল্ডার করে হস্তান্তর করেছে। তাই সংরক্ষিত জায়গা ক্রয়-বিক্রয়ের সুযোগ নেই। নিট কনসার্ন ক্রয়কৃত শেয়ারের মালিকানার সঙ্গে মন্দিরের জমি, পুকুর ও মাঠের সম্পর্ক নেই। নিট কনসার্ন গ্রুপ অবৈধভাবে জোরপূর্বক মন্দিরের জায়গা দখলের চেষ্টা বন্ধে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ একান্ত আবশ্যক বলে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য গত ১৮ জুন মিলটির অভ্যন্তরে মন্দিরের অবকাঠামো ভেঙ্গে ফেলার খবর পেয়ে ছুটে যান পুজা উদযাপন পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য সচিব শিখন সরকার শিপন, মহানগর কমিটির সদস্য সচিব সুশীল দাস, প্রদীপ দাস, রঞ্জিত মন্ডলসহ কয়েকজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী নেতা। এসময় পুজা উদযাপন পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর কমিটির নেতাদের সঙ্গে নিট কনসার্ন গ্রুপের পরিচালক মনির হোসেন মনা অসদাচরণ করেন এবং পুজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সামনেই শেয়ারহোল্ডারদের হুমকী দিয়ে বলেন, ‘গ্যানজাম লাগাইয়েন না। যদি জিদ উঠে তাইলে বাহির থেকে লোক খবর দিমু। সব পিডাইয়া ভাইঙ্গা দিমু।’
গত ১৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন, দেবোত্তর বোর্ড ও হিন্দু ফাউন্ডেশন বাস্তবায়নের দাবীতে পূজা উদযাপন পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত এক সমাবেশে হিন্দু নেতারা লক্ষ¥ীনারায়ণ কটন মিল দখল ও মিলের শতবর্ষী পুরনো মন্দির ভেঙে ফেলার অভিযোগ তুলে নিট কনসার্নের বিরুদ্ধে কথা বলেন। পাশাপাশি এ সময় নীট কনসার্ন গ্রুপকে ভুমিদস্যু উল্লেখ করে তারা পুলিশ সুপারকে মামলা দায়েরের সাথে দখলকারীদের আইনের আওতায় আনারও দাবি করেন। একই সাথে লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলে পূজা বন্ধ থাকলে নারায়ণগঞ্জের সমস্ত পূজা বন্ধ থাকবে বলেও হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন তারা।
গত ১ অক্টোবর নিট কনসার্ন গ্রুপের দখলদারিত্ব থেকে ঐতিহ্যবাহী নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলটির সম্পদ রক্ষার দাবিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করে আন্দোলনরত শেয়ারহোল্ডাররা।
সর্বশেষ ৪ অক্টোবর নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের ভেতরে ভেঙ্গে ফেলা মন্দির পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, মিলটির ভেতরের মন্দিরে ভেঙ্গে এটা সাম্প্রদায়িক উস্কানী দেয়ার সামিল বলে আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি। আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে ভূমিখেকোরা যা খুশি করতে পারবেনা। আমরা পরিস্কার ভাষায় বলে দিতে চাই নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের ভেতরে আগে যেখানে পুজা হতো সেখানেই পুজা হবে আর যদি সেটা না হয় তাহলে অধিকার কিভাবে আদায় করতে হয় সেটা আমরা জানি। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ডি এন চ্যাটার্জি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মন্ডল, কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক রজত কুমার সুর রাজু, পুজা উদযাপন পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সেক্রেটারী শিখন সরকার শিপন, মহানগর কমিটির সেক্রেটারী সুশীল দাস, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের জেলা সভাপতি প্রদীপ দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল হক ও পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ।
পুজা উদযাপন পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সেক্রেটারী শিখন সরকার শিপন বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের ভেতরে মন্দিরের স্থান পরিদর্শন করেছেন ও সেখানকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। পরে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করি। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার আমাদেরকে আশ^স্ত করেছেন নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের ভেতরে শান্তিপূর্ণভাবে পুজা উদযাপনের জন্য যা কিছু করণীয় সেটা করবেন।