০৮:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কর্মী ভিসায় ট্রাম্পের ফি আরোপে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কোন দেশ

দক্ষ কর্মী ভিসার ওপর প্রতিবছর ১ লাখ ডলার ফি আরোপ করে গতকাল শুক্রবার একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এইচ-১বি ভিসার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ কর্মী নেওয়া হয়। এই ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এ সিদ্ধান্তে কয়েকটি দেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এইচ-১বি ভিসার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী দেশ ছিল ভারত। ২০২৪ সালে এই ভিসার ৭১ শতাংশ সুবিধা নিয়েছেন ভারতীয় নাগরিকেরা। ভারতের পরেই আছে চীন। যদিও সংখ্যার হিসাবে দেশটি ভারতের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে। ১১ দশমিক ৭ শতাংশ সুবিধা ভোগ করে চীন দ্বিতীয় স্থানে ছিল।

এ বছরের প্রথমার্ধে অ্যামাজন ডটকম ও প্রতিষ্ঠানটির ক্লাউড কম্পিউটিং ইউনিট এডব্লিউএস ১২ হাজারের বেশি এইচ-১বি ভিসা অনুমোদন পেয়েছে। একই সময়ে মাইক্রোসফট ও মেটা প্ল্যাটফর্ম—প্রত্যেকে পেয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি এইচ-১বি ভিসার অনুমোদন।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক শুক্রবার বলেন, সব বড় বড় প্রতিষ্ঠানই এইচ-১বি ভিসার জন্য বছরে ১ লাখ ডলার ফি দেওয়ার এই সিদ্ধান্তে সমর্থন দিয়েছে।

লুটনিক বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।’

এ বিষয়ে জানতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি বৃহৎ প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু তারা মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে অথবা মন্তব্যের অনুরোধে তৎক্ষণাৎ সাড়া দেয়নি।

 

ভারত-চীনের কী প্রতিক্রিয়া

দক্ষ কর্মী ভিসার বিষয়ে ট্রাম্পের নতুন নির্বাহী আদেশ নিয়ে এখন পর্যন্ত ভারত বা চীন কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ জানিয়ে রয়টার্স থেকে ওয়াশিংটনে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসে এবং নিউইয়র্কে অবস্থিত চীনা কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে কোথাও থেকে সাড়া মেলেনি।

তবে চাকরির বাজারে এর প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান কগনিজ্যান্ট টেকনোলজি সলিউশনস করপোরেশনের শেয়ারের মূল্য প্রায় ৫ শতাংশ পড়ে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তি পরামর্শ ও আইটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপকভাবে এইচ-১বি ভিসাধারী কর্মীদের ওপর নির্ভরশীল।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে তালিকাভুক্ত ভারতীয় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ইনফোসিস ও উইপ্রোর শেয়ারের দামও ২ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে গেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের ফলে ভারতীয় নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে অসুবিধায় পড়তে হতে পারে। ভারতীয় নাগরিকেরা যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদন করলে সাধারণত তাঁদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। অপেক্ষার এই সময়ে তাঁদের বারবার ভিসা নবায়ন করতে হয়। এখন ভিসা নবায়ন করতে তাঁদের ১ লাখ মার্কিন ডলার খরচ করতে হবে।

অভিবাসন দমননীতির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন

আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের নীতিনির্ধারণী পরিচালক অ্যারন রাইকলিন-মেলনিক নতুন ফির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্লুস্কাইতে এক পোস্টে অ্যারন লেখেন, ‘কেবল যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস দেশটির সরকারকে আবেদনপ্রক্রিয়ার খরচ হিসেবে ফি নির্ধারণের অনুমতি দিতে পারে।’

প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র ৬৫ হাজার এইচ-১বি ভিসা দিয়ে থাকে। এই প্রকল্পের আওতায় এমন সব প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়, যারা বিশেষায়িত ক্ষেত্রে অস্থায়ী ভিত্তিতে বিদেশ থেকে কর্মী আনে। এ ছাড়া আরও ২০ হাজার ভিসা দেওয়া হয় উচ্চতর ডিগ্রিধারী কর্মীদের জন্য।

বর্তমান নিয়মে, ভিসার আবেদনের জন্য অল্প কিছু ফি দিতে হয়। ভিসার অনুমোদন পাওয়ার পর কয়েক হাজার ডলার ফি দিয়ে কর্মীদের আনতে হয়।

এইচ-১বি ভিসার ক্ষেত্রে প্রায় সব ধরনের ভিসা ফি নিয়োগকর্তারা দিয়ে থাকেন। সাধারণত তিন থেকে ছয় বছরের জন্য এই ভিসা দেওয়া হয়।

ট্রাম্প গতকাল আরও একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। ওই আদেশে বলা হয়েছে, যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ১০ লাখ ডলার দিতে সক্ষম, তাঁদের জন্য ‘গোল্ড কার্ড’ তৈরি করা হচ্ছে।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর শোক

কর্মী ভিসায় ট্রাম্পের ফি আরোপে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কোন দেশ

আপডেট সময় : ০৯:৫৬:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দক্ষ কর্মী ভিসার ওপর প্রতিবছর ১ লাখ ডলার ফি আরোপ করে গতকাল শুক্রবার একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এইচ-১বি ভিসার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ কর্মী নেওয়া হয়। এই ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এ সিদ্ধান্তে কয়েকটি দেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এইচ-১বি ভিসার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী দেশ ছিল ভারত। ২০২৪ সালে এই ভিসার ৭১ শতাংশ সুবিধা নিয়েছেন ভারতীয় নাগরিকেরা। ভারতের পরেই আছে চীন। যদিও সংখ্যার হিসাবে দেশটি ভারতের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে। ১১ দশমিক ৭ শতাংশ সুবিধা ভোগ করে চীন দ্বিতীয় স্থানে ছিল।

এ বছরের প্রথমার্ধে অ্যামাজন ডটকম ও প্রতিষ্ঠানটির ক্লাউড কম্পিউটিং ইউনিট এডব্লিউএস ১২ হাজারের বেশি এইচ-১বি ভিসা অনুমোদন পেয়েছে। একই সময়ে মাইক্রোসফট ও মেটা প্ল্যাটফর্ম—প্রত্যেকে পেয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি এইচ-১বি ভিসার অনুমোদন।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক শুক্রবার বলেন, সব বড় বড় প্রতিষ্ঠানই এইচ-১বি ভিসার জন্য বছরে ১ লাখ ডলার ফি দেওয়ার এই সিদ্ধান্তে সমর্থন দিয়েছে।

লুটনিক বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।’

এ বিষয়ে জানতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি বৃহৎ প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু তারা মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে অথবা মন্তব্যের অনুরোধে তৎক্ষণাৎ সাড়া দেয়নি।

 

ভারত-চীনের কী প্রতিক্রিয়া

দক্ষ কর্মী ভিসার বিষয়ে ট্রাম্পের নতুন নির্বাহী আদেশ নিয়ে এখন পর্যন্ত ভারত বা চীন কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ জানিয়ে রয়টার্স থেকে ওয়াশিংটনে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসে এবং নিউইয়র্কে অবস্থিত চীনা কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে কোথাও থেকে সাড়া মেলেনি।

তবে চাকরির বাজারে এর প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান কগনিজ্যান্ট টেকনোলজি সলিউশনস করপোরেশনের শেয়ারের মূল্য প্রায় ৫ শতাংশ পড়ে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তি পরামর্শ ও আইটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপকভাবে এইচ-১বি ভিসাধারী কর্মীদের ওপর নির্ভরশীল।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে তালিকাভুক্ত ভারতীয় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ইনফোসিস ও উইপ্রোর শেয়ারের দামও ২ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে গেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের ফলে ভারতীয় নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে অসুবিধায় পড়তে হতে পারে। ভারতীয় নাগরিকেরা যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদন করলে সাধারণত তাঁদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। অপেক্ষার এই সময়ে তাঁদের বারবার ভিসা নবায়ন করতে হয়। এখন ভিসা নবায়ন করতে তাঁদের ১ লাখ মার্কিন ডলার খরচ করতে হবে।

অভিবাসন দমননীতির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন

আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের নীতিনির্ধারণী পরিচালক অ্যারন রাইকলিন-মেলনিক নতুন ফির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্লুস্কাইতে এক পোস্টে অ্যারন লেখেন, ‘কেবল যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস দেশটির সরকারকে আবেদনপ্রক্রিয়ার খরচ হিসেবে ফি নির্ধারণের অনুমতি দিতে পারে।’

প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র ৬৫ হাজার এইচ-১বি ভিসা দিয়ে থাকে। এই প্রকল্পের আওতায় এমন সব প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়, যারা বিশেষায়িত ক্ষেত্রে অস্থায়ী ভিত্তিতে বিদেশ থেকে কর্মী আনে। এ ছাড়া আরও ২০ হাজার ভিসা দেওয়া হয় উচ্চতর ডিগ্রিধারী কর্মীদের জন্য।

বর্তমান নিয়মে, ভিসার আবেদনের জন্য অল্প কিছু ফি দিতে হয়। ভিসার অনুমোদন পাওয়ার পর কয়েক হাজার ডলার ফি দিয়ে কর্মীদের আনতে হয়।

এইচ-১বি ভিসার ক্ষেত্রে প্রায় সব ধরনের ভিসা ফি নিয়োগকর্তারা দিয়ে থাকেন। সাধারণত তিন থেকে ছয় বছরের জন্য এই ভিসা দেওয়া হয়।

ট্রাম্প গতকাল আরও একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। ওই আদেশে বলা হয়েছে, যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ১০ লাখ ডলার দিতে সক্ষম, তাঁদের জন্য ‘গোল্ড কার্ড’ তৈরি করা হচ্ছে।

এমআর/সবা