০৬:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নজিরবিহীন সতর্কতা টেকনাফে

সীমান্ত-সমুদ্রের জলসীমায় বসলো নৌযান-ড্রোন

প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে মাদক, অস্ত্র ও রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ রোধে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত ও সমুদ্রপথে জোরদার নজরদারি চালাচ্ছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সীমান্তজুড়ে ও অভ্যন্তরীণ জলসীমায় বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক সার্ভিলেন্স রাডার, ড্রোন ও থার্মাল ক্যামেরা—যার মাধ্যমে নৌযান এবং তীব্র চোরাচালান চক্র শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।

 

বিজিবি জানিয়েছে, নাফ নদীর জেটিতে বসানো গভীর পর্যবেক্ষণ সক্ষম এক সার্ভিলেন্স রাডার পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় বস্তুর অবস্থান, গতি ও উপস্থিতি শনাক্ত করতে সক্ষম। এছাড়া নাফ নদী থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত এবং সেন্টমার্টিন পর্যন্ত বিস্তৃত সমুদ্রপথে প্রায় ২০ কিলোমিটারের জন্য মোট ছয়টি সার্ভিলেন্স রাডার স্থাপন করা হয়েছে। টেকনাফ বিজিবি’র ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের সীমান্তে বা সমুদ্রের জলসীমায় অনুপ্রবেশ আর সহজ হবে না।

অভিযান কার্যক্রম ইতিমধ্যেই ফলপ্রসূ হয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার বালুখালী বিওপি’র টহলদল মিয়ানমারের দিক থেকে আসা এক সংঘবদ্ধ চক্রকে চ্যালেঞ্জ করলে তৎপর অভিযানে খালের পাড় থেকে উদ্ধার করা হয় সাদা পলিথিনে মোড়ানো দুই প্যাকেটে থাকা মোট ২৮ কেটে ২ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। উদ্ধারকৃত মাদক উখিয়া থানায় হস্তান্তর ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। উখিয়া ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানান, পালিয়ে যাওয়া মাদককারবারীদের শনাক্ত করে গ্রেফতারে গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে।

 

কোস্টগার্ডও সমন্বিত অভিযানে সফলতা পেয়েছে। ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে সেন্টমার্টিন সাগর এলাকায় তল্লাশিতে এক সন্দেহভাজন ফিশিং বোটে তদন্তে মিশিয়ে পাওয়া মালামাল হিসেবে জব্দ করা হয় প্রায় ১০০০০ কেজি ডাল, ১ লাখ ৫০ হাজার পিস মশার কয়েল, ২৫০০ কেজি রসুন, ১০০০ কেজি টেস্টিং সল্ট, ১০ হাজার পিস এনার্জি ড্রিঙ্কস, আড়াই হাজার কেজি পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্য; এ ঘটনায় ১০ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে। একই দিন কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর যৌথ অভিযানে টেকনাফের গহীন পাহাড় থেকে নারী ও শিশুসহ ৬৬ জনকে উদ্ধার করা হয়, যারা মালয়েশিয়ায় পাচারের জন্য গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল।

বিজিবি সদর দপ্তরের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে সীমান্তে বিভিন্ন অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়েছে—যাতে আছে ১৬টি দেশি-বিদেশি পিস্তল, ২টি রিভলভার, ২টি এসএমজি, ৫টি রাইফেল, ১৬টি দেশীয় বন্দুক, ৩টি শর্টগান, ৩টি মর্টার শেল, ৮টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ২৭টি অন্যান্য অস্ত্র, ২১টি ম্যাগাজিন ও ১০০৩ রাউন্ড গোলাবারুদ। বিজিবি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, এসব তথ্যের ভিত্তিতে মাঠ পর্যায়ে গোয়েন্দা তৎপরতা ও অভিযানের পরিধি বাড়ানো হয়েছে।

 

প্রযুক্তি অপারেটরদের বক্তব্যে বলা হয়—রাডার, ড্রোন ও থার্মাল ক্যামেরা রাত-দিন সীমান্ত ও সমুদ্রপথ পর্যবেক্ষণে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের রাডার অপারেটর মো. আজিজুল হক জানান, রাডার সর্বোচ্চ ৯৬ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত কাজ করতে সক্ষম; ড্রোন অপারেটর আলহাজ হোসেন বললেন, দুর্গম ও জালের দ্বীপগুলোতে ড্রোন পাঠিয়ে অপরাধীদের অবস্থান সনাক্ত করা যাচ্ছে; থার্মাল অপারেটর নায়েক মাহাবুব আলম জানান, রাতেও দুই কিলোমিটার পর্যন্ত যে কোনো বস্তুর তাপ শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।

লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, সীমান্তে মোতায়েন জনবলের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি আন্তঃবাহিনী সমন্বয়ে সন্দেহজনক নৌযান ও ঘটনাস্থল দ্রুত ট্র্যাক করে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর কাছে তথ্য দেওয়া হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সীমান্ত ও জলসীমায় অপরাধ প্রবাহ ঠেকাতে এ ধরনের অভিযান ও টেকনিক্যাল নজরদারি অব্যাহত থাকবে।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

নির্বাচন আয়োজনে ‘আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত’: প্রধান উপদেষ্টা

নজিরবিহীন সতর্কতা টেকনাফে

সীমান্ত-সমুদ্রের জলসীমায় বসলো নৌযান-ড্রোন

আপডেট সময় : ০৯:৪৯:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে মাদক, অস্ত্র ও রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ রোধে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত ও সমুদ্রপথে জোরদার নজরদারি চালাচ্ছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সীমান্তজুড়ে ও অভ্যন্তরীণ জলসীমায় বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক সার্ভিলেন্স রাডার, ড্রোন ও থার্মাল ক্যামেরা—যার মাধ্যমে নৌযান এবং তীব্র চোরাচালান চক্র শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।

 

বিজিবি জানিয়েছে, নাফ নদীর জেটিতে বসানো গভীর পর্যবেক্ষণ সক্ষম এক সার্ভিলেন্স রাডার পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় বস্তুর অবস্থান, গতি ও উপস্থিতি শনাক্ত করতে সক্ষম। এছাড়া নাফ নদী থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত এবং সেন্টমার্টিন পর্যন্ত বিস্তৃত সমুদ্রপথে প্রায় ২০ কিলোমিটারের জন্য মোট ছয়টি সার্ভিলেন্স রাডার স্থাপন করা হয়েছে। টেকনাফ বিজিবি’র ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের সীমান্তে বা সমুদ্রের জলসীমায় অনুপ্রবেশ আর সহজ হবে না।

অভিযান কার্যক্রম ইতিমধ্যেই ফলপ্রসূ হয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার বালুখালী বিওপি’র টহলদল মিয়ানমারের দিক থেকে আসা এক সংঘবদ্ধ চক্রকে চ্যালেঞ্জ করলে তৎপর অভিযানে খালের পাড় থেকে উদ্ধার করা হয় সাদা পলিথিনে মোড়ানো দুই প্যাকেটে থাকা মোট ২৮ কেটে ২ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। উদ্ধারকৃত মাদক উখিয়া থানায় হস্তান্তর ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। উখিয়া ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানান, পালিয়ে যাওয়া মাদককারবারীদের শনাক্ত করে গ্রেফতারে গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে।

 

কোস্টগার্ডও সমন্বিত অভিযানে সফলতা পেয়েছে। ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে সেন্টমার্টিন সাগর এলাকায় তল্লাশিতে এক সন্দেহভাজন ফিশিং বোটে তদন্তে মিশিয়ে পাওয়া মালামাল হিসেবে জব্দ করা হয় প্রায় ১০০০০ কেজি ডাল, ১ লাখ ৫০ হাজার পিস মশার কয়েল, ২৫০০ কেজি রসুন, ১০০০ কেজি টেস্টিং সল্ট, ১০ হাজার পিস এনার্জি ড্রিঙ্কস, আড়াই হাজার কেজি পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্য; এ ঘটনায় ১০ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে। একই দিন কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর যৌথ অভিযানে টেকনাফের গহীন পাহাড় থেকে নারী ও শিশুসহ ৬৬ জনকে উদ্ধার করা হয়, যারা মালয়েশিয়ায় পাচারের জন্য গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল।

বিজিবি সদর দপ্তরের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে সীমান্তে বিভিন্ন অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়েছে—যাতে আছে ১৬টি দেশি-বিদেশি পিস্তল, ২টি রিভলভার, ২টি এসএমজি, ৫টি রাইফেল, ১৬টি দেশীয় বন্দুক, ৩টি শর্টগান, ৩টি মর্টার শেল, ৮টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ২৭টি অন্যান্য অস্ত্র, ২১টি ম্যাগাজিন ও ১০০৩ রাউন্ড গোলাবারুদ। বিজিবি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, এসব তথ্যের ভিত্তিতে মাঠ পর্যায়ে গোয়েন্দা তৎপরতা ও অভিযানের পরিধি বাড়ানো হয়েছে।

 

প্রযুক্তি অপারেটরদের বক্তব্যে বলা হয়—রাডার, ড্রোন ও থার্মাল ক্যামেরা রাত-দিন সীমান্ত ও সমুদ্রপথ পর্যবেক্ষণে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের রাডার অপারেটর মো. আজিজুল হক জানান, রাডার সর্বোচ্চ ৯৬ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত কাজ করতে সক্ষম; ড্রোন অপারেটর আলহাজ হোসেন বললেন, দুর্গম ও জালের দ্বীপগুলোতে ড্রোন পাঠিয়ে অপরাধীদের অবস্থান সনাক্ত করা যাচ্ছে; থার্মাল অপারেটর নায়েক মাহাবুব আলম জানান, রাতেও দুই কিলোমিটার পর্যন্ত যে কোনো বস্তুর তাপ শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।

লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, সীমান্তে মোতায়েন জনবলের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি আন্তঃবাহিনী সমন্বয়ে সন্দেহজনক নৌযান ও ঘটনাস্থল দ্রুত ট্র্যাক করে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর কাছে তথ্য দেওয়া হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সীমান্ত ও জলসীমায় অপরাধ প্রবাহ ঠেকাতে এ ধরনের অভিযান ও টেকনিক্যাল নজরদারি অব্যাহত থাকবে।

এমআর/সবা