০৭:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পটিয়ায় ব্যাংক টার্মিনেশনে স্ত্রী, টেনশনে স্ট্রোক করে স্বামীর মর্মান্তিক মৃত্যু

চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভার সুচক্রীদন্ডী এলাকার লিটন দাশ (৪৮) বুধবার ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। জানা গেছে, তার মৃত্যু স্ট্রোকজনিত, যা মূলত মানসিক চাপ ও টেনশনের কারণে হয়েছে। এই মানসিক চাপের সূত্রপাত ঘটে তখন, যখন ইসলামী ব্যাংক তাকে কর্মরত থাকা অবস্থায় দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করা স্ত্রী অর্পন্না দত্তকে হঠাৎ করেই চাকরি থেকে বরখাস্ত করে।

লিটন দাশ একজন সৎ, পরিশ্রমী এবং দায়িত্বশীল মানুষ ছিলেন। তার পরিবার, প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন সবাই তাকে ভালোবাসতেন। স্বাভাবিক জীবন যাপন করছিলেন, কিন্তু রবিবার রাতেই অর্পন্না দত্ত হঠাৎ করে ব্যাংক থেকে বরখাস্ত হওয়ার খবর পায়। দীর্ঘদিনের স্থায়ী চাকরী ও নির্ভরযোগ্য জীবিকা হঠাৎ শেষ হয়ে যাওয়ায় অর্পন্না ভেঙে পড়েন।

প্রথমে তিনি বিষয়টি লিটনকে জানাননি, তবে ঢাকায় পৌঁছানোর পর লিটনকে জানিয়ে দেন, “আমার চাকরি চলে গেছে, তাই মালপত্র গুছিয়ে নিতে এসেছি।”

এই কথা শুনে লিটন দাশ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। মঙ্গলবার সারাদিন তিনি অস্থিরতায় কাটান, অনিশ্চয়তার শঙ্কা ও নিঃশব্দ কান্নার মধ্যে। পরিবারের সদস্যরা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও লিটনের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হতে থাকে। বুধবার সকালে হঠাৎ করে তার অবস্থা গুরুতর হয়ে ওঠে এবং তাকে ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, স্ট্রোকজনিত কারণে তিনি মারা গেছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, “একজন সৎ ব্যাংক কর্মকর্তা, যে পরিবার ও সমাজের জন্য দায়িত্বশীলভাবে কাজ করেছে, তার স্ত্রীকে চাকরি থেকে হঠাৎ করেই বরখাস্ত করা হলো। এর মানসিক প্রভাব এত ভয়াবহ যে, তার স্বামীও সহ্য করতে পারলেন না। এটি সত্যিই মর্মান্তিক।”

ইসলামী ব্যাংক সিলেট-হবিগঞ্জ শাখার সহকারী অফিসার (টার্মিনেশনপ্রাপ্ত) আবু তৈয়ব সোহেল বলেন, “বর্তমান ম্যানেজমেন্ট একের পর এক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে টার্মিনেশন করছে। আমার নিজের বোনকেও মঙ্গলবার টার্মিনেশন দেওয়া হয়েছে। এর কারণে পরিবারগুলো বিপর্যস্ত হচ্ছে।”

জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর সারা দেশে ব্যাপক ছাঁটাই অভিযান চলছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশের বাড়ি চট্টগ্রাম ও পটিয়া এলাকায়।

চাকরি হারানোর মানসিক চাপ, ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা এবং আতঙ্ক— এই তিনটির সংমিশ্রণই লিটন দাশের জীবন কেড়ে নিয়েছে। এখন তার স্ত্রী অর্পন্না দত্ত একা দাঁড়িয়ে রয়েছেন জীবনের কঠিন বাস্তবতার সামনে, নিঃস্ব এবং নিঃসহায়।

স্থানীয় সমাজকর্মীরা বলছেন, “একজন পরিবারবর্হিভূত মানুষ এত কষ্ট সহ্য করতে পারলেন না। ব্যাংকের এই আচরণ শুধু চাকরি হারানো নয়, এটি মানুষের মানসিক শান্তি ও জীবনের উপর আঘাত। এই ঘটনা সমাজে গভীর ক্ষত রেখে যাবে।”

পরিবারের ঘনিষ্ঠরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এটি শুধু ব্যক্তিগত পরিবারের ট্র্যাজেডি নয়, এটি আমাদের সমাজের একটি বড় হুমকি। মানুষকে চাকরি হারানোর মাধ্যমে এমন মানসিক চাপের মুখোমুখি করা উচিত নয়। সরকার এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে দায়িত্বশীলতা প্রমাণ করুক।”

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

জামালপুর-টাঙ্গাইল আঞ্চলিক প্রেসক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় ব্যাংক টার্মিনেশনে স্ত্রী, টেনশনে স্ট্রোক করে স্বামীর মর্মান্তিক মৃত্যু

আপডেট সময় : ০৭:৫৩:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভার সুচক্রীদন্ডী এলাকার লিটন দাশ (৪৮) বুধবার ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। জানা গেছে, তার মৃত্যু স্ট্রোকজনিত, যা মূলত মানসিক চাপ ও টেনশনের কারণে হয়েছে। এই মানসিক চাপের সূত্রপাত ঘটে তখন, যখন ইসলামী ব্যাংক তাকে কর্মরত থাকা অবস্থায় দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করা স্ত্রী অর্পন্না দত্তকে হঠাৎ করেই চাকরি থেকে বরখাস্ত করে।

লিটন দাশ একজন সৎ, পরিশ্রমী এবং দায়িত্বশীল মানুষ ছিলেন। তার পরিবার, প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন সবাই তাকে ভালোবাসতেন। স্বাভাবিক জীবন যাপন করছিলেন, কিন্তু রবিবার রাতেই অর্পন্না দত্ত হঠাৎ করে ব্যাংক থেকে বরখাস্ত হওয়ার খবর পায়। দীর্ঘদিনের স্থায়ী চাকরী ও নির্ভরযোগ্য জীবিকা হঠাৎ শেষ হয়ে যাওয়ায় অর্পন্না ভেঙে পড়েন।

প্রথমে তিনি বিষয়টি লিটনকে জানাননি, তবে ঢাকায় পৌঁছানোর পর লিটনকে জানিয়ে দেন, “আমার চাকরি চলে গেছে, তাই মালপত্র গুছিয়ে নিতে এসেছি।”

এই কথা শুনে লিটন দাশ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। মঙ্গলবার সারাদিন তিনি অস্থিরতায় কাটান, অনিশ্চয়তার শঙ্কা ও নিঃশব্দ কান্নার মধ্যে। পরিবারের সদস্যরা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও লিটনের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হতে থাকে। বুধবার সকালে হঠাৎ করে তার অবস্থা গুরুতর হয়ে ওঠে এবং তাকে ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, স্ট্রোকজনিত কারণে তিনি মারা গেছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, “একজন সৎ ব্যাংক কর্মকর্তা, যে পরিবার ও সমাজের জন্য দায়িত্বশীলভাবে কাজ করেছে, তার স্ত্রীকে চাকরি থেকে হঠাৎ করেই বরখাস্ত করা হলো। এর মানসিক প্রভাব এত ভয়াবহ যে, তার স্বামীও সহ্য করতে পারলেন না। এটি সত্যিই মর্মান্তিক।”

ইসলামী ব্যাংক সিলেট-হবিগঞ্জ শাখার সহকারী অফিসার (টার্মিনেশনপ্রাপ্ত) আবু তৈয়ব সোহেল বলেন, “বর্তমান ম্যানেজমেন্ট একের পর এক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে টার্মিনেশন করছে। আমার নিজের বোনকেও মঙ্গলবার টার্মিনেশন দেওয়া হয়েছে। এর কারণে পরিবারগুলো বিপর্যস্ত হচ্ছে।”

জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর সারা দেশে ব্যাপক ছাঁটাই অভিযান চলছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশের বাড়ি চট্টগ্রাম ও পটিয়া এলাকায়।

চাকরি হারানোর মানসিক চাপ, ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা এবং আতঙ্ক— এই তিনটির সংমিশ্রণই লিটন দাশের জীবন কেড়ে নিয়েছে। এখন তার স্ত্রী অর্পন্না দত্ত একা দাঁড়িয়ে রয়েছেন জীবনের কঠিন বাস্তবতার সামনে, নিঃস্ব এবং নিঃসহায়।

স্থানীয় সমাজকর্মীরা বলছেন, “একজন পরিবারবর্হিভূত মানুষ এত কষ্ট সহ্য করতে পারলেন না। ব্যাংকের এই আচরণ শুধু চাকরি হারানো নয়, এটি মানুষের মানসিক শান্তি ও জীবনের উপর আঘাত। এই ঘটনা সমাজে গভীর ক্ষত রেখে যাবে।”

পরিবারের ঘনিষ্ঠরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এটি শুধু ব্যক্তিগত পরিবারের ট্র্যাজেডি নয়, এটি আমাদের সমাজের একটি বড় হুমকি। মানুষকে চাকরি হারানোর মাধ্যমে এমন মানসিক চাপের মুখোমুখি করা উচিত নয়। সরকার এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে দায়িত্বশীলতা প্রমাণ করুক।”

এমআর/সবা