০৬:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টাঙ্গাইলের শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁতীরা

◉ ঈদ ও বৈশাখে ৪০০ কোটি টাকার শাড়ি-কাপর বিক্রির আশা।
◉ গত বছরের তুলনায় এবছর ২০% বেশি উৎপাদন।
◉ ভারতে রপ্তানি হয়েছে ৭৫ লাখ পিস শাড়ি।
◉ করোনাকালীন সংকট কাটিয়ে টাঙ্গাইলের শাড়িতে আশার আলো।

আসন্ন ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁতীরা। বুননের কাজে ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত অবধি চলছে মাকু আর শানার ঠকঠক শব্দ। তাঁতীর হাত ও পায়ের ছন্দে তৈরি হচ্ছে এক একটি বর্ণিল শাড়ি। গরমের কথা বিবেচনায় রেখে এবার শাড়িতে এসেছে রং আর সুতার এক অভুতপূর্ব সংমিশ্রণ। বৈচিত্র আর নতুনত্ব ক্রেতাদের করেছে আকৃষ্ট। সরেজমিনে, টাঙ্গাইলের পাথরাইলে তিনশত পঞ্চাশ টাকা থেকে লাখ টাকা দামের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। জামদানি, হাফ সিল্ক, মসলিন, অ্যান্ডি সিল্ক ও সফট সিল্ক বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাঁতপল্লীতে ভিড় করছেন কাপড় ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। করোনা সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে বিগতবছরের তুলনায় এবছর ২০% উৎপাদন বেড়েছে। ঈদের আমেজ শেষ না হতেই ১লা বৈশাখ। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি সংশ্লিষ্ট শ্রমিক, মালিক ও ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, ঈদ ও পহেলা বৈশাখের উৎসবকে সামনে রেখে দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক মন্দা কাটিয়ে উঠতে পারবেন তারা। এ দুই উৎসবে এবার প্রায় সাড়ে তিনশত থেকে চারশত কোটি টাকার শাড়ি ও তাঁতের নানা পোশাক বিক্রির আশা করছে টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স।

এদিকে নিজ দেশের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও রপ্তানি হচ্ছে টাঙ্গাইলের শাড়ি। গত বছর ঈদ ও পূজা উপলক্ষে ভারতে রপ্তানি হয়েছিল টাঙ্গাইলের ৭৪ লাখ পিস শাড়ি। ইতিমধ্যেই এবার রপ্তানি হয়েছে ৭৫ লাখ পিস শাড়ি। আরও রপ্তানির আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। ঢাকা থেকে শাড়ি ক্রয় করতে আসা ইসরাত জাহান বলেন, ঈদ উপলক্ষে পরিবারের জন্য কয়েকটি তাঁতের শাড়ি ক্রয় করলাম। শাড়ির মান ও ডিজাইন অনেক ভালো। এজন্য প্রতি বছর টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি কিনতে আসি। আগের থেকে এবার দাম একটু বেশি, দাম কিছুটা কম হলে ভালো হতো।
গাজীপুর থেকে শাড়ি ক্রয় করতে আসা জেনী ঝিনুক বলেন, টাঙ্গাইলের শাড়ির মান অনেক ভালো ও রুচি সম্পূর্ণ। অন্যান্য জায়গার থেকে কম দামে এবং পছন্দ মত ক্রয় করার সুযোগ থাকে বলে এখানে আসি। তাঁতশ্রমিকরা বলছেন গতবারের তুলনায় কাজের চাপ বেশি। কাজের বারতি চাপ থাকায় ৪০ টাকা মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে, ফলে খুশি তাঁতশ্রমিকরা। তারা আরো জানিয়েছেন ঈদ পরবর্তী সময়েও যদি এমন কাজ থাকে এবং মজুরি যদি না কমে তাহলে
তাদের সংসার ভালো মত চলবে। বছরের প্রায় দশ মাসই পরিবার নিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয়।

আমাদের কাজ ও মজুরি বাড়ানো হলে পরিবার নিয়ে একটু ভালোভাবে চলতে পারব। তাঁত মালিকরা বলছেন, আধুনিক প্রযুক্তির পাওয়ারলুমে শাড়ি তৈরিতে খরচ কম হওয়ায়, দামও কম। যে কারণে হাতে বুনা শাড়ি এখন হুমকির মুখে। এদিকে আমদানী নির্ভর সুতার দামও গতবছরের তুলনায় বেশি। যে কারণে বাজারের প্রতিযোগিতায় আমাদের টিকে থাকা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। এবিষয়ে সরকারের সু দৃষ্টি কামনা করেন তারা। জেলা শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, এবছর ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ২০% উৎপাদন বেড়েছে। আমরা আশাবাদী, গত বছরের চেয়ে এবার বিক্রি ভালো হবে। এরার রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। এদিকে মানুষের মধ্যে ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। এবছর আমাদের রপ্তানিও বেশি হবে বলে আশা করছি। টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক পলাশ চন্দ্র বসাক বলেন, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়িতে এবার নতুনত্ব এসছে। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এবার প্রায় সাড়ে তিনশ থেকে চারশ কোটি টাকার শাড়ি বিক্রির আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের লিয়াজোঁ অফিসার রবিউল ইসলাম বলেন, তাঁত বোর্ড সমিতির মাধ্যমে ৫ শতাংশ বেশি শুল্ক মওকুফ করে, সরকার তাঁতিদের জন্য সুতা রঙ এবং রাসায়নিক আমদানীর সুযোগ দিয়ে থাকেন। আমরা চলমান প্রক্রিয়ায় ঋণ দিয়ে থাকি। প্রণোদনামূলক ঋণ হিসেবে ৫ শতাংশ ঋণ সার্ভিস চার্জে আমরা তাঁতিদের টাকা দিয়ে থাকি। এর আওতায় সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা ঋণ দিতে পারি। এছাড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া তাঁত মালিকদের পূণরায় ঘুরে দাড়াতে ঋণ দেওয়া হয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

টাঙ্গাইলের শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁতীরা

আপডেট সময় : ১২:১৮:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ মার্চ ২০২৪

◉ ঈদ ও বৈশাখে ৪০০ কোটি টাকার শাড়ি-কাপর বিক্রির আশা।
◉ গত বছরের তুলনায় এবছর ২০% বেশি উৎপাদন।
◉ ভারতে রপ্তানি হয়েছে ৭৫ লাখ পিস শাড়ি।
◉ করোনাকালীন সংকট কাটিয়ে টাঙ্গাইলের শাড়িতে আশার আলো।

আসন্ন ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁতীরা। বুননের কাজে ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত অবধি চলছে মাকু আর শানার ঠকঠক শব্দ। তাঁতীর হাত ও পায়ের ছন্দে তৈরি হচ্ছে এক একটি বর্ণিল শাড়ি। গরমের কথা বিবেচনায় রেখে এবার শাড়িতে এসেছে রং আর সুতার এক অভুতপূর্ব সংমিশ্রণ। বৈচিত্র আর নতুনত্ব ক্রেতাদের করেছে আকৃষ্ট। সরেজমিনে, টাঙ্গাইলের পাথরাইলে তিনশত পঞ্চাশ টাকা থেকে লাখ টাকা দামের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। জামদানি, হাফ সিল্ক, মসলিন, অ্যান্ডি সিল্ক ও সফট সিল্ক বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাঁতপল্লীতে ভিড় করছেন কাপড় ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। করোনা সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে বিগতবছরের তুলনায় এবছর ২০% উৎপাদন বেড়েছে। ঈদের আমেজ শেষ না হতেই ১লা বৈশাখ। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি সংশ্লিষ্ট শ্রমিক, মালিক ও ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, ঈদ ও পহেলা বৈশাখের উৎসবকে সামনে রেখে দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক মন্দা কাটিয়ে উঠতে পারবেন তারা। এ দুই উৎসবে এবার প্রায় সাড়ে তিনশত থেকে চারশত কোটি টাকার শাড়ি ও তাঁতের নানা পোশাক বিক্রির আশা করছে টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স।

এদিকে নিজ দেশের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও রপ্তানি হচ্ছে টাঙ্গাইলের শাড়ি। গত বছর ঈদ ও পূজা উপলক্ষে ভারতে রপ্তানি হয়েছিল টাঙ্গাইলের ৭৪ লাখ পিস শাড়ি। ইতিমধ্যেই এবার রপ্তানি হয়েছে ৭৫ লাখ পিস শাড়ি। আরও রপ্তানির আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। ঢাকা থেকে শাড়ি ক্রয় করতে আসা ইসরাত জাহান বলেন, ঈদ উপলক্ষে পরিবারের জন্য কয়েকটি তাঁতের শাড়ি ক্রয় করলাম। শাড়ির মান ও ডিজাইন অনেক ভালো। এজন্য প্রতি বছর টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি কিনতে আসি। আগের থেকে এবার দাম একটু বেশি, দাম কিছুটা কম হলে ভালো হতো।
গাজীপুর থেকে শাড়ি ক্রয় করতে আসা জেনী ঝিনুক বলেন, টাঙ্গাইলের শাড়ির মান অনেক ভালো ও রুচি সম্পূর্ণ। অন্যান্য জায়গার থেকে কম দামে এবং পছন্দ মত ক্রয় করার সুযোগ থাকে বলে এখানে আসি। তাঁতশ্রমিকরা বলছেন গতবারের তুলনায় কাজের চাপ বেশি। কাজের বারতি চাপ থাকায় ৪০ টাকা মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে, ফলে খুশি তাঁতশ্রমিকরা। তারা আরো জানিয়েছেন ঈদ পরবর্তী সময়েও যদি এমন কাজ থাকে এবং মজুরি যদি না কমে তাহলে
তাদের সংসার ভালো মত চলবে। বছরের প্রায় দশ মাসই পরিবার নিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয়।

আমাদের কাজ ও মজুরি বাড়ানো হলে পরিবার নিয়ে একটু ভালোভাবে চলতে পারব। তাঁত মালিকরা বলছেন, আধুনিক প্রযুক্তির পাওয়ারলুমে শাড়ি তৈরিতে খরচ কম হওয়ায়, দামও কম। যে কারণে হাতে বুনা শাড়ি এখন হুমকির মুখে। এদিকে আমদানী নির্ভর সুতার দামও গতবছরের তুলনায় বেশি। যে কারণে বাজারের প্রতিযোগিতায় আমাদের টিকে থাকা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। এবিষয়ে সরকারের সু দৃষ্টি কামনা করেন তারা। জেলা শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, এবছর ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ২০% উৎপাদন বেড়েছে। আমরা আশাবাদী, গত বছরের চেয়ে এবার বিক্রি ভালো হবে। এরার রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। এদিকে মানুষের মধ্যে ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। এবছর আমাদের রপ্তানিও বেশি হবে বলে আশা করছি। টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক পলাশ চন্দ্র বসাক বলেন, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়িতে এবার নতুনত্ব এসছে। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এবার প্রায় সাড়ে তিনশ থেকে চারশ কোটি টাকার শাড়ি বিক্রির আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের লিয়াজোঁ অফিসার রবিউল ইসলাম বলেন, তাঁত বোর্ড সমিতির মাধ্যমে ৫ শতাংশ বেশি শুল্ক মওকুফ করে, সরকার তাঁতিদের জন্য সুতা রঙ এবং রাসায়নিক আমদানীর সুযোগ দিয়ে থাকেন। আমরা চলমান প্রক্রিয়ায় ঋণ দিয়ে থাকি। প্রণোদনামূলক ঋণ হিসেবে ৫ শতাংশ ঋণ সার্ভিস চার্জে আমরা তাঁতিদের টাকা দিয়ে থাকি। এর আওতায় সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা ঋণ দিতে পারি। এছাড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া তাঁত মালিকদের পূণরায় ঘুরে দাড়াতে ঋণ দেওয়া হয়।