➤ বাজেটে খাত নির্বাচনের ক্ষেত্রে ত্রুটি থাকতে পারে : মসিউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা
➤ বাজেট এখনো পাস হয়নি, অনেক পরিবর্তন হতে পারে- আবুল হাসান মাহমুদ আলী, অর্থমন্ত্রী
➤ আমরা বাস করি ভূ-তলে আর বিনিয়োগ করি পাতালে -এম এ মান্নান, সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী
➤ বাজেটে গরিবদের সুখি হওয়ার মতো কিছু নেই : সালেহ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর
জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করার পর নানা মহল থেকে নানা প্রতিক্রিয়া আসছে। সংশোধন ও পরিবর্তনের নানান পরামর্শও দিয়েছেন ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, সুশীল ও খাত সংশ্লিষ্টরা ব্যক্তিরা। এ বিষয়ে সরকারের অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের সব পরামর্শ আমরা আমলে নিচ্ছি। যেগুলো বাস্তবসম্মত এবং বাজেটে বাস্তবায়নযোগ্য সেগুলো অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করা হবে।
এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আসন্ন বাজেটে ভালো প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হলেও সেজন্য কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। পাশাপাশি বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রবৃদ্ধি অর্জন ও মূল্যস্ফীতি কমাতে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি প্রয়োজন ছিল।
তারা বলছেন, নিত্যপণ্যে শূন্য ট্যারিফ ও অগ্রিম আয়কর (এআইটি) দরকার। মূল কথা নিত্যপণ্যে আরও নমনীয় হতে হবে। তবে এসবের দাম এত কেন বাড়ে সেটা কিন্তু রহস্যময় বিষয়। এর সদুত্তর পাওয়া দরকার। মার্কেট পলিসি না কি অন্য কোনো কারণে এটা হচ্ছে দেখা দরকার।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, খেলাপি ঋণ ও অর্থ পাচার শুধু অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, এগুলো রাজনৈতিক সংকট বলে মনে করছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
এদিকে বাংলাদেশের উন্নয়নকে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো দরকার বলে মনে করছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)।
সম্প্রতি ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট: বিআইপির পর্যালোচনা’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিআইপি।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, কৃষি খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি ইতিবাচক। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা টেকসই না হওয়াতে ও ক্যাপাসিটি চার্জের কারণে বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে সংখ্যাগত পরিমাণের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের গুণগত বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনর্নির্মাণে বাজেটে উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন।
দীর্ঘদিন থেকে আয়-ব্যয়ের বিপুল ঘাটতি রেখে বাজেট দিতে হচ্ছে সরকারকে। তারপরও প্রতি বছরই বাড়ছে বাজেটের আকার। যার প্রভাব পড়ছে দেশের সাধারণ মানুষের ওপর। কেননা বাজেটের বড় একটা অংশ আসে নাগরিকদের দেওয়া কর-খাজনা থেকে। স্বাভাবিকভাবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর বাজেটের প্রভাব পড়তে পারে। তাই এবারের বাজেটে করারোপে সরকারকে কৌশলী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা।
বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রচলিত ফাঁকফোঁকরের তীব্র সমালোচনা করেছেন সরকারের সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমরা বাস করি মাটিতে, বিনিয়োগ করি পাতালে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালনকালে নিজের মতের বিরুদ্ধে অনেক প্রকল্প অনুমোদন দিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
তিনি বলেন, এমন প্রকল্প আমার হাত দিয়ে গেছে বা যাচ্ছে যেগুলোর সঙ্গে আমি মনে-প্রাণে একমত নই। আমরা বাস করি ভূতলে (মাটিতে), বিনিয়োগ করি পাতালে। এ ধরনের অনেক প্রকল্প বাংলাদেশে আছে।’
সাবেক এই পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এটা আমার নিজের বক্তব্য। এ মুহূর্তে আমি সরকারের অংশ নই। রাজনৈতিকভাবে দলে ও সংসদে আছি। সাধারণ মানুষ ও গ্রামীণ এলাকার প্রতিনিধিত্ব করছি। আমরা গ্রামে বিদ্যুৎ পেয়েছি, কমিউনিটি ক্লিনিক পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী এসব দিয়েছেন। কৃষিতে আমাদের বিশাল অর্জন হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে গরিবদের সুখি হওয়ার মতো কিছু নেই। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে যে স্লোগান, সেখানে গরিবদের সুখি হওয়ার মতো কিছু নেই জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইন্টারনেট ও মোবাইলফোনে ট্যাক্স বসানো হচ্ছে। কিন্তু স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এসব ক্ষেত্রে নমনীয় হওয়া খুবই জরুরি। এসবে সুযোগ সুবিধাও দরকার। স্বাধীনতার পর আমারা ভূখণ্ড, পতাকা আর জাতীয় সংগীত পেয়েছি। কিন্তু যেসব পিলারগুলোতে এসব দাঁড়িয়েছি আছে, সেইসব পিলার খুবই নড়েবড়ে।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, বাজেটে সহায়তার জন্য খাত নির্বাচনের ত্রুটি থাকতে পারে, এটা কেউ অস্বীকার করে না। তিনি বলেছেন, আমাদের বাজেটের সব লক্ষ্য পূরণ হবে না। কিছু হবে। কিছু হবে না। যেটুকু হবে না সেগুলো পরবর্তী সময়ে যেন হয়।
প্রস্তাবিত বাজেট মূলত তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে করা হয়েছে জানিয়ে মসিউর রহমান বলেন, একটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং মধ্যমেয়াদি আর্থিক পরিকল্পনা। এসবের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে বাজেট তৈরি হয়। কিন্তু সেখানে ধরে নেওয়া হচ্ছে, আমাদের সব লক্ষ্য পূরণ হবে না। কিছু হবে। কিছু হবে না। যেটুকু হবে না সেগুলো পরবর্তী সময়ে যেন হয়।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদে প্রস্তাব পাসের আগে সরকার বাজেট নিয়ে সব ধরনের বাস্তবসম্মত সমালোচনা ও পরামর্শ বিবেচনা করছেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি বলেছেন, জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশের পর বিভিন্ন মহল থেকে আমরা সব মতামত বিবেচনায় নিচ্ছি। বাজেটে যেগুলো বাস্তবসম্মত ও সমাধানযোগ্য সেগুলো পুনর্বিবেচনা করতে হবে। কারণ বাজেট এখনো পাস হয়নি। অনেক কিছু সংশোধন হতে পারে।
আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, বাজেট পেশের পর বিভিন্ন মহল বিবৃতি দিয়েছে এবং মন্তব্য করেছে। আমি তাদের বলব, আমাদের অর্থনীতি ও বাজেট নিয়ে বিশ্বব্যাংক কী বলছে তা দেখুন।
তিনি বলেন, বাজেট নিয়ে আরও কিছু বলার আছে, বিশ্বব্যাংক বলেছে এটা ভালো। আমার টাকা দরকার, বিশ্বব্যাংকের কথা শুনতে হবে। তা-না হলে আপনারা (সমালোচকরা) আমাকে টাকা দিন।






















