১১:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফের বদলে যাচ্ছে এনসিটিবির শিক্ষাক্রম

 

  • ২০২৭ সালে ষষ্ঠ শ্রেণি দিয়ে পরিমার্জন শুরুর ইচ্ছা
  • পরিমার্জিত’ শিক্ষাক্রম তৈরির কাজ শুরু এনসিটিবির
  • যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম তৈরির তাগিদ শিক্ষাবিদদের

 

আবারো দেশের শিক্ষাক্রম ‘পরিমার্জন’ করার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা সরকারের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ‘পরিমার্জিত’ শিক্ষাক্রম তৈরি করার লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাক্রম যাচাই করা হচ্ছে। এ কাজে যুক্ত করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের তালিকা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ২০২৭ সালে পরিমার্জিত এ শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হতে পারে। এ জন্য নানা কিছু যাচাইয়ের কাজ (অ্যাসেসমেন্ট) শুরু হয়েছে। প্রথমে ষষ্ঠ শ্রেণিতে এ শিক্ষাক্রম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। পরে ধাপে ধাপে তা অন্য শ্রেণিতেও চালু করা হবে। শিক্ষা সংশি¬ষ্টরা বলছেন, সামাজিক প্রেক্ষাপট, অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনসহ নানা কারণে শিক্ষাক্রম পরিবর্তন জরুরি। সবকিছু চিন্তা করে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হবে। তারা বলছেন, শিক্ষাক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন ঠিক নয়, যা শেষ শিক্ষাক্রমে করা হয়েছিল, সে পরিবর্তনটা টেকসই হয়নি। সুতরাং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এনসিটিবি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে, অন্তর্র্বতী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ইতিমধ্যে ‘নতুন স্বপ্ন ও পরিকল্পনার’ ভিত্তিতে সংশোধিত শিক্ষাক্রম তৈরির নীতিগত আগ্রহের কথা প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে ‘প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তি দায়, দরদ, ইনসাফ’ ইত্যাদি বিবেচনায় থাকবে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়ে উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, এ জন্য ‘বর্তমানের যে শিক্ষাক্রম তার থেকে মুক্তচিন্তা করতে হবে। সেটা যেন করা সম্ভব হয়, তার জন্য নিজেদের ও অংশীজনদের মধ্যে আলোচনা এবং জাতীয় ঐকমত্যের বোধ হয় একটা প্রয়োজন রয়েছে। এদিকে, সূত্র বলছে, পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম প্রণয়নের বিষয়টি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমে কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে বা কোন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে, তা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অন্যতম কারণ দেশে রাজনৈতিক সরকার নেই। জুন মাসে শিক্ষাক্রম বিষয়ে একটি কর্মশালা হওয়ার কথা ছিল, তা পিছিয়ে চলতি মাসে করা হবে।
এর আগে, আওয়ামী লীগ সরকারের শেষদিকে ২০২৩ সাল থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়। পরের বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে তা চালু হয়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী এ বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালুর মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই সেই নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে অন্তর্র্বতী সরকার। একই সঙ্গে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম পুনর্বহাল করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। তবে প্রাথমিকে কার্যত নতুন শিক্ষাক্রমই বহাল রাখা হয়েছে। এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষাক্রম তৈরির বিষয়টি মূলত নির্ভর করে রাজনৈতিক সরকারের ওপর। কেননা শিক্ষাক্রমের অনেক কিছুই নির্ভর করে সরকারের প্রত্যাশা ও নির্দেশনার ওপর। এ জন্য ধীরে চলো নীতি নিয়েছে এনসিটিবি। তাঁরা আরও বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে নানা আলোচনা আর কর্মশালা হলেও অন্তর্র্বতী সরকারের আমলে তা প্রণয়ন করা সম্ভব হবে না। কারণ শিক্ষাক্রম প্রণয়নের বিষয়ে অনেক সিদ্ধান্তই হয় রাজনৈতিক সরকারের প্রত্যাশার ভিত্তিতে।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, ২০২৭ সালে যাতে ষষ্ঠ শ্রেণি নতুন (পরিমার্জিত) শিক্ষাক্রমের আওতায় আসে, সে বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে। একসঙ্গে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা সুচিন্তিত নয়। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের আওতায় যাবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআরের অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, নানা কারণে আগের সরকারের নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এখন সেই ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম অনুযায়ী চলছে পাঠদান। সামাজিক প্রেক্ষাপট, অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনসহ নানা কারণে শিক্ষাক্রম পরিবর্তন জরুরি। সবকিছু চিন্তা করে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হবে। শিক্ষাক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন ঠিক নয়, যা শেষ শিক্ষাক্রমে করা হয়েছিল, সে পরিবর্তনটা টেকসই হয়নি। সুতরাং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পদক্ষেপ নিতে হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে ২০২৭ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চালুর। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা রয়েছে প্রথমে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণিতে এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের। পরে ধাপে ধাপে অন্য শ্রেণিতে তা বাস্তবায়ন করা হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ফের বদলে যাচ্ছে এনসিটিবির শিক্ষাক্রম

আপডেট সময় : ০৭:৪০:২১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫

 

  • ২০২৭ সালে ষষ্ঠ শ্রেণি দিয়ে পরিমার্জন শুরুর ইচ্ছা
  • পরিমার্জিত’ শিক্ষাক্রম তৈরির কাজ শুরু এনসিটিবির
  • যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম তৈরির তাগিদ শিক্ষাবিদদের

 

আবারো দেশের শিক্ষাক্রম ‘পরিমার্জন’ করার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা সরকারের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ‘পরিমার্জিত’ শিক্ষাক্রম তৈরি করার লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাক্রম যাচাই করা হচ্ছে। এ কাজে যুক্ত করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের তালিকা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ২০২৭ সালে পরিমার্জিত এ শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হতে পারে। এ জন্য নানা কিছু যাচাইয়ের কাজ (অ্যাসেসমেন্ট) শুরু হয়েছে। প্রথমে ষষ্ঠ শ্রেণিতে এ শিক্ষাক্রম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। পরে ধাপে ধাপে তা অন্য শ্রেণিতেও চালু করা হবে। শিক্ষা সংশি¬ষ্টরা বলছেন, সামাজিক প্রেক্ষাপট, অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনসহ নানা কারণে শিক্ষাক্রম পরিবর্তন জরুরি। সবকিছু চিন্তা করে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হবে। তারা বলছেন, শিক্ষাক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন ঠিক নয়, যা শেষ শিক্ষাক্রমে করা হয়েছিল, সে পরিবর্তনটা টেকসই হয়নি। সুতরাং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এনসিটিবি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে, অন্তর্র্বতী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ইতিমধ্যে ‘নতুন স্বপ্ন ও পরিকল্পনার’ ভিত্তিতে সংশোধিত শিক্ষাক্রম তৈরির নীতিগত আগ্রহের কথা প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে ‘প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তি দায়, দরদ, ইনসাফ’ ইত্যাদি বিবেচনায় থাকবে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়ে উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, এ জন্য ‘বর্তমানের যে শিক্ষাক্রম তার থেকে মুক্তচিন্তা করতে হবে। সেটা যেন করা সম্ভব হয়, তার জন্য নিজেদের ও অংশীজনদের মধ্যে আলোচনা এবং জাতীয় ঐকমত্যের বোধ হয় একটা প্রয়োজন রয়েছে। এদিকে, সূত্র বলছে, পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম প্রণয়নের বিষয়টি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমে কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে বা কোন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে, তা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অন্যতম কারণ দেশে রাজনৈতিক সরকার নেই। জুন মাসে শিক্ষাক্রম বিষয়ে একটি কর্মশালা হওয়ার কথা ছিল, তা পিছিয়ে চলতি মাসে করা হবে।
এর আগে, আওয়ামী লীগ সরকারের শেষদিকে ২০২৩ সাল থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়। পরের বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে তা চালু হয়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী এ বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালুর মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই সেই নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে অন্তর্র্বতী সরকার। একই সঙ্গে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম পুনর্বহাল করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। তবে প্রাথমিকে কার্যত নতুন শিক্ষাক্রমই বহাল রাখা হয়েছে। এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষাক্রম তৈরির বিষয়টি মূলত নির্ভর করে রাজনৈতিক সরকারের ওপর। কেননা শিক্ষাক্রমের অনেক কিছুই নির্ভর করে সরকারের প্রত্যাশা ও নির্দেশনার ওপর। এ জন্য ধীরে চলো নীতি নিয়েছে এনসিটিবি। তাঁরা আরও বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে নানা আলোচনা আর কর্মশালা হলেও অন্তর্র্বতী সরকারের আমলে তা প্রণয়ন করা সম্ভব হবে না। কারণ শিক্ষাক্রম প্রণয়নের বিষয়ে অনেক সিদ্ধান্তই হয় রাজনৈতিক সরকারের প্রত্যাশার ভিত্তিতে।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, ২০২৭ সালে যাতে ষষ্ঠ শ্রেণি নতুন (পরিমার্জিত) শিক্ষাক্রমের আওতায় আসে, সে বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে। একসঙ্গে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা সুচিন্তিত নয়। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের আওতায় যাবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআরের অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, নানা কারণে আগের সরকারের নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এখন সেই ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম অনুযায়ী চলছে পাঠদান। সামাজিক প্রেক্ষাপট, অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনসহ নানা কারণে শিক্ষাক্রম পরিবর্তন জরুরি। সবকিছু চিন্তা করে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হবে। শিক্ষাক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন ঠিক নয়, যা শেষ শিক্ষাক্রমে করা হয়েছিল, সে পরিবর্তনটা টেকসই হয়নি। সুতরাং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পদক্ষেপ নিতে হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে ২০২৭ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চালুর। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা রয়েছে প্রথমে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণিতে এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের। পরে ধাপে ধাপে অন্য শ্রেণিতে তা বাস্তবায়ন করা হবে।