- একদিনেই সাত ব্যাংক থেকে কেনা হয় ৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার
- চূড়ান্ত হলো সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের নতুন লোগো
চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে সর্বমোট ১০০ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলার ক্রয় করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল মঙ্গলবার একদিনেই দেশের সাতটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত ৮ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার কেনা হয়েছে। এদিকে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও তারল্য সংকটে বিপর্যস্ত শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংক একীভূত হয়ে গঠিত ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’ তাদের নতুন প্রাতিষ্ঠানিক লোগো চূড়ান্ত করেছে। গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের সাতটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত আরও ৮ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার ক্রয় করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতি ডলারের বিনিময় হার ও কাট-অফ হার ছিল ১২২ টাকা ৩০ পয়সা। সর্বশেষ এ ক্রয়ের ফলে ডিসেম্বর মাসে সর্বমোট ডলার কেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০০ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলার, যা এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এছাড়া চলতি ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) মোট ডলার ক্রয় হয়েছে ৩১৩ কোটি ৫৫ লাখ মার্কিন ডলার, যা প্রায় ৩.১৪ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, গতকাল মঙ্গলবার একদিনেই দেশের সাতটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে মোট ৮ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার কেনা হয়েছে। এতে ডিসেম্বর মাস ও চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ডলার ক্রয়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অপর এক বিবৃতিতে বলা হয়, দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও তারল্য সংকটে বিপর্যস্ত শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংক একীভূত হয়ে গঠিত ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’ তাদের নতুন প্রাতিষ্ঠানিক লোগো চূড়ান্ত করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এই লোগোটি ব্যাংকটির পুনর্গঠন, শাসন সংস্কার এবং আমানতকারীদের হারানো আস্থা পুনরুদ্ধারের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক, এই পাঁচ সংকটগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সরাসরি তত্ত্বাবধানে গঠিত হয়েছে এই নতুন ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নতুন লোগোর মাধ্যমে ব্যাংকটি বিতর্কিত পুরোনো পরিচয় মুছে একটি স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ ব্যাংকিং কাঠামো গড়ে তোলার বার্তা দিচ্ছে।
আমানত সুরক্ষা ও রেজল্যুশন স্কিম : ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর আওতায় নজিরবিহীন এই একীভূতকরণ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। আমানতকারীদের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সমন্বিত রেজল্যুশন স্কিম চূড়ান্ত করেছে। স্কিম অনুযায়ী, ক্ষুদ্র আমানতকারীরা তাদের ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত যেকোনও সময় উত্তোলন করতে পারবেন। বড় অংকের আমানতের ক্ষেত্রে কিস্তিতে অর্থ পরিশোধ করা হবে। তবে প্রথম ২ লাখ টাকা তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যাবে এবং বাকি অংশ নির্দিষ্ট ধাপে দেওয়া হবে। স্থায়ী আমানত (এফডিআর) স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়নের সুবিধা থাকছে এবং গুরুতর অসুস্থ আমানতকারীদের জন্য মানবিক বিবেচনায় বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
করপোরেট কাঠামো ও পরিচালনা : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ৪০ হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৩৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক মনোনীত সাত সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকটির কার্যক্রম তদারকি করছে। এছাড়া বেইল-ইন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার আমানতকে ‘খ-শ্রেণির’ শেয়ারে রূপান্তর করা হয়েছে, যা ব্যাংকটির মূলধন ভিত্তি শক্তিশালী করবে।
সংবাদ সম্মেলন স্থগিত : সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের বিস্তারিত কার্যক্রম ও রেজল্যুশন স্কিম নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে একটি জরুরি সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে এই আয়োজন নির্ধারিত থাকলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণার কারণে তা বাতিল করা হয়েছে।


























