০৬:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে বর্ষনে ভেসেছে পুকুরের মাছ, ক্ষেতে নেই সবজি, ডুবেছে আমনের ক্ষেত

  • সবুজ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০১:০৫:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ অক্টোবর ২০২৩
  • 101

পুকুরের মাছ পুকুরে নেই, সবজি নেই সবজিা ক্ষেতে। গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন রাজশাহীর মাছ ও শীতকালী আগাম সবজি চাষীরা। টানা কয়েক মাসে অনাবৃষ্টি আর প্রচণ্ড
তাপদাহের ফলে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গিয়েছিল। বর্ষা মৌসুম পেরিয়ে গেলেও দেখা মেলেনি কাঙ্খিত বৃষ্টির। আবহাওয়ার এই বৈরীতায় আমন চাষ নিয়ে সংকটে পড়েছিলেন কৃষকরা। কিন্তু একদিনের ভারী বৃষ্টিতে          তলিয়ে গেছে কৃষকদের স্বপ্ন।
এক দিনের এ বৃষ্টিপাত ১০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বুধবার বেলা রাত থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ১টা পর্যন্ত ২৪৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে
গত ২৪ সেপ্টেম্বর এই মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ৪৩ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়। তার আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর ৩০ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল।
আর্থিকভাবে মুনাফা লাভ ও স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় এই এলাকার অধিকাংশ কৃষক বাড়ির আশপাশে পতিতসহ কৃষি জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করে থাকেন।এরই ধারবাহিকতায় এবার ফুলকপি, পাতাকপি, সীম, মূলা, কাঁচামরিচ, টমেটো, বরবটি, বেগুন, পালংশাক, লালশাক ও লাউ চাষ করেছেন তারা। সবজি খেতগুলো সবুজ শ্যামল ছায়ায় ঢেকে গেছে। কিন্তু বুধবারের টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে বেশির ভাগ সবজির খেত।
অতিবৃষ্টির ফলে মোহনপুর উপজেলার সবজিগ্রাম খ্যাত ধুরইল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার মাঠে থাকা আগাম সবজির ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সবজি চাষিরা। সেই সঙ্গে নুইয়ে পড়েছে সবজি গাছের চারা
এবং পচতে শুরু করেছে। সবজি চাষি কুরবান আলী বলেন, আমি একটি বেসরকারি এনজিও থেকে
ঋণ নিয়ে পাঁচ একর জমিতে আগাম জাতের ফুলকপি চাষ করেছি।
প্রতিটি গাছ বেড়ে উঠেছিল কিন্তু বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে ফুলকপির গাছগুলো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এবং নুইয়ে পড়েছে মাটির সঙ্গে। একই কথা বলেন আরো কয়েকজন সবজি চাষি।
এদিকে, টানা ভারী বর্ষনের কারনে বন্যায় জেলার তানোর উপজেলায় ডুবেছে কৃষকদের রক্তঘামের ফসল রোপা আমন ধান। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত টানা ভারি বর্ষণে ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে জনসাধারণ। এ উপজেলার চান্দুড়িয়া, কামারগা, পাঁচন্দর ও কলমা ইউনিয়ন এবং তানোর পৌরসভায় রোপা আমন ধান ডুবেছে, ডুবতেই আছে। একারণে হতাশায় কপালে ভাঁজ পড়েছে কৃষকদের।

এ অঞ্চলে রোপা আমন রোপনের সময় বৃষ্টির পানির দেখা ছিল না। আষাঢ়, শ্রাবন ও ভাদ্র মাসেও এত পরিমান বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু আশ্বিন মাসের প্রথম দিকে তেমন বৃষ্টি না হলে প্রায় ৮/১০ দিন ধরে মাঝারি ভারি বৃষ্টি হতেই আছে । কিন্তু বুধবারের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতে ধান চাষের অন্যতম বিলকুমারী বিলের পানি বাড়তেই আছে। শুধু তাই না উজান থেকে নামতেই আছে পানির স্রোত। যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই থইথই করছে পানি।
কৃষকরা বলছেন, যে পরিমান পানি হয়েছে বছরের মধ্যে এত পরিমান বৃষ্টি হয়নি। নিচের জমিগুলো ডুবে গেছে, রোপা আমনের মারাত্মক ক্ষতি সাধন হবে যা আমাদের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। শুধু রোপা আমনের ক্ষতি না
পুকুরের মাছ বের হয়েছে প্রচুর পরিমানে। টানা বৃষ্টির কারনে সবজি খেতও ক্ষতির মুখে পড়েছে। এদিকে, স্থানীয় মৎস্য অফিসে তথ্য না পাওয়া গেলেও মৎস্য চাষিদের তথ্য অনুযায়ী, ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে ভেসে গেছে রাজশাহী নগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হওয়া প্রায় ১০ হাজার পুকুরের মাছ। এতে মৎস্য খামারিদের ক্ষতি প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। একইভাবে পানিতে নষ্ট হয়েছে প্রায় ১০ হাজার একর জমির বর্ষাকালীন শাকসবজি। এতে মাছ ও শাকসবজির ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, বর্ষণকে পুজি কওে রাজশাহীর বাজারগুলোতে শাকসবজির প্রচুর সরবরাহ থাকলেও এখন সরবরাহে ঘাটতি। এই সুযোগে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এলাকার সবজি ক্ষেত পানিতে ভেসে গেছে। অন্য অঞ্চল থেকে সবজি এনে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই দাম বেড়ে  গেছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

রাজশাহীতে বর্ষনে ভেসেছে পুকুরের মাছ, ক্ষেতে নেই সবজি, ডুবেছে আমনের ক্ষেত

আপডেট সময় : ০১:০৫:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ অক্টোবর ২০২৩

পুকুরের মাছ পুকুরে নেই, সবজি নেই সবজিা ক্ষেতে। গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন রাজশাহীর মাছ ও শীতকালী আগাম সবজি চাষীরা। টানা কয়েক মাসে অনাবৃষ্টি আর প্রচণ্ড
তাপদাহের ফলে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গিয়েছিল। বর্ষা মৌসুম পেরিয়ে গেলেও দেখা মেলেনি কাঙ্খিত বৃষ্টির। আবহাওয়ার এই বৈরীতায় আমন চাষ নিয়ে সংকটে পড়েছিলেন কৃষকরা। কিন্তু একদিনের ভারী বৃষ্টিতে          তলিয়ে গেছে কৃষকদের স্বপ্ন।
এক দিনের এ বৃষ্টিপাত ১০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বুধবার বেলা রাত থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ১টা পর্যন্ত ২৪৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে
গত ২৪ সেপ্টেম্বর এই মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ৪৩ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়। তার আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর ৩০ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল।
আর্থিকভাবে মুনাফা লাভ ও স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় এই এলাকার অধিকাংশ কৃষক বাড়ির আশপাশে পতিতসহ কৃষি জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করে থাকেন।এরই ধারবাহিকতায় এবার ফুলকপি, পাতাকপি, সীম, মূলা, কাঁচামরিচ, টমেটো, বরবটি, বেগুন, পালংশাক, লালশাক ও লাউ চাষ করেছেন তারা। সবজি খেতগুলো সবুজ শ্যামল ছায়ায় ঢেকে গেছে। কিন্তু বুধবারের টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে বেশির ভাগ সবজির খেত।
অতিবৃষ্টির ফলে মোহনপুর উপজেলার সবজিগ্রাম খ্যাত ধুরইল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার মাঠে থাকা আগাম সবজির ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সবজি চাষিরা। সেই সঙ্গে নুইয়ে পড়েছে সবজি গাছের চারা
এবং পচতে শুরু করেছে। সবজি চাষি কুরবান আলী বলেন, আমি একটি বেসরকারি এনজিও থেকে
ঋণ নিয়ে পাঁচ একর জমিতে আগাম জাতের ফুলকপি চাষ করেছি।
প্রতিটি গাছ বেড়ে উঠেছিল কিন্তু বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে ফুলকপির গাছগুলো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এবং নুইয়ে পড়েছে মাটির সঙ্গে। একই কথা বলেন আরো কয়েকজন সবজি চাষি।
এদিকে, টানা ভারী বর্ষনের কারনে বন্যায় জেলার তানোর উপজেলায় ডুবেছে কৃষকদের রক্তঘামের ফসল রোপা আমন ধান। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত টানা ভারি বর্ষণে ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে জনসাধারণ। এ উপজেলার চান্দুড়িয়া, কামারগা, পাঁচন্দর ও কলমা ইউনিয়ন এবং তানোর পৌরসভায় রোপা আমন ধান ডুবেছে, ডুবতেই আছে। একারণে হতাশায় কপালে ভাঁজ পড়েছে কৃষকদের।

এ অঞ্চলে রোপা আমন রোপনের সময় বৃষ্টির পানির দেখা ছিল না। আষাঢ়, শ্রাবন ও ভাদ্র মাসেও এত পরিমান বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু আশ্বিন মাসের প্রথম দিকে তেমন বৃষ্টি না হলে প্রায় ৮/১০ দিন ধরে মাঝারি ভারি বৃষ্টি হতেই আছে । কিন্তু বুধবারের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতে ধান চাষের অন্যতম বিলকুমারী বিলের পানি বাড়তেই আছে। শুধু তাই না উজান থেকে নামতেই আছে পানির স্রোত। যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই থইথই করছে পানি।
কৃষকরা বলছেন, যে পরিমান পানি হয়েছে বছরের মধ্যে এত পরিমান বৃষ্টি হয়নি। নিচের জমিগুলো ডুবে গেছে, রোপা আমনের মারাত্মক ক্ষতি সাধন হবে যা আমাদের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। শুধু রোপা আমনের ক্ষতি না
পুকুরের মাছ বের হয়েছে প্রচুর পরিমানে। টানা বৃষ্টির কারনে সবজি খেতও ক্ষতির মুখে পড়েছে। এদিকে, স্থানীয় মৎস্য অফিসে তথ্য না পাওয়া গেলেও মৎস্য চাষিদের তথ্য অনুযায়ী, ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে ভেসে গেছে রাজশাহী নগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হওয়া প্রায় ১০ হাজার পুকুরের মাছ। এতে মৎস্য খামারিদের ক্ষতি প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। একইভাবে পানিতে নষ্ট হয়েছে প্রায় ১০ হাজার একর জমির বর্ষাকালীন শাকসবজি। এতে মাছ ও শাকসবজির ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, বর্ষণকে পুজি কওে রাজশাহীর বাজারগুলোতে শাকসবজির প্রচুর সরবরাহ থাকলেও এখন সরবরাহে ঘাটতি। এই সুযোগে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এলাকার সবজি ক্ষেত পানিতে ভেসে গেছে। অন্য অঞ্চল থেকে সবজি এনে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই দাম বেড়ে  গেছে।