১০:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কর্মজীবী নারীর সংখ্যা কমছে

  • কর্মক্ষেত্রে নারীর অনুকূল পরিবেশ না থাকা
  • পারিবারিক ও সামাজিক চাপ, নিরাপত্তাহীনতা
  • শ্রমশক্তি থেকে ছিটকে গেল ২৮ লাখের বেশি নারী
  • শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ কমেছে ২.৮৮ মিলিয়ন নারীর
  • দুই লাখ নারীর প্রশিক্ষণে ৩৯৫ কোটির প্রকল্প অনুমোদন

কর্মক্ষেত্রে নারীর অনুকূল পরিবেশ না থাকা, পারিবারিক ও সামাজিক চাপ, নিরাপত্তাহীনতা এবং সমান সুযোগের অভাব-সব মিলিয়ে শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ কমছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে ফাঁকা বুলি আওড়ালেও বাস্তব চিত্র আড়ালে রাখা হয়েছে। ক্ষমতার পরিবর্তনে এখন আসল চিত্র উঠে আসছে। সেটা বিবিএসের জরিপেও স্পষ্ট। এতে কার্যত বিপাকে পড়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পরিস্থিতি উত্তরণে উদ্যোগ নেওয়া হলেও পূর্বের ক্ষত সারাতে হিমশিম খাচ্ছে।
সম্প্রতি দেশের অন্তত ২ লাখ ৮ হাজার ৩২০ জন নারীকে কর্মসংস্থানের আওতায় আনতে ৩৯৫ কোটি ৮৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকার সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান সরকার একটি স্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করতে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে। যদিও সময় স্বল্পতার কারণে তা বাস্তবায়নের সুযোগ হয়ত এই সরকার পাবে না। তবে পরবর্তী সময়ে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে যারা ক্ষমতায় আসবে, তাদের জন্য একটা পথ তৈরি হবে। নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি দারিদ্র্য দূরীকরণেও প্রকল্পটি সরাসরি ভূমিকা রাখবে। দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত নারীর সক্ষমতা বৃদ্ধি, উদ্যোক্তা তৈরির জন্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি ও আত্মনির্ভরশীল জনশক্তিতে রূপান্তর করে দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নারীদের সম্পৃক্ত করা হবে। এর ফলে তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র, চরম অভাবগ্রস্ত ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য বলছে, ১৩তম আইসিএলএস অনুযায়ী, ২০২৪ সালের তৃতীয় কোয়ার্টারে দেশের মোট শ্রমশক্তি দাঁড়িয়েছে ৭০ দশমিক ০৬ মিলিয়ন, যেখানে পুরুষের সংখ্যা ৪৭ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন এবং নারীর সংখ্যা ২২ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন। ২০২৩ সালের তৃতীয় কোয়ার্টারে শ্রমশক্তি ছিল ৭৩ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন, এর মধ্যে পুরুষ ৪৭ দশমিক ৯৯ মিলিয়ন এবং নারী ২৫ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন। বছরের ব্যবধানে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে ২ দশমিক ৮৮ মিলিয়ন বা ২৮ লাখ ৮০ হাজার। ২০২৩ সালের বার্ষিক হিসাবে শ্রমশক্তি দাঁড়িয়েছিল ৭৩ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন, যেখানে পুরুষের সংখ্যা ৪৮ দশমিক ১২ মিলিয়ন এবং নারীর সংখ্যা ২৫ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন। অন্যদিকে ২০২২ সালের বার্ষিক হিসাবে শ্রমশক্তি ছিল ৭৩ দশমিক ০৫ মিলিয়ন, যার মধ্যে পুরুষ ৪৭ দশমিক ২৭ মিলিয়ন এবং নারী ২৫ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন। অর্থাৎ শ্রমশক্তিতে উদ্বেগজনক হারে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে। নারীদের জন্য আত্মকর্মসংস্থানের দুয়ার খুলতে ‘উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ প্রকল্প (২য় পর্যায়)’ অনুমোদন দিয়েছে একনেক। ২০২৫ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২৮ সালের জুনে শেষ হবে এই প্রকল্পের কার্যক্রম। ৬৪ জেলার ৪৩৪ উপজেলায় এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলবে। অংশগ্রহণকারী নারীরা হবেন ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী। আর প্রতিটি প্রশিক্ষণই হবে ন্যূনতম ৩৬০ ঘণ্টার। যা জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত কারিকুলাম ও প্রশিক্ষকের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ৪৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ অর্থাৎ ১৮৭ কোটি ৪৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতা বাবদ প্রদান করা হবে। যা প্রশিক্ষণপরবর্তী আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগকে নিশ্চিত করবে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা। আমাদের দেশে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রদর্শনের প্রবণতা রয়েছে। দেশে নারীর জন্য কর্মের সুযোগ রাখা বা সৃষ্টি ও বাস্তবিক যে ব্যবস্থা থাকা দরকার, তা কার্যত খুবই নগণ্য। নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে সরকার থেকে বেসরকারি উদ্যোগ এখানে বেশি তৎপর। শ্রমশক্তির হার ও নারীর ক্ষমতায়ের চিত্র শুধু বহির্বিশ্বে দেখানোর জন্য না হয়, সত্যিকার্থে হয়, সে লক্ষে সরকারকে কাজ করতে হবে। জানা গেছে, নারীদের ঘরের কাজের পাশাপাশি আয়বর্ধক কার্যক্রমে যুক্ত করতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ‘উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষন (১ম পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। প্রথম পর্যায়ে এ প্রকল্পের আওতায় ৫০ হাজার নারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় ও তাদের পণ্যের বিপণনের জন্য সেলস ও ডিসপ্লে সেন্টার এবং বিউটি পার্লার স্থাপন করা হয়। যা নারীদের আত্মকর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর ধারাবাহিকতা রক্ষায় নারীদের সরাসরি কর্মসংস্থানে যুক্ত করে পরিবার ও জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ে বর্ধিত কলেবরে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। বিবিএসের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ বলছে, নারীদের শ্রমশক্তিতে শহর ও গ্রামের মধ্যে ব্যবধান রয়ে গেছে গভীর। বিশেষত গ্রামীণ নারীরা এখনো অনেক ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। নতুন এই প্রকল্প তাদের জন্যই খুলে দিচ্ছে প্রশিক্ষণ ও আয়ের দরজা। তিন বছরের এই পরিকল্পনা শুধু পরিসংখ্যানের অঙ্ক বদলাবে না, বদলে দেবে জীবনের সমীকরণ। জানা যায়, গতানুগতিক ধারার বাইরে প্রকৃতার্থেই প্রশিক্ষণ পরবর্তী কর্মসংস্থান তৈরি হয়, সেভাবেই প্রকল্পটি সাজানো হয়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে থাকবে কঠোর নজরদারি। প্রতিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আইপি ক্যামেরা ও ব-সড়হরঃড়ৎরহম ব্যবস্থা থাকবে। যা প্রশিক্ষণের মান ও উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে। প্রশিক্ষণের পর স্মার্ট ডাটাবেজ তৈরি করে তার ধারাবাহিক আপডেট রাখা হবে। যাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীদের কর্মজীবনে অগ্রগতি নিরীক্ষণ করা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘আমাদের দেশে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রদর্শনের প্রবণতা রয়েছে। দেশে নারীর জন্য কর্মের সুযোগ রাখা বা সৃষ্টি ও বাস্তবিক যে ব্যবস্থা থাকা দরকার, তা কার্যত খুবই নগণ্য। নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে সরকার থেকে বেসরকারি উদ্যোগ এখানে বেশি তৎপর। শ্রমশক্তির হার ও নারীর ক্ষমতায়ের চিত্র শুধু বহির্বিশ্বে দেখানোর জন্য না হয়, সত্যিকার্থে হয়, সে লক্ষে সরকারকে কাজ করতে হবে। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। তাদের পেছনে রেখে উন্নয়ন সম্ভব না। শ্রমশক্তিতেও তাদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু বিবিএসের জরিপে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা খুবই উদ্বেগের বিষয়। অর্থনীতির জন্যও অশনি সংকেত। বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সচিব ড. কাইয়ুম আরা বেগম জানান, নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি দারিদ্র্য দূরীকরণেও প্রকল্পটি সরাসরি ভূমিকা রাখবে। দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত নারীর সক্ষমতা বৃদ্ধি, উদ্যোক্তা তৈরির জন্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি ও আত্মনির্ভরশীল জনশক্তিতে রূপান্তর করে দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নারীদের সম্পৃক্ত করা হবে। এর ফলে তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র, চরম অভাবগ্রস্ত ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। তাদের পেছনে রেখে উন্নয়ন সম্ভব না। শ্রমশক্তিতেও তাদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু বিবিএসের জরিপে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা খুবই উদ্বেগের বিষয়। অর্থনীতির জন্যও অশনি সংকেত।

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

কাবা শরীফ চত্বরে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা এক ব্যক্তির

কর্মজীবী নারীর সংখ্যা কমছে

আপডেট সময় : ০৭:১৮:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
  • কর্মক্ষেত্রে নারীর অনুকূল পরিবেশ না থাকা
  • পারিবারিক ও সামাজিক চাপ, নিরাপত্তাহীনতা
  • শ্রমশক্তি থেকে ছিটকে গেল ২৮ লাখের বেশি নারী
  • শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ কমেছে ২.৮৮ মিলিয়ন নারীর
  • দুই লাখ নারীর প্রশিক্ষণে ৩৯৫ কোটির প্রকল্প অনুমোদন

কর্মক্ষেত্রে নারীর অনুকূল পরিবেশ না থাকা, পারিবারিক ও সামাজিক চাপ, নিরাপত্তাহীনতা এবং সমান সুযোগের অভাব-সব মিলিয়ে শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ কমছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে ফাঁকা বুলি আওড়ালেও বাস্তব চিত্র আড়ালে রাখা হয়েছে। ক্ষমতার পরিবর্তনে এখন আসল চিত্র উঠে আসছে। সেটা বিবিএসের জরিপেও স্পষ্ট। এতে কার্যত বিপাকে পড়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পরিস্থিতি উত্তরণে উদ্যোগ নেওয়া হলেও পূর্বের ক্ষত সারাতে হিমশিম খাচ্ছে।
সম্প্রতি দেশের অন্তত ২ লাখ ৮ হাজার ৩২০ জন নারীকে কর্মসংস্থানের আওতায় আনতে ৩৯৫ কোটি ৮৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকার সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান সরকার একটি স্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করতে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে। যদিও সময় স্বল্পতার কারণে তা বাস্তবায়নের সুযোগ হয়ত এই সরকার পাবে না। তবে পরবর্তী সময়ে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে যারা ক্ষমতায় আসবে, তাদের জন্য একটা পথ তৈরি হবে। নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি দারিদ্র্য দূরীকরণেও প্রকল্পটি সরাসরি ভূমিকা রাখবে। দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত নারীর সক্ষমতা বৃদ্ধি, উদ্যোক্তা তৈরির জন্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি ও আত্মনির্ভরশীল জনশক্তিতে রূপান্তর করে দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নারীদের সম্পৃক্ত করা হবে। এর ফলে তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র, চরম অভাবগ্রস্ত ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য বলছে, ১৩তম আইসিএলএস অনুযায়ী, ২০২৪ সালের তৃতীয় কোয়ার্টারে দেশের মোট শ্রমশক্তি দাঁড়িয়েছে ৭০ দশমিক ০৬ মিলিয়ন, যেখানে পুরুষের সংখ্যা ৪৭ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন এবং নারীর সংখ্যা ২২ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন। ২০২৩ সালের তৃতীয় কোয়ার্টারে শ্রমশক্তি ছিল ৭৩ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন, এর মধ্যে পুরুষ ৪৭ দশমিক ৯৯ মিলিয়ন এবং নারী ২৫ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন। বছরের ব্যবধানে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে ২ দশমিক ৮৮ মিলিয়ন বা ২৮ লাখ ৮০ হাজার। ২০২৩ সালের বার্ষিক হিসাবে শ্রমশক্তি দাঁড়িয়েছিল ৭৩ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন, যেখানে পুরুষের সংখ্যা ৪৮ দশমিক ১২ মিলিয়ন এবং নারীর সংখ্যা ২৫ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন। অন্যদিকে ২০২২ সালের বার্ষিক হিসাবে শ্রমশক্তি ছিল ৭৩ দশমিক ০৫ মিলিয়ন, যার মধ্যে পুরুষ ৪৭ দশমিক ২৭ মিলিয়ন এবং নারী ২৫ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন। অর্থাৎ শ্রমশক্তিতে উদ্বেগজনক হারে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে। নারীদের জন্য আত্মকর্মসংস্থানের দুয়ার খুলতে ‘উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ প্রকল্প (২য় পর্যায়)’ অনুমোদন দিয়েছে একনেক। ২০২৫ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২৮ সালের জুনে শেষ হবে এই প্রকল্পের কার্যক্রম। ৬৪ জেলার ৪৩৪ উপজেলায় এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলবে। অংশগ্রহণকারী নারীরা হবেন ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী। আর প্রতিটি প্রশিক্ষণই হবে ন্যূনতম ৩৬০ ঘণ্টার। যা জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত কারিকুলাম ও প্রশিক্ষকের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ৪৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ অর্থাৎ ১৮৭ কোটি ৪৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতা বাবদ প্রদান করা হবে। যা প্রশিক্ষণপরবর্তী আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগকে নিশ্চিত করবে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা। আমাদের দেশে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রদর্শনের প্রবণতা রয়েছে। দেশে নারীর জন্য কর্মের সুযোগ রাখা বা সৃষ্টি ও বাস্তবিক যে ব্যবস্থা থাকা দরকার, তা কার্যত খুবই নগণ্য। নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে সরকার থেকে বেসরকারি উদ্যোগ এখানে বেশি তৎপর। শ্রমশক্তির হার ও নারীর ক্ষমতায়ের চিত্র শুধু বহির্বিশ্বে দেখানোর জন্য না হয়, সত্যিকার্থে হয়, সে লক্ষে সরকারকে কাজ করতে হবে। জানা গেছে, নারীদের ঘরের কাজের পাশাপাশি আয়বর্ধক কার্যক্রমে যুক্ত করতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ‘উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষন (১ম পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। প্রথম পর্যায়ে এ প্রকল্পের আওতায় ৫০ হাজার নারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় ও তাদের পণ্যের বিপণনের জন্য সেলস ও ডিসপ্লে সেন্টার এবং বিউটি পার্লার স্থাপন করা হয়। যা নারীদের আত্মকর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর ধারাবাহিকতা রক্ষায় নারীদের সরাসরি কর্মসংস্থানে যুক্ত করে পরিবার ও জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ে বর্ধিত কলেবরে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। বিবিএসের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ বলছে, নারীদের শ্রমশক্তিতে শহর ও গ্রামের মধ্যে ব্যবধান রয়ে গেছে গভীর। বিশেষত গ্রামীণ নারীরা এখনো অনেক ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। নতুন এই প্রকল্প তাদের জন্যই খুলে দিচ্ছে প্রশিক্ষণ ও আয়ের দরজা। তিন বছরের এই পরিকল্পনা শুধু পরিসংখ্যানের অঙ্ক বদলাবে না, বদলে দেবে জীবনের সমীকরণ। জানা যায়, গতানুগতিক ধারার বাইরে প্রকৃতার্থেই প্রশিক্ষণ পরবর্তী কর্মসংস্থান তৈরি হয়, সেভাবেই প্রকল্পটি সাজানো হয়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে থাকবে কঠোর নজরদারি। প্রতিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আইপি ক্যামেরা ও ব-সড়হরঃড়ৎরহম ব্যবস্থা থাকবে। যা প্রশিক্ষণের মান ও উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে। প্রশিক্ষণের পর স্মার্ট ডাটাবেজ তৈরি করে তার ধারাবাহিক আপডেট রাখা হবে। যাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীদের কর্মজীবনে অগ্রগতি নিরীক্ষণ করা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘আমাদের দেশে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রদর্শনের প্রবণতা রয়েছে। দেশে নারীর জন্য কর্মের সুযোগ রাখা বা সৃষ্টি ও বাস্তবিক যে ব্যবস্থা থাকা দরকার, তা কার্যত খুবই নগণ্য। নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে সরকার থেকে বেসরকারি উদ্যোগ এখানে বেশি তৎপর। শ্রমশক্তির হার ও নারীর ক্ষমতায়ের চিত্র শুধু বহির্বিশ্বে দেখানোর জন্য না হয়, সত্যিকার্থে হয়, সে লক্ষে সরকারকে কাজ করতে হবে। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। তাদের পেছনে রেখে উন্নয়ন সম্ভব না। শ্রমশক্তিতেও তাদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু বিবিএসের জরিপে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা খুবই উদ্বেগের বিষয়। অর্থনীতির জন্যও অশনি সংকেত। বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সচিব ড. কাইয়ুম আরা বেগম জানান, নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি দারিদ্র্য দূরীকরণেও প্রকল্পটি সরাসরি ভূমিকা রাখবে। দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত নারীর সক্ষমতা বৃদ্ধি, উদ্যোক্তা তৈরির জন্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি ও আত্মনির্ভরশীল জনশক্তিতে রূপান্তর করে দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নারীদের সম্পৃক্ত করা হবে। এর ফলে তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র, চরম অভাবগ্রস্ত ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। তাদের পেছনে রেখে উন্নয়ন সম্ভব না। শ্রমশক্তিতেও তাদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু বিবিএসের জরিপে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা খুবই উদ্বেগের বিষয়। অর্থনীতির জন্যও অশনি সংকেত।