১১:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মেডিকেল বর্জ্য বাণিজ্য সিন্ডিকেটে

  • নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে হাসপাতালের বর্জ্য বাইরে বিক্রি
  • হাসপাতাল, সিটি করপোরেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি চক্র
  • জীবাণুমুক্ত না করে চিকিৎসা সরঞ্জাম ফের ব্যবহারে ঝুঁকির মুখে জনস্বাস্থ্য

আইনের বিধিমালাতে ঘাটতি আছে। কিন্তু যতটুকু আছে, সেটারও যথাযথ প্রয়োগ হয় না। তাই যারা এসব নিয়ম মানছে না, তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে-ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি

অবৈধভাবে হাসপাতালের বর্জ্য বাইরে বিক্রি যেন ওপেন সিক্রেট। আর এক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না কোন নিয়মনীতি। এ অবৈধ কাজের পেছনে রয়েছে হাসপাতাল, সিটি করপোরেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি চক্র। চিকিৎসা বর্জ্যকে স্পর্শকাতর হিসেবে গণ্য করা হলেও বিষয়টি নিয়ে অনেকটাই উদাসীন হাসপাতালগুলো। যথাযথ প্রক্রিয়ায় জীবাণুমুক্ত না করে বর্জ্য থেকে সংগ্রহ করা চিকিৎসা সরঞ্জাম ফের ব্যবহার করায় ঝুঁকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। এ ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে শৃঙ্খলায় আনতে সরকার ২০০৮ সালে নীতিমালা প্রণয়ন করলেও তা রয়ে গেছে কেবল কাগজে-কলমেই। মাঠ পর্যায়ে এর খুব একটা প্রতিফলন নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি আধুনিক ও সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন, অর্থায়ন এবং তা বাস্তবায়ন জরুরি। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ এক করে উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। এ সমস্যার মোকাবেলায় চারটি বিষয়ে জোর দিতে হবে সচেতনতাকে অভ্যাসের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, সবার উদ্যোগের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা অর্জন, টেকসই সমাধানের কৌশল নির্ধারণ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মিলে এ সমন্বয়ের পদক্ষেপ নিতে পারে। টিআইবি বলছে, চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আইনের বিভিন্ন দুর্বলতা রয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশ অধিদফতর, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের আইনের বিধিমালাতে ঘাটতি আছে। কিন্তু যতটুকু আছে, সেটারও যথাযথ প্রয়োগ হয় না। তাই যারা এসব নিয়ম মানছে না, তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
এদিকে, দেশে প্রতিদিন যে পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে তার প্রায় ২০ শতাংশই মেডিকেল বর্জ্য। দেশের ১৫টি সরকারি হাসপাতালেই প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে ২১ টনের বেশি বর্জ্য। কিন্তু দৈনিক তৈরি হওয়া এত বিপুল পরিমাণ মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো কার্যকর উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি ৩৫টি জেলার সরকারি হাসপাতালে। ফলে বাড়ছে হেপাটাইসিস বি ও হেপাটাইসিস সি, যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া এমনকি এইডসের মতো রোগের প্রকোপও। এক গবেষণার ভিত্তিতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক বলছে, করোনাকালে শুধু কভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষের ব্যবহূত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী থেকে প্রতিদিন ২৮২ দশমিক ৪৫ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। যার পুরোটাই গৃহস্থালি বর্জ্যের সঙ্গে অপসারণ করা হয়। ২০২০ সালের মে মাসে শুধু ঢাকাতেই তিন হাজার টন মেডিকেল বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মেডিকেল বর্জ্য কতটা মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সে বছরের ২০ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে এ গবেষণাটি করা হয়। আবার দেশের চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রগুলোতে যে বর্জ্য উৎপন্ন হয়, তার মাত্র ১৪ দশমিক ১ শতাংশ সঠিক নিয়মে ব্যবস্থাপনার আওতায় ছিল। সেসবও মাত্র একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অপসারণ ও শোধন করা হয়। বর্জ্য আলাদা করার ব্যবস্থাপনা থাকলেও তা বিনষ্ট বা শোধন করার নিজস্ব কোনো ব্যবস্থাপনা নেই অধিকাংশ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের।
নীতিমালায় মেডিকেল বর্জ্য অপসারণ, ধ্বংস করা ও প্রক্রিয়াজাত নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও মানা হচ্ছে না মোটেও। তদারকির জন্য দায়িত্বশীলরা যেন দেখেও দেখেন না। ফলে মেডিকেল বর্জ্য নিয়ে ঝুঁকি এড়ানো যাচ্ছে না। অনুসন্ধান বলছে, হাসপাতালগুলো থেকে পাওয়া দুই ধরনের চিকিৎসাবর্জ্য অবৈধভাবে বাইরে বিক্রি হয়। এজন্য হাসপাতালগুলোতে রয়েছে আলাদা সিন্ডিকেট। চিকিৎসা কাজে ব্যবহৃত কাচের বোতল, সিরিঞ্জ, স্যালাইন ব্যাগ ও প্লাস্টিক নলসহ যেসব বর্জ্য নষ্ট করে ফেলার কথা তা চলে যায় অন্য একটি পক্ষের কাছে। পরবর্তীকালে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য সঠিক প্রক্রিয়ায় জীবাণুমুক্ত না করেই পরিষ্কার ও প্যাকেটজাত করে ওষুধের দোকান, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পৌঁছে যায়। এসব উপকরণ সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত না হলে পুনর্ব্যবহারে থাকে সংক্রামক রোগের ঝুঁকি। প্রায় একই অবস্থা পুনঃচক্রায়নযোগ্য চিকিৎসাবর্জ্যের ক্ষেত্রে। ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, ব্লেড, ছুরি, কাঁচি, রক্তের ব্যাগ ও নল, ধাতব উপকরণ নষ্ট না করে সংক্রামিত অবস্থাতেই ভাঙ্গারির দোকানে বিক্রি করা হয়। এসব বর্জ্য পরিবহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের থাকে বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। শুধু মেডিকেল বর্জ্যকে ঘিরে পুরান ঢাকার চকবাজার ও লালবাগ এলাকায় গড়ে উঠেছে শতাধিক ভাঙ্গারির দোকান। এর মধ্যে নামাপাড়া, টাইগার গলি, ইসলামবাগ, বাঁশপট্টি, শহীদ নগর, কিল্লার মোড় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব এলাকায় গড়ে ওঠা ছোট ছোট দোকানে মজুত রাখা হয়েছে পরিত্যক্ত স্যালাইন, সিরিঞ্জ, নল, যা অরক্ষিতভাবে বাছাই করছে শিশু থেকে বিভিন্ন বয়সি মানুষ।
উল্লেখ্য, পরিকল্পনা কমিশনের তথ্যমতে, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করে এমন ধারণা নিয়ে হাসপাতালগুলোকে শ্রেণীকরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে দৈনিক ‘এ’ ক্যাটাগরির হাসপাতালে ১২ টন, ‘বি’ ক্যাটাগরির হাসপাতালে ৫ টন এবং ‘সি’ ক্যাটাগরির হাসপাতালে ৩ দশমিক ৫ টন বর্জ্য অপসারণ করা প্রয়োজন। দূষণকারীর তালিকায় এ ক্যাটাগরিতে আছে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত চারটি হাসপাতাল। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে আছে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। অন্যদিকে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতাল, মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতাল, বান্দরবান জেলা সদর হাসপাতাল, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল, বাগেরহাট সদর হাসপাতাল, লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল, জয়পুরহাট আধুনিক সদর হাসপাতাল, পঞ্চগড় সদর হাসপাতাল, পিরোজপুর সদর হাসপাতাল ও শেরপুর সদর হাসপাতাল।

জনপ্রিয় সংবাদ

মেডিকেল বর্জ্য বাণিজ্য সিন্ডিকেটে

আপডেট সময় : ০৭:১৯:৫১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫
  • নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে হাসপাতালের বর্জ্য বাইরে বিক্রি
  • হাসপাতাল, সিটি করপোরেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি চক্র
  • জীবাণুমুক্ত না করে চিকিৎসা সরঞ্জাম ফের ব্যবহারে ঝুঁকির মুখে জনস্বাস্থ্য

আইনের বিধিমালাতে ঘাটতি আছে। কিন্তু যতটুকু আছে, সেটারও যথাযথ প্রয়োগ হয় না। তাই যারা এসব নিয়ম মানছে না, তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে-ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি

অবৈধভাবে হাসপাতালের বর্জ্য বাইরে বিক্রি যেন ওপেন সিক্রেট। আর এক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না কোন নিয়মনীতি। এ অবৈধ কাজের পেছনে রয়েছে হাসপাতাল, সিটি করপোরেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি চক্র। চিকিৎসা বর্জ্যকে স্পর্শকাতর হিসেবে গণ্য করা হলেও বিষয়টি নিয়ে অনেকটাই উদাসীন হাসপাতালগুলো। যথাযথ প্রক্রিয়ায় জীবাণুমুক্ত না করে বর্জ্য থেকে সংগ্রহ করা চিকিৎসা সরঞ্জাম ফের ব্যবহার করায় ঝুঁকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। এ ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে শৃঙ্খলায় আনতে সরকার ২০০৮ সালে নীতিমালা প্রণয়ন করলেও তা রয়ে গেছে কেবল কাগজে-কলমেই। মাঠ পর্যায়ে এর খুব একটা প্রতিফলন নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি আধুনিক ও সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন, অর্থায়ন এবং তা বাস্তবায়ন জরুরি। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ এক করে উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। এ সমস্যার মোকাবেলায় চারটি বিষয়ে জোর দিতে হবে সচেতনতাকে অভ্যাসের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, সবার উদ্যোগের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা অর্জন, টেকসই সমাধানের কৌশল নির্ধারণ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মিলে এ সমন্বয়ের পদক্ষেপ নিতে পারে। টিআইবি বলছে, চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আইনের বিভিন্ন দুর্বলতা রয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশ অধিদফতর, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের আইনের বিধিমালাতে ঘাটতি আছে। কিন্তু যতটুকু আছে, সেটারও যথাযথ প্রয়োগ হয় না। তাই যারা এসব নিয়ম মানছে না, তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
এদিকে, দেশে প্রতিদিন যে পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে তার প্রায় ২০ শতাংশই মেডিকেল বর্জ্য। দেশের ১৫টি সরকারি হাসপাতালেই প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে ২১ টনের বেশি বর্জ্য। কিন্তু দৈনিক তৈরি হওয়া এত বিপুল পরিমাণ মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো কার্যকর উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি ৩৫টি জেলার সরকারি হাসপাতালে। ফলে বাড়ছে হেপাটাইসিস বি ও হেপাটাইসিস সি, যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া এমনকি এইডসের মতো রোগের প্রকোপও। এক গবেষণার ভিত্তিতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক বলছে, করোনাকালে শুধু কভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষের ব্যবহূত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী থেকে প্রতিদিন ২৮২ দশমিক ৪৫ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। যার পুরোটাই গৃহস্থালি বর্জ্যের সঙ্গে অপসারণ করা হয়। ২০২০ সালের মে মাসে শুধু ঢাকাতেই তিন হাজার টন মেডিকেল বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মেডিকেল বর্জ্য কতটা মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সে বছরের ২০ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে এ গবেষণাটি করা হয়। আবার দেশের চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রগুলোতে যে বর্জ্য উৎপন্ন হয়, তার মাত্র ১৪ দশমিক ১ শতাংশ সঠিক নিয়মে ব্যবস্থাপনার আওতায় ছিল। সেসবও মাত্র একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অপসারণ ও শোধন করা হয়। বর্জ্য আলাদা করার ব্যবস্থাপনা থাকলেও তা বিনষ্ট বা শোধন করার নিজস্ব কোনো ব্যবস্থাপনা নেই অধিকাংশ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের।
নীতিমালায় মেডিকেল বর্জ্য অপসারণ, ধ্বংস করা ও প্রক্রিয়াজাত নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও মানা হচ্ছে না মোটেও। তদারকির জন্য দায়িত্বশীলরা যেন দেখেও দেখেন না। ফলে মেডিকেল বর্জ্য নিয়ে ঝুঁকি এড়ানো যাচ্ছে না। অনুসন্ধান বলছে, হাসপাতালগুলো থেকে পাওয়া দুই ধরনের চিকিৎসাবর্জ্য অবৈধভাবে বাইরে বিক্রি হয়। এজন্য হাসপাতালগুলোতে রয়েছে আলাদা সিন্ডিকেট। চিকিৎসা কাজে ব্যবহৃত কাচের বোতল, সিরিঞ্জ, স্যালাইন ব্যাগ ও প্লাস্টিক নলসহ যেসব বর্জ্য নষ্ট করে ফেলার কথা তা চলে যায় অন্য একটি পক্ষের কাছে। পরবর্তীকালে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য সঠিক প্রক্রিয়ায় জীবাণুমুক্ত না করেই পরিষ্কার ও প্যাকেটজাত করে ওষুধের দোকান, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পৌঁছে যায়। এসব উপকরণ সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত না হলে পুনর্ব্যবহারে থাকে সংক্রামক রোগের ঝুঁকি। প্রায় একই অবস্থা পুনঃচক্রায়নযোগ্য চিকিৎসাবর্জ্যের ক্ষেত্রে। ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, ব্লেড, ছুরি, কাঁচি, রক্তের ব্যাগ ও নল, ধাতব উপকরণ নষ্ট না করে সংক্রামিত অবস্থাতেই ভাঙ্গারির দোকানে বিক্রি করা হয়। এসব বর্জ্য পরিবহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের থাকে বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। শুধু মেডিকেল বর্জ্যকে ঘিরে পুরান ঢাকার চকবাজার ও লালবাগ এলাকায় গড়ে উঠেছে শতাধিক ভাঙ্গারির দোকান। এর মধ্যে নামাপাড়া, টাইগার গলি, ইসলামবাগ, বাঁশপট্টি, শহীদ নগর, কিল্লার মোড় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব এলাকায় গড়ে ওঠা ছোট ছোট দোকানে মজুত রাখা হয়েছে পরিত্যক্ত স্যালাইন, সিরিঞ্জ, নল, যা অরক্ষিতভাবে বাছাই করছে শিশু থেকে বিভিন্ন বয়সি মানুষ।
উল্লেখ্য, পরিকল্পনা কমিশনের তথ্যমতে, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করে এমন ধারণা নিয়ে হাসপাতালগুলোকে শ্রেণীকরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে দৈনিক ‘এ’ ক্যাটাগরির হাসপাতালে ১২ টন, ‘বি’ ক্যাটাগরির হাসপাতালে ৫ টন এবং ‘সি’ ক্যাটাগরির হাসপাতালে ৩ দশমিক ৫ টন বর্জ্য অপসারণ করা প্রয়োজন। দূষণকারীর তালিকায় এ ক্যাটাগরিতে আছে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত চারটি হাসপাতাল। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে আছে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। অন্যদিকে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতাল, মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতাল, বান্দরবান জেলা সদর হাসপাতাল, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল, বাগেরহাট সদর হাসপাতাল, লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল, জয়পুরহাট আধুনিক সদর হাসপাতাল, পঞ্চগড় সদর হাসপাতাল, পিরোজপুর সদর হাসপাতাল ও শেরপুর সদর হাসপাতাল।