সবুজ বাংলা অনলাইন | বিশেষ সাক্ষাৎকার
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ব্যবস্থা বর্তমানে বাংলাদেশে ক্রমেই জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। এ বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিকে আরও এগিয়ে নিতে নিবেদিতভাবে কাজ করছেন অনেক দক্ষ চিকিৎসক। তাদের মধ্যে অন্যতম ডাঃ মোঃ জাভেদ আজহার, একজন অভিজ্ঞ ও মানবিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক।
রামপুরার উলনে অবস্থিত ‘সামিয়া হোমিও ক্লিনিক’-এর প্রতিষ্ঠাতা এই চিকিৎসক ডাঃ মোঃ জাভেদ আজহার ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ থেকে বিএইচএমএস সম্পন্ন করে চিকিৎসা জীবনে পদার্পণ করেন।
তিনি এসএসসি পাস করেন রামপুরা একরামুনন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবং এইচএসসি পাস করেন ঢাকা সিটি কলেজ থেকে।
সবুজ বাংলা অনলাইনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি তুলে ধরেন তার চিকিৎসা দর্শন, অভিজ্ঞতা এবং হোমিওপ্যাথি নিয়ে তার ভাবনা।
প্রশ্ন: শুরুতেই জানতে চাই, আপনি কীভাবে এই পেশায় আসলেন?
ডাঃ মোঃ জাভেদ আজহার: আমার বাবা আব্দুর রহমান মোল্লা নিজেও একজন ডিএইচএস ডাক্তার ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই বাবাকে মানুষের সেবা করতে দেখেছি। সেই অনুপ্রেরণাই আমাকে এই পেশায় এনেছে।
প্রশ্ন: হোমিও চিকিৎসা পেশায় যুক্ত হওয়ার মূল প্রেরণা কী ছিল?
ডাঃ মোঃ জাভেদ আজহার: মূলত সামাজিক দায়বদ্ধতাই আমাকে এই পথে এনেছে। অসহায় মানুষের পাশে থেকে তাদের সেবা করার ইচ্ছাই ছিল মূল অনুপ্রেরণা।

প্রশ্ন: রাজধানীর মতো ব্যস্ত শহরে চিকিৎসা জীবনের শুরুটা কেমন ছিল?
ডাঃ মোঃ জাভেদ আজহার: আমি ঢাকারই সন্তান। বাবার চেম্বার বাসাতেই ছিল। ছোটবেলা থেকেই সেই পরিবেশে বড় হয়েছি। শুরুর সময়টা ছিল মজার ও শেখার।
প্রশ্ন: দীর্ঘ ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে কী অনুভব করেন?
ডাঃ মোঃ জাভেদ আজহার: অভিজ্ঞতা সুখকর না হলেও আমি তৃপ্ত। আমার কাছে বেশিরভাগই অসচ্ছল মানুষ চিকিৎসা নিতে আসে। তারা স্বল্প খরচে সেবা পেয়ে খুশি হয়, আমিও তাতেই সন্তুষ্টি খুঁজে পাই।
প্রশ্ন: আপনার কাছে হোমিও চিকিৎসা মানে কী?
ডাঃ মোঃ জাভেদ আজহার: হোমিওপ্যাথি একটি আদর্শ চিকিৎসা পদ্ধতি। যদিও অনেকে এখনো এটিকে অবমূল্যায়ন করেন, কিন্তু এটি কার্যকর ও বৈজ্ঞানিক। রোগ সারতে সময় একটু বেশি লাগলেও ফল ভালো হয়।
প্রশ্ন: রোগীদের আপনি কীভাবে এই চিকিৎসা দর্শন বোঝান?
ডাঃ মোঃ জাভেদ আজহার: প্রথমেই রোগীর সমস্যাকে গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করি। রোগ বুঝে ব্যক্তিভেদে চিকিৎসা দিই। হোমিও চিকিৎসার সৌন্দর্য এখানেই।
প্রশ্ন: বর্তমানে আপনার ক্লিনিকে কী ধরনের রোগী বেশি আসে?
ডাঃ মোঃ জাভেদ আজহার: জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি রোগীরা যেমন— টিউমার, স্তন টিউমার, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, মানসিক সমস্যা ও মাদকাসক্ত রোগী।
প্রশ্ন: মানসিক চাপজনিত রোগে হোমিও চিকিৎসা কতটা কার্যকর বলে মনে করেন?
ডাঃ মোঃ জাভেদ আজহার: শহরের যান্ত্রিক জীবনে মানুষ সময় দিতে পারে না। অনেক সময় দেরিতে আসে। তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে হোমিও চিকিৎসা মানসিক রোগেও বেশ কার্যকর।
প্রশ্ন: আপনার মতে হোমিও চিকিৎসা কি অ্যালোপ্যাথির বিকল্প নাকি পরিপূরক?
ডাঃ মোঃ জাভেদ আজহার: দুই চিকিৎসারই সীমাবদ্ধতা আছে। তবে অ্যালোপ্যাথি যেখানে ব্যয়বহুল, হোমিও চিকিৎসা সেখানে অনেক সাশ্রয়ী ও রোগীবান্ধব।
প্রশ্ন: চিকিৎসা চালিয়ে যেতে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়?
ডাঃ মোঃ জাভেদ আজহার: চ্যালেঞ্জ আছে— রাজনৈতিক চাপ, আর্থিক সমস্যা, নানা প্রতিবন্ধকতা। তবে সবকিছু সামলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, কারণ লক্ষ্য মানবসেবা।
প্রশ্ন: রোগীদের আস্থা সম্পর্কে কী বলবেন?
ডাঃ মোঃ জাভেদ আজহার: ডিজিটাল যুগে অনেকে অনলাইনে চিকিৎসা নিচ্ছে। তবু অনেকেই এখনো হোমিও চিকিৎসায় আস্থা রাখেন, কারণ এটি নিরাপদ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন।
প্রশ্ন: অপ্রশিক্ষিত চিকিৎসকদের প্রসার নিয়ে আপনার মতামত কী?
ডাঃ মোঃ জাভেদ আজহার: অপ্রশিক্ষিত চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ছে, যা উদ্বেগজনক। সরকারের যথাযথ নজরদারি জরুরি। প্রশিক্ষণ ও নিবন্ধন ছাড়া চিকিৎসা চলতে দেওয়া উচিত নয়।
প্রশ্ন: কোনো রোগীর ঘটনা কি বিশেষভাবে আপনাকে ছুঁয়ে গেছে?
ডাঃ মোঃ জাভেদ আজহার: প্রতিদিনই দেখি কেউ কেউ টাকা ছাড়াই ওষুধ নিচ্ছে। মানবসেবাই আমার লক্ষ্য, তাই সক্ষম না হলে আমি বিনামূল্যেও সেবা দিই।
প্রশ্ন: বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য পর্যাপ্ত নীতিগত সহায়তা আছে বলে মনে করেন?
ডাঃ মোঃ জাভেদ আজহার: না, এখনো নেই। সরকারকে হোমিও চিকিৎসা খাতে নজর দিতে হবে। দক্ষ চিকিৎসক তৈরি ও মান উন্নয়নে পদক্ষেপ জরুরি।
প্রশ্ন: তরুণ চিকিৎসকদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
ডাঃ মোঃ জাভেদ আজহার: অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছ থেকে শিখতে হবে, নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিতে হবে। সততা, মানবিকতা ও দায়িত্ববোধ থাকলে ভালো চিকিৎসক হওয়া সম্ভব।
প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
ডাঃ মোঃ জাভেদ আজহার: আমার বয়স এখন ৬০। জীবনের বাকি সময়টুকু মানবসেবায় উৎসর্গ করতে চাই। যতদিন পারি, মানুষের পাশে থাকতে চাই।
প্রশ্ন: ঢাকার সাধারণ নাগরিকদের জন্য আপনার স্বাস্থ্যবার্তা কী হবে?
ডাঃ মোঃ জাভেদ আজহার: নিজের পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন, নিয়ম মেনে চলুন, সময়মতো বিশ্রাম ও ব্যায়াম করুন। তাহলেই সুস্থ থাকবেন।
সবুজ বাংলা অনলাইন: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
ডা. মো. জাবেদ আজহার: আপনাকেও ধন্যবাদ।
মোস্তাফিজুর রহমান


























