১০:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

২৩ মাস ধরে বন্ধ যমুনা সার কারখানা, বৈদেশিক ব্যয় ১.৩ বিলিয়ন ডলার

জামালপুরের সরিষাবাড়ীর তারাকান্দিতে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম ইউরিয়া উৎপাদনকারী যমুনা সার কারখানা টানা ২৩ মাস ধরে বন্ধ। এর প্রধান কারণ গ্যাস সংকট। দীর্ঘদিন বন্ধে প্রতিদিন প্রায় তিন কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে রাষ্ট্রীয় এই কারখানায়। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক, এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভও।

যমুনা সার কারখানার মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) বলেন, “যমুনা সার কারখানায় দৈনিক গ্যাস চাহিদা ৭৮–৮০ এমএমসিএফ। বর্তমানে আমরা তার এক-তৃতীয়াংশও পাই না। এ অবস্থায় উৎপাদন সম্ভব নয়।” তিনি আরো জানান, উৎপাদন বন্ধ থাকলেও শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণ, স্থাপনা পরিচালনাসহ প্রতিদিন তিন কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।

শিক্ষা বিষয়ক গবেষক, কলামিস্ট সরকার আবুল হোসেন বলেন, “যমুনা সার কারখানা সচল থাকলে বছরে ৮-৯ লাখ টন ইউরিয়া দেশেই উৎপাদন সম্ভব হতো। এখন পুরোটা আমদানি করতে হচ্ছে। এর জন্য বছরে বাড়তি ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১.১ থেকে ১.৩ বিলিয়ন ডলার।” তিনি আরও বলেন, “একদিকে দেশের রিজার্ভ কমছে, অন্যদিকে আমদানি নির্ভরতা বাড়ছে। এটি অর্থনীতির জন্য দ্বিমুখী ঝুঁকি।”

যমুনা সার কারখানার প্রকৌশল বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সতর্ক করে বলেন, “এত দীর্ঘসময় কারখানা বন্ধ থাকা যন্ত্রপাতির জন্য বিপজ্জনক। কারখানায় পুনরায় উৎপাদন চালু করতে হলে বড় ধরনের মেরামত খরচ লাগতে পারে। তারপরও গ্যাস সংযোগ পেলে আমরা উৎপাদন যেতে প্রস্তুত আছি।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি(সিপিবি) সরিষাবাড়ী উপজেলা শাখার সভাপতি মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব জামান জুয়েল বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সার কারখানা দীর্ঘ ২৩ মাস যাবৎ বন্ধ এই কথাটা বলতেও খারাপ লাগে। এতে কৃষকের কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছ, ব্যবসায়িরা ব্যবসা করতে পারছে না। বন্ধ থাকার কারণে সরকার সার আমদানি করতেছে এতে আমরা অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এটি দ্রুত চালু করার জন্য আমি সরকারের কাছে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)’র একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “গ্যাস সরবরাহের অগ্রাধিকার তালিকায় সার কারখানাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতকে অবহেলা করলে সমস্যার বোঝা আরও বাড়বে। দেখা দিতে পারে সারের তীব্র সংকট। তাই কৃষক তথা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বন্ধ সার কারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরী হয়ে পড়েছে।

যমুনা সার কারখানার শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ)’র সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম তালুকদার সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ চালু রাখতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি তিনটি দাবী জানিয়েছেন।
১. সার কারখানার জন্য বিশেষ গ্যাস কোটা: অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিল্প গ্যাস সরবরাহ।
২. স্বল্পমেয়াদে এলএনজি আমদানি বাড়ানো: উৎপাদন অন্তত আংশিক চালু করা।
৩. দীর্ঘমেয়াদে গ্যাস অনুসন্ধান ত্বরান্বিত করা: স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো ছাড়া স্থায়ী সমাধান নেই।

জামালপুর জেলা ট্রাক, ট্যাঙ্কলড়ী, কভার্ডভ্যান, মিনিট্রাক ও ট্রাক্টর চালক শ্রমিক ইউনিয়ন-৩৬৪০’র সভাপতি আব্দুল মোত্তালেব বলেন, ‘যমুনা সার কারখানা টানা ২৩ মাস বন্ধ থাকা শুধু একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংকট নয় এটি কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ এবং মোট অর্থনীতির ওপর সরাসরি আঘাত। গ্যাস সংকট সমাধানে সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে আরও বড় ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারে দেশ।

যমুনা সার কারখানার প্রশাসন জিএম দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘কারখানায় গ্যাস সংযোগ পেলেই আমরা পুরোপুরি উৎপাদনে যেতে প্রস্তুত আছি। কবে নাগাদ গ্যাস সংযোগ পেতে পারেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

কাবা শরীফ চত্বরে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা এক ব্যক্তির

২৩ মাস ধরে বন্ধ যমুনা সার কারখানা, বৈদেশিক ব্যয় ১.৩ বিলিয়ন ডলার

আপডেট সময় : ০৪:৩৭:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

জামালপুরের সরিষাবাড়ীর তারাকান্দিতে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম ইউরিয়া উৎপাদনকারী যমুনা সার কারখানা টানা ২৩ মাস ধরে বন্ধ। এর প্রধান কারণ গ্যাস সংকট। দীর্ঘদিন বন্ধে প্রতিদিন প্রায় তিন কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে রাষ্ট্রীয় এই কারখানায়। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক, এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভও।

যমুনা সার কারখানার মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) বলেন, “যমুনা সার কারখানায় দৈনিক গ্যাস চাহিদা ৭৮–৮০ এমএমসিএফ। বর্তমানে আমরা তার এক-তৃতীয়াংশও পাই না। এ অবস্থায় উৎপাদন সম্ভব নয়।” তিনি আরো জানান, উৎপাদন বন্ধ থাকলেও শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণ, স্থাপনা পরিচালনাসহ প্রতিদিন তিন কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।

শিক্ষা বিষয়ক গবেষক, কলামিস্ট সরকার আবুল হোসেন বলেন, “যমুনা সার কারখানা সচল থাকলে বছরে ৮-৯ লাখ টন ইউরিয়া দেশেই উৎপাদন সম্ভব হতো। এখন পুরোটা আমদানি করতে হচ্ছে। এর জন্য বছরে বাড়তি ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১.১ থেকে ১.৩ বিলিয়ন ডলার।” তিনি আরও বলেন, “একদিকে দেশের রিজার্ভ কমছে, অন্যদিকে আমদানি নির্ভরতা বাড়ছে। এটি অর্থনীতির জন্য দ্বিমুখী ঝুঁকি।”

যমুনা সার কারখানার প্রকৌশল বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সতর্ক করে বলেন, “এত দীর্ঘসময় কারখানা বন্ধ থাকা যন্ত্রপাতির জন্য বিপজ্জনক। কারখানায় পুনরায় উৎপাদন চালু করতে হলে বড় ধরনের মেরামত খরচ লাগতে পারে। তারপরও গ্যাস সংযোগ পেলে আমরা উৎপাদন যেতে প্রস্তুত আছি।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি(সিপিবি) সরিষাবাড়ী উপজেলা শাখার সভাপতি মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব জামান জুয়েল বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সার কারখানা দীর্ঘ ২৩ মাস যাবৎ বন্ধ এই কথাটা বলতেও খারাপ লাগে। এতে কৃষকের কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছ, ব্যবসায়িরা ব্যবসা করতে পারছে না। বন্ধ থাকার কারণে সরকার সার আমদানি করতেছে এতে আমরা অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এটি দ্রুত চালু করার জন্য আমি সরকারের কাছে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)’র একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “গ্যাস সরবরাহের অগ্রাধিকার তালিকায় সার কারখানাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতকে অবহেলা করলে সমস্যার বোঝা আরও বাড়বে। দেখা দিতে পারে সারের তীব্র সংকট। তাই কৃষক তথা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বন্ধ সার কারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরী হয়ে পড়েছে।

যমুনা সার কারখানার শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ)’র সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম তালুকদার সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ চালু রাখতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি তিনটি দাবী জানিয়েছেন।
১. সার কারখানার জন্য বিশেষ গ্যাস কোটা: অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিল্প গ্যাস সরবরাহ।
২. স্বল্পমেয়াদে এলএনজি আমদানি বাড়ানো: উৎপাদন অন্তত আংশিক চালু করা।
৩. দীর্ঘমেয়াদে গ্যাস অনুসন্ধান ত্বরান্বিত করা: স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো ছাড়া স্থায়ী সমাধান নেই।

জামালপুর জেলা ট্রাক, ট্যাঙ্কলড়ী, কভার্ডভ্যান, মিনিট্রাক ও ট্রাক্টর চালক শ্রমিক ইউনিয়ন-৩৬৪০’র সভাপতি আব্দুল মোত্তালেব বলেন, ‘যমুনা সার কারখানা টানা ২৩ মাস বন্ধ থাকা শুধু একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংকট নয় এটি কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ এবং মোট অর্থনীতির ওপর সরাসরি আঘাত। গ্যাস সংকট সমাধানে সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে আরও বড় ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারে দেশ।

যমুনা সার কারখানার প্রশাসন জিএম দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘কারখানায় গ্যাস সংযোগ পেলেই আমরা পুরোপুরি উৎপাদনে যেতে প্রস্তুত আছি। কবে নাগাদ গ্যাস সংযোগ পেতে পারেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।

এমআর/সবা