- নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর দেশজুড়ে সাঁড়াশি অভিযান
- অভিযান নিয়ে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের পর ছক তৈরি চলছে
- অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলদার, দুর্নীতিবাজদের তালিকা চূড়ান্ত
- বিভিন্ন সংস্থার তথ্য ছাড়াও নানা স্তরের মানুষের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে
সারা দেশে অচিরেই সাঁড়াশি অভিযান শুরু হচ্ছে। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, চিহ্নিত চাঁদাবাজ, দখলদার, দুর্নীতিবাজ এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন গজিয়ে ওঠা সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে এই অভিযান চালাবে অন্তর্বর্তী সরকার। এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের পর অভিযান পরিচালনার ছক তৈরির কাজ চলছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র বলেছে, ডিসেম্বর মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এই অভিযান শুরু হবে। বিশেষ এই অভিযানকে সামনে রেখে স্থানীয় পর্যায়ের চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলদার ও দুর্নীতিবাজদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের সব জেলায় নতুন করে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) পদায়ন করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি পদে নতুন কর্মকর্তারা দায়িত্ব নেওয়ার পর বড় পরিসরে অভিযান শুরু হবে। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ভোটে যেন কোনো প্রভাব রাখতে না পারে, সে লক্ষ্যে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা হবে। তিনি বলেন, এই অভিযান চালানোর বিষয়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে অভিযানের নাম ও দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে শিগগির অভিযান নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই এই অভিযান শুরু হতে পারে। সূত্র জানায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব একটা স্বস্তিদায়ক হয়নি। বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে আবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন থানা থেকে অস্ত্র খোয়া গেছে। অভিযান চালিয়ে ও পুরস্কার ঘোষণা করেও অনেক অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু হয়। ওই অভিযানেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অনেকের আশঙ্কা, তফসিল ঘোষণার পর দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে, যা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশকে নষ্ট করতে পারে। এ পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সভায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা বাড়াতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। রাজনৈতিক দলের নেতাদের অন্তর্কোন্দলেও সংঘর্ষ হচ্ছে। চাঁদাবাজি, দখল ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলদার ও দুর্নীতিবাজদের একটি প্রাথমিক তালিকা করা হয়েছে। পরে তালিকাটি যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করা হয়। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার তথ্য ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে। সূত্র আরও বলছে, গত এক বছরে অনেক জায়গায় রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ছাড়াও প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তাই বিদ্যমান কর্মকর্তাদের দায়িত্বে রেখে অভিযান চালাতে চায়নি সরকার। এতে নিরপরাধ অনেকে ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলোতে নতুন কর্মকর্তাদের পদায়ন শেষ হওয়ার পর এই অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডিসি-এসপিদের মতো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পদে নতুনদের পদায়ন শুরু হয়েছে।
একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ভোটের আগে বিশেষ এই অভিযানে মূলত অস্ত্র উদ্ধারের জন্য বলা হবে। তবে এই অভিযানে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলদার এবং হুট করে গজিয়ে ওঠা চাঁদাবাজ-দখলদারদের গ্রেপ্তার করা হবে। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও দখলদারদের তালিকা করা হয়েছে। সূত্র জানায়, এই অভিযান নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যাতে কোনো বিতর্ক না ওঠে, সে জন্য সরকার সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই অভিযানে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার হলে প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে, তা মাথায় রাখছে সরকার। এই অভিযানকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে বড় ইস্যু সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়টিও সরকারের পর্যালোচনায় রয়েছে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, অভিযানে সরকার জনগণের সমর্থন পাবে বলে তারা আশাবাদী। তবে অভিযান নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দল সমালোচনা করলে অভিযান চালিয়ে যাওয়া মুশকিল হবে। সব বিষয়ই সরকার আমলে নিয়ে অভিযানের পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বিশেষ অভিযানের পরিকল্পনা করে সরকার পুলিশ বাহিনীকে জানালে বাহিনীর পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে মিলে এই অভিযান করতে হলে পুলিশ যথাযথ ভূমিকা পালন করবে। এই বিশেষ অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) বাহারুল আলম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে এখনো কেউ আলোচনা করেননি।’ সূত্র আজকের পত্রিকা




















