০২:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বায়েজিদ লিংক রোড: অপরাধীদের দখলে রাত, পাহাড়ে পুলিশের অদৃশ্য শাসনহীনতা

চট্টগ্রামের বায়েজিদ লিংক রোড—নগরবাসীর চোখে এটি এখন আর সাধারণ সড়ক নয়; এটি হয়ে উঠেছে ভয়, দৌরাত্ম্য ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার মিলিত প্রতীক। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এই সংযোগ পথ যেন সূর্য অস্ত গেলে অপরাধীদের হাতে তুলে দেওয়া এক অরক্ষিত অঞ্চল, যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে প্রায় অদৃশ্য। দিনের ব্যস্ততা শেষ হতেই পাহাড়ি অঞ্চলের অন্ধকার এমনভাবে চারদিকে নেমে আসে যে, মনে হয় শহরের এই অংশটি আইনশৃঙ্খলার আওতা থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো পরিত্যক্ত টেরিটরি। আর এই অন্ধকারই দস্যুচক্রের নিরাপদ ছায়ায় পরিণত হয়েছে—যেখানে সাধারণ পথচারী কি, এমনকি পুলিশেরও প্রবেশ করতে ভয় লাগে বলেই অভিযোগ উঠে এসেছে অনানুষ্ঠানিকভাবে। স্থানীয়দের ক্ষোভ আরও স্পষ্ট—পাহাড়ের পাশে থাকা এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে যখন অপরাধীরা এতটাই বেপরোয়া, তখন বিভিন্ন থানার ‘এখতিয়ার বিভ্রান্তি’ আর ‘সীমারেখা জটিলতা’ কেবল অজুহাত হিসেবেই শোনায়। অভিযোগ নেওয়ার সময় কে দায় নেবে, কোন থানা অবশেষে দায়িত্ব নেবে—এ নিয়ে যতটা আলোচনা হয়, তার কোনটিই অপরাধীদের দৌরাত্ম্য কমাতে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখে না। ফলভোগ করে সাধারণ মানুষই। পাহাড়ি অংশের ভৌগোলিক সুবিধা অপরাধীদের এমন পালানোর পথ তৈরি করেছে যে, রাতে তারা মুহূর্তে আঘাত হেনে মুহূর্তেই অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। আলোবিহীন, টহলহীন, নজরদারিহীন এই পাহাড়গুলো যেন অপরাধীদের ঘোষিত দুর্গে পরিণত হয়েছে। আর সে দুর্গ ভাঙতে প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো সক্রিয়তা নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি মেট্রোপলিটন শহরের প্রধান সড়ক যদি রাতে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ হারায়, সেটি শুধু ব্যর্থতা নয়—এটি নিরাপত্তা ব্যবস্থার মুখে সরাসরি চপেটাঘাত। বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ করিডরকে অরক্ষিত রেখে চলা নগরের সামগ্রিক নিরাপত্তা কাঠামোকেই দুর্বল করছে। স্থানীয়দের মতামত আরও স্পষ্ট ও কঠোর— “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি পাহাড়ে উঠতে ভয় পায়, তাহলে নাগরিক নিরাপত্তা রক্ষার নামে এই পুরো ব্যবস্থার উপযোগিতা কোথায়?” প্রয়োজন আলো বাড়ানো, পাহাড়ে নজরদারি স্থাপন, নিয়মিত টহল, এবং অপরাধপ্রবণ জায়গায় স্থায়ী চেকপোস্ট। কিন্তু বাস্তবে এগুলোর কিছুই ঘটছে না। আর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকেও এখনো কোনো স্পষ্ট, দৃঢ় ও দায়িত্বশীল ঘোষণা আসেনি। বায়েজিদ লিংক রোড এখন এক নির্মম সত্যের মুখোমুখি—এটি শহরের অংশ হলেও রাতের অন্ধকারে এটি যেন অপরাধীদের ব্যক্তিগত রাজ্যে পরিণত হয়, আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেই অঞ্চলে নিছক দর্শকের ভূমিকা পালন করে। যদি এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে খুব শিগগিরই এই সড়কের নাম উচ্চারণ করলেই নাগরিকদের মনে ভয়, হতাশা এবং অবিশ্বাস ছাড়া আর কিছুই জাগবে না।

জনপ্রিয় সংবাদ

মেঘনায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষে ৮ জন নিহত

বায়েজিদ লিংক রোড: অপরাধীদের দখলে রাত, পাহাড়ে পুলিশের অদৃশ্য শাসনহীনতা

আপডেট সময় : ০৪:২০:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫

চট্টগ্রামের বায়েজিদ লিংক রোড—নগরবাসীর চোখে এটি এখন আর সাধারণ সড়ক নয়; এটি হয়ে উঠেছে ভয়, দৌরাত্ম্য ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার মিলিত প্রতীক। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এই সংযোগ পথ যেন সূর্য অস্ত গেলে অপরাধীদের হাতে তুলে দেওয়া এক অরক্ষিত অঞ্চল, যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে প্রায় অদৃশ্য। দিনের ব্যস্ততা শেষ হতেই পাহাড়ি অঞ্চলের অন্ধকার এমনভাবে চারদিকে নেমে আসে যে, মনে হয় শহরের এই অংশটি আইনশৃঙ্খলার আওতা থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো পরিত্যক্ত টেরিটরি। আর এই অন্ধকারই দস্যুচক্রের নিরাপদ ছায়ায় পরিণত হয়েছে—যেখানে সাধারণ পথচারী কি, এমনকি পুলিশেরও প্রবেশ করতে ভয় লাগে বলেই অভিযোগ উঠে এসেছে অনানুষ্ঠানিকভাবে। স্থানীয়দের ক্ষোভ আরও স্পষ্ট—পাহাড়ের পাশে থাকা এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে যখন অপরাধীরা এতটাই বেপরোয়া, তখন বিভিন্ন থানার ‘এখতিয়ার বিভ্রান্তি’ আর ‘সীমারেখা জটিলতা’ কেবল অজুহাত হিসেবেই শোনায়। অভিযোগ নেওয়ার সময় কে দায় নেবে, কোন থানা অবশেষে দায়িত্ব নেবে—এ নিয়ে যতটা আলোচনা হয়, তার কোনটিই অপরাধীদের দৌরাত্ম্য কমাতে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখে না। ফলভোগ করে সাধারণ মানুষই। পাহাড়ি অংশের ভৌগোলিক সুবিধা অপরাধীদের এমন পালানোর পথ তৈরি করেছে যে, রাতে তারা মুহূর্তে আঘাত হেনে মুহূর্তেই অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। আলোবিহীন, টহলহীন, নজরদারিহীন এই পাহাড়গুলো যেন অপরাধীদের ঘোষিত দুর্গে পরিণত হয়েছে। আর সে দুর্গ ভাঙতে প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো সক্রিয়তা নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি মেট্রোপলিটন শহরের প্রধান সড়ক যদি রাতে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ হারায়, সেটি শুধু ব্যর্থতা নয়—এটি নিরাপত্তা ব্যবস্থার মুখে সরাসরি চপেটাঘাত। বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ করিডরকে অরক্ষিত রেখে চলা নগরের সামগ্রিক নিরাপত্তা কাঠামোকেই দুর্বল করছে। স্থানীয়দের মতামত আরও স্পষ্ট ও কঠোর— “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি পাহাড়ে উঠতে ভয় পায়, তাহলে নাগরিক নিরাপত্তা রক্ষার নামে এই পুরো ব্যবস্থার উপযোগিতা কোথায়?” প্রয়োজন আলো বাড়ানো, পাহাড়ে নজরদারি স্থাপন, নিয়মিত টহল, এবং অপরাধপ্রবণ জায়গায় স্থায়ী চেকপোস্ট। কিন্তু বাস্তবে এগুলোর কিছুই ঘটছে না। আর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকেও এখনো কোনো স্পষ্ট, দৃঢ় ও দায়িত্বশীল ঘোষণা আসেনি। বায়েজিদ লিংক রোড এখন এক নির্মম সত্যের মুখোমুখি—এটি শহরের অংশ হলেও রাতের অন্ধকারে এটি যেন অপরাধীদের ব্যক্তিগত রাজ্যে পরিণত হয়, আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেই অঞ্চলে নিছক দর্শকের ভূমিকা পালন করে। যদি এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে খুব শিগগিরই এই সড়কের নাম উচ্চারণ করলেই নাগরিকদের মনে ভয়, হতাশা এবং অবিশ্বাস ছাড়া আর কিছুই জাগবে না।