০৬:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আসন সমঝোতা নিয়ে বিপাকে জামায়াতে

  • শরিকরা চায় ২৭০ আসন
  • আট দলের আসন সমঝোতার আলোচনার গতি ধীর

 

শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে বিপাকে পড়েছে জামায়াতে ইসলামী। তাই জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ আট দলের আসন সমঝোতার আলোচনার গতি ধীর। কোন দল কোন আসনে প্রার্থী দেবে এ মতবিরোধে আটকে যাচ্ছে। গত ৯ ডিসেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনটি বিভাগের প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দলগুলো আগের মতোই জানিয়েছে, আর দুই-তিন দিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে। আট দলের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
৩০০ আসনে একক প্রার্থী দিতে কাজ করলেও আট দল নিজেদের জোট বলছে না। তারা একে আসন সমঝোতা বলছে। জামায়াতের একাধিক নেতা বলেন, চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন ১৫০ আসনের তালিকা দিয়েছিল। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ৫০, খেলাফত মজলিস ৩০, খেলাফত আন্দোলন ২৫ আসনের তালিকা দিয়েছে। জাগপা এবং বিডিপির তালিকা ছোট। তাদেরসহ শরিকরা ২৭০ আসন চাইছে জামায়াতের কাছে। আরও কয়েকটি দল জোটে আসতে পারে। তাদেরও চাওয়া রয়েছে। জামায়াতের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আসন ছাড়তে সমস্যা নেই। কিন্তু শরিকরা এমন সব আসন দাবি করছে, যেখানে তাদের অবস্থান জামায়াতের তুলনায় খুবই দুর্বল। তাদের ওইসব আসন ছাড়লে পরাজয় নিশ্চিত। কয়েকটি আসনে শরিক দলের প্রার্থী হতে চান বিএনপি থেকে আসা নেতারা। তাদের নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু দুটি আসনে জাতীয় পার্টি থেকে আসা আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতা রয়েছেন। তাদের জোটের প্রার্থী করা জামায়াতের জন্য অস্বস্তিকর। আট দল সূত্রের খবর, ১৫০ আসনের তালিকা দিলেও অন্তত ১২০ আসন ছাড় চাইছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন। দলটি অতীতে কখনও সংসদে যেতে পারেনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। জামায়াতের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ১৯৯১ সালে ১২ শতাংশ এবং ১৯৬৬ সালে ৮ শতাংশ ভোট পাওয়ার পরও ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতকে ৩০ আসন ছেড়েছিল বিএনপি। সব শরিককে মিলিয়ে ৫০-৬০টি আসন ছাড়ার চিন্তা ছিল। চরমোনাইর পীর নিজেরা ১২০ আসনে এবং জামায়াতকে ১৩০ আসনে প্রার্থী দেয়ার প্রস্তাব করেছেন। বাকি ৫০ আসন অন্যান্য দলকে ছাড়তে চান। এতে জামায়াত রাজি হয়নি। গত অক্টোবরে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছিলেন, শরিকদের ১০০ আসন ছাড়া হবে। তবে এখন ওই বক্তব্যকে অনানুষ্ঠানিক বলছে জামায়াত। দলটির নেতারা বলেন, দলীয় জরিপ অনুযায়ী, আগামী নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। শরিকদের অবস্থাও জরিপ করানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বেহিসাবি আসন ছাড়লে নির্বাচনে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে না। আসন সমঝোতার আলোচনায় ইসলামী আন্দোলনকে প্রতিনিধিত্ব করা দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, আর পাঁচটি বিভাগ নিয়ে আলোচনা বাকি রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই তা সম্পন্ন হবে। ইসলামী আন্দোলন কত আসন চায়- প্রশ্নে আশরাফ আলী বলেছেন, এই আলোচনাই চলছে। শিগগির তা জানানো হবে। ৫০ আসন চাওয়া খেলাফত মজলিস প্রতি জেলায় একজন করে প্রার্থী দিতে চায়। যদিও দলটির একাধিক নেতা বলেন, ২৫ আসনের কমে মানবেন না। খেলাফতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন বলেন, যে আসনে যে দলের অবস্থান শক্ত, সেই দল ওই আসনে প্রার্থী দেবে। ৩০০ আসনে আট দলের একক প্রার্থী থাকবে। দলের আমির মাওলানা মামুনুল হক ঢাকা-১৩ আসনে আট দলের প্রার্থী হবেন। ২০১৮ সালে হবিগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপি জোটের ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন খেলাফত মজলিসের প্রার্থী দলটির মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের। এবার তিনি জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতায় রয়েছেন। তিনি ঢাকা থেকে নির্বাচনে আগ্রহী ছিলেন। হবিগঞ্জ-৪ আসনে জামায়াত প্রার্থী পরিবর্তন করে সাংবাদিক ওলিউল্লাহ নোমানকে দাঁড়িপাল্লা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর আবদুল কাদেরও হবিগঞ্জ-৪ থেকেই নির্বাচন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পরে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নির্বাচনের আগ্রহ জানিয়েছেন। ২০১৫ সাল থেকে পাঁচ বছর তিনি সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সাবেক এই জাপা নেতা ৫ আগস্টের পর ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আট দলের প্রার্থী করতে চান চরমোনাইর পীর। বাংলাদেশ খেলাফতসহ কয়েকটি দলে বিএনপি থেকে নেতারা এসেছেন। তাদের মনোনয়ন দিতে আপত্তি না করলেও সাবেক জাপা এবং আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠদের নিয়ে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

আসন সমঝোতা নিয়ে বিপাকে জামায়াতে

আপডেট সময় : ০৭:১৯:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • শরিকরা চায় ২৭০ আসন
  • আট দলের আসন সমঝোতার আলোচনার গতি ধীর

 

শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে বিপাকে পড়েছে জামায়াতে ইসলামী। তাই জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ আট দলের আসন সমঝোতার আলোচনার গতি ধীর। কোন দল কোন আসনে প্রার্থী দেবে এ মতবিরোধে আটকে যাচ্ছে। গত ৯ ডিসেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনটি বিভাগের প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দলগুলো আগের মতোই জানিয়েছে, আর দুই-তিন দিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে। আট দলের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
৩০০ আসনে একক প্রার্থী দিতে কাজ করলেও আট দল নিজেদের জোট বলছে না। তারা একে আসন সমঝোতা বলছে। জামায়াতের একাধিক নেতা বলেন, চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন ১৫০ আসনের তালিকা দিয়েছিল। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ৫০, খেলাফত মজলিস ৩০, খেলাফত আন্দোলন ২৫ আসনের তালিকা দিয়েছে। জাগপা এবং বিডিপির তালিকা ছোট। তাদেরসহ শরিকরা ২৭০ আসন চাইছে জামায়াতের কাছে। আরও কয়েকটি দল জোটে আসতে পারে। তাদেরও চাওয়া রয়েছে। জামায়াতের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আসন ছাড়তে সমস্যা নেই। কিন্তু শরিকরা এমন সব আসন দাবি করছে, যেখানে তাদের অবস্থান জামায়াতের তুলনায় খুবই দুর্বল। তাদের ওইসব আসন ছাড়লে পরাজয় নিশ্চিত। কয়েকটি আসনে শরিক দলের প্রার্থী হতে চান বিএনপি থেকে আসা নেতারা। তাদের নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু দুটি আসনে জাতীয় পার্টি থেকে আসা আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতা রয়েছেন। তাদের জোটের প্রার্থী করা জামায়াতের জন্য অস্বস্তিকর। আট দল সূত্রের খবর, ১৫০ আসনের তালিকা দিলেও অন্তত ১২০ আসন ছাড় চাইছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন। দলটি অতীতে কখনও সংসদে যেতে পারেনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। জামায়াতের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ১৯৯১ সালে ১২ শতাংশ এবং ১৯৬৬ সালে ৮ শতাংশ ভোট পাওয়ার পরও ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতকে ৩০ আসন ছেড়েছিল বিএনপি। সব শরিককে মিলিয়ে ৫০-৬০টি আসন ছাড়ার চিন্তা ছিল। চরমোনাইর পীর নিজেরা ১২০ আসনে এবং জামায়াতকে ১৩০ আসনে প্রার্থী দেয়ার প্রস্তাব করেছেন। বাকি ৫০ আসন অন্যান্য দলকে ছাড়তে চান। এতে জামায়াত রাজি হয়নি। গত অক্টোবরে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছিলেন, শরিকদের ১০০ আসন ছাড়া হবে। তবে এখন ওই বক্তব্যকে অনানুষ্ঠানিক বলছে জামায়াত। দলটির নেতারা বলেন, দলীয় জরিপ অনুযায়ী, আগামী নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। শরিকদের অবস্থাও জরিপ করানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বেহিসাবি আসন ছাড়লে নির্বাচনে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে না। আসন সমঝোতার আলোচনায় ইসলামী আন্দোলনকে প্রতিনিধিত্ব করা দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, আর পাঁচটি বিভাগ নিয়ে আলোচনা বাকি রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই তা সম্পন্ন হবে। ইসলামী আন্দোলন কত আসন চায়- প্রশ্নে আশরাফ আলী বলেছেন, এই আলোচনাই চলছে। শিগগির তা জানানো হবে। ৫০ আসন চাওয়া খেলাফত মজলিস প্রতি জেলায় একজন করে প্রার্থী দিতে চায়। যদিও দলটির একাধিক নেতা বলেন, ২৫ আসনের কমে মানবেন না। খেলাফতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন বলেন, যে আসনে যে দলের অবস্থান শক্ত, সেই দল ওই আসনে প্রার্থী দেবে। ৩০০ আসনে আট দলের একক প্রার্থী থাকবে। দলের আমির মাওলানা মামুনুল হক ঢাকা-১৩ আসনে আট দলের প্রার্থী হবেন। ২০১৮ সালে হবিগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপি জোটের ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন খেলাফত মজলিসের প্রার্থী দলটির মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের। এবার তিনি জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতায় রয়েছেন। তিনি ঢাকা থেকে নির্বাচনে আগ্রহী ছিলেন। হবিগঞ্জ-৪ আসনে জামায়াত প্রার্থী পরিবর্তন করে সাংবাদিক ওলিউল্লাহ নোমানকে দাঁড়িপাল্লা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর আবদুল কাদেরও হবিগঞ্জ-৪ থেকেই নির্বাচন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পরে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নির্বাচনের আগ্রহ জানিয়েছেন। ২০১৫ সাল থেকে পাঁচ বছর তিনি সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সাবেক এই জাপা নেতা ৫ আগস্টের পর ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আট দলের প্রার্থী করতে চান চরমোনাইর পীর। বাংলাদেশ খেলাফতসহ কয়েকটি দলে বিএনপি থেকে নেতারা এসেছেন। তাদের মনোনয়ন দিতে আপত্তি না করলেও সাবেক জাপা এবং আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠদের নিয়ে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।