০৯:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল, ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন

ঘন কুয়াশা, প্রচণ্ড শীত ও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের জনজীবন। টানা কয়েকদিন ধরে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে রংপুর বিভাগসহ আশপাশের এলাকায় হাঁড়কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা না মেলায় প্রকৃত তাপমাত্রার তুলনায় শীতের তীব্রতা অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে গ্রাম-শহরের জনপদ। কুয়াশার ঘনত্ব এতটাই বেশি যে কাছের কোনো বস্তু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। জীবিকার তাগিদে প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে শ্রমজীবী মানুষ মাঠে কাজ করছেন, তবে শীত ও কুয়াশার কারণে কাজের গতি কমে গেছে। রিকশা ও ভ্যানচালকেরাও পড়েছেন বিপাকে—একদিকে তীব্র ঠান্ডা, অন্যদিকে যাত্রী সংকট।

নগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড়ের রিকশাচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “প্রচণ্ড শীতে হাত-পা বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যায়। কুয়াশা আর শীতের কারণে যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েক দিন ধরে খুব কষ্টে আছি।”

রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রংপুর বিভাগের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে নীলফামারীর ডিমলায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া রংপুরে ১১.৫, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১১, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১১.৪, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১১.৪, দিনাজপুরে ১২, ঠাকুরগাঁওয়ে ১১.১, লালমনিরহাটে ১২ এবং গাইবান্ধায় ১২.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে।

তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি হিমেল বাতাস শীতের তীব্রতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ঘন কুয়াশার কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশার তীব্রতা বাড়ে এবং তা পরদিন বেলা ১১টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। গত তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে খুব অল্প সময়ের জন্য।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ জানান, “আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। বছরের শেষ দিকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”

এদিকে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রংপুর বিভাগের আট জেলায় ভাইরাস জ্বর, নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, সর্দি ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বেড়েছে। উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ চিকিৎসাকেন্দ্র রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন শত শত শিশু শীতজনিত রোগে চিকিৎসা নিতে আসছে।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শহীদুল ইসলাম বলেন, “এবার শীতের তীব্রতা তুলনামূলকভাবে বেশি। শিশুদের পর্যাপ্ত গরম পোশাক পরাতে হবে এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না করার বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে।”

রংপুর বিভাগীয় প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের আট জেলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

শু/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর শোক

শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল, ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন

আপডেট সময় : ০৪:৪৯:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ঘন কুয়াশা, প্রচণ্ড শীত ও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের জনজীবন। টানা কয়েকদিন ধরে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে রংপুর বিভাগসহ আশপাশের এলাকায় হাঁড়কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা না মেলায় প্রকৃত তাপমাত্রার তুলনায় শীতের তীব্রতা অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে গ্রাম-শহরের জনপদ। কুয়াশার ঘনত্ব এতটাই বেশি যে কাছের কোনো বস্তু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। জীবিকার তাগিদে প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে শ্রমজীবী মানুষ মাঠে কাজ করছেন, তবে শীত ও কুয়াশার কারণে কাজের গতি কমে গেছে। রিকশা ও ভ্যানচালকেরাও পড়েছেন বিপাকে—একদিকে তীব্র ঠান্ডা, অন্যদিকে যাত্রী সংকট।

নগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড়ের রিকশাচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “প্রচণ্ড শীতে হাত-পা বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যায়। কুয়াশা আর শীতের কারণে যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েক দিন ধরে খুব কষ্টে আছি।”

রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রংপুর বিভাগের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে নীলফামারীর ডিমলায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া রংপুরে ১১.৫, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১১, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১১.৪, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১১.৪, দিনাজপুরে ১২, ঠাকুরগাঁওয়ে ১১.১, লালমনিরহাটে ১২ এবং গাইবান্ধায় ১২.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে।

তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি হিমেল বাতাস শীতের তীব্রতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ঘন কুয়াশার কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশার তীব্রতা বাড়ে এবং তা পরদিন বেলা ১১টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। গত তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে খুব অল্প সময়ের জন্য।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ জানান, “আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। বছরের শেষ দিকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”

এদিকে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রংপুর বিভাগের আট জেলায় ভাইরাস জ্বর, নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, সর্দি ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বেড়েছে। উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ চিকিৎসাকেন্দ্র রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন শত শত শিশু শীতজনিত রোগে চিকিৎসা নিতে আসছে।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শহীদুল ইসলাম বলেন, “এবার শীতের তীব্রতা তুলনামূলকভাবে বেশি। শিশুদের পর্যাপ্ত গরম পোশাক পরাতে হবে এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না করার বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে।”

রংপুর বিভাগীয় প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের আট জেলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

শু/সবা