০৬:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভালুকায় কুমির খামারে বাড়ছে পর্যটকদের সংখ্যা

সোহাগ রহমান, ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি 

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হাতীবেড় গ্রামে গড়ে উঠা কুমিরের খামারটি আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। দিনকে দিন কুমির খামারে
পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানা গেছে। খামারের ম্যানেজার ডা. আবু সায়েম মোহাম্মদ আরিফ জানান, ২০০৪ সালে দেশে প্রথম উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের হাতীবেড় গ্রামে রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড নামে ওই কুমির খামারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মুস্তাক আহমেদ ও মেজবাউল হক।

পরে ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পি কে হালদার, রাজিব সোম ও শিমু রায় এবং ২০২২ হতে এখন পর্যন্ত ডা. নাঈম আহমেদ, এনাম হক, রেজাউল শিকদার, ডা. মো. রফিকুল আলম, ফখরুদ্দিন আহেমদ, ডা. এস এম রশিদ পরিচালনা করছেন।
ডা. আরিফ আরও জানান, চলতি বছর ফার্মে উৎপাদিত ডিম থেকে ১ হাজার ২শত মতো বাচ্চা পেয়েছেন। আরো কিছু ডিম রয়েছে, সেগুলো থেকেও আরো বাচ্চা পাবেন তারা। ছোট বড় মিলিয়ে খামারে কুমিরের সংখ্যা ৩ হাজার ৭শত। এর মধ্যে বিডার কুমির অর্থাৎ মা ও পুরুষ কুমির মিলিয়ে প্রায় একশোর মতো রয়েছে। ২০১৯ সালে ২শত ৫১টি চামড়া রপ্তানি হয় জাপানে।
মাঝখানে ২০২০-২০২১ সালে করোনা এবং নানা প্রতিকূলতার কারণে চামড়ার রপ্তানি প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। এরপর ২০২২ সালে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে ৬ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে উনাদের দিক নির্দেশনায় তারা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ২০২৩ সালের শুরুর দিকে পর্যাটন ব্যবস্থা চালু করেন। আগে ২০২১ সাল পর্যন্ত পুরোপুরি দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ ছিল।

বর্তমানে নির্দিষ্ট ফি’র বিনিময়ে দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারবেন এবং কুমিরের জীবন ধারণ সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে পারবেন। এ ছাড়া আগত
পর্যাটক ও দর্শনার্থীদের কথা বিবেচনায় রেখে শীঘ্রই রেস্টুরেন্ট ও কপিসপ চালু করা হবে। তাছাড়া ভবিষ্যতে দুর দুরান্তের দর্শনার্থী যারা আসবেন তাদের
রাত্রী যাপনেরও ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তারা।
তিনি জানান, অতীতে বহুবার কুমিরের চামড়া রপ্তানি করা হলেও কুমিরের মাংস রপ্তানি করা সম্ভব হয়নি। আগামীতে মাংস রপ্তানির ব্যাপারেও প্রক্রিয়া
শুরু করেছেন তারা। অন্যদিকে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে দেশের প্রথম এই কুমির খামারটি নিলামের মাধ্যমে ৩৮ কোটি টাকায় কিনে নিয়েছে বেসরকারি একটি উন্নয়ন সংস্থা উদ্দীপন। তবে এখনও কুমির খামারটি হস্তান্তর করা হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে। সূত্রে আরও জানা যায়, প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারের ঋণের বোঝা এবং মালিকানা দ্বন্দ্বে ২০১৯ সাল থেকে ধুঁকে ধুঁকে চলছিল খামারটি। ওই খামারের ৩৬ শতাংশ শেয়ার ছিল মেজবাহুল হকের। যিনি সম্পর্কে মুস্তাক আহমেদের মামা। আর ১৫ শতাংশ শেয়ার ছিল মুস্তাক আহমেদের। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইইএফ প্রকল্পের ঋণ নেওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শেয়ার ছিল ৪৯ শতাংশ। সেই হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি ব্যাংক কর্মকর্তা প্রীতিশ কুমার সরকার ছিলেন পরিচালক। কুমিরের খাবার, প্রজনন ও
পরিচর্যার কাজে মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়। তখন থেকে মেজবাহুল হক ও মুস্তাক আহমেদের মাঝে মতের গড়মিল দেখা যায়। যা বাংলাদেশ
ব্যাংক থেকে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রীতিশ কুমার সরকারের পক্ষ থেকে মুস্তাক আহমেদকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, ৩০
দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের শেয়ার কিনে নেওয়ার জন্য টাকা জমা দিতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪৯ শতাংশ শেয়ারের পুরোটাই মেজবাহুল হকের নামে হস্তান্তর করা হবে। তখনই পিকে হালদারের সঙ্গে প্রীতিশ কুমার সরকারই মেজবাহুল হক ও মুস্তাক আহমেদের যোগাযোগ করে দেন। একপর্যায়ে ২০১২ সালে খামারের শেয়ার ছাড়তে বাধ্য হন মুস্তাক আহমেদ।
পরে ওই খামার সম্প্রসারণ করতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড থেকে ৫৭ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেয় পিকে হালদার।
জামানত হিসেবে ফার্মের জমি ব্যবহার করা হয়। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ফার্মের নামে ঋণ বাড়ানো হয়। ওই টাকা নিয়ে খামারে ব্যয় না করে বিদেশে পালিয়ে
যান পিকে হালদার। পরে দীর্ঘদিন ঋণ পরিশোধ না করায় বাধ্য হয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের আবেদন বিবেচনা করে এই পরিস্থিতি
মোকাবিলায় ৬ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেন উচ্চ আদালত। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ও কুমির বিশেষজ্ঞ এনাম হককে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিযুক্ত করা হয়। সংকটে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডে রেপটাইলস ফার্মস লিমিটেডের ঋণ
ছিল মোট ১শত ১০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে উদ্দীপন প্রায় ৮ কোটি টাকা জমা দিয়ে খামারটি নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। চলতি বছর নানা প্রক্রিয়া
শেষে ঋণের টাকা আদায়ে খামারটি নিলামে তোলে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং।
এরপর উদ্দীপনকে খামারটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে গত ২৮ আগস্ট চিঠি দেয় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। টাকা জমা দিতে ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। আগে পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৩ কোটি টাকা দেওয়ার পর ইতোমধ্যে আরও ৫ কোটি টাকা জমা দিয়েছে উদ্দীপন সংস্থাটি।

জনপ্রিয় সংবাদ

ভালুকায় কুমির খামারে বাড়ছে পর্যটকদের সংখ্যা

আপডেট সময় : ০৫:১১:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ নভেম্বর ২০২৩

সোহাগ রহমান, ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি 

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হাতীবেড় গ্রামে গড়ে উঠা কুমিরের খামারটি আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। দিনকে দিন কুমির খামারে
পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানা গেছে। খামারের ম্যানেজার ডা. আবু সায়েম মোহাম্মদ আরিফ জানান, ২০০৪ সালে দেশে প্রথম উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের হাতীবেড় গ্রামে রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড নামে ওই কুমির খামারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মুস্তাক আহমেদ ও মেজবাউল হক।

পরে ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পি কে হালদার, রাজিব সোম ও শিমু রায় এবং ২০২২ হতে এখন পর্যন্ত ডা. নাঈম আহমেদ, এনাম হক, রেজাউল শিকদার, ডা. মো. রফিকুল আলম, ফখরুদ্দিন আহেমদ, ডা. এস এম রশিদ পরিচালনা করছেন।
ডা. আরিফ আরও জানান, চলতি বছর ফার্মে উৎপাদিত ডিম থেকে ১ হাজার ২শত মতো বাচ্চা পেয়েছেন। আরো কিছু ডিম রয়েছে, সেগুলো থেকেও আরো বাচ্চা পাবেন তারা। ছোট বড় মিলিয়ে খামারে কুমিরের সংখ্যা ৩ হাজার ৭শত। এর মধ্যে বিডার কুমির অর্থাৎ মা ও পুরুষ কুমির মিলিয়ে প্রায় একশোর মতো রয়েছে। ২০১৯ সালে ২শত ৫১টি চামড়া রপ্তানি হয় জাপানে।
মাঝখানে ২০২০-২০২১ সালে করোনা এবং নানা প্রতিকূলতার কারণে চামড়ার রপ্তানি প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। এরপর ২০২২ সালে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে ৬ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে উনাদের দিক নির্দেশনায় তারা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ২০২৩ সালের শুরুর দিকে পর্যাটন ব্যবস্থা চালু করেন। আগে ২০২১ সাল পর্যন্ত পুরোপুরি দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ ছিল।

বর্তমানে নির্দিষ্ট ফি’র বিনিময়ে দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারবেন এবং কুমিরের জীবন ধারণ সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে পারবেন। এ ছাড়া আগত
পর্যাটক ও দর্শনার্থীদের কথা বিবেচনায় রেখে শীঘ্রই রেস্টুরেন্ট ও কপিসপ চালু করা হবে। তাছাড়া ভবিষ্যতে দুর দুরান্তের দর্শনার্থী যারা আসবেন তাদের
রাত্রী যাপনেরও ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তারা।
তিনি জানান, অতীতে বহুবার কুমিরের চামড়া রপ্তানি করা হলেও কুমিরের মাংস রপ্তানি করা সম্ভব হয়নি। আগামীতে মাংস রপ্তানির ব্যাপারেও প্রক্রিয়া
শুরু করেছেন তারা। অন্যদিকে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে দেশের প্রথম এই কুমির খামারটি নিলামের মাধ্যমে ৩৮ কোটি টাকায় কিনে নিয়েছে বেসরকারি একটি উন্নয়ন সংস্থা উদ্দীপন। তবে এখনও কুমির খামারটি হস্তান্তর করা হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে। সূত্রে আরও জানা যায়, প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারের ঋণের বোঝা এবং মালিকানা দ্বন্দ্বে ২০১৯ সাল থেকে ধুঁকে ধুঁকে চলছিল খামারটি। ওই খামারের ৩৬ শতাংশ শেয়ার ছিল মেজবাহুল হকের। যিনি সম্পর্কে মুস্তাক আহমেদের মামা। আর ১৫ শতাংশ শেয়ার ছিল মুস্তাক আহমেদের। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইইএফ প্রকল্পের ঋণ নেওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শেয়ার ছিল ৪৯ শতাংশ। সেই হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি ব্যাংক কর্মকর্তা প্রীতিশ কুমার সরকার ছিলেন পরিচালক। কুমিরের খাবার, প্রজনন ও
পরিচর্যার কাজে মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়। তখন থেকে মেজবাহুল হক ও মুস্তাক আহমেদের মাঝে মতের গড়মিল দেখা যায়। যা বাংলাদেশ
ব্যাংক থেকে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রীতিশ কুমার সরকারের পক্ষ থেকে মুস্তাক আহমেদকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, ৩০
দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের শেয়ার কিনে নেওয়ার জন্য টাকা জমা দিতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪৯ শতাংশ শেয়ারের পুরোটাই মেজবাহুল হকের নামে হস্তান্তর করা হবে। তখনই পিকে হালদারের সঙ্গে প্রীতিশ কুমার সরকারই মেজবাহুল হক ও মুস্তাক আহমেদের যোগাযোগ করে দেন। একপর্যায়ে ২০১২ সালে খামারের শেয়ার ছাড়তে বাধ্য হন মুস্তাক আহমেদ।
পরে ওই খামার সম্প্রসারণ করতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড থেকে ৫৭ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেয় পিকে হালদার।
জামানত হিসেবে ফার্মের জমি ব্যবহার করা হয়। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ফার্মের নামে ঋণ বাড়ানো হয়। ওই টাকা নিয়ে খামারে ব্যয় না করে বিদেশে পালিয়ে
যান পিকে হালদার। পরে দীর্ঘদিন ঋণ পরিশোধ না করায় বাধ্য হয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের আবেদন বিবেচনা করে এই পরিস্থিতি
মোকাবিলায় ৬ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেন উচ্চ আদালত। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ও কুমির বিশেষজ্ঞ এনাম হককে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিযুক্ত করা হয়। সংকটে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডে রেপটাইলস ফার্মস লিমিটেডের ঋণ
ছিল মোট ১শত ১০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে উদ্দীপন প্রায় ৮ কোটি টাকা জমা দিয়ে খামারটি নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। চলতি বছর নানা প্রক্রিয়া
শেষে ঋণের টাকা আদায়ে খামারটি নিলামে তোলে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং।
এরপর উদ্দীপনকে খামারটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে গত ২৮ আগস্ট চিঠি দেয় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। টাকা জমা দিতে ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। আগে পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৩ কোটি টাকা দেওয়ার পর ইতোমধ্যে আরও ৫ কোটি টাকা জমা দিয়েছে উদ্দীপন সংস্থাটি।