বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১ টা ৪৮ মিনিট। যশোর জেনারেল হাসপাতালে অবস্থিত ২৮ শয্যার করোনারি কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) গিয়ে দেখা যায় পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে মোট গিয়ে দেখা যায় হৃদরোগে আক্রান্ত ৪৬ রোগী ভর্তি রয়েছেন। তারা শয্যা, মেঝে ও বারান্দায় শুয়ে আছেন। রোগীদের পাশে চিন্তিত অবস্থায় বসে আছেন আত্মীয় স্বজনরা। ঘড়ির কাটা পেরিয়ে ২ টা ১০ মিনিট। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নতুন এক রোগী ভর্তি হয়েছেন। শয্যা ফাঁকা না থাকায় রোগীকে রাখা হয়েছে মেঝেতে। কিন্তু ভর্তির ১ঘন্টা পরও কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর কাছে আসেননি। জরুরি বিভাগ থেকে লেখা ওষুধে চলছে তার চিকিৎসা। একাধিক রোগীর স্বজন জানান, হৃদরোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় ডাক্তারের দেখা নেই বললেই চলে। চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে রোগী দেখভাল করেন ওয়ার্ডবয়-আয়ারা। এক কথায় ‘নামে তালপুকুল ঘটি ডোবেনা’।এখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কখন আসেন তা কেউ জানা নেই।
দীর্ঘসময় সিসিইউতে থেকে দেখা গেছে, রোগীর অবস্থা একটু খারাপ হলেই তিন তলা থেকে নিচে নেমে জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার অথবা ইন্টার্ণের পরামর্শ নিতে হয়। তবে মাঝে মধ্যে ওয়ার্ডে ঘোরাঘরি করেন ইন্টার্ণ। এক রোগীর স্বজন গোলাম রব্বানী জানান,
যশোর করোনারি কেয়ার ইউনিট নামে। এখানে জরুরি মুহুর্তে ডাক্তারের দেখা মেলেনা। দীর্ঘসময় সিসিইউতে থেকে দেখা গেছে, এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরিবর্তে রোগীর চিকিৎসা দেন মেডিকেল অফিসার ও ইন্টার্ণরা। আবার অনেক সময় ওয়ার্ডবয়-আয়ারা চিকিৎসকের ভূমিকায় থাকছেন। আর সিনিয়র সেবিকারা বিশ্রাম আর খাতা কলমের কাজে ব্যস্ত থাকেন।
অনুসন্ধান মতে, খাতা কলমে করোনারি কেয়ার ইউনিটে একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু বাস্তবে তারা দায়িত্বস্থলে থাকেন না। তাদের স্থানে মেডিকেল অফিসার অথবা ইন্টার্নকে বসিয়ে তারা ব্যক্তিগত চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ফলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা তাৎক্ষণিকভাবে ভাগ্যে জোটেনা রোগীদের। অর্থাৎ প্রতিদিন সকালে ওয়ার্ড রাউন্ডের পর কোন রোগী ভর্তি হলে রোগীকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অপেক্ষায় থাকতে হয় পরের দিনের রাউন্ডের সময় পর্যন্ত। অথচ এই অঞ্চলের হৃদরোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় সরকারিভাবে একমাত্র প্রতিষ্ঠান হলো যশোর করোনারি কেয়ার ইউনিট। কিন্ত চিকিৎসাসেবায় বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেয়ে অনেক রোগী মারাও যান।
গত কয়েকদিন সিসিইউ ঘুরে দেখা গেছে, রোগীর রাইস টিউব (খাদ্য নল ) লাগানোর কাজ করেন ওয়ার্ডবয়-আয়ারা। প্রতি রোগীর রাইস টিউব লাগানোর জন্য তাদের দিতে হয় ১শ’ টাকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সিনিয়ার সেবিকা জানান, নিয়ম অনুযায়ী ওয়ার্ডবয় বা সেবিকা কেউ রোগীর রাইস টিউব লাগাতে পারবেন না। চিকিৎসক (মেডিকেল অফিসার) এটি লাগাবেন। কিন্তু চিকিৎসকের অনুপস্থিতির কারণে তারা (ওয়ার্ডবয়-আয়া) এটি করেন।
বুকের ব্যথায় কাতরাচ্ছেন এক রোগী। কিন্তু যথাযথ চিকিৎসা মিলছে না। অথচ উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার জন্য এখানে এসেছেন বলে জানান রোগীর স্বজন আতিয়ার রহমান।
আরও কয়েক রোগীর স্বজন জানান, জরুরি বিভাগ থেকে মেডিকেল অফিসার ব্যবস্থ্পাত্র দিয়ে ওয়ার্ডে পাঠান। আর একজন ইন্টার্ণ ওয়ার্ডে এসে ব্যবস্থাপত্রের উপর ‘রিপিট অল’ লিখে দেন। সে অনুয়ায়ী সারাদিন চলে চিকিৎসা। রাতেও মেলেনা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা। এখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কখন আসেন তা কেউ জানা নেই। রোগীর অবস্থা একটু খারাপ হলেই তিন তলা থেকে নিচে নেমে জরুরি বিভাগ থেকে মেডিকেল অফিসারের পরামর্শ নিতে হয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেছেন, তার জানামতে সেখানে চিকিৎসকরা
রোস্ট্রার অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ২৪ ঘন্টা একজন চিকিৎসকের দয়িত্ব পালনের কথা। ওয়ার্ডবয়-আয়া চিকিৎসকের ভূমিকায় থাকার বিষয়টি দুঃখজনক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করার বিষয়ে কঠোর ভূমিকা নেয়া হবে।
শিরোনাম
যশোর সিসিইউতে হৃদরোগের চিকিৎসায় ওয়ার্ডবয়-আয়া!
-
বিল্লাল হোসেন,যশোর - আপডেট সময় : ০৪:৩১:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩
- ।
- 102
জনপ্রিয় সংবাদ


























