০১:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
জাতীয় সংসদ নির্বাচন : 

কুষ্টিয়ার ৪ আসনে লড়াই এবার নৌকা বনাম আওয়ামী লীগ

‘আওয়ামী লীগ হারলে নৌকা জিতবে আর নৌকা হারলে আওয়ামী লীগ জিতবে।’ আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়ায় ভোটের লড়াইয়ের সমীকরণ এভাবেই দাঁড় করিয়েছেন কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়ার বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ রবিউল। তিনি আরও বলেন, ‘কুষ্টিয়ার চার আসনেই আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের লড়াই হবে। কেউ কাউকে ছাড় দেবে না।’
এদিকে এলাকার উন্নয়ন নিয়েও কুষ্টিয়ার ভোটারদের মধ্যে রয়েছে প্রত্যাশা-ক্ষোভ। তাঁদের অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের আসন ছাড়া জেলার অন্য কোনো আসনে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়নি। এ কারণে সাধারণ ভোটারের অনেকে দ্বিধায় রয়েছেন, এবার কাকে বেছে নেবেন।
চার আসনে নৌকার প্রতিপক্ষ আ.লীগ
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা কুষ্টিয়ায় জাতীয় সংসদের চারটি আসন। এর মধ্যে কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা ও মিরপুর) আসন মহাজোটের সঙ্গে সমঝোতায় ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই আসনে জাসদের হাসানুল হক ইনু নৌকা মার্কায় ভোট করছেন। তাঁর পথের বাধা স্বতন্ত্র প্রার্থী মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন। তিনি ট্রাক প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন।
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। ঈগল মার্কা নিয়ে তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলীর ছেলে পারভেজ আনোয়ার তনু। আনোয়ার আলী কুষ্টিয়া পৌরসভার পাঁচবারের নির্বাচিত মেয়র।
কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী ও খোকসা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ। তাঁর বিপরীতে ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সংসদ আব্দুর রউফ।
কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে নৌকা প্রতীকে আছেন আ ক ম সারোয়ার জাহান বাদশা। ট্রাক প্রতীক নিয়ে তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরী। তিনিও আওয়ামী লীগ নেতা।
হানিফের আসনে লড়াইয়ের আভাস
গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার সারা দিন কুষ্টিয়া-২ ও কুষ্টিয়া-৩ আসন ঘুরে ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কয়েকজন সাধারণ ভোটার জানালেন, নৌকার প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উভয়ই আওয়ামী লীগের হওয়ায় কাকে ভোট দেবেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না অনেকেই। কুষ্টিয়া শহরের ডাচ-বাংলা মোড়ে পান বিক্রেতা মো. মোমিন জানান, পারভেজ তনু তাঁর এলাকার। সেই হিসেবে তিনি তাঁকেই ভোট দিতে চান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একই এলাকার বিএনপি সমর্থক এক ব্যবসায়ী জানান, তিনি ভোটের দিন দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। যদি ভোট সুষ্ঠু মনে হয়, তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীকেই ভোট দেবেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুবউল আলম হানিফ সবুজ বাংলাকে জানান, স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে তাঁর কোনো মন্তব্য নেই।
ইনুর পাশে নেই আওয়ামী লীগ
নৌকা নিয়ে ভোটের মাঠে থাকলেও জাসদের হাসানুল হক ইনুর পাশে নেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক কর্মী-সমর্থক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিনকেই বেছে নিতে চান।
সাহেবনগর এলাকার বাসিন্দা মো. রাজ্জাক জানান, তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থক। তবে ভোট দেওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে আছেন।
এই বিষয়ে হাসানুল হক ইনুর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁকে খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিন সবুজ বাংলাকে জানান, তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী। তাই ভোটারের দ্বিধার কোনো কারণ নেই।
দুই আসনে স্থানীয় আ.লীগে দ্বন্দ্ব
কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী ও খোকসা) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জের আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রউফের জনপ্রিয়তা রয়েছে। এরই মধ্যে দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কয়েকবার সংঘাতে জড়ানোর তথ্য পাওয়া গেছে। হয়েছে পাল্টাপাল্টি মামলাও।
খোকসার স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই আসনে নৌকা প্রতীক পেলেও ট্রাকের জনপ্রিয়তা সমান সমান।’
তবে সেলিম আলতাফ জর্জ সবুজ বাংলাকে বলেন, ‘যিনি স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছেন, তাঁকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ অনেক আগেই প্রত্যাখ্যান করেছে।’
কুষ্টিয়া-১ আসনেও নৌকার বিপক্ষে শক্ত অবস্থানে রয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ট্রাক মার্কা।
সার্বিক বিষয়ে কুষ্টিয়ার সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সহসভাপতি মিজানুর রহমান লাকী বলেন, ‘দলীয় প্রার্থীর বাইরে যাঁরা স্বতন্ত্র রয়েছেন, তাঁরা অধিকাংশ আওয়ামী লীগ। একই দলের দুই প্রতিপক্ষ হওয়ায় কুষ্টিয়ায় নির্বাচনের আগে সংঘাত হওয়ার আশংকা রয়েছে।’
জেলা রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। প্রশাসন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর।’
জনপ্রিয় সংবাদ

বিমানবন্দর থেকে বুলেটপ্রুফ বাসে পূর্বাচলের সংবর্ধনায় যাচ্ছেন তারেক রহমান

জাতীয় সংসদ নির্বাচন : 

কুষ্টিয়ার ৪ আসনে লড়াই এবার নৌকা বনাম আওয়ামী লীগ

আপডেট সময় : ০৪:৪৮:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৩
‘আওয়ামী লীগ হারলে নৌকা জিতবে আর নৌকা হারলে আওয়ামী লীগ জিতবে।’ আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়ায় ভোটের লড়াইয়ের সমীকরণ এভাবেই দাঁড় করিয়েছেন কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়ার বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ রবিউল। তিনি আরও বলেন, ‘কুষ্টিয়ার চার আসনেই আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের লড়াই হবে। কেউ কাউকে ছাড় দেবে না।’
এদিকে এলাকার উন্নয়ন নিয়েও কুষ্টিয়ার ভোটারদের মধ্যে রয়েছে প্রত্যাশা-ক্ষোভ। তাঁদের অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের আসন ছাড়া জেলার অন্য কোনো আসনে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়নি। এ কারণে সাধারণ ভোটারের অনেকে দ্বিধায় রয়েছেন, এবার কাকে বেছে নেবেন।
চার আসনে নৌকার প্রতিপক্ষ আ.লীগ
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা কুষ্টিয়ায় জাতীয় সংসদের চারটি আসন। এর মধ্যে কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা ও মিরপুর) আসন মহাজোটের সঙ্গে সমঝোতায় ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই আসনে জাসদের হাসানুল হক ইনু নৌকা মার্কায় ভোট করছেন। তাঁর পথের বাধা স্বতন্ত্র প্রার্থী মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন। তিনি ট্রাক প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন।
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। ঈগল মার্কা নিয়ে তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলীর ছেলে পারভেজ আনোয়ার তনু। আনোয়ার আলী কুষ্টিয়া পৌরসভার পাঁচবারের নির্বাচিত মেয়র।
কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী ও খোকসা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ। তাঁর বিপরীতে ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সংসদ আব্দুর রউফ।
কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে নৌকা প্রতীকে আছেন আ ক ম সারোয়ার জাহান বাদশা। ট্রাক প্রতীক নিয়ে তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরী। তিনিও আওয়ামী লীগ নেতা।
হানিফের আসনে লড়াইয়ের আভাস
গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার সারা দিন কুষ্টিয়া-২ ও কুষ্টিয়া-৩ আসন ঘুরে ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কয়েকজন সাধারণ ভোটার জানালেন, নৌকার প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উভয়ই আওয়ামী লীগের হওয়ায় কাকে ভোট দেবেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না অনেকেই। কুষ্টিয়া শহরের ডাচ-বাংলা মোড়ে পান বিক্রেতা মো. মোমিন জানান, পারভেজ তনু তাঁর এলাকার। সেই হিসেবে তিনি তাঁকেই ভোট দিতে চান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একই এলাকার বিএনপি সমর্থক এক ব্যবসায়ী জানান, তিনি ভোটের দিন দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। যদি ভোট সুষ্ঠু মনে হয়, তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীকেই ভোট দেবেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুবউল আলম হানিফ সবুজ বাংলাকে জানান, স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে তাঁর কোনো মন্তব্য নেই।
ইনুর পাশে নেই আওয়ামী লীগ
নৌকা নিয়ে ভোটের মাঠে থাকলেও জাসদের হাসানুল হক ইনুর পাশে নেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক কর্মী-সমর্থক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিনকেই বেছে নিতে চান।
সাহেবনগর এলাকার বাসিন্দা মো. রাজ্জাক জানান, তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থক। তবে ভোট দেওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে আছেন।
এই বিষয়ে হাসানুল হক ইনুর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁকে খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিন সবুজ বাংলাকে জানান, তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী। তাই ভোটারের দ্বিধার কোনো কারণ নেই।
দুই আসনে স্থানীয় আ.লীগে দ্বন্দ্ব
কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী ও খোকসা) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জের আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রউফের জনপ্রিয়তা রয়েছে। এরই মধ্যে দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কয়েকবার সংঘাতে জড়ানোর তথ্য পাওয়া গেছে। হয়েছে পাল্টাপাল্টি মামলাও।
খোকসার স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই আসনে নৌকা প্রতীক পেলেও ট্রাকের জনপ্রিয়তা সমান সমান।’
তবে সেলিম আলতাফ জর্জ সবুজ বাংলাকে বলেন, ‘যিনি স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছেন, তাঁকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ অনেক আগেই প্রত্যাখ্যান করেছে।’
কুষ্টিয়া-১ আসনেও নৌকার বিপক্ষে শক্ত অবস্থানে রয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ট্রাক মার্কা।
সার্বিক বিষয়ে কুষ্টিয়ার সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সহসভাপতি মিজানুর রহমান লাকী বলেন, ‘দলীয় প্রার্থীর বাইরে যাঁরা স্বতন্ত্র রয়েছেন, তাঁরা অধিকাংশ আওয়ামী লীগ। একই দলের দুই প্রতিপক্ষ হওয়ায় কুষ্টিয়ায় নির্বাচনের আগে সংঘাত হওয়ার আশংকা রয়েছে।’
জেলা রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। প্রশাসন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর।’