♦ শিক্ষার হার বাড়লেও আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে উচ্চশিক্ষা
♦ শিক্ষার মান বাড়াতে মানসম্মত শিক্ষক নিশ্চিতে গুরুত্ব
♦ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর আশ্বাস আ.লীগের ইশতেহারে
শিক্ষার হার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাসহ নানা দিক থেকে এগিয়ে গেছে দেশের শিক্ষা খাত। বিশেষ করে বাংলাদেশ বিগত এক দশকে প্রাথমিক স্তরে ভর্তি এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে জেন্ডার সমতা অর্জন, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা বিস্তার, উচ্চশিক্ষায় মেয়েদের অন্তর্ভুক্তির হার বৃদ্ধি এবং সার্বিকভাবে মানবসম্পদ উন্নয়নে অনেক সাফল্য অর্জন করেছে। সরকারের এ সাফল্য দেশে ও বৈশ্বিক পরিসরেও সর্বজন স্বীকৃত। তবু শিক্ষাক্ষেত্রে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করেন নীতি-নির্ধারকসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা।
বিশেষ করে আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকা শিক্ষার মান নিশ্চিত বা উন্নত করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন টার্গেট অনুযায়ী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রেও স্মার্ট শিক্ষা বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষার আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিতের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তারা। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ নির্বাচনি ইশতেহারেও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার মান বাড়াতে সবার আগে মানসম্মত শিক্ষক নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।
এদিকে দেশের শিক্ষা খাতের এমন বাস্তবতার মধ্যেই আজ পালিত হবে ‘আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস’। এ উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
সূত্রমতে, ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রতি বছরের ২৪ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশসহ জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা কর্মসূচির সাফল্যসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য, বিশেষ করে ৪ নম্বর লক্ষ্য এবং উল্লেখযোগ্য নানা আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রমের মূল্যায়নের উদ্দেশ্য সামনে রেখে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন এ দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়।
আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আজ ‘টেকসই শান্তির জন্য শিক্ষা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘গণসাক্ষরতা অভিযান’। এতে বেসরকারি শিক্ষা পরিবারের পক্ষ থেকে নবগঠিত সরকারের কাছে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা তুলে ধরবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, এমপিসভাপতিত্ব করবেন এডুকেশন ওয়াচ-এর চেয়ারপারসন ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডসের (কিউএস) ২০২৪ সালের র্যাংকিং তালিকা প্রকাশ করে গত বছরের নভেম্বরে। সারা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মহাদেশ ও বিষয়ভিত্তিক তালিকাও প্রকাশ করা হয়। তবে কিউএস এশিয়া ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং ২০২৪-এ শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জায়গা পায়নি বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে না থাকলেও এবারের র্যাঙ্কিংয়ে দেশসেরা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাবির অবস্থান ১৪০তম। মোট ১০০ স্কোরের মধ্যে ঢাবি পেয়েছে ৩৩ দশমিক ৯। এছাড়া এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় শীর্ষ ২০০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্য বুয়েট ১৮৭তম ও নর্থ সাউথ ১৯১তম অবস্থানে আছে।
আন্তর্জাতিক এ র্যাঙ্কিংয়ে দেশের বিশ^বিদ্যালয়গুলোর অবস্থান দেখে শিক্ষার সার্বিক মানের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের আইবিএ অধ্যাপক ড. মোহা. হাছানাত আলী। তিনি গতকাল সবুজ বাংলাকে বলেন, কিউএসের র্যাঙ্কিং পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দেশে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থী বেড়েছে কিন্তু এখনো দেশে সুষ্ঠু শিক্ষানীতি না থাকায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে কখনো নৈমিত্তিক, কখনো বৃত্তপূরণ, কখনো কর্মমূল্যান-ইত্যাদি এক্সপেরিমেন্ট করা হচ্ছে। কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই এ ধরণের এক্সপেরিমেন্টে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির পরিবর্তে আরো অবনমন হয়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে দেশের কৃষ্টি-কালচার ও ও ধর্মীয় মূল্যবোধে গুরুত্ব দিয়ে একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ণের পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষক নিশ্চিত করতে হবে।
সূত্রমতে উচ্চশিক্ষার মান বাড়াতে বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বিশেষ সুপারিশ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ র্যাঙ্কিং তৈরির একটি নীতিমালা তৈরির সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ঘোষিত ইশতেহারে শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়-আওয়ামী লীগ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াবে এবং তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভাষা, উচ্চতর গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষাকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করা হবে ইত্যাদি।
এছাড়া গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বই বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার বিশ্বখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার ক্ষেত্রে যত টাকা লাগে আমি দেব। বিশ্বে যত নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, তারা কীভাবে শিক্ষা দেয়, কী কারিকুলাম শিখায় সেই পদ্ধতি ব্যবহার করে আমরা সেরকম আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থায় বাংলাদেশে তৈরি করতে চাই।’
স/ম























