◉ সম্পর্ক উন্নয়নে ভূ-রাজনৈতিক, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গুরুত্ব
◉ আন্তর্জাতিক সম্মেলন-সেমিনার কাজে লাগানোর চিন্তা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোর তৎপরতায় অস্বস্তিতে ফেলেছিল আওয়ামী লীগকে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি, শ্রমআইন ছাড়াও বাংলাদেশে দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সক্রিয়তায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সরকারের জন্য। তবে আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান সম্মতভাবে একটি সফল নির্বাচন অনুষ্ঠানে সক্ষম হয়েছে। নির্বাচনের পর পশ্চিমাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে সঙ্কা থাকলেও তেমন কোনো বাধার মুখোমুখি হতে হয়নি টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের। নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ তাদের পশ্চিমা দেশগুলো নতুন সরকারকে অনেকটা স্বীকৃতি দিলেও এখনো সম্পর্কের বরফ গলেনি পুরোপুরি। তবে নির্বাচনের পর দেশে দ্রবমূল্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিদেশনীতিতেও সমান মনোয়োগ দিচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার।
গত শনিবার ৩ দিনের সফরে ঢাকায় আসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ সহকারী এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়ার সিনিয়র ডিরেক্টর এলিন লাউবাকের, ইউএসএআইডি’র এশিয়া-বিষয়ক ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মাইকেল শিফার এবং ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তার। গত শনিবার মার্কিন দূতাবাস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের এই প্রতিনিধি দল বৈঠক করেছে বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে। বিএনপির সঙ্গে তাদের কী কথা হয়েছে তা জানা যায়নি। গত রোববার দলটি বেঠক করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাসান মাহামুদের সঙ্গেও। বৈঠক শেষে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের একমত হওয়ার কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তারাও চায় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় এবং আমরাও চাই একটি নতুন সম্পর্ক, একটি সম্পর্কের নতুন অধ্যায় তাদের সঙ্গে শুরু করতে। যেহেতু দুই দেশেরই সদিচ্ছা আছে, সুতরাং এই সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, গভীরতর ও উন্নয়নের মাধ্যমে আমাদের উভয় দেশ উপকৃত হবে।
দলীয় সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়ে পররাষ্ট্রনীতিতে ভারসাম্য আনার কৌশল অবলম্বন করার চেষ্টা করছে দল ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করলেও এখন তা আর করেছেন না। বরং চেষ্টা করা হচ্ছে দূরত্ব কমানো নিয়ে। এতে সরকার ও দল উভয়ের পথচলা নির্ভার হবে বলে মনে করেন তারা।
নির্বাচনের পর গত ১৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার জন্য আমরা যথেষ্ট ধৈর্যশীল। নতুন সংকটে পা দিতে চাই না।
দলটির নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, সম্পর্ক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়গুলো সামনে রেখে এগোনো হবে। সে ক্ষেত্রে গুরুত্ব পাবে পারস্পারিক স্বার্থ ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখা, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা এবং অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক। এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামের সম্মেলন, সেমিনার এবং বিভিন্ন দেশ সফরের সরকারের প্রতিনিধিরা সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর জোর দেবেন।
সম্প্রতি বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে তৃতীয় ইইউ ইন্দো-প্যাসিফিক মিনিস্টেরিয়াল ফোরামের সাইডলাইনে ভিয়েতনাম, বেলজিয়াম, চেক ও সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এর আগে ভারত সফরে গিয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। সবশেষ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে যোগ দিতে জার্মানি সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেসময় বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, নির্বাচন নিয়ে অনেক দেশ অনেক কথা বলার চেষ্টা করেছে। আমরা মনে করি আগাগোড়া পশ্চিমাদের সঙ্গে একটা সুসম্পর্ক ছিল। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। এই নীতিতেই আমরা এগিয়ে চলছি। সব দেশের সঙ্গেই রাজনৈতিক যোগাযোগ তো সবসময় থাকেই। রাষ্ট্রীয়ভাবে থাকে, দলীয়ভাবেও থাকে। যেহেতু আমরা গ্লোবাল ভিলেজে বাস করি, তাতে তাদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগও রয়েছে। এসব যোগাযোগ আগামীতে আরো বাড়বে, বন্ধনটা আরো দৃঢ় হবে বলেই আমি বিশ্বাস করি।






















