➤১১ আর্থিকসহ ২৫ ধরনের অনিয়ম চিহ্নিত করে ইউজিসির বাজেট পর্যালোচনা দল
রাজধানীতে অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালএর বাজেট পর্যালোচনায় ১১টি আর্থিকসহ ২৫ ধরনের অনিয়ম পেয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গত ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি ইউজিসির বাজেট পর্যালোচনা দল বিশ^বিদ্যালয়টির ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেট পর্যালোচনাকালে এসব অনিয়ম ধরা পড়ে। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১১ কোটি টাকা। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি সুপারিশ করেছে ইউজিসির পর্যালোচনা দল। অনিয়মের জেরে ক্ষতি হওয়া অর্থ আদায়ের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে ইউজিসি।
এদিকে ইউজিসির এই বাজেট আপত্তি চরম অস্বস্তিতে পড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্র্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে বাজেট আপত্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যাসহ প্রতিবেদন ইউজিসিতে জমা দিয়েছে বিশ^বিদ্যালয়টি। এ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ইউজিসি পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে বলে জানা গেছে।
ইউজিসির সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (সদ্য সাবেক) অধ্যাপক ড. ওহিদুজ্জামানকে ২য় গ্রেডে বেতন প্রদান করায় জাতীয় বেতন স্কেলের ব্যত্যয় ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এই বিষয়ে বলা হয়েছে স্বায়ত্তশাসিত কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ৩য় গ্রেড বা তদূর্ধ্ব গ্রেডে বেতন পাবেন না। জাতীয় বেতনস্কেল অনুযায়ী বেতন পুনর্নির্ধারণ করে অতিরিক্ত প্রদত্ত অর্থ আদায়পূর্বক বিশ^বিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাজেট বরাদ্দ না থাকা সত্ত্বেও ১০টি মাইক্রোবাস ক্রয় করে। যাতে আর্থিক ক্ষতি হয় ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এছাড়াও প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়াই ২টি মাইক্রোবাস ও একটি বাস ক্রয় করায় নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। যাতে আর্থিক ক্ষতি ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু যানবাহন ভাড়ায় চালিত। কমিশন কর্তৃক যার আর্থিক ও প্রশাসনিক অনুমোদন নেই। এতে ক্ষতি ২ কোটি ১২ লাখ টাকা।
২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে অসমন্বিত অগ্রিমের পরিমাণ ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এছাড়াও বছর শেষে জুন মাসে অগ্রিম প্রদান করায় নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। সংশোধিত বাজেট প্রণয়নের আগেই কিছু খাতে মূল বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের চেয়ে ৭০ লাখ টাকার অধিক অর্থ ব্যয় করেছে। অতিরিক্ত হারে দায়িত্ব ভাতা প্রদান করায় ১৯ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বই-ভাতার জন্য শিক্ষকপ্রতি ৩ হাজার টাকা হারে অর্থ প্রদান করায় ক্ষতি হয়েছে ৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।
সরকারি নিয়ম ভেঙ্গে ড্রাইভার ও হেলপারের তদারকি ভাতা প্রদান করায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা। নিয়ম না মেনে শিক্ষকদের বিভিন্ন পরীক্ষার ফি প্রদান করায় ক্ষতি ৩ লাখ ৯ হাজার টাকা। প্রশিক্ষণ ভাতার নীতিমালার বাইরে প্রশিক্ষণকালীন ৬০০ টাকা হারে দৈনিক মজুরি বিল প্রদান করায় ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার টাকা।
আর্থিক ক্ষতির বাইরে ১৪টি আইন ব্যত্যয়ের কথা উঠে এসেছে ইউজিসির প্রতিবেদনে। এক খাতের বাজেট অন্যখাতে স্থানান্তর করা বা সমন্বয় করা হয়েছে। নিয়ম না থাকার পরও চুক্তিভিত্তিক ড্রাইভার, বাস হেল্পার নিয়োগ করা হয়েছে। নিয়োগকৃত জনবলের পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়নি। নিয়ম না মেনে শিক্ষকদের পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোনো অনুমোদিত অর্গানোগ্রাম নেই। পে-স্লিপ তৈরি করা হয়নি সেইসঙ্গে পে-স্লিপে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্বাক্ষর ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প লাগানো হয়নি। অধিকাল ভাতার হার সরকারি হারের থেকে অধিক। ভাইস চ্যান্সেলর ও রেজিস্ট্রার দপ্তর সেইসঙ্গে ব্যক্তিগত শাখায় কর্মকর্তাগণকে নিয়ম-বহির্ভূতভাবে সম্মানী প্রদান করা হয়। মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নয়ন নীতিমালা বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্মীকরণ করা হয়নি। অনুষ্ঠান উৎসবাদি খাত থেকে জাতীয় দিবস ব্যতিত বিভিন্ন দিবসে অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেট সেল নেই। পিআরএল গমনের পূর্বে রেজিস্ট্রার দপ্তর হতে পেনশনারের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক পাওনাদি ও দপ্তরের অন্য কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিকট হতে ব্যক্তিগত পাওনাদির বিষয়ে প্রশাসনকে অবহিত করা হয় না। পেনশনারগণের পেনশন বই প্রণয়ন করা হয়নি এবং বাৎসরিক হাজিরা গ্রহণ করা হয়নি। সিনিয়র ড্রাইভার, সিনিয়র গার্ড পদ অর্গানোগ্রামে না থাকা সত্ত্বেও আপগ্রেডেশন প্রদান করায় নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে।
অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম গতকাল সবুজ বাংলাকে জানান, আমরা আপত্তির বিষয়গুলো নিয়ে ইউজিসিতে রিপোর্ট জমা দিয়েছি। ইউজিসি যাচাই-বাছাই করবে। এরপর ইউজিস চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারে।
এর আগে প্রতিবেদনের দায়িত্বে থাকা ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মো. আবু তাহের বলেন, ইউজিসি পর্যবেক্ষণের সারমর্ম তুলে ধরা হয়েছে। সেইসঙ্গে স্পষ্ট করে করণীয় ও সুপারিশ উল্লেখ করে দিয়েছি। এখন সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বিশ্ববিদ্যালয়।