০৪:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কোটা ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে সরকার

✦ সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়ার শঙ্কায় এ অবস্থান
✦ রাজাকার শ্লোগানের জবাব ছাত্রলীগই দেবে: কাদের
✦ আইন ভঙ্গের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার
✦ সরকার অনেক শক্তিশালী, দেশকে অস্থিতিশীল করতে দেবো না:পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলতি মাসের শুরু থেকেই চলছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। গত ৫ জুন হাইকোর্টে কোটা পুর্নবহালের রায়কে কেন্দ্র করে রাজপথে ১৫ দিন ধরে আন্দোলন করছেন তারা। সবশেষ গত বুধবার আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের উপর স্থিতাবস্থা জারি করলেও শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখান করে কোটা সংস্কারের দাবিতে অটল থেকে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেন। শুরুতে সরকার ও পুলিশের পক্ষ কঠোরতা দেখানো না হলেও গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি স্থানে পুলিশ কঠোর হয়। রাজধানীতেও শিক্ষার্থীদের অবরোধে বাঁধা দেওয়া হয়। তবে পুলিশ ব্যরিকেড ভেঙে শাহবাগে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। পরদিন শুক্রবার অজ্ঞাতনামাদের অভিযুক্ত করে শাহাবাগ থানায় পুলিশের গাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও পুলিশ সদস্যদের জখমের অভিযোগে একটি মামলা করে পুলিশ। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা গত কয়েকদিন ধরেই অভিযোগ করছিলেন আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে বিশেষ গোষ্ঠী। সবশেষ গতকাল সোমবার বদলে যায় দৃশ্যপট। রোববার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য কেন্দ্র করে রাতেই বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগান দিতে থাকনে। যার কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আওয়ামী লীগ ও সরাকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা। পরে দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত সমাবেশে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।
আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, মূলত আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিতেই রোববার মধ্যরাতে রাজাকার স্লোগান তোলেন আন্দোলনকারীরা। মূলত আন্দোলনকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টা করা হচ্ছিল। সেকরাণে প্রাথমিক পর্যায়ে সরকার কঠোর না হয়ে আদালতে সমাধানের আশায় থাকলেও, শেষমেষ কঠোর হয়েছে।
এদিন সকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্র আন্দোলনের যে বক্তব্য কতিপয় নেতা দিয়েছেন, সেটার জবাব ছাত্রলীগই দেবে। ছাত্রদের বিষয় ক্যাম্পাস পর্যন্ত সীমিত থাকবে। আমরা দেখি রাজনৈতিকভাবে কারা প্রকাশ্যে আসে। তখন দেখা যাবে। আমরাও মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।
ছাত্রদের রাজাকার স্লোগান রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক কি না এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, বিষয়টি বিচারাধীন। এখানে আমাদেরও অনেক কিছু চিন্তা-ভাবনা করে বলতে হয়। যাতে আদালত অবমাননা না হয়। আদালত অবমাননার বিষয়টি আদালতকেই দেখতে হবে। যে বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। সেটি আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সরকারের কোনো কিছুই করার নেই। বিচারাধীন বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও মন্তব্য করা আদালত অবমাননার শামিল। আমরা বারবার আন্দোলনকারীদের বিষয়গুলো স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত বাদ রেখে অন্য কোনো উপায়ে বা বলপ্রয়োগে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগ মেনে নেবো না, রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী সভা-সমাবেশ মেনে নিতে পারি না। আমরা লক্ষ্য করছি, এ আন্দোলনের কুশীলব বিএনপি-জামায়াত, তাদের স্বরূপ উন্মোচিত করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের সরকার অনেক শক্তিশালী, আমরা দেশকে কখনো অস্থিতিশীল করতে দেব না। দেখুন গতকাল রাতে যে ধরনের স্লোগান দেওয়া হয়েছে, রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান। একইসঙ্গে সেখানে সরকারবিরোধী, প্রধানমন্ত্রীবিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়েছে। এতে স্পষ্ট আমরা যে বলেছিলাম আগে, কোটা আন্দোলনের মধ্যে রাজনৈতিক অপশক্তি ঢুকেছে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সেই দেশে রাজাকারের পক্ষে স্লোগান, এটি রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান। এটি সরকারবিরোধী নয়, এটি রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, চলমান কোটা আন্দোলনের বিষয়টি আদালতের বিষয়। উচ্চ আদালত যে আদেশ দিবে সেটিকে শ্রদ্ধা ও মানা নাগরিকের দায়িত্ব। আমরা আদালতের নিয়ম মানতে বাধ্য। যদি কেউ আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গে কোনো ধরনের অপতৎপরতা চালায়, সেটি যেই হোন তাদের শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

কোটা ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে সরকার

আপডেট সময় : ০৭:৪২:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪

✦ সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়ার শঙ্কায় এ অবস্থান
✦ রাজাকার শ্লোগানের জবাব ছাত্রলীগই দেবে: কাদের
✦ আইন ভঙ্গের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার
✦ সরকার অনেক শক্তিশালী, দেশকে অস্থিতিশীল করতে দেবো না:পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলতি মাসের শুরু থেকেই চলছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। গত ৫ জুন হাইকোর্টে কোটা পুর্নবহালের রায়কে কেন্দ্র করে রাজপথে ১৫ দিন ধরে আন্দোলন করছেন তারা। সবশেষ গত বুধবার আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের উপর স্থিতাবস্থা জারি করলেও শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখান করে কোটা সংস্কারের দাবিতে অটল থেকে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেন। শুরুতে সরকার ও পুলিশের পক্ষ কঠোরতা দেখানো না হলেও গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি স্থানে পুলিশ কঠোর হয়। রাজধানীতেও শিক্ষার্থীদের অবরোধে বাঁধা দেওয়া হয়। তবে পুলিশ ব্যরিকেড ভেঙে শাহবাগে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। পরদিন শুক্রবার অজ্ঞাতনামাদের অভিযুক্ত করে শাহাবাগ থানায় পুলিশের গাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও পুলিশ সদস্যদের জখমের অভিযোগে একটি মামলা করে পুলিশ। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা গত কয়েকদিন ধরেই অভিযোগ করছিলেন আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে বিশেষ গোষ্ঠী। সবশেষ গতকাল সোমবার বদলে যায় দৃশ্যপট। রোববার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য কেন্দ্র করে রাতেই বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগান দিতে থাকনে। যার কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আওয়ামী লীগ ও সরাকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা। পরে দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত সমাবেশে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।
আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, মূলত আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিতেই রোববার মধ্যরাতে রাজাকার স্লোগান তোলেন আন্দোলনকারীরা। মূলত আন্দোলনকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টা করা হচ্ছিল। সেকরাণে প্রাথমিক পর্যায়ে সরকার কঠোর না হয়ে আদালতে সমাধানের আশায় থাকলেও, শেষমেষ কঠোর হয়েছে।
এদিন সকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্র আন্দোলনের যে বক্তব্য কতিপয় নেতা দিয়েছেন, সেটার জবাব ছাত্রলীগই দেবে। ছাত্রদের বিষয় ক্যাম্পাস পর্যন্ত সীমিত থাকবে। আমরা দেখি রাজনৈতিকভাবে কারা প্রকাশ্যে আসে। তখন দেখা যাবে। আমরাও মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।
ছাত্রদের রাজাকার স্লোগান রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক কি না এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, বিষয়টি বিচারাধীন। এখানে আমাদেরও অনেক কিছু চিন্তা-ভাবনা করে বলতে হয়। যাতে আদালত অবমাননা না হয়। আদালত অবমাননার বিষয়টি আদালতকেই দেখতে হবে। যে বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। সেটি আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সরকারের কোনো কিছুই করার নেই। বিচারাধীন বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও মন্তব্য করা আদালত অবমাননার শামিল। আমরা বারবার আন্দোলনকারীদের বিষয়গুলো স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত বাদ রেখে অন্য কোনো উপায়ে বা বলপ্রয়োগে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগ মেনে নেবো না, রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী সভা-সমাবেশ মেনে নিতে পারি না। আমরা লক্ষ্য করছি, এ আন্দোলনের কুশীলব বিএনপি-জামায়াত, তাদের স্বরূপ উন্মোচিত করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের সরকার অনেক শক্তিশালী, আমরা দেশকে কখনো অস্থিতিশীল করতে দেব না। দেখুন গতকাল রাতে যে ধরনের স্লোগান দেওয়া হয়েছে, রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান। একইসঙ্গে সেখানে সরকারবিরোধী, প্রধানমন্ত্রীবিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়েছে। এতে স্পষ্ট আমরা যে বলেছিলাম আগে, কোটা আন্দোলনের মধ্যে রাজনৈতিক অপশক্তি ঢুকেছে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সেই দেশে রাজাকারের পক্ষে স্লোগান, এটি রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান। এটি সরকারবিরোধী নয়, এটি রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, চলমান কোটা আন্দোলনের বিষয়টি আদালতের বিষয়। উচ্চ আদালত যে আদেশ দিবে সেটিকে শ্রদ্ধা ও মানা নাগরিকের দায়িত্ব। আমরা আদালতের নিয়ম মানতে বাধ্য। যদি কেউ আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গে কোনো ধরনের অপতৎপরতা চালায়, সেটি যেই হোন তাদের শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে।