০৫:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তিলে তিলে গড়া ছাদবাগান আধা ঘণ্টার তাণ্ডবে শেষ

পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের

ফুলের গাছগুলোর মাথা ভেঙে মুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। টবগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে আছে। মাটি ছড়িয়ে আছে পুরো ছাদজুড়ে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে গাছের ফুল, পাতা, টুকরো অংশ। পুরো ছাদবাগানে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি।

 

রাজধানীর দনিয়া কবরস্থান রোডের ডালিয়া কবিরের করা ছাদবাগানটি এমনভাবেই তছনছ করে দিয়েছে তারই দেবর আনিসুল ইসলাম। এ ব্যাপারে থানায় গেলেও কোনো সমাধান পাননি বলে জানিয়েছেন ডালিয়া কবির। তবে, পুলিশ বলছে পারিবারিক ঝামেলা তারা নিজেরাই মিটিয়ে ফেলবে বলে জানিয়েছে।

 

ডালিয়ার ছাদবাগানের পুরোনো ছবিতে দেখা যায় গোলাপ, বেলী, হাসনাহেনা, ডালিয়া, জুঁই, জবা, চাঁপা, এডেনিয়ামসহ নাম জানা না জানা দেশি-বিদেশি বহু ফুলের সমারোহ রয়েছে পুরো বাগানজুড়ে। পাশাপাশি সবজির মধ্যে আছে লাউ, করোলা, আলু, মরিচসহ বিভিন্ন রকমের সবজির গাছ। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ফুলের টবসহ বিভিন্ন ডিজাইনের সাজে তিনি সাজিয়েছেন তার বাগান যা সত্যি এক অনিন্দ্য সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এই বাগান ভেঙে টুকরো করে দিয়েছে।

 

ছাদবাগানী ডালিয়া কবির দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে অনেক দিনের জমানো হিংসা থেকে এটা করেছে। পরিবারের সবার সঙ্গে আমার স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকলেও যার সঙ্গে আমি কথাই বলি না, সে কেন এই কাজটি করল আমি তার কাছে সেটা জানতে চাই?

 

তিনি বলেন, এই গাছগুলো আমার সন্তানের মতো। তাদেরকে আমি দিনের পর দিন লালনপালন করেছি। সেখানে সে কীভাবে এই গাছগুলোকে কেটে ফেলল?

 

ঘটনার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার আমার ছোট এসেছিল। তাকে নিয়ে আমি বাইরে গেছি। এ সময় আমার নয় বছর বয়সী মেয়ে এবং ছোট বেবিটা বাসায় ছিল। তখন বিদ্যুৎ চলে গেলে তারা ওপরে ছোট চাচার বাসায় যায়। তখন তাদের চাচা তাদেরকে বাসা থেকে চলে আসতে বলে। আমার মেয়ে ফিরে এসে অন্ধকারে ভয় পাচ্ছে বলে জানায়। তখন আমি দ্রুত বাসায় চলে আসি। ওদেরকে অন্ধকারের সময় বাসায় থাকতে দেয়নি শুনে আমার রাগ হয়। আমার স্বামীকে ফোন করে বলি যে, তোমার ভাই কেমন? নিজের ভাতিজা-ভাতিজিকে বাসায় কিছু সময় থাকতে দেয় না? পরে আমি রাগ করে ঘরে থাকা দেবরের কয়েকটা পানির বোতল ঘরের বাইরে ফেলে দিয়েছি। আমার স্বামীকে বলেছি, তোমার ভাই আমার সন্তানদের তার ঘরে থাকতে দেয় না। তার বোতল আমার ঘরে রেখে কি করব? এগুলো দুই লিটারের পানির বোতল। তিন থেকে চারটা ছিল। দরজা থেকে সিঁড়িতে ফেলে দিয়েছি। পাঁচ মিনিট পরে আমার স্বামী আবার আমাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করছে, বোতল ফালাইসে কে? আমি বলেছি, আমি ফেলেছি।

 

এরপর সন্ধ্যার দিকে আমার শাশুড়ি আমাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করছে বাসায় কী হয়েছে? আমি বলি তেমন কিছু হয়নি তো! তখন আমার শাশুড়ি বলে, ও তোমার গাছগুলো কেটে ফেলেছে। আমি তোমার গাছ কিনে দেব। তুমি কিছু মনে কর না। আমার এত বছরের পুরোনো বাগান। কী অবস্থা দেখার জন্য উনার সঙ্গে কথা বলার পর ছাদে গেছি। গিয়ে দেখি পুরো ছাদবাগান ধ্বংস করে ফেলেছে। আমি শুধু এটা বলেছি, এটা কী করল? আমার এত বছরের সাজানো বাগান শেষ করে ফেলল। এরপর আমার আর কোনো জ্ঞান ছিল না। এ সময় আমার সঙ্গে আমাদের ভাড়াটিয়ারা ছিল ওরাই আমাকে ঘরে নিয়ে আসে। ভাড়াটিয়ারাও খুবই বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। তারা সব সময় এই ছাদের ছবি তোলে। ফেসবুকে দেয়। সবাইকে বলে যে, আমরা এই বাসায় থাকি। ছাদটা এত সুন্দর করে বাগান করা। তারা কেউই বিষয়টা মেনে নিতে পারেনি।

 

পরের দিন, আমার চাচাশ^শুর এসে আমার কাছে খুব দুঃখ প্রকাশ করে। আমি এই বাগানের পিছনে লাখ লাখ টাকা ইনভেস্ট করেছি। এটার কোনো হিসাব নাই। বিভিন্ন স্থান থেকে কুরিয়ারে গাছ এনেছি। আমাদের দুজনেরই অনেক পরিশ্রম এই বাগানের মধ্যে ছিল।

পেশায় অনলাইন উদ্যোক্তা ডালিয়া কবির বলেন, যতবারই আমি অন্যায় দেখি প্রতিবাদ করি। আমি অন্যায় দেখতে পারি না। আমার শাশুড়ি মুখে বলেছে কিন্তু উনাদের বিচার আমি জানি। উনারা কিছুই করবে না।

 

তিনি নিজের স্বামীর ওপর আক্ষেপ করে বলেন, আমার স্বামী একটা মেরুদণ্ডহীন মানুষ। সে ভাইয়ের ব্যাপারে কোনো প্রতিবাদ করে না। আমি এর আগে এই দেবরের অত্যাচারে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছি। তখনও আমার স্বামী কোনো প্রতিবাদ করেনি।

 

তিনি বলেন, আমি নিজে পুলিশের কাছে গেছি। পুলিশ অন্তত তাকে বলুক যে, সে অন্যায় করেছে। সে অন্তত আমাকে একটা সরি বলুক। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে পুলিশ তাদের পক্ষে চলে গেছে। অপরাধী আমাকে কোনো সরি বলেনি। উল্টো যখন পুলিশ তদন্তে বাড়িতে এসেছে, তখন শাশুড়ি আমাকে জিজ্ঞেস করে পুলিশ কেন বাড়িতে আসল? তার বাপের ছাদ, ইচ্ছে হলে সে গাছ কাটবে। এরপর আমার স্বামীও এটা নিয়ে কোনো কথা বলে না। উল্টো পুলিশ দেখে আমার দেবর বলেছে, তখন তো সামনের গাছগুলো কেটেছি। এখন বাকি গাছগুলোও কেটে দিব।

 

গাছ কাটার অভিযোগে অভিযুক্ত আনিসুল ইসলাম যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার শিক্ষক এবং কবিরাজবাগ মসজিদের সেক্রেটারি।
এ ব্যাপারে যাত্রাবাড়ী থানার তদন্ত অফিসার রনি দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, এটা তাদের পারিবারিক সমস্যা। নিজেদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। ভাই ভাইয়ের মধ্যে। তারা নিজেরা মীমাংসা করে এসেছিল। থানায় এসে জানিয়েছে তারা নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করে নিয়েছে। বিষয়টি জানার জন্য ডালিয়া কবিরের স্বামী জহিরুল ইসলাম কবিরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

জনপ্রিয় সংবাদ

হাদির খুনি ফয়সালের ভিডিওবার্তা নিয়ে যা জানা গেল

তিলে তিলে গড়া ছাদবাগান আধা ঘণ্টার তাণ্ডবে শেষ

আপডেট সময় : ০৫:৪৮:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪

ফুলের গাছগুলোর মাথা ভেঙে মুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। টবগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে আছে। মাটি ছড়িয়ে আছে পুরো ছাদজুড়ে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে গাছের ফুল, পাতা, টুকরো অংশ। পুরো ছাদবাগানে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি।

 

রাজধানীর দনিয়া কবরস্থান রোডের ডালিয়া কবিরের করা ছাদবাগানটি এমনভাবেই তছনছ করে দিয়েছে তারই দেবর আনিসুল ইসলাম। এ ব্যাপারে থানায় গেলেও কোনো সমাধান পাননি বলে জানিয়েছেন ডালিয়া কবির। তবে, পুলিশ বলছে পারিবারিক ঝামেলা তারা নিজেরাই মিটিয়ে ফেলবে বলে জানিয়েছে।

 

ডালিয়ার ছাদবাগানের পুরোনো ছবিতে দেখা যায় গোলাপ, বেলী, হাসনাহেনা, ডালিয়া, জুঁই, জবা, চাঁপা, এডেনিয়ামসহ নাম জানা না জানা দেশি-বিদেশি বহু ফুলের সমারোহ রয়েছে পুরো বাগানজুড়ে। পাশাপাশি সবজির মধ্যে আছে লাউ, করোলা, আলু, মরিচসহ বিভিন্ন রকমের সবজির গাছ। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ফুলের টবসহ বিভিন্ন ডিজাইনের সাজে তিনি সাজিয়েছেন তার বাগান যা সত্যি এক অনিন্দ্য সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এই বাগান ভেঙে টুকরো করে দিয়েছে।

 

ছাদবাগানী ডালিয়া কবির দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে অনেক দিনের জমানো হিংসা থেকে এটা করেছে। পরিবারের সবার সঙ্গে আমার স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকলেও যার সঙ্গে আমি কথাই বলি না, সে কেন এই কাজটি করল আমি তার কাছে সেটা জানতে চাই?

 

তিনি বলেন, এই গাছগুলো আমার সন্তানের মতো। তাদেরকে আমি দিনের পর দিন লালনপালন করেছি। সেখানে সে কীভাবে এই গাছগুলোকে কেটে ফেলল?

 

ঘটনার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার আমার ছোট এসেছিল। তাকে নিয়ে আমি বাইরে গেছি। এ সময় আমার নয় বছর বয়সী মেয়ে এবং ছোট বেবিটা বাসায় ছিল। তখন বিদ্যুৎ চলে গেলে তারা ওপরে ছোট চাচার বাসায় যায়। তখন তাদের চাচা তাদেরকে বাসা থেকে চলে আসতে বলে। আমার মেয়ে ফিরে এসে অন্ধকারে ভয় পাচ্ছে বলে জানায়। তখন আমি দ্রুত বাসায় চলে আসি। ওদেরকে অন্ধকারের সময় বাসায় থাকতে দেয়নি শুনে আমার রাগ হয়। আমার স্বামীকে ফোন করে বলি যে, তোমার ভাই কেমন? নিজের ভাতিজা-ভাতিজিকে বাসায় কিছু সময় থাকতে দেয় না? পরে আমি রাগ করে ঘরে থাকা দেবরের কয়েকটা পানির বোতল ঘরের বাইরে ফেলে দিয়েছি। আমার স্বামীকে বলেছি, তোমার ভাই আমার সন্তানদের তার ঘরে থাকতে দেয় না। তার বোতল আমার ঘরে রেখে কি করব? এগুলো দুই লিটারের পানির বোতল। তিন থেকে চারটা ছিল। দরজা থেকে সিঁড়িতে ফেলে দিয়েছি। পাঁচ মিনিট পরে আমার স্বামী আবার আমাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করছে, বোতল ফালাইসে কে? আমি বলেছি, আমি ফেলেছি।

 

এরপর সন্ধ্যার দিকে আমার শাশুড়ি আমাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করছে বাসায় কী হয়েছে? আমি বলি তেমন কিছু হয়নি তো! তখন আমার শাশুড়ি বলে, ও তোমার গাছগুলো কেটে ফেলেছে। আমি তোমার গাছ কিনে দেব। তুমি কিছু মনে কর না। আমার এত বছরের পুরোনো বাগান। কী অবস্থা দেখার জন্য উনার সঙ্গে কথা বলার পর ছাদে গেছি। গিয়ে দেখি পুরো ছাদবাগান ধ্বংস করে ফেলেছে। আমি শুধু এটা বলেছি, এটা কী করল? আমার এত বছরের সাজানো বাগান শেষ করে ফেলল। এরপর আমার আর কোনো জ্ঞান ছিল না। এ সময় আমার সঙ্গে আমাদের ভাড়াটিয়ারা ছিল ওরাই আমাকে ঘরে নিয়ে আসে। ভাড়াটিয়ারাও খুবই বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। তারা সব সময় এই ছাদের ছবি তোলে। ফেসবুকে দেয়। সবাইকে বলে যে, আমরা এই বাসায় থাকি। ছাদটা এত সুন্দর করে বাগান করা। তারা কেউই বিষয়টা মেনে নিতে পারেনি।

 

পরের দিন, আমার চাচাশ^শুর এসে আমার কাছে খুব দুঃখ প্রকাশ করে। আমি এই বাগানের পিছনে লাখ লাখ টাকা ইনভেস্ট করেছি। এটার কোনো হিসাব নাই। বিভিন্ন স্থান থেকে কুরিয়ারে গাছ এনেছি। আমাদের দুজনেরই অনেক পরিশ্রম এই বাগানের মধ্যে ছিল।

পেশায় অনলাইন উদ্যোক্তা ডালিয়া কবির বলেন, যতবারই আমি অন্যায় দেখি প্রতিবাদ করি। আমি অন্যায় দেখতে পারি না। আমার শাশুড়ি মুখে বলেছে কিন্তু উনাদের বিচার আমি জানি। উনারা কিছুই করবে না।

 

তিনি নিজের স্বামীর ওপর আক্ষেপ করে বলেন, আমার স্বামী একটা মেরুদণ্ডহীন মানুষ। সে ভাইয়ের ব্যাপারে কোনো প্রতিবাদ করে না। আমি এর আগে এই দেবরের অত্যাচারে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছি। তখনও আমার স্বামী কোনো প্রতিবাদ করেনি।

 

তিনি বলেন, আমি নিজে পুলিশের কাছে গেছি। পুলিশ অন্তত তাকে বলুক যে, সে অন্যায় করেছে। সে অন্তত আমাকে একটা সরি বলুক। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে পুলিশ তাদের পক্ষে চলে গেছে। অপরাধী আমাকে কোনো সরি বলেনি। উল্টো যখন পুলিশ তদন্তে বাড়িতে এসেছে, তখন শাশুড়ি আমাকে জিজ্ঞেস করে পুলিশ কেন বাড়িতে আসল? তার বাপের ছাদ, ইচ্ছে হলে সে গাছ কাটবে। এরপর আমার স্বামীও এটা নিয়ে কোনো কথা বলে না। উল্টো পুলিশ দেখে আমার দেবর বলেছে, তখন তো সামনের গাছগুলো কেটেছি। এখন বাকি গাছগুলোও কেটে দিব।

 

গাছ কাটার অভিযোগে অভিযুক্ত আনিসুল ইসলাম যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার শিক্ষক এবং কবিরাজবাগ মসজিদের সেক্রেটারি।
এ ব্যাপারে যাত্রাবাড়ী থানার তদন্ত অফিসার রনি দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, এটা তাদের পারিবারিক সমস্যা। নিজেদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। ভাই ভাইয়ের মধ্যে। তারা নিজেরা মীমাংসা করে এসেছিল। থানায় এসে জানিয়েছে তারা নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করে নিয়েছে। বিষয়টি জানার জন্য ডালিয়া কবিরের স্বামী জহিরুল ইসলাম কবিরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।