০১:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগদানের হিড়িক

❖ইউক্রেন ৮০ হাজারের বেশি সেনা হারিয়েছে : রাশিয়া

 

 

ইউক্রেন চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৮০ হাজারের বেশি সেনা খুইয়েছে বলে দাবি করেছেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু। তিনি বলেছেন, তার দেশের সেনারা ‘শত্রুদের সমর সক্ষমতা’ হ্রাস করে চলেছেন। এদিকে মস্কোর ক্রোকাস সিটি কনসার্ট হলে হামলার ঘটনার পর রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানের হিড়িক পড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

 

 

গত মঙ্গলবার রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠক করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী শোইগু। তিনি জানান, গত জানুয়ারি থেকে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের ১২০০ ট্যাংক ও অন্যান্য সশস্ত্র যুদ্ধযানসহ ১৪ হাজার সামরিক উপকরণ ধ্বংস করেছে। একই সময়ে মস্কো রাশিয়ার ৪০৩ বর্গকিলোমিটার নতুন জায়গা মুক্ত করেছে। যুদ্ধক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে কিয়েভের ঘাটতি থাকার পরও ইউক্রেনের নেতারা তাঁদের রুশ সেনাদের প্রতিহত করার সক্ষমতা বিষয়ে পশ্চিমা পৃষ্ঠপোষকদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন। আর এটি করতে বেসামরিক লোকজনকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাস ও রাশিয়ার অভ্যন্তরে দূরপাল্লার হামলা শুরু করেছে কিয়েভ। আমাদের সেনারা ইউক্রেনীয় বাহিনীর এমন অপরাধের জবাব দিচ্ছেন, শুধু মার্চেই রুশ বাহিনী ইউক্রেনে ১৯০টি গুচ্ছ হামলা ও দুটি বড় আক্রমণ চালিয়েছে। নিখুঁত অস্ত্রশস্ত্র ও মনুষ্যবিহীন আকাশযান ব্যবহার করে সামরিক ও জ্বালানি অবকাঠামোগুলোতে চালানো হয় এসব হামলা।

 

 

গত মাসে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছিল, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৪ লাখ ৪৪ হাজার সামরিক বাহিনীর সদস্য হারিয়েছে ইউক্রেন। এর মধ্যে গত বছরের গ্রীষ্মে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যর্থ পাল্টা আক্রমণে নিহত হন এক লাখ ৬৬ হাজার জন। তবে গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাদের মাত্র ৩১ হাজার সেনা নিহত হয়েছেন। কিন্তু কত সেনা আহত হয়েছেন বা নিখোঁজ আছেন, সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।

 

 

গতকাল রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছরের শুরু থেকে এক লাখেরও বেশি রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার মধ্যে গত ১০ দিনেই প্রায় ১৬ হাজার রুশ নাগরিক সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহে রাশিয়ার শহরগুলোর সেনা নিয়োগ কেন্দ্রগুলোতে নেওয়া সাক্ষাৎকারের সময় বেশিরভাগ প্রার্থী মস্কো হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার আকাক্সক্ষার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

 

 

প্রসঙ্গত, গত ২২ মার্চ রাতে মস্কোর ক্রোকাস সিটি হল কনসার্ট সেন্টারে কনসার্ট দেখতে জড়ো হওয়া মানুষদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় একদল বন্দুকধারী। গত ২০ বছরের মধ্যে রাশিয়ায় সবচেয়ে বড় এই হামলায় এখন পর্যন্ত ১৪৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় দেড়শ মানুষ। এ ঘটনায় মোট ১৪ জনকে আটক করে রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি)। আটককৃতদের মধ্যে চারজন সরাসরি হামলায় জড়িত রয়েছে বলে দাবি এফএসবির। এই হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক কুখ্যাত জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের আফগান শাখা ‘ইসলামিক স্টেট খোরাসান’ বা আইএস-কে। তবে এতে ইউক্রেনের হাত রয়েছে বলেই দাবি রাশিয়ার।

 

 

এদিকে, ভয়াবহ এই হামলার দায় আইএস নিলেও হামলাকারীদের উদ্দেশ্য ও পরিচয় জানা যায়নি। উগ্রবাদীরা এর আগে রাশিয়ার বিচ্ছিন্ন অঞ্চলকে সমর্থন করার জন্য হামলা চালিয়েছে। তবে পুতিন হামলার পেছনে ইউক্রেনের যুক্ত থাকার ইঙ্গিত দিলেও কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন আসন্ন বসন্তে নিয়মিত নতুন সেনা নিয়োগের আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এর আওতায় দেড় লাখ রুশ নাগরিককে বাধ্যতামূলক সামরিক সেবায় নিয়োগ দেওয়া হবে। রাশিয়ার সংবিধান অনুসারে, ১৮ বছর বয়স থেকে সব পুরুষদের বাধ্যতামূলকভাবে এক বছর সেনাবাহিনীতে কাজ বা উচ্চ শিক্ষায় অধ্যয়নের সময় সমতুল্য প্রশিক্ষণ নিতে হয়। গত জুলাই মাসে রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ সেনাবাহিনীতে নিয়োগের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২৭ থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নতুন আইন কার্যকর হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগদানের হিড়িক

আপডেট সময় : ০৭:০৬:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল ২০২৪

❖ইউক্রেন ৮০ হাজারের বেশি সেনা হারিয়েছে : রাশিয়া

 

 

ইউক্রেন চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৮০ হাজারের বেশি সেনা খুইয়েছে বলে দাবি করেছেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু। তিনি বলেছেন, তার দেশের সেনারা ‘শত্রুদের সমর সক্ষমতা’ হ্রাস করে চলেছেন। এদিকে মস্কোর ক্রোকাস সিটি কনসার্ট হলে হামলার ঘটনার পর রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানের হিড়িক পড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

 

 

গত মঙ্গলবার রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠক করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী শোইগু। তিনি জানান, গত জানুয়ারি থেকে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের ১২০০ ট্যাংক ও অন্যান্য সশস্ত্র যুদ্ধযানসহ ১৪ হাজার সামরিক উপকরণ ধ্বংস করেছে। একই সময়ে মস্কো রাশিয়ার ৪০৩ বর্গকিলোমিটার নতুন জায়গা মুক্ত করেছে। যুদ্ধক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে কিয়েভের ঘাটতি থাকার পরও ইউক্রেনের নেতারা তাঁদের রুশ সেনাদের প্রতিহত করার সক্ষমতা বিষয়ে পশ্চিমা পৃষ্ঠপোষকদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন। আর এটি করতে বেসামরিক লোকজনকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাস ও রাশিয়ার অভ্যন্তরে দূরপাল্লার হামলা শুরু করেছে কিয়েভ। আমাদের সেনারা ইউক্রেনীয় বাহিনীর এমন অপরাধের জবাব দিচ্ছেন, শুধু মার্চেই রুশ বাহিনী ইউক্রেনে ১৯০টি গুচ্ছ হামলা ও দুটি বড় আক্রমণ চালিয়েছে। নিখুঁত অস্ত্রশস্ত্র ও মনুষ্যবিহীন আকাশযান ব্যবহার করে সামরিক ও জ্বালানি অবকাঠামোগুলোতে চালানো হয় এসব হামলা।

 

 

গত মাসে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছিল, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৪ লাখ ৪৪ হাজার সামরিক বাহিনীর সদস্য হারিয়েছে ইউক্রেন। এর মধ্যে গত বছরের গ্রীষ্মে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যর্থ পাল্টা আক্রমণে নিহত হন এক লাখ ৬৬ হাজার জন। তবে গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাদের মাত্র ৩১ হাজার সেনা নিহত হয়েছেন। কিন্তু কত সেনা আহত হয়েছেন বা নিখোঁজ আছেন, সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।

 

 

গতকাল রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছরের শুরু থেকে এক লাখেরও বেশি রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার মধ্যে গত ১০ দিনেই প্রায় ১৬ হাজার রুশ নাগরিক সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহে রাশিয়ার শহরগুলোর সেনা নিয়োগ কেন্দ্রগুলোতে নেওয়া সাক্ষাৎকারের সময় বেশিরভাগ প্রার্থী মস্কো হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার আকাক্সক্ষার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

 

 

প্রসঙ্গত, গত ২২ মার্চ রাতে মস্কোর ক্রোকাস সিটি হল কনসার্ট সেন্টারে কনসার্ট দেখতে জড়ো হওয়া মানুষদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় একদল বন্দুকধারী। গত ২০ বছরের মধ্যে রাশিয়ায় সবচেয়ে বড় এই হামলায় এখন পর্যন্ত ১৪৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় দেড়শ মানুষ। এ ঘটনায় মোট ১৪ জনকে আটক করে রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি)। আটককৃতদের মধ্যে চারজন সরাসরি হামলায় জড়িত রয়েছে বলে দাবি এফএসবির। এই হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক কুখ্যাত জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের আফগান শাখা ‘ইসলামিক স্টেট খোরাসান’ বা আইএস-কে। তবে এতে ইউক্রেনের হাত রয়েছে বলেই দাবি রাশিয়ার।

 

 

এদিকে, ভয়াবহ এই হামলার দায় আইএস নিলেও হামলাকারীদের উদ্দেশ্য ও পরিচয় জানা যায়নি। উগ্রবাদীরা এর আগে রাশিয়ার বিচ্ছিন্ন অঞ্চলকে সমর্থন করার জন্য হামলা চালিয়েছে। তবে পুতিন হামলার পেছনে ইউক্রেনের যুক্ত থাকার ইঙ্গিত দিলেও কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন আসন্ন বসন্তে নিয়মিত নতুন সেনা নিয়োগের আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এর আওতায় দেড় লাখ রুশ নাগরিককে বাধ্যতামূলক সামরিক সেবায় নিয়োগ দেওয়া হবে। রাশিয়ার সংবিধান অনুসারে, ১৮ বছর বয়স থেকে সব পুরুষদের বাধ্যতামূলকভাবে এক বছর সেনাবাহিনীতে কাজ বা উচ্চ শিক্ষায় অধ্যয়নের সময় সমতুল্য প্রশিক্ষণ নিতে হয়। গত জুলাই মাসে রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ সেনাবাহিনীতে নিয়োগের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২৭ থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নতুন আইন কার্যকর হয়েছে।