০৮:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নদী নাই, জল শুকিয়ে গেছে অষ্টমী স্নান করা খুব কষ্টকর

জামালপুরে ব্রহ্মপুত্র নদে সোমবার ভোর থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত তিথিতে অষ্টমী পুণ্যস্নান সম্পূর্ণ করেছেন আগতরা। এ পুণ্যস্নানে জামালপুরের নদী তীরবর্তী মেলান্দহ, দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর, সরিষাবাড়ী, বকশীগঞ্জ  উপজেলাসহ শেরপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার পুণ্যার্থী অংশগ্রহণ করেন।

এ সময় ব্র‏হ্মপুত্র নদের তীরে হিন্দুধর্মের পুণ্যার্থী নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরদের এক মহা-মিলন মেলা শুরু হয়। তবে এবছর পুণ্যার্থীদের মাঝে কিছুটা কষ্টের ছাপ দেখা যায়। পুণ্যার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবছর নদীতে একদম জল নাই, নদী একদম শুকিয়ে গেছে। স্নান তো করতেই পারিনি বরং শরীরে কাঁদা, বালু মেখে বাসায় গিয়ে পুনরায় স্নান করতে হয়। কি করা যাবে এভাবেই স্নান করতে হবে।

স্নান করতে এসে একজন বলেন, আমি প্রতিবছরই স্নান করতে আসি কিন্তু এবার কোন নিয়মশৃঙ্খলা দেখলাম না। পরিবেশটাও জানি কেমন মনে হলো। দূর-দূরান্ত থেকে প্রচুর মানুষ আসতো এবার মানুষ খুব একটা দেখলাম না। নদীতে জলও নাই। চারদিকে দেখি শুধু বালু তুলতেছে। পুরোহিত অনু চক্রবর্তী বলেন, এবছর স্নানে আসা লোকের সংখ্যা কম ছিল। নদীতে জলও নাই। প্রতিবছর অষ্টমী স্নান হয় চৈত্র মাসে এবার হলো বৈশাখ মাসে আর মঙ্গলবার হওয়াতে হয়তো লোক সমাগম কম ছিল।

তবে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদের পাড়ে নারীদের ভেজা কাপড় পরিবর্তন ও পয়ঃনিস্কাশনের পৃথক কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে পড়েন নারীরা। এ নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে বিক্ষুব্ধ দেখা গেছে। এদিকে পুণ্যস্নানকে কেন্দ্র করে অষ্টমী উপলক্ষে দয়াময়ী মন্দিরকে কেন্দ্র করে বসেছে মেলা। এতে নানান রকমের মোয়া, মুড়ি, ঝুড়ি, চিনি-গুড়ের তৈরি হাতি ঘোড়ার সাঁজ, মাছ আকৃতির সাঁজ, চিনি-গুড়ের তৈরি বিভিন্ন জাতের ও স্বাদের খাবারসহ শিশুদের খেলনা দোকান বসে। অষ্টমী মেলায় হিন্দুদের পাশাপাশি ইসলাম ধর্মাবলম্বীসহ অন্য ধর্মের শিশু কিশোরসহ অনেকেই ঘুরে দেখতে আসে।

স্নান সেরে মেলায় আসা জনসাধারণ বলেন, হাজার বছরের মেলা আজ নেই বললেই চলে। এখানে বৈশাখী মেলা মাঠ ছিল আজ মাঠটি নেই। এখানে সাংস্কৃতিক পল্লী করা হয়েছে অতএব মেলা করার জায়গাও নেই। একসময় এই মাঠে অষ্টমী মেলা হতো টানা ৭ থেকে ৮ দিন। হিন্দু-মুসলিম প্রচুর লোক এই মেলায় আসতো। মেলাতে গৃহস্থালি জিনিসপত্র, বাচ্চাদের খেলনা, নাগরদোলা, তৈজসপত্র সবকিছুই পাওয়া যেত। এখন শুধু কিছু মুড়িমুড়কি, সাঁজ, জিলাপি নিয়ে বসে এটাকেই আমরা মেলা হিসাবে ধরে নেই।

প্রসঙ্গত, হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী ঋষি পরশুরাম নামে সত্যযুগে জন্ম গ্রহণের পর কুঠার দিয়ে তার মাকে হত্যা করেছিলেন। এ সময় অভিশাপে তার হাতে কুঠার লেগে থাকে। তিনি অনেক সাধনার পর অলৌকিকভাবে দৈববাণী পেয়ে যান। এর মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, চৈত্র মাসে অশোক অষ্টমান তিথিতে ব্র‏হ্মপুত্র নদে স্নান করলে সমস্ত জীবনের পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তাই তিনি কালক্ষেপণ না করে তৎকালীন বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের লাঙলবন্দ নামক স্থানের ব্র‏হ্মপুত্র নদে স্নান করেন। এ সময় তার হাতে লেগে থাকা অভিশপ্ত কুঠার ব্র‏‏হ্মপুত্র নদের পানিতে পড়ে যায়। এ কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যুগ যুগ ধরে এ বিশ্বাস থেকে কুলনন্দন ব্র‏হ্মারপূত্র  বহ্মপুত্র নদে প্রতিবছর পাপ মোচনের উদ্দেশ্যে পুণ্যস্নান করে থাকেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

নদী নাই, জল শুকিয়ে গেছে অষ্টমী স্নান করা খুব কষ্টকর

আপডেট সময় : ০৫:৫৬:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

জামালপুরে ব্রহ্মপুত্র নদে সোমবার ভোর থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত তিথিতে অষ্টমী পুণ্যস্নান সম্পূর্ণ করেছেন আগতরা। এ পুণ্যস্নানে জামালপুরের নদী তীরবর্তী মেলান্দহ, দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর, সরিষাবাড়ী, বকশীগঞ্জ  উপজেলাসহ শেরপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার পুণ্যার্থী অংশগ্রহণ করেন।

এ সময় ব্র‏হ্মপুত্র নদের তীরে হিন্দুধর্মের পুণ্যার্থী নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরদের এক মহা-মিলন মেলা শুরু হয়। তবে এবছর পুণ্যার্থীদের মাঝে কিছুটা কষ্টের ছাপ দেখা যায়। পুণ্যার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবছর নদীতে একদম জল নাই, নদী একদম শুকিয়ে গেছে। স্নান তো করতেই পারিনি বরং শরীরে কাঁদা, বালু মেখে বাসায় গিয়ে পুনরায় স্নান করতে হয়। কি করা যাবে এভাবেই স্নান করতে হবে।

স্নান করতে এসে একজন বলেন, আমি প্রতিবছরই স্নান করতে আসি কিন্তু এবার কোন নিয়মশৃঙ্খলা দেখলাম না। পরিবেশটাও জানি কেমন মনে হলো। দূর-দূরান্ত থেকে প্রচুর মানুষ আসতো এবার মানুষ খুব একটা দেখলাম না। নদীতে জলও নাই। চারদিকে দেখি শুধু বালু তুলতেছে। পুরোহিত অনু চক্রবর্তী বলেন, এবছর স্নানে আসা লোকের সংখ্যা কম ছিল। নদীতে জলও নাই। প্রতিবছর অষ্টমী স্নান হয় চৈত্র মাসে এবার হলো বৈশাখ মাসে আর মঙ্গলবার হওয়াতে হয়তো লোক সমাগম কম ছিল।

তবে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদের পাড়ে নারীদের ভেজা কাপড় পরিবর্তন ও পয়ঃনিস্কাশনের পৃথক কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে পড়েন নারীরা। এ নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে বিক্ষুব্ধ দেখা গেছে। এদিকে পুণ্যস্নানকে কেন্দ্র করে অষ্টমী উপলক্ষে দয়াময়ী মন্দিরকে কেন্দ্র করে বসেছে মেলা। এতে নানান রকমের মোয়া, মুড়ি, ঝুড়ি, চিনি-গুড়ের তৈরি হাতি ঘোড়ার সাঁজ, মাছ আকৃতির সাঁজ, চিনি-গুড়ের তৈরি বিভিন্ন জাতের ও স্বাদের খাবারসহ শিশুদের খেলনা দোকান বসে। অষ্টমী মেলায় হিন্দুদের পাশাপাশি ইসলাম ধর্মাবলম্বীসহ অন্য ধর্মের শিশু কিশোরসহ অনেকেই ঘুরে দেখতে আসে।

স্নান সেরে মেলায় আসা জনসাধারণ বলেন, হাজার বছরের মেলা আজ নেই বললেই চলে। এখানে বৈশাখী মেলা মাঠ ছিল আজ মাঠটি নেই। এখানে সাংস্কৃতিক পল্লী করা হয়েছে অতএব মেলা করার জায়গাও নেই। একসময় এই মাঠে অষ্টমী মেলা হতো টানা ৭ থেকে ৮ দিন। হিন্দু-মুসলিম প্রচুর লোক এই মেলায় আসতো। মেলাতে গৃহস্থালি জিনিসপত্র, বাচ্চাদের খেলনা, নাগরদোলা, তৈজসপত্র সবকিছুই পাওয়া যেত। এখন শুধু কিছু মুড়িমুড়কি, সাঁজ, জিলাপি নিয়ে বসে এটাকেই আমরা মেলা হিসাবে ধরে নেই।

প্রসঙ্গত, হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী ঋষি পরশুরাম নামে সত্যযুগে জন্ম গ্রহণের পর কুঠার দিয়ে তার মাকে হত্যা করেছিলেন। এ সময় অভিশাপে তার হাতে কুঠার লেগে থাকে। তিনি অনেক সাধনার পর অলৌকিকভাবে দৈববাণী পেয়ে যান। এর মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, চৈত্র মাসে অশোক অষ্টমান তিথিতে ব্র‏হ্মপুত্র নদে স্নান করলে সমস্ত জীবনের পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তাই তিনি কালক্ষেপণ না করে তৎকালীন বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের লাঙলবন্দ নামক স্থানের ব্র‏হ্মপুত্র নদে স্নান করেন। এ সময় তার হাতে লেগে থাকা অভিশপ্ত কুঠার ব্র‏‏হ্মপুত্র নদের পানিতে পড়ে যায়। এ কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যুগ যুগ ধরে এ বিশ্বাস থেকে কুলনন্দন ব্র‏হ্মারপূত্র  বহ্মপুত্র নদে প্রতিবছর পাপ মোচনের উদ্দেশ্যে পুণ্যস্নান করে থাকেন।