❖শূন্যপাস ৫১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪২টিই মাদ্রাসা
❖ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করবে বোর্ডগুলো
চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার বাড়লেও তার ছোঁয়া লাগেনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। কারণ দেশের ৫১টি স্কুল-মাদ্রাসার কোনো শিক্ষার্থীই এই পরীক্ষায় পাস করতে পারেনি। গত বছর এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৪৮টি। এবার ৯টি সাধারণ, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডে গড় পাসের হার ৮৩.০৪ শতাংশ। গতবার এই হার ছিল ৮০.৩৯ শতাংশ। শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাদ্রাসার সংখ্যাই বেশি। এই তালিকায় বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৪২টি মাদ্রাসা রয়েছে। এছাড়া দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে ৪টি, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ৩টি ও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ২টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ শিক্ষার্থী।
এদিকে প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষায় ৫১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোন শিক্ষার্থী পাস না করার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড। এ বিষয়ে কারণ অনুসন্ধান করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিয়মানুযায়ী শাস্তির সুপারিশ করা হবে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে এমপিও এবং স্বীকৃতি স্থগিত হতে পারে।
সূত্রমতে, প্রতিষ্ঠানগুলোর ফল বিপর্যয়ের পেছনে নির্দিষ্ট বিষয়ে ফেল, শিক্ষকদের বেতন না হওয়া, নিয়মিত ক্লাস না নেওয়া, অনিয়ম, বোর্ডের ভুল, করোনা মহামারিসহ নানা কারণকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহ আলমগীর গতকাল সবুজ বাংলাকে বলেন, পরীক্ষায় খারাপ করার কারণেই এসব মাদরাসার কেউ পাস করেনি। পরীক্ষকরা পরীক্ষার খাতায় নম্বর না দেওয়ায় তাদের ফল খারাপ হয়েছে। এখন কেউ চাইলে পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করতে পারে। আর যদি আবেদন না করে এবং ফল পরিবর্তন না হয়, তাহলে আমাদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট শূন্যপাস মাদরাসার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হবে। এতে তাদের স্বীকৃতি বন্ধ হবে। তারা মান উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করবে।
তিনি বলেন, এমপিও’র টাকা খেয়েও পরীক্ষায় খারাপ ফল করবে তা হতে পারে না। সূত্রমতে, নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বড়াইকুড়ি আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল পাঁচজন। তারা সবাই অকৃতকার্য হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক নবীর উদ্দীন বলেন, গত বছর ছয়জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাঁচজন পাস করেছিল। এবার পাঁচজন অংশ নিয়ে সবাই গণিতে ফেল করেছে। তারা ফল চ্যালেঞ্জ করবে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমানের ভাষ্য, নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের বজ্রনাথপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে দু’জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে কেউ পাস করতে পারেনি। দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ফরম পূরণ করেছিল আটজন। তবে পরীক্ষায় অংশ নেয় দু’জন। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, করোনার প্রাদুর্ভাবের পর শিক্ষার মান কমতে থাকে। এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস নেন না। এ কারণে ফল খারাপ হয়েছে।
মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার এজাজুল হক বলেন, প্রতিষ্ঠানে আটজন শিক্ষক থাকলেও কেউ বেতন পান না। তারা বিনা বেতনে পাঠদান করছেন। মানবিক কারণে তাদের ক্লাসের জন্য চাপও দেওয়া যায় না। মাদরাসা এমপিওভুক্ত হলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষার মান বাড়বে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক ও শিক্ষা আইসিটি) আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম বলেন, ফল খারাপ হওয়ার বিষয়টি যাচাই করা হবে।
দিনাজপুরের খয়েরবাড়ী দাখিল মাদরাসা থেকে এবার কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি। এ মাদরাসা থেকে ২৪ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। সহকারী শিক্ষক লুৎফর রহমান বলেন, গত বছর ২৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৪ জন পাস করেছিল। তবে এবার কেন কেউ পাস করতে পারল না, তা বোধগম্য নয়। বোর্ডের ভুলও হতে পারে।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক স ম আব্দুস সামাদ আজাদ বলেন, শূন্য পাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় সভায় পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে। হয়তো প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্ত নয় বা দু-একজন আছে, যারা ফেল করে। এটি সার্বিক ফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে একটি দাখিল মাদরাসার কোনো পরীক্ষার্থী পাস করেনি। সূর্যমুখী হালদারবাড়ি বালিকা দাখিল মাদরাসা থেকে এ বছর আটজন দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয়। মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মো. মর্তুজা বিল্লাহ বলেন, গণিতের শিক্ষক না থাকায় ফল খারাপ হয়েছে।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীন ৪টি বিদ্যালয়ে শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। এই বিদ্যালয়গুলোতে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২৭ জন। বিদ্যালয়গুলো হলো, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার পূর্ব সুখাতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ঘোগোয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
এর মধ্যে কুড়িগ্রামের একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম নাগেশ্বরী উপজেলার পূর্ব সুখাতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টিতে এবার মোট ৫ জন শিক্ষার্থী মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল ৬ জন। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ঘগোয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সব পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। অথচ এই বিদ্যালয়ে ১৩ জন শিক্ষক আছেন। আর পরীক্ষায় অংশ নেন ১৪ শিক্ষার্থী।অপরদিকে, নীলফামীর ডিমলা উপজেলার শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল ২ জন।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুল আলম বলেন, এসব স্কুলের বেতন বন্ধ হওয়া দরকার। প্রধান শিক্ষকরা নিজেদের মতো করে প্রতিষ্ঠান চালায়।

























