০১:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বন্দি উদ্ধারের নামে শরণার্থী শিবিরে হামলা, নিহত ২১০

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলি জিম্মি উদ্ধারের নামে গাজা উপত্যকায় ব্যাপক হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের হামলায় নুসিরাত শরণার্থী শিবির ও মধ্য গাজার অন্যান্য এলাকায় ২১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত শনিবার অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকাজুড়ে বিমান, স্থল ও সমুদ্রপথে তীব্র হামলা শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। বিশেষ করে মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ ও নুসিরাত শরণার্থী শিবির, দক্ষিণের রাফা শহর এবং উত্তরের গাজা সিটির একাধিক এলাকায় এই হামলা চালিয়েছে তারা।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় বহু আহত মানুষকে আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী। কয়েক ডজন আহত মানুষ মাটিতে পড়ে আছে। তাদের কাছে যে নামমাত্র সরঞ্জাম আছে, তা দিয়ে আহতদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে মেডিক্যাল টিম। তবে তাদের কাছে ওষুধ ও খাবারের ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া জ্বালানির অভাবে হাসপাতালের প্রধান জেনারেটর কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।

এর আগে গাজা উপত্যকা থেকে হামাসের হাতে বন্দি চার ইসরায়েলি জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করার কথা জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই চার ইসরায়েলিকে নুসিরাত শরণার্থী শিবিরের কেন্দ্রস্থলের দুটি আলাদা স্থান থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া চার ইসরায়েলি বন্দি হলেন, নোয়া আরগামানি (২৫), আলমোগ মীর জান (২১), আন্দ্রে কোজলভ (২৭) এবং শ্লোমি জিভ (৪০)। এই চারজনকেই গত ৭ অক্টোবরের হামলার সময় দক্ষিণ ইসরায়েলের সংগীত উৎসব থেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন হামাস যোদ্ধারা।

গাজার মধ্যাঞ্চলে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ভয়াবহ হামলার প্রতিবাদে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি অধিবেশনের আহ্বান করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। এই হত্যাকাণ্ডকে ‘রক্তাক্ত গণহত্যা’ বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ওয়াফা নিউজ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ১৫ জনের বেশি নারী ও শিশু রয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডকে ‘রক্তাক্ত গণহত্যা’ বলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। এক্ষেত্রে তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি অধিবেশনের আহ্বান জানিয়েছেন।

বর্বরোচিত এ হামলার পর এক বিবৃতিতে দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন হামাসের পলিটব্যুরোর প্রধান ঈসমাইল হানিয়াহ। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল তাদের ইচ্ছা হামাসের ওপর চাপিয়ে দিতে পারবে না এবং ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না এমন কোনো চুক্তিও মানা হবে না। আমাদের সাধারণ মানুষ আত্মসমর্পণ করবে না এবং এই অপরাধী শত্রুদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে। যদি ইসরায়েলি দখলদাররা মনে করে তারা তাদের ইচ্ছা আমাদের ওপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দিতে পারবে, তাহলে তারা বিভ্রান্তিতে আছে।

 

হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেও না :
লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার বিষয়ে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রশাসনের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ইসরায়েল যদি হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ায়, তাহলে ইরানের সঙ্গে শত্রুতা আরও প্রসারিত হবে। ইসরায়েল যখন গাজায় সর্বাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত, তখন লেবাননে আরেকটি আঞ্চলিক যুদ্ধে জড়ালে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে পারে তেল আবিবের জন্য। গত সপ্তাহে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, তারা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রয়োজনে অভিযান চালাবে এবং এ জন্য তারা প্রস্তুতও। ইসরায়েলের এই মনোভাব প্রকাশিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন সতর্কবার্তা এলো।
মোসাদের সাবেক কর্মকর্তা হাইম টোমারও হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছেন। তিনি গণমাধ্যমে বলেছেন, হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ ইসরায়েলের ‘ইহুদিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি’র জন্য হুমকি। হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ ইসরায়েলের অর্থনীতিকে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সরকারের সক্ষমতা ধরে রাখাও কঠিন হবে। এমনকি হিজবুল্লাহর রকেটে ইসরায়েল নাস্তানাবুদ হতে পারে। তেল আবিবের ভাগ্যে একটি ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। হিজবুল্লাহর কাছে যে ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, তা দিয়ে তারা ইসরায়েলের গ্যাসক্ষেত্র কয়েক সেকেন্ডে উড়িয়ে দিতে পারে। তা ছাড়া ইরানি রাডারের কারণে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী লেবাননের আকাশে সফলতা পাবে না। হিজবুল্লাহর কাছে রয়েছে এক লাখ থেকে দেড় লাখ যুদ্ধ সরঞ্জাম। প্রতিদিন দেড় হাজার রকেট নিক্ষেপের সক্ষমতাও রাখে সংগঠনটি।

 

হোয়াইট হাউসের কাছে গাজা যুদ্ধবিরোধী রেড লাইন বিক্ষোভ
মার্কিন প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউসের কাছে চলমান গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ‘রেড লাইন’ নামের বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। যা স্থানীয় সময় শনিবার অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতকামী সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের রক্তক্ষয়ী হামলার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সহনশীলতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত ফিলিস্তিনিদের নাম লেখা দীর্ঘ ব্যানার বহন করছিলেন বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া সকলেই প্রায় লাল পোশাক পরেছিল। তাদের হাতে ছিল ফিলিস্তিনি পতাকা। তাদের দাবি, বাইডেনের ‘রেড লাইন’ মিথ্যা এবং শিশুদের ওপর বোমা হামলা চালানো আত্মরক্ষা নয়। এদিকে বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে হোয়াইট হাউসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অপরদিকে গাজা যুদ্ধ নিয়ে দ্বিমুখী-নীতির জন্য সমালোচিত হচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। গত মে মাসে হোয়াইট হাউস বলেছিল, রাফায় ইসরায়েলি হামলা ‘রেড লাইন’ বা চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করেনি। এর দুই মাস আগে বাইডেন রাফায় ‘রেড লাইন’ অতিক্রম না করতে ইসায়েলকে সতর্ক করেছিলেন।

 

ইসরায়েলে কয়লা রপ্তানি স্থগিত করছে কলম্বিয়া
ইসরায়েলে কয়লা রপ্তানি স্থগিত করতে যাচ্ছে কলম্বিয়া। গত শনিবার কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো এই ঘোষণা দেন। ইসরায়েলের রক্তক্ষয়ী গাজা যুদ্ধের জেরে কলম্বিয়া এমন পদক্ষেপের ঘোষণা দিল। ইসরায়েলের প্রধান কয়লা সরবরাহকারী দেশ কলম্বিয়া। দেশটি ২০২৩ সালে ইসরায়েলের কাছে ৪৫ কোটি ডলারের কয়লা রপ্তানি করে। কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোতায় অবস্থিত ইসরায়েলি দূতাবাস এই তথ্য জানায়। গাজায় হামলার জেরে কলম্বিয়া-ইসরায়েলের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। গত মে মাসে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়ে ঘোষণা দেন। এর আগে ইসরায়েল থেকে কলম্বিয়া রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। এসব পদক্ষেপ সত্ত্বেও এত দিন ইসরায়েলে কলম্বিয়ার কয়লা রপ্তানি কার্যক্রম চলছিল।

কলম্বিয়ার প্রথম বামপন্থি প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো। তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর একজন কঠোর সমালোচক। গত শনিবার তিনি এক্সে বলেন, গাজায় গণহত্যা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলে তাঁর দেশের কয়লা রপ্তানি স্থগিত থাকবে। ইসরায়েলের তৈরি করা অস্ত্র কেনা বন্ধ করবে তার দেশ। যদিও কলম্বিয়ার সামরিক বাহিনীর অস্ত্রের অন্যতম প্রধান জোগানদাতা ইসরায়েল। কলম্বিয়া সরকারের তথ্যমতে, গেজেট আকারে ডিক্রি প্রকাশের পাঁচ দিন পর ইসরায়েলে কয়লা রপ্তানি স্থগিতের পদক্ষেপ কার্যকর হবে। তবে এরই মধ্যে যেসব চালানের অনুমোদন হয়ে গেছে, তা যথারীতি যাবে। কলম্বিয়া সরকার মনে করছে, দেশটি থেকে রপ্তানি করা কয়লা ইসরায়েলের অস্ত্র উৎপাদনসহ বিভিন্ন সামরিক কার্যক্রমে একটি ‘কৌশলগত সম্পদ’ হিসেবে ভূমিকা রাখছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

বন্দি উদ্ধারের নামে শরণার্থী শিবিরে হামলা, নিহত ২১০

আপডেট সময় : ০৯:৪৪:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জুন ২০২৪

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলি জিম্মি উদ্ধারের নামে গাজা উপত্যকায় ব্যাপক হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের হামলায় নুসিরাত শরণার্থী শিবির ও মধ্য গাজার অন্যান্য এলাকায় ২১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত শনিবার অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকাজুড়ে বিমান, স্থল ও সমুদ্রপথে তীব্র হামলা শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। বিশেষ করে মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ ও নুসিরাত শরণার্থী শিবির, দক্ষিণের রাফা শহর এবং উত্তরের গাজা সিটির একাধিক এলাকায় এই হামলা চালিয়েছে তারা।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় বহু আহত মানুষকে আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী। কয়েক ডজন আহত মানুষ মাটিতে পড়ে আছে। তাদের কাছে যে নামমাত্র সরঞ্জাম আছে, তা দিয়ে আহতদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে মেডিক্যাল টিম। তবে তাদের কাছে ওষুধ ও খাবারের ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া জ্বালানির অভাবে হাসপাতালের প্রধান জেনারেটর কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।

এর আগে গাজা উপত্যকা থেকে হামাসের হাতে বন্দি চার ইসরায়েলি জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করার কথা জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই চার ইসরায়েলিকে নুসিরাত শরণার্থী শিবিরের কেন্দ্রস্থলের দুটি আলাদা স্থান থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া চার ইসরায়েলি বন্দি হলেন, নোয়া আরগামানি (২৫), আলমোগ মীর জান (২১), আন্দ্রে কোজলভ (২৭) এবং শ্লোমি জিভ (৪০)। এই চারজনকেই গত ৭ অক্টোবরের হামলার সময় দক্ষিণ ইসরায়েলের সংগীত উৎসব থেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন হামাস যোদ্ধারা।

গাজার মধ্যাঞ্চলে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ভয়াবহ হামলার প্রতিবাদে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি অধিবেশনের আহ্বান করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। এই হত্যাকাণ্ডকে ‘রক্তাক্ত গণহত্যা’ বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ওয়াফা নিউজ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ১৫ জনের বেশি নারী ও শিশু রয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডকে ‘রক্তাক্ত গণহত্যা’ বলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। এক্ষেত্রে তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি অধিবেশনের আহ্বান জানিয়েছেন।

বর্বরোচিত এ হামলার পর এক বিবৃতিতে দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন হামাসের পলিটব্যুরোর প্রধান ঈসমাইল হানিয়াহ। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল তাদের ইচ্ছা হামাসের ওপর চাপিয়ে দিতে পারবে না এবং ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না এমন কোনো চুক্তিও মানা হবে না। আমাদের সাধারণ মানুষ আত্মসমর্পণ করবে না এবং এই অপরাধী শত্রুদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে। যদি ইসরায়েলি দখলদাররা মনে করে তারা তাদের ইচ্ছা আমাদের ওপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দিতে পারবে, তাহলে তারা বিভ্রান্তিতে আছে।

 

হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেও না :
লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার বিষয়ে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রশাসনের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ইসরায়েল যদি হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ায়, তাহলে ইরানের সঙ্গে শত্রুতা আরও প্রসারিত হবে। ইসরায়েল যখন গাজায় সর্বাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত, তখন লেবাননে আরেকটি আঞ্চলিক যুদ্ধে জড়ালে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে পারে তেল আবিবের জন্য। গত সপ্তাহে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, তারা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রয়োজনে অভিযান চালাবে এবং এ জন্য তারা প্রস্তুতও। ইসরায়েলের এই মনোভাব প্রকাশিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন সতর্কবার্তা এলো।
মোসাদের সাবেক কর্মকর্তা হাইম টোমারও হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছেন। তিনি গণমাধ্যমে বলেছেন, হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ ইসরায়েলের ‘ইহুদিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি’র জন্য হুমকি। হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ ইসরায়েলের অর্থনীতিকে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সরকারের সক্ষমতা ধরে রাখাও কঠিন হবে। এমনকি হিজবুল্লাহর রকেটে ইসরায়েল নাস্তানাবুদ হতে পারে। তেল আবিবের ভাগ্যে একটি ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। হিজবুল্লাহর কাছে যে ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, তা দিয়ে তারা ইসরায়েলের গ্যাসক্ষেত্র কয়েক সেকেন্ডে উড়িয়ে দিতে পারে। তা ছাড়া ইরানি রাডারের কারণে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী লেবাননের আকাশে সফলতা পাবে না। হিজবুল্লাহর কাছে রয়েছে এক লাখ থেকে দেড় লাখ যুদ্ধ সরঞ্জাম। প্রতিদিন দেড় হাজার রকেট নিক্ষেপের সক্ষমতাও রাখে সংগঠনটি।

 

হোয়াইট হাউসের কাছে গাজা যুদ্ধবিরোধী রেড লাইন বিক্ষোভ
মার্কিন প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউসের কাছে চলমান গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ‘রেড লাইন’ নামের বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। যা স্থানীয় সময় শনিবার অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতকামী সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের রক্তক্ষয়ী হামলার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সহনশীলতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত ফিলিস্তিনিদের নাম লেখা দীর্ঘ ব্যানার বহন করছিলেন বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া সকলেই প্রায় লাল পোশাক পরেছিল। তাদের হাতে ছিল ফিলিস্তিনি পতাকা। তাদের দাবি, বাইডেনের ‘রেড লাইন’ মিথ্যা এবং শিশুদের ওপর বোমা হামলা চালানো আত্মরক্ষা নয়। এদিকে বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে হোয়াইট হাউসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অপরদিকে গাজা যুদ্ধ নিয়ে দ্বিমুখী-নীতির জন্য সমালোচিত হচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। গত মে মাসে হোয়াইট হাউস বলেছিল, রাফায় ইসরায়েলি হামলা ‘রেড লাইন’ বা চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করেনি। এর দুই মাস আগে বাইডেন রাফায় ‘রেড লাইন’ অতিক্রম না করতে ইসায়েলকে সতর্ক করেছিলেন।

 

ইসরায়েলে কয়লা রপ্তানি স্থগিত করছে কলম্বিয়া
ইসরায়েলে কয়লা রপ্তানি স্থগিত করতে যাচ্ছে কলম্বিয়া। গত শনিবার কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো এই ঘোষণা দেন। ইসরায়েলের রক্তক্ষয়ী গাজা যুদ্ধের জেরে কলম্বিয়া এমন পদক্ষেপের ঘোষণা দিল। ইসরায়েলের প্রধান কয়লা সরবরাহকারী দেশ কলম্বিয়া। দেশটি ২০২৩ সালে ইসরায়েলের কাছে ৪৫ কোটি ডলারের কয়লা রপ্তানি করে। কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোতায় অবস্থিত ইসরায়েলি দূতাবাস এই তথ্য জানায়। গাজায় হামলার জেরে কলম্বিয়া-ইসরায়েলের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। গত মে মাসে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়ে ঘোষণা দেন। এর আগে ইসরায়েল থেকে কলম্বিয়া রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। এসব পদক্ষেপ সত্ত্বেও এত দিন ইসরায়েলে কলম্বিয়ার কয়লা রপ্তানি কার্যক্রম চলছিল।

কলম্বিয়ার প্রথম বামপন্থি প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো। তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর একজন কঠোর সমালোচক। গত শনিবার তিনি এক্সে বলেন, গাজায় গণহত্যা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলে তাঁর দেশের কয়লা রপ্তানি স্থগিত থাকবে। ইসরায়েলের তৈরি করা অস্ত্র কেনা বন্ধ করবে তার দেশ। যদিও কলম্বিয়ার সামরিক বাহিনীর অস্ত্রের অন্যতম প্রধান জোগানদাতা ইসরায়েল। কলম্বিয়া সরকারের তথ্যমতে, গেজেট আকারে ডিক্রি প্রকাশের পাঁচ দিন পর ইসরায়েলে কয়লা রপ্তানি স্থগিতের পদক্ষেপ কার্যকর হবে। তবে এরই মধ্যে যেসব চালানের অনুমোদন হয়ে গেছে, তা যথারীতি যাবে। কলম্বিয়া সরকার মনে করছে, দেশটি থেকে রপ্তানি করা কয়লা ইসরায়েলের অস্ত্র উৎপাদনসহ বিভিন্ন সামরিক কার্যক্রমে একটি ‘কৌশলগত সম্পদ’ হিসেবে ভূমিকা রাখছে।