০১:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কাজ ফেলে লাপাত্তা ঠিকাদার

‘আহারে আমার স্বপ্নের বীর নিবাসে আর থাকা হবে না’। অশ্রুস্বজল চোখে বারার বলা কথাগুলোই  বলেন রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধার আব্দুল খালেকের  সন্তান  মনজুরুল ইসলাম।  তিনি বলেন, মৃত্যুর আগে আমার বাবা  বীর নিবাসে উঠতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঠিকাদার কাজ ফেলে লাপাত্তা হওয়ায় সেটি বোধয় আর  হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, ‘ কাজটি শেষ করতে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও কোন সুরাহা হয়নি।
একই আক্ষেপের কথা বলেন থানাহাট ইউনিয়নের বালাবাড়ীর   কিসামত বানু এলাকার আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা আনছার আলী। তিনি বলেন, ‘ এটি বীর নিবাস বলে মনে হচ্ছে না। থাকার পরিবেশ নেই। এভাবে বীর নিবাস তৈরি হয় না। এটা বীর মুক্তি যোদ্ধাদেরকে  অপমান করা হয়েছে। কাজ ও ভালো হয়নি।
জানাগেছে, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ২০২২ সালের ১৩ আগস্ট চিলমারী উপজেলায় ২য় দফায় ৩৫ টি বীর নিবাস নির্মাণে বরাদ্দ দেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। উপজেলা প্রশাসন ও  ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস বাস্তবায়নের  কাজ করছেন।
এক তলাবিশিষ্ট ৭৩২ বর্গফুট আয়তনের বীর নিবাসের এই বাড়িতে দুটি শয়নকক্ষ, একটি বসার কক্ষ (ড্রয়িংরুম), একটি খাওয়ার কক্ষ (ডাইনিং), একটি রান্নাঘর, একটি প্রশস্ত বারান্দা ও দুটি শৌচাগার রয়েছে।
কিন্ত ২য় দফার ৩৫টি বীর নিবাসের মধ্যে ৩০টির কাজ শেষ হলেও প্রায় ২ বছরেও বাকি ৫টির কাজ শেষ হয়নি। এই পাঁচটির কাজ করে মেসার্স নুরুজ্জামান আজাদ নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী চিলমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক যুবলীগ সভাপতি নুরুজ্জামান আজাদ জামান।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন বীর নিবাসের দরজা, জানালা লাগানো হয়নি। ইলেক্ট্রিক সংযোগ না দেয়াসহ করা হয়নি রং।  ৩টির টাইলস লাগানো হলেও দুটির টাইলস লাগানোর কাজও বাকি রয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি কাজ শেষ না করেই ৩ দফার বিলের টাকাও উত্তোলন করেছেন। ভুক্তভোগী বাকি ৩ মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের রাণীগঞ্জ বাজার এলাকার রিয়াজুল হক সর্দার, মদন মোহন এলাকার আমিনুল ইসলাম, ভাটিয়া পাড়া এলাকার শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী সাহেরা বেগম।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর রহমান বলেন, ’বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। কাজটি যথাসময়ে শেষ না করে মুক্তিযোদ্ধাদের হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে।’
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী নুরুজ্জামান আজাদ জামানের সাথে  ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, কাজের মেয়াদ  ৩০ জুন  পযন্ত বাড়ানো হয়েছে।    আজ কাজ শুরু করার কথা ছিলো ঈদের কারনে হলো না ঈদের পরে  কাজ শুরু করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)  মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘ইতোপূর্বে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হয়েছে। অসমাপ্ত কাজ শেষ না করলে বিধি মোতাবেক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
জনপ্রিয় সংবাদ

কাজ ফেলে লাপাত্তা ঠিকাদার

আপডেট সময় : ০৫:১৪:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন ২০২৪
‘আহারে আমার স্বপ্নের বীর নিবাসে আর থাকা হবে না’। অশ্রুস্বজল চোখে বারার বলা কথাগুলোই  বলেন রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধার আব্দুল খালেকের  সন্তান  মনজুরুল ইসলাম।  তিনি বলেন, মৃত্যুর আগে আমার বাবা  বীর নিবাসে উঠতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঠিকাদার কাজ ফেলে লাপাত্তা হওয়ায় সেটি বোধয় আর  হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, ‘ কাজটি শেষ করতে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও কোন সুরাহা হয়নি।
একই আক্ষেপের কথা বলেন থানাহাট ইউনিয়নের বালাবাড়ীর   কিসামত বানু এলাকার আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা আনছার আলী। তিনি বলেন, ‘ এটি বীর নিবাস বলে মনে হচ্ছে না। থাকার পরিবেশ নেই। এভাবে বীর নিবাস তৈরি হয় না। এটা বীর মুক্তি যোদ্ধাদেরকে  অপমান করা হয়েছে। কাজ ও ভালো হয়নি।
জানাগেছে, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ২০২২ সালের ১৩ আগস্ট চিলমারী উপজেলায় ২য় দফায় ৩৫ টি বীর নিবাস নির্মাণে বরাদ্দ দেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। উপজেলা প্রশাসন ও  ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস বাস্তবায়নের  কাজ করছেন।
এক তলাবিশিষ্ট ৭৩২ বর্গফুট আয়তনের বীর নিবাসের এই বাড়িতে দুটি শয়নকক্ষ, একটি বসার কক্ষ (ড্রয়িংরুম), একটি খাওয়ার কক্ষ (ডাইনিং), একটি রান্নাঘর, একটি প্রশস্ত বারান্দা ও দুটি শৌচাগার রয়েছে।
কিন্ত ২য় দফার ৩৫টি বীর নিবাসের মধ্যে ৩০টির কাজ শেষ হলেও প্রায় ২ বছরেও বাকি ৫টির কাজ শেষ হয়নি। এই পাঁচটির কাজ করে মেসার্স নুরুজ্জামান আজাদ নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী চিলমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক যুবলীগ সভাপতি নুরুজ্জামান আজাদ জামান।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন বীর নিবাসের দরজা, জানালা লাগানো হয়নি। ইলেক্ট্রিক সংযোগ না দেয়াসহ করা হয়নি রং।  ৩টির টাইলস লাগানো হলেও দুটির টাইলস লাগানোর কাজও বাকি রয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি কাজ শেষ না করেই ৩ দফার বিলের টাকাও উত্তোলন করেছেন। ভুক্তভোগী বাকি ৩ মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের রাণীগঞ্জ বাজার এলাকার রিয়াজুল হক সর্দার, মদন মোহন এলাকার আমিনুল ইসলাম, ভাটিয়া পাড়া এলাকার শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী সাহেরা বেগম।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর রহমান বলেন, ’বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। কাজটি যথাসময়ে শেষ না করে মুক্তিযোদ্ধাদের হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে।’
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী নুরুজ্জামান আজাদ জামানের সাথে  ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, কাজের মেয়াদ  ৩০ জুন  পযন্ত বাড়ানো হয়েছে।    আজ কাজ শুরু করার কথা ছিলো ঈদের কারনে হলো না ঈদের পরে  কাজ শুরু করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)  মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘ইতোপূর্বে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হয়েছে। অসমাপ্ত কাজ শেষ না করলে বিধি মোতাবেক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’