০৮:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহবান খালেদা-তারেকের

১৬ দিন পর তালা ভেঙে নয়াপল্টন কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা

বিএনপিতে উচ্ছাস

আওয়ামীলীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার দেশত্যাগের ঘটনায় ব্যাপক আনন্দ-উল্লাস বিরাজ করছে বিএনপিতে। এরইমধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল করেছে দলটি। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দেশবাসী ও নেতাকর্মীদের জন্য ভিডিও বার্তা দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারম্যান খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এদিকে দীর্ঘ ১৬ দিন পর তালাবদ্ধ থাকার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। সোমবার বিকাল ৩টা ৫৩ মিনিটের দিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপনের নেতৃত্বে দলের নেতাকর্মীরা তালা ভেঙে কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিকাল ৩টা থেকে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন। পরে কার্যালয়ের সামনে আসেন আসাদুজ্জামান রিপন। ৩টা ৫৩ মিনিটের দিকে আসাদুজ্জামান রিপন হাতুড়ি দিয়ে তালা ভাঙা শুরু করেন। পরে নেতাকর্মীরা রড এনে তালা ভেঙে কার্যালয়ের ভিতরে প্রবেশ করেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মূল ফটকে দুটি তালা লাগানো ছিলো। ফটকের ভেতরের দিকে কয়েকটি পত্রিকা পড়ে ছিলো। ভেতরে অভ্যর্থনার জন্য বসানো টেবিল ও চারপাশে খালি জায়গায় ধুলাও জমা দেখা গেছে। কার্যালয়ের তালা ভাঙার সময় হাজার হাজার জনতা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দিয়ে শাহবাগের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় তারা পাইলাইছে রে পাইলাইছে শেখ হাসিনা পাইলাইছেসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। তাদেরকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরাও স্লোগান দেন।
গত ১৬ জুলাই রাতে কার্যালয়ের ভেতরে ডিবি পুলিশ অভিযান চালানোর পর কার্যালয়ের ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। কার্যালয়টির প্রধান ফটকের সামনে ‘ক্রাইম সিন’ লেখা হলুদ ফিতাও ওই সময় টাঙিয়ে হয়। পরে ১৯ জুলাই ছাত্রদল ও যুবদলের কিছু নেতাকর্মী ওই তালা ভেঙে কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর ২০ জুলাই মূল ফটকে তালা লাগানোর পর আর কেউ কার্যালয়ে যায়নি।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চলমান সার্বিক পরিস্থিতিতে দেশের সর্বস্তরের জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানান। চলমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। গতকাল সোমবার এক ভিডিও বার্তায় এ আহ্বান জানান তিনি।
ভিডিও বার্তার শুরুতে তারেক রহমান বলেন, গৌরবজনক ঐতিহাসিক এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সাহসী ছাত্রজনতাকে বীরোচিত অভিনন্দন। হাজারও শহীদের প্রাণের বিনিময়ে জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। রাহুমুক্ত হয়েছে প্রিয় বাংলাদেশ। জনতার বিপ্লবের প্রথম ধাপ চূড়ান্তভাবে সফল হয়েছে। লাখো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ কখনো পরাজয় মানতে পারে না। এই ঐতিহাসিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হয়েছে, দল-মত-নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ থাকলে এ বাংলাদেশকে কেউ কখনো পরাজিত করতে পারবে না।
তিনি বলেন, বিজয়ের এ ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমি আজ সেইসব মায়েদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই, এই গণবিপ্লবে যারা তাদের প্রিয় সন্তান হারিয়েছেন। এভাবে গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনকালে অনেক সন্তান তার প্রিয়তম পিতা হারিয়েছেন, অনেক স্ত্রী প্রিয়তম স্বামী হারিয়েছেন গুম খুন অপহরণ করে অসংখ্য মায়ের বুক খালি করে দেওয়া হয়েছে। আপনাদের সন্তানের শহীদি মৃত্যু স্বজনদের ত্যাগ তিতিক্ষায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আরেকটি বিজয় দেখেছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, বিজয়ের এই আনন্দঘন সময় রাহুমুক্তির এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত শান্তভাবে উদযাপন করুন। অনুগ্রহ করে কেউ প্রতিশোধ কিংবা প্রতিহিংসাপরায়ণ হবেন না। কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না। অর্জিত বিজয় যাতে লক্ষচ্যুত না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক এবং সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য আপনাদের প্রতি আহ্বান।
এদিকে আ.লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা জোরদার হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল বঙ্গবভনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকের আলোচনায় সংসদ ভেঙে দিয়ে অতিদ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া অন্যায়ভাবে কারাগারে আটককৃতদের মুক্তির বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেশকে ধ্বংস করে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, আমাদের যে বড় বিজয় বা সাফল্য হয়েছে, এ অবস্থায় কোন ক্রোধ, ঘৃণা প্রতিশোধ না নেয়া এবং কোন ক্ষতি না করার আহবান জানাচ্ছি।

জনপ্রিয় সংবাদ

দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহবান খালেদা-তারেকের

১৬ দিন পর তালা ভেঙে নয়াপল্টন কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা

আপডেট সময় : ১২:৩৯:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অগাস্ট ২০২৪

আওয়ামীলীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার দেশত্যাগের ঘটনায় ব্যাপক আনন্দ-উল্লাস বিরাজ করছে বিএনপিতে। এরইমধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল করেছে দলটি। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দেশবাসী ও নেতাকর্মীদের জন্য ভিডিও বার্তা দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারম্যান খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এদিকে দীর্ঘ ১৬ দিন পর তালাবদ্ধ থাকার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। সোমবার বিকাল ৩টা ৫৩ মিনিটের দিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপনের নেতৃত্বে দলের নেতাকর্মীরা তালা ভেঙে কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিকাল ৩টা থেকে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন। পরে কার্যালয়ের সামনে আসেন আসাদুজ্জামান রিপন। ৩টা ৫৩ মিনিটের দিকে আসাদুজ্জামান রিপন হাতুড়ি দিয়ে তালা ভাঙা শুরু করেন। পরে নেতাকর্মীরা রড এনে তালা ভেঙে কার্যালয়ের ভিতরে প্রবেশ করেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মূল ফটকে দুটি তালা লাগানো ছিলো। ফটকের ভেতরের দিকে কয়েকটি পত্রিকা পড়ে ছিলো। ভেতরে অভ্যর্থনার জন্য বসানো টেবিল ও চারপাশে খালি জায়গায় ধুলাও জমা দেখা গেছে। কার্যালয়ের তালা ভাঙার সময় হাজার হাজার জনতা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দিয়ে শাহবাগের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় তারা পাইলাইছে রে পাইলাইছে শেখ হাসিনা পাইলাইছেসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। তাদেরকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরাও স্লোগান দেন।
গত ১৬ জুলাই রাতে কার্যালয়ের ভেতরে ডিবি পুলিশ অভিযান চালানোর পর কার্যালয়ের ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। কার্যালয়টির প্রধান ফটকের সামনে ‘ক্রাইম সিন’ লেখা হলুদ ফিতাও ওই সময় টাঙিয়ে হয়। পরে ১৯ জুলাই ছাত্রদল ও যুবদলের কিছু নেতাকর্মী ওই তালা ভেঙে কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর ২০ জুলাই মূল ফটকে তালা লাগানোর পর আর কেউ কার্যালয়ে যায়নি।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চলমান সার্বিক পরিস্থিতিতে দেশের সর্বস্তরের জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানান। চলমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। গতকাল সোমবার এক ভিডিও বার্তায় এ আহ্বান জানান তিনি।
ভিডিও বার্তার শুরুতে তারেক রহমান বলেন, গৌরবজনক ঐতিহাসিক এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সাহসী ছাত্রজনতাকে বীরোচিত অভিনন্দন। হাজারও শহীদের প্রাণের বিনিময়ে জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। রাহুমুক্ত হয়েছে প্রিয় বাংলাদেশ। জনতার বিপ্লবের প্রথম ধাপ চূড়ান্তভাবে সফল হয়েছে। লাখো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ কখনো পরাজয় মানতে পারে না। এই ঐতিহাসিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হয়েছে, দল-মত-নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ থাকলে এ বাংলাদেশকে কেউ কখনো পরাজিত করতে পারবে না।
তিনি বলেন, বিজয়ের এ ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমি আজ সেইসব মায়েদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই, এই গণবিপ্লবে যারা তাদের প্রিয় সন্তান হারিয়েছেন। এভাবে গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনকালে অনেক সন্তান তার প্রিয়তম পিতা হারিয়েছেন, অনেক স্ত্রী প্রিয়তম স্বামী হারিয়েছেন গুম খুন অপহরণ করে অসংখ্য মায়ের বুক খালি করে দেওয়া হয়েছে। আপনাদের সন্তানের শহীদি মৃত্যু স্বজনদের ত্যাগ তিতিক্ষায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আরেকটি বিজয় দেখেছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, বিজয়ের এই আনন্দঘন সময় রাহুমুক্তির এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত শান্তভাবে উদযাপন করুন। অনুগ্রহ করে কেউ প্রতিশোধ কিংবা প্রতিহিংসাপরায়ণ হবেন না। কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না। অর্জিত বিজয় যাতে লক্ষচ্যুত না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক এবং সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য আপনাদের প্রতি আহ্বান।
এদিকে আ.লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা জোরদার হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল বঙ্গবভনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকের আলোচনায় সংসদ ভেঙে দিয়ে অতিদ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া অন্যায়ভাবে কারাগারে আটককৃতদের মুক্তির বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেশকে ধ্বংস করে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, আমাদের যে বড় বিজয় বা সাফল্য হয়েছে, এ অবস্থায় কোন ক্রোধ, ঘৃণা প্রতিশোধ না নেয়া এবং কোন ক্ষতি না করার আহবান জানাচ্ছি।