০৭:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাসপূর্তি আজ রাষ্ট্র সংস্কারে আস্থা বাড়াচ্ছে জনমনে

◉নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু ড. ইউনুসহ উপদেষ্টা পরিষদের
◉চলছে প্রশাসন ঢেলে সাজানোর কাজ
◉দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
◉বিচারের আগে আ.লীগের পুনর্বাসন নয়

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব গ্রহণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অভ্যুত্থান-পরবর্তী চরম প্রতিকূল ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যেই রাষ্ট্র সংস্কারের বার্তা দিয়ে কাজ শুরু করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছাত্র-জনতার প্রত্যাশার মধ্যে ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রায় দীর্ঘ ১৬ বছরে গড়ে ওঠা অনিয়মের শিকল ভাঙার চ্যালেঞ্জর মধ্যেই একমাস পূর্ণ করলেন তারা। দায়িত্ব গ্রহণের পর কয়েক দফা প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা হলেও ছাত্র-জনতার তৎপরতায় তা ভেস্তে যায়। অল্পসময়ের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন এনে আশা জাগিয়েছেন জনগণের মনে। অভ্যুত্থানের কারণে ভেঙেপড়া আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ফিরেয়ে আনা, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে গড়ে ওঠা বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের মধ্যে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ব্যক্তিদের অপসারণ, আর্থিক খাত সংস্কারের উদ্যোগ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, ভারত থেকে আসা উজানের পানিতে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি সামাল দেওয়াসহ বেশকিছু বিষয় ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে ২১ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

দায়িত্ব গ্রহণের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল দেশের ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা। জুলাই থেকে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে জনরোষের মুখে পড়ে পুলিশ বাহিনী। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে কর্মবিরতিতে চলে যায় পুলিশ সদস্যরা। বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, ওই সময় সারা দেশের ৬৩৯টি থানার মধ্যে অন্তত ৪৫০টি আক্রান্ত হয়েছিল। থানা পুলিশের অনুপস্থিতিতে চুরি-ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়াসহ দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে ব্যাপক অবনতি ঘটে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বেশ কয়েক দফা বৈঠকের পর দাবি পূরণের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে কর্মস্থলে ফিরতে সম্মতি জানান পুলিশ সদস্যরা। গত ১১ আগস্ট কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে থানায় ফেরা শুরু করেন পুলিশ সদস্যরা। স্বাভাবিক হতে শুরু করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।

এছাড়া আওয়ামী লীগ আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়া বা গুম হওয়া ব্যক্তিদের অনেকেরই খোঁজ মিলছে সরকার পরিবর্তনের পর। আগের সরকারের নির্দেশেই বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা তাদের তুলে নিয়ে বছরের পর বছর আটকে রেখেছিলেন বলে ভুক্তভোগীদের বর্ণনায় জানা যাচ্ছে। তেমনই একজন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির প্রয়াত গোলাম আজমের ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী। ২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট গুম হওয়ার আট বছর পরে সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছেন তিনি। একইভাবে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিখোঁজ থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক একটি রাজনৈতিক দল ‘ইউপিডিএফ’র সংগঠক মাইকেল চাকমা। গুম থাকা এসব ব্যক্তিদের বর্ণনায় উঠে এসেছে আয়নাঘরে নামের কথিত এক গোপন বন্দিশালার কথা। কথিত সেই আয়না ঘর থেকে আরো মুক্তি পেয়েছেন জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর ছেলে আহমেদ বিন কাশেম আরমান। সম্প্রতি পাঁচ সদস্যের একটি গুম তদন্ত কমিশন গঠন করেছে সরকার। গত দেড় দশকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অপহরণ হওয়া বা গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্ধানে কাজ করছে।
শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে প্রশাসন ও বিচার বিভাগে ব্যাপক দলীয় লেজুড়বৃত্তির ঘটনা ঘটে। গুরুত্বপূর্ণ সব দায়িত্বে দলীয় মদদপুষ্ট লোকদের পদায়ন ও ফ্যাসিস্ট সরকারের টিকিয়ে রাখার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হন তারা। এমন পরিস্থিতির মধেই ঢেলে সাজানো শুরু হয় বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে। দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত লোকদের অপসারণ করে তাদের স্থলে যোগ্য ও ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেওয়া শুরু হয়। রদবদল ছাড়াও সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় গণপদত্যাগ। বিতর্কিত ভূমিকা রাখায় ও ভয়ের কারণে অনেকে চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন। সৃষ্ট পরিস্থিতি উত্তরণে গত একমাসে স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নতুন করে বদলি, পদায়ন ও নিয়োগ করা হয়েছে কয়েকশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে। অনেকেই হয়েছেন বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও (ওএসডি)। বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরেও পাঠানো হয়েছে। কাজে গতি আনতেই প্রশাসনে রদবদল আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংযুক্ত উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, দায়িত্বে থেকে এখন যারা সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না, সেসব জায়গায় দ্রুত পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর বিচার বিভাগেও বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটতে দেখা গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে গত ১০ আগস্ট পদত্যাগে বাধ্য হন আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরাও তার সঙ্গে পদত্যাগ করেন। এ ঘটনার পর নতুন বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন আপিল বিভাগের বিচারক সৈয়দ রেফাত আহমেদ। একইভাবে, আপিল বিভাগে নতুন আরও চার বিচারপতিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এদিকে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের স্থলাভিষিক্ত হন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান। অন্যদিকে, আগের নিয়োগ বাতিল করে সম্প্রতি সারা দেশে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পদে ২২৭ জন আইনজীবীকে নতুন নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের ৬৬ আইনজীবীকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ১৬১ আইনজীবীকে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সরকারি, আধাসরকারি, এমনকি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের হিড়িক দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় পদ ছাড়ছেন, আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ, অপমান-অপদস্তসহ নানান চাপের মুখে কর্তাব্যক্তিরা পদত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে গত এক মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ শীর্ষ পদের ব্যক্তিরা দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিগগিরই নতুন উপাচার্য নিয়োগ হবে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সেই সঙ্গে, কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে গত ৯ আগস্ট পদত্যাগ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তার আগের দুই দিনে ডেপুটি গভর্নরসহ অন্তত চারজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে সাদা কাগজে লিখিত দিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করানো হয়। পরবর্তীতে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) সদ্য সাবেক নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরকে নতুন গভর্নর করা হয়। একইভাবে, গত কয়েক সপ্তাহে ঢাকা ওয়াসা, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি), বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তিরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এদিকে, বৃহস্পতিবার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন পদত্যাগের ঘোষণা দেন। অন্যদিকে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকসহ অন্তত আটটি ব্যাংকের আগের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া প্রেস ক্লাবের মতো প্রতিষ্ঠানেও শীর্ষ পদে পরিবর্তন আসতে দেখা গেছে। একই ঘটনা ঘটেছে, সময় ও একাত্তর টেলিভিশনে।

পদত্যাগ ছাড়াও আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় ভেঙে পড়ে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা ও উপজেলা মেয়র ও চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ করে অন্তর্বর্তী সরকার। স্থানীয় সরকারের ওই চারটি প্রতিষ্ঠানের পদ থেকে মেয়র ও চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হলেও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ক্ষেত্রে ভিন্ন নীতি সরকারের। যেসব জায়গায় চেয়ারম্যানরা অনুপস্থিত রয়েছেন, সেখানে কাজ চালিয়ে নিতে প্যানেল চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব পালন করতে পরিপত্র জারি করেছে সরকার।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নজিরবিহীন লুটপাটে ব্যাংকিংখাত ভয়াবহ বিপর্যের মুখে পড়ে। এ খাতকে স্থিতিশীল করার জন্য পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে সরকার। ব্যাংকিং খাতের টেকসই সংস্কারে ইতোমধ্যেই আলাদা ব্যাংকিং কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। খুব শিগগিরই কমিশন গঠন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া ‘লুটপাটে’র শিকার হওয়া বেশ কিছু ব্যাংকের আগের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠন করা হয়েছে, যেগুলোর মধ্যে বেসরকারি খাতে সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকও রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘ব্যাংকিং খাতকে স্থিতিশীল করাই এখন আমাদের প্রায়োরিটি, এজন্য যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সবই আমরা নিচ্ছি। যারা টাকা নিয়ে ফেরত দেননি, তাদের সেই টাকা ফেরত দিতে হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ জব্দ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, দেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার জন্য অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী তিন মাসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন বলে জানানো হয়েছে।

ক্ষমতা গ্রহণের পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারি কোনো কাজে যেন আর দুর্নীতি না হয়, সেটি নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। দুর্নীতির অভিযোগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় অর্ধশত মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই অভিযোগে তদন্ত হচ্ছে কয়েক ডজন আমলার বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যেই আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদসহ অনেকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। জালিয়াতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় এক লাখ কোটি টাকা তুলে নিয়ে বিদেশে পাচার করার অভিযোগে শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। গত দেড় দশকে বাংলাদেশ থেকে যত অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে, সেগুলো ফিরিয়ে আনার বিষয়েও কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। অর্থ আত্মসাৎকারীদের স্থানীয় সম্পদ অধিগ্রহণ এবং বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরাতে কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থ প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা চেয়ে ইতিমধ্যে যোগাযোগ শুরু করা হয়েছে, সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া প্রায় ১৬ বছরের দুঃশাসন ও জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর হত্যাকাণ্ডের দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার দাবি সর্বমহলের। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেও এবিষয়ে আশ^াস জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, সম্পূর্ণ বিচার না হওয়া পর্যন্ত ফ্যাসিবাদীরা দেশে পুনর্বাসনের সুযোগ পাবে না। মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে তাদের বিচার নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ফ্যাসিবাদী দল ও জোটকে প্রকাশ্যে কর্মসূচি (পাবলিক প্রোগ্রাম) পালনের ক্ষেত্রেও সরকার নিরুৎসাহিত করবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাসপূর্তি আজ রাষ্ট্র সংস্কারে আস্থা বাড়াচ্ছে জনমনে

আপডেট সময় : ০৮:৩৮:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

◉নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু ড. ইউনুসহ উপদেষ্টা পরিষদের
◉চলছে প্রশাসন ঢেলে সাজানোর কাজ
◉দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
◉বিচারের আগে আ.লীগের পুনর্বাসন নয়

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব গ্রহণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অভ্যুত্থান-পরবর্তী চরম প্রতিকূল ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যেই রাষ্ট্র সংস্কারের বার্তা দিয়ে কাজ শুরু করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছাত্র-জনতার প্রত্যাশার মধ্যে ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রায় দীর্ঘ ১৬ বছরে গড়ে ওঠা অনিয়মের শিকল ভাঙার চ্যালেঞ্জর মধ্যেই একমাস পূর্ণ করলেন তারা। দায়িত্ব গ্রহণের পর কয়েক দফা প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা হলেও ছাত্র-জনতার তৎপরতায় তা ভেস্তে যায়। অল্পসময়ের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন এনে আশা জাগিয়েছেন জনগণের মনে। অভ্যুত্থানের কারণে ভেঙেপড়া আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ফিরেয়ে আনা, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে গড়ে ওঠা বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের মধ্যে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ব্যক্তিদের অপসারণ, আর্থিক খাত সংস্কারের উদ্যোগ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, ভারত থেকে আসা উজানের পানিতে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি সামাল দেওয়াসহ বেশকিছু বিষয় ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে ২১ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

দায়িত্ব গ্রহণের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল দেশের ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা। জুলাই থেকে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে জনরোষের মুখে পড়ে পুলিশ বাহিনী। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে কর্মবিরতিতে চলে যায় পুলিশ সদস্যরা। বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, ওই সময় সারা দেশের ৬৩৯টি থানার মধ্যে অন্তত ৪৫০টি আক্রান্ত হয়েছিল। থানা পুলিশের অনুপস্থিতিতে চুরি-ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়াসহ দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে ব্যাপক অবনতি ঘটে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বেশ কয়েক দফা বৈঠকের পর দাবি পূরণের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে কর্মস্থলে ফিরতে সম্মতি জানান পুলিশ সদস্যরা। গত ১১ আগস্ট কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে থানায় ফেরা শুরু করেন পুলিশ সদস্যরা। স্বাভাবিক হতে শুরু করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।

এছাড়া আওয়ামী লীগ আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়া বা গুম হওয়া ব্যক্তিদের অনেকেরই খোঁজ মিলছে সরকার পরিবর্তনের পর। আগের সরকারের নির্দেশেই বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা তাদের তুলে নিয়ে বছরের পর বছর আটকে রেখেছিলেন বলে ভুক্তভোগীদের বর্ণনায় জানা যাচ্ছে। তেমনই একজন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির প্রয়াত গোলাম আজমের ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী। ২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট গুম হওয়ার আট বছর পরে সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছেন তিনি। একইভাবে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিখোঁজ থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক একটি রাজনৈতিক দল ‘ইউপিডিএফ’র সংগঠক মাইকেল চাকমা। গুম থাকা এসব ব্যক্তিদের বর্ণনায় উঠে এসেছে আয়নাঘরে নামের কথিত এক গোপন বন্দিশালার কথা। কথিত সেই আয়না ঘর থেকে আরো মুক্তি পেয়েছেন জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর ছেলে আহমেদ বিন কাশেম আরমান। সম্প্রতি পাঁচ সদস্যের একটি গুম তদন্ত কমিশন গঠন করেছে সরকার। গত দেড় দশকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অপহরণ হওয়া বা গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্ধানে কাজ করছে।
শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে প্রশাসন ও বিচার বিভাগে ব্যাপক দলীয় লেজুড়বৃত্তির ঘটনা ঘটে। গুরুত্বপূর্ণ সব দায়িত্বে দলীয় মদদপুষ্ট লোকদের পদায়ন ও ফ্যাসিস্ট সরকারের টিকিয়ে রাখার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হন তারা। এমন পরিস্থিতির মধেই ঢেলে সাজানো শুরু হয় বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে। দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত লোকদের অপসারণ করে তাদের স্থলে যোগ্য ও ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেওয়া শুরু হয়। রদবদল ছাড়াও সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় গণপদত্যাগ। বিতর্কিত ভূমিকা রাখায় ও ভয়ের কারণে অনেকে চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন। সৃষ্ট পরিস্থিতি উত্তরণে গত একমাসে স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নতুন করে বদলি, পদায়ন ও নিয়োগ করা হয়েছে কয়েকশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে। অনেকেই হয়েছেন বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও (ওএসডি)। বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরেও পাঠানো হয়েছে। কাজে গতি আনতেই প্রশাসনে রদবদল আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংযুক্ত উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, দায়িত্বে থেকে এখন যারা সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না, সেসব জায়গায় দ্রুত পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর বিচার বিভাগেও বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটতে দেখা গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে গত ১০ আগস্ট পদত্যাগে বাধ্য হন আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরাও তার সঙ্গে পদত্যাগ করেন। এ ঘটনার পর নতুন বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন আপিল বিভাগের বিচারক সৈয়দ রেফাত আহমেদ। একইভাবে, আপিল বিভাগে নতুন আরও চার বিচারপতিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এদিকে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের স্থলাভিষিক্ত হন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান। অন্যদিকে, আগের নিয়োগ বাতিল করে সম্প্রতি সারা দেশে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পদে ২২৭ জন আইনজীবীকে নতুন নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের ৬৬ আইনজীবীকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ১৬১ আইনজীবীকে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সরকারি, আধাসরকারি, এমনকি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের হিড়িক দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় পদ ছাড়ছেন, আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ, অপমান-অপদস্তসহ নানান চাপের মুখে কর্তাব্যক্তিরা পদত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে গত এক মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ শীর্ষ পদের ব্যক্তিরা দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিগগিরই নতুন উপাচার্য নিয়োগ হবে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সেই সঙ্গে, কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে গত ৯ আগস্ট পদত্যাগ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তার আগের দুই দিনে ডেপুটি গভর্নরসহ অন্তত চারজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে সাদা কাগজে লিখিত দিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করানো হয়। পরবর্তীতে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) সদ্য সাবেক নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরকে নতুন গভর্নর করা হয়। একইভাবে, গত কয়েক সপ্তাহে ঢাকা ওয়াসা, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি), বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তিরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এদিকে, বৃহস্পতিবার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন পদত্যাগের ঘোষণা দেন। অন্যদিকে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকসহ অন্তত আটটি ব্যাংকের আগের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া প্রেস ক্লাবের মতো প্রতিষ্ঠানেও শীর্ষ পদে পরিবর্তন আসতে দেখা গেছে। একই ঘটনা ঘটেছে, সময় ও একাত্তর টেলিভিশনে।

পদত্যাগ ছাড়াও আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় ভেঙে পড়ে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা ও উপজেলা মেয়র ও চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ করে অন্তর্বর্তী সরকার। স্থানীয় সরকারের ওই চারটি প্রতিষ্ঠানের পদ থেকে মেয়র ও চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হলেও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ক্ষেত্রে ভিন্ন নীতি সরকারের। যেসব জায়গায় চেয়ারম্যানরা অনুপস্থিত রয়েছেন, সেখানে কাজ চালিয়ে নিতে প্যানেল চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব পালন করতে পরিপত্র জারি করেছে সরকার।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নজিরবিহীন লুটপাটে ব্যাংকিংখাত ভয়াবহ বিপর্যের মুখে পড়ে। এ খাতকে স্থিতিশীল করার জন্য পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে সরকার। ব্যাংকিং খাতের টেকসই সংস্কারে ইতোমধ্যেই আলাদা ব্যাংকিং কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। খুব শিগগিরই কমিশন গঠন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া ‘লুটপাটে’র শিকার হওয়া বেশ কিছু ব্যাংকের আগের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠন করা হয়েছে, যেগুলোর মধ্যে বেসরকারি খাতে সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকও রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘ব্যাংকিং খাতকে স্থিতিশীল করাই এখন আমাদের প্রায়োরিটি, এজন্য যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সবই আমরা নিচ্ছি। যারা টাকা নিয়ে ফেরত দেননি, তাদের সেই টাকা ফেরত দিতে হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ জব্দ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, দেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার জন্য অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী তিন মাসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন বলে জানানো হয়েছে।

ক্ষমতা গ্রহণের পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারি কোনো কাজে যেন আর দুর্নীতি না হয়, সেটি নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। দুর্নীতির অভিযোগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় অর্ধশত মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই অভিযোগে তদন্ত হচ্ছে কয়েক ডজন আমলার বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যেই আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদসহ অনেকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। জালিয়াতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় এক লাখ কোটি টাকা তুলে নিয়ে বিদেশে পাচার করার অভিযোগে শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। গত দেড় দশকে বাংলাদেশ থেকে যত অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে, সেগুলো ফিরিয়ে আনার বিষয়েও কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। অর্থ আত্মসাৎকারীদের স্থানীয় সম্পদ অধিগ্রহণ এবং বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরাতে কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থ প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা চেয়ে ইতিমধ্যে যোগাযোগ শুরু করা হয়েছে, সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া প্রায় ১৬ বছরের দুঃশাসন ও জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর হত্যাকাণ্ডের দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার দাবি সর্বমহলের। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেও এবিষয়ে আশ^াস জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, সম্পূর্ণ বিচার না হওয়া পর্যন্ত ফ্যাসিবাদীরা দেশে পুনর্বাসনের সুযোগ পাবে না। মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে তাদের বিচার নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ফ্যাসিবাদী দল ও জোটকে প্রকাশ্যে কর্মসূচি (পাবলিক প্রোগ্রাম) পালনের ক্ষেত্রেও সরকার নিরুৎসাহিত করবে।