# তরুণদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে ইসি
# ভোটার তালিকায় নাম যাচাইয়ের পরামর্শ
# কাকে ভোট দেবেন বিষয়ক ইসির ভোটকার্ড প্রকাশ
নির্বাচন কমিশনের মধ্যে নির্বাচনী আমেজ দেখা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ইসি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে। যারা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার ভোট দেবেন অর্থাৎ যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে তাদের জন্য ভোটার তালিকা হালনাগাদের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ইসি। পাশাপাশি যাদের ভোটার তালিকা নাম রয়েছে তাদের তালিকার নাম যাচাইয়ের পরামর্শ দিয়েছে। পাশাপাশি কারো ভোটার তালিকায় ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করার পরামর্শ দিয়েছে। একইসঙ্গে কাকে ভোট দেবেন বিষয়ক ইসির ভোটকার্ড প্রকাশ করেছে। যা, ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করবে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় হওয়া উচিত বলে পরামর্শ দিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। এছাড়া স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদেরও এ নির্বাচন নির্দলীয় করা দরকার। গতকাল রোববার জাতীয় সংসদের কেবিনেট কক্ষে কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, স্থানীয় নির্বাচন শেষ করে জাতীয় নির্বাচন করার প্রস্তাব দিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার দাবিও জানিয়েছেন তারা।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখার দাবি তাদের। সব নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে করার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা। যতোদিন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মেয়াদ আছে, ততোদিন আমরা সংস্কার প্রস্তাব নেব। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের কাজ শেষ করতে চাই।
এদিকে, তরুণদের ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে চায় নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এজন্য পুরোনো তালিকা নয় বরং তফসিলের আগ পর্যন্ত যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য হবেন তাদেরও তালিকার যোগ করার পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি।
গত ২১ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরপর প্রথম ‘কমিশন বৈঠকে’ বিষয়টি চিহ্নিত করা হয়। একইসঙ্গে তরুণদের ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সবাই একমত হন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে প্রতি বছর আইনে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়। আর সেই সময়ের যত পরেই নির্বাচন হোক না কেন, পুরোনো সে তালিকা দিয়েই করা হয় ভোটের আয়োজন। এতে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া সত্ত্বেও অনেকে ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হন।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, সংসদ নির্বাচন সাধারণত ডিসেম্বর, জানুয়ারিতে হয়ে থাকে। তফসিল হয় তার প্রায় দেড় মাস আগে। আর ভোটার তালিকা হালনাগাদ হয় প্রতিবছরের ২ মার্চ। এ সময়ের মধ্যে অনেকে ১৮ বছর বয়স পূর্ণ করেন, তারা তালিকার বাইরে থেকে যান। এতে বিরাট সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে পারেন না।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, যখনই একটা নির্বাচন আসবে, তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত বিশেষ অধ্যাদেশ জারি করে হোক বা যেভাবেই হোক, যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য তাদের যেন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারি, সে বিষয়ে আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে শতভাগ শুদ্ধতার সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থা-মওসুস’র চেয়ারম্যান ড. মো. গোলাম রহমান ভুঁইয়া বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থাটা জোড়াতালি দিয়ে চলছে। ভোটারযোগ্যদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করাটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। তবে নতুন করে নেওয়া এটা একটা ভালো উদ্যোগ, যা আরো আগে থেকেই নেওয়া উচিত ছিল। এটা হলে তরুণ ভোটারদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে ভোটের হারও বাড়বে। তাই নতুন কমিশন যেন তার নীতিগত সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে না আসে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম জানিয়েছেন, আগামী ২ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ উপলক্ষ্যে যাদের এনআইডিতে ভুল আছে, তাদেরকে জরুরি ভিত্তিতে এই সময়ের আগেই সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভুল সংশোধন করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি। এই নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ হয় ২০২৩ সালের ২ মার্চ। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বাদ পড়াদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য একটি সুযোগ দিয়েছিল সে সময়কার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। ওই কমিশন সে বছর ১৫ নভেম্বর ভোটের তফসিল দিয়েছিল।
৭ সেপ্টেম্বর জারি করা এক নির্দেশনায় ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাদ পড়া ভোটারদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল বিগত আউয়াল কমিশন। সে সময় বলা হয়েছিল, যারা ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে ১৮ বছর বয়স পূর্ণ করেছেন, তারাই কেবল ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। এতে দুই লাখ ভোটার যোগ হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে বাদ পড়েছেন ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ১৮ বছর পূর্ণকারীরা।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটার হয়েছিলেন ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ১৫৭ জন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের নিয়েই করা হয়েছিল চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ছয় কোটি পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ১৬৯ জন, আর নারী ভোটার পাঁচ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার ১৪০ জন। হিজড়া ভোটার ছিল ৮৪৮ জন।
২০২৪ সালের ২ মার্চ প্রকাশিত চূড়ান্ত হালনাগাদ শেষে ভোটার দাঁড়ায় ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। এক্ষেত্রে ১ জানুয়ারি ২০২৪ সাল পর্যন্ত তথ্য নেওয়া হয়। এই হিসেবে এক বছরে ভোটার বাড়ে ২৫ লাখ ১৭ হাজার তিনজন। অর্থাৎ বিরাট সংখ্যক ভোটার নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশের নাগরিকরা ১৮ বছর বয়স পূর্ণ করলেই ভোটার হতে পারেন। এজন্য বছরের যেকোনো সময়ই ভোটার হওয়া যায়। তবে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে প্রতি বছর ২ মার্চ। তার আগে ২ জানুয়ারি খসড়া তালিকা প্রকাশ করে দাবি ও আপত্তি নেয়। সেগুলো নিষ্পত্তির পরই প্রকাশ করা হয় চূড়ান্ত তালিকা। আর এই তালিকার ভিত্তিতেই অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন।
জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররা কাকে ভোট দেবেন, সে বিষয়ে ভাবতে বলেছে ইসি। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে ভোটারদের উদ্দেশ্যে ‘কাকে ভোট দিবেন’ ভাবতে বলা সম্বলিত লেখার একটি কার্ড প্রকাশ করা হয়। যাতে ভোটারদের উদ্দেশে বিভিন্ন প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি উত্তরও জানিয়ে দিয়েছি নির্বাচন অয়োজনকারী সংস্থাটি। কার্ডে উল্লেখ করা হয়েছে, নিজ উদ্যোগে সময়মতো ভোটার হোন, নিজের পছন্দে ভোট দিন, সৎ ও যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত করুন।
এর আগে গত ২১ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ পান অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাকে নিয়োগ দেন। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আরও চার কমিশনারকেও নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এর মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমান মাসুদ, সাবেক যুগ্মসচিব তহমিদা আহমদ এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।


























