স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) পরিবেশকদের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ। তবু সেই পরিবেশকরা নিয়মিত খালাস করছেন গ্যাস। আবার একজন পরিবেশকই ৮০টি প্রতিষ্ঠানের পরিবেশক। অস্তিত্বহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সধারী এবং ভুয়া পরিবেশকের তথ্য খুঁজতে কোম্পানিটির অভ্যন্তরীন তদন্ত কমিটি গঠনের পর এবার কোমর বেঁধে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)। অভিযানে গিয়ে সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতির। মঙ্গলবার (৬ মে) সকালে নগরের পতেঙ্গা থানার বিমানবন্দর সড়কের গুপ্তখাল সড়কে এসএওসিএল’র প্রধান কার্যালয়ে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক সাইয়েদ আলমের নেতৃত্বে একটি দল এ অভিযান চালায়। এসএওসিএল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। এই কোম্পানি থেকে এলপি গ্যাস কিনে ব্যবসা করেন ৩৩৬ জন পরিবেশক। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় গ্যাস নিয়ে যান এই পরিবেশকেরা। জানা গেছে, এসএওসিএল থেকে গ্যাস কিনে ব্যবসা করে মেসার্স ডি ভি গ্যাস এবং মেসার্স সাগরিকা এজেন্সি নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ডি ভি গ্যাসের বিস্ফোরক পরিদপ্তর থেকে নেওয়া লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়। আর মেসার্স সাগরিকা এজেন্সির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয় ২০২৩ সালের মার্চ মাসে। নিয়ম অনুযায়ী, লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ হলে প্রতিষ্ঠানের নামে গ্যাস বিক্রি করা যায় না। তবে দুটি প্রতিষ্ঠানই এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি করে আসছে মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স দিয়েই। অভিযান শেষে দুদক কর্মকর্তা সাইয়েদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এলপি গ্যাস লিমিটেড থেকে যে গ্যাসগুলো আসে সেটার ডিস্ট্রিবিউটর এসএওসিএল, পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনা। ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে সমস্যা আছে। অনেক ডিলারদের লাইসেন্সের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। ডি ভি গ্যাস সাপ্লাইয়ার এবং সাগরিকা এজেন্সির লাইসেন্সের মেয়াদও অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। তারপরও তারা চিন চার বছর ধরে সাপ্লাই পাচ্ছিলো।’তিনি বলেন, ‘আমরা আজকে দেখেছি এসএওসিএলের ডিলারের মোট সংখ্যা ৩৩৬ জন। এরমধ্যে প্রায় ৫৭টির মতো প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের মেয়াদোত্তীর্ণ। যারা বিগত চার-পাঁচ বছর ধরে এলপি গ্যাস পাচ্ছে, যা পাওয়ার কথা না। একজন অথরাইজড পার্সন ৮০টি প্রতিষ্ঠানের অথরাইজেশন কিভাবে পায়? অবশ্য এখানে ডিলারশীপ নীতিমালাও দেখাতে পারেনি আমাদের। আমরা সেটাও দেখবো একজন অথরাইজড পার্সন ৮০টি প্রতিষ্ঠানের অথরাইজড পার্সন হতে পারে কি-না। এজন্যই মূলত সিন্ডিকেট হয়েছে বাজারে এবং বেশি দামে গ্যাস কিনতে হয়।’ এমন কারসাজিতে কারা জড়িত—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুর্বের যারা সিইও, এমডি কিংবা সেলস-এ ছিলেন বিশেষ করে এসএওসিএল’র সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) আবদুল সালাম মীর ওনাদের গাফিলতির কারণে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। মূলত একটি সিন্ডিকেটও আছে এখানে।’ কোম্পানিটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যারা আছেন তারা স্বীকার করেছেন যে ওনাদের কিছু গ্যাস আছে। নতুন যিনি সিইও উনি অনেকগুলো স্টেপ নিয়েছে, অনেকগুলো কমিটি করেছেন। বিভিন্ন ডিলারদের চিঠি দিচ্ছেন। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক যিনি তিনি আবদুস সালাম মীরের কাছে রেকর্ডপত্র চেয়ে একটি চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু সে সহযোগিতা না করায় প্রতিবেদনে সেটিও উল্লেখ করা হয়। সেক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত বিপিসি থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনায়।’ ‘আমরা রেকর্ডপত্র দেখবো, যাচাই বাছাই করে বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করবো। মূলত সেলস ডিপার্টমেন্ট এখানে জড়িত আছে।’ যোগ করেন দুদক কর্মকর্তা সাইয়েদ আলম।


























