০৫:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আহবায়ক কমিটিতে চার বছর পার ইবি ছাত্রদলের

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার চার বছর পূর্তি হয়েছে। ২০২১ সালের ১৬ জুন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ৩১ সদস্যের তিন মাস মেয়াদি আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হলেও দীর্ঘ চারটি বছর পেরিয়ে গেলেও বিভিন্ন কারণে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করতে পারেননি তারা। এতে সাংগঠনিক নিষ্ক্রিয়তার পাশাপাশি প্রতিযোগিতার রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়ছে ছাত্রদল। তবে অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বেশকিছু শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রম হাতে নিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে ছাত্রদল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালে লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের সাহেদ আহম্মেদকে আহবায়ক এবং ইংরেজি বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের মাসুদ রুমী মিথুনকে সদস্য সচিব করে করে আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল। তবে কমিটি ঘোষণার পরপরই সংবাদ সম্মেলন করে পদ পাওয়া ১২ জন সদস্য দলীয় নীতিমালা না মেনে বিবাহিত, অছাত্রদের পদ দেয়ার অভিযোগ তুলে কমিটি প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে আহবায়ক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ, আহসান হাবীব, সবুজ হোসাইন ও সদস্য সাব্বির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের হস্তক্ষেপে বিষয়টির সমাধান হয়। তবে একাংশের বিরোধীতার মুখে কমিটি টিকে গেলেও সাংগঠনিক কার্যক্রমে দেখা যায় স্থবিরতা।

আওয়ামী শাসনামলে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে না পারলেও কেন্দ্র ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করার চেষ্টা করেছে ইবি ছাত্রদল। দেশের বিভিন্ন স্থানের নেতাকর্মীদের উপর হামলা মামলা, পুলিশি হয়রানি ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করলেও তা ছিলো ক্যাম্পাসের বাইরে থানা গেট থেকে পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া বাজার পর্যন্ত। এতে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা ছাত্রদলের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে খুব কমই অবগত হতে পারতেন। তবে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে গতি ফিরতে থাকে ইবি ছাত্রদলের কর্মসূচীতে। কেন্দ্র ঘোষিত বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি, জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন ছাড়াও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যা এবং ঢাবির ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যার প্রতিবাদে লাগাতার কর্মসূচি প্রাণ ফিরিয়ে আনে ইবি ছাত্রদলের রাজনীতিতে। পাশাপাশি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় আগত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য হেল্প বুথ স্থাপন, সবার মাঝে পানি, কলম, নাস্তা, ওষুধ বিতরণ করে এবং পরীক্ষা শেষে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচী পালন করে প্রশংসা কুড়িয়েছে ছাত্রদল। সর্বশেষ, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে দীর্ঘ ২২ বছর পরে সদস্য ফরম বিতরণ করে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে ইবি ছাত্রদল।

তবে, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারলেও সাংগঠনিকভাবে এখনো কিছুটা পিছিয়ে ইবি ছাত্রদল। দীর্ঘ চার বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় বহু নেতাকর্মী একদিকে যেমন সাংগঠনিক পরিচয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তেমনি নতুন নেতৃত্ব তৈরির বিষয়টিও পিছিয়ে যাচ্ছে। দলের দুঃসময়ে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটির সিংহভাগ নেতাই ছিলেন কার্যত নিষ্ক্রিয়। পদ পাওয়ার পরেও অনেকেই বিবাহ করে সাংসারিক জীবনে প্রবেশ করেছেন, জীবিকার তাগিদে রাজনীতি ছেড়ে বেছে নিয়েছেন চাকরিজীবন। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দলের সুসময় ফেরার সাথে সাথে নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীদের কয়েকজনকে আবারো ক্যাম্পাসের কর্মসূচিতে দেখা গেলেও তার সংখ্যা খুবই কম৷ এছাড়া, বেশ কয়েকজন নেতাকে চেনেনই না বলে অভিযোগ ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। তারা আদৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কিনা বা জীবনে কোনদিন ছাত্রদলের রাজনীতি করেছেন কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কমিটির নেতারা।

এদিকে, ৩১ সদস্যের কমিটির অর্ধেকের বেশি নেতা দলের দুঃসময়ে নিষ্ক্রিয় থাকলেও দলের মধ্যে ছিল গ্রুপিংয়ের রাজনীতি যা অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আরো প্রকট ও দৃশ্যমান হয়। ইতোপূর্বেও বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মসূচি আলাদা আলাদা পালন করতেন আহবায়ক সাহেদ আহম্মেদ ও সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুনের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ এবং সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার পারভেজের গ্রুপ। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, তার মুক্তির দাবিতে মিছিল ও সুস্থতা কামনায় দোয়া থেকে শুরু করে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ, কেন্দ্রীয় কমিটিকে স্বাগত জানানো সব ই করেছেন আলাদা আলাদা। এবছরের রমজান মাসেও দুই গ্রুপকে দেখা যায় আলাদা আলাদা ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে মুখোমুখি অবস্থানে চলে যান তারা। সেদিন ইবি উপাচার্যের কার্যালয়ে তুমুল হট্টগোলের মধ্যেই আহবায়ক সাহেদ আহম্মেদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার পারভেজ। এছাড়াও সেদিন তিনি ইবি উপাচার্য ড. নকীব নসরুল্লাহকে ছাত্রদলের দুইটি অংশ মেইনটেইনের কথা উল্লেখ করেন।

ছাত্রদলের মতো একটা বৃহত্তর সংগঠন এভাবে চলতে পারে না বলে মত ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। আর অন্যান্য সংগঠনের সাথে রাজনীতির ময়দানে টিকে থাকতে হলে সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করার পক্ষে জোর দেন সাবেক নেতারা। দ্রুতই নিয়মিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠনের দাবি তাদের।

শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত কমিটি হওয়া উচিত। এতে তরুণরা উৎসাহিত হয়, নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। যারা এই কমিটিতে স্থান পায় না তারা নিজ এলাকায় নিজেকে তুলে ধরতে পারে। তবে কমিটি কবে হবে এবিষয়ে জবাব দিবে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।
আর নিয়মিত ছাত্রদের দিয়েই ছাত্রসংগঠন গুলোর কমিটি হওয়া উচিত উল্লেখ করে ইবি ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রাশেদ বলেন, ফ্যাসিজমের সময় ছাত্রদলের কর্মীরা হলে থাকতে পারেনি, নিয়মিত কার্যক্রম করতে পারেনি। এখন যেহেতু ক্যাম্পাসে সহাবস্থান আছে, আশাকরি নিয়মিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে দ্রুতই নতুন কমিটি হবে। আমাদের জায়গা থেকে কোথাও বলার সুযোগ থাকলে আমরা এব্যাপারে বলবো।

সার্বিক বিষয়ে প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেছেন শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক সাহেদ আহম্মেদ। ইবি ছাত্রদলের সাংগঠনিক অবস্থা সন্তোষজনক উল্লেখ করে তিনি জানান, ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে কেউ নিষ্ক্রিয় থাকলেও সংগঠনের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে না। দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর প্রতিকূল সময় অতিক্রম করলেও এখন আমাদের কর্মকাণ্ড গতিশীল হয়েছে, নতুন শিক্ষার্থীরা যুক্ত হচ্ছেন, ইতোমধ্যে প্রায় ৪৫০টি সদস্য ফরম বিতরণ করেছি। সামনে একটি স্বচ্ছ, মেধাভিত্তিক ও ক্লিন ইমেজের নেতৃত্বদের নিয়ে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলমান, যেখানে নিয়মিত ও অভিজ্ঞ শিক্ষার্থীরাই স্থান পাবে। একটি শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ইবি ছাত্রদল রাজনীতি করে যাচ্ছে।

এদিকে আহবায়ক কমিটি গঠনের ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে নতুন কমিটি গঠনের কোনো নির্দেশনা কিংবা নির্দিষ্ট সময়সূচি জানানো হয়নি। জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, সরকারি কলেজ মিলিয়ে দেড় হাজারের বেশি কমিটি করেছি; আগামী ২ মাসে আরো ১০০০ কমিটি করা হবে। ছাত্রদলের প্রতিটি কমিটি দ্রুততার সাথে করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিও সেই পরিকল্পনার অংশ। আমাদের সদস্য সংগ্রহ চলছে, পাশাপাশি আমরা নেতৃত্ব বাছাই করছি। খুব দ্রুতই ইবি ছাত্রদলের নতুন কমিটি করা হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সন্ধ্যা থেকে বন্ধ থাকবে মেট্রো রেলের ঢাবি স্টেশন

আহবায়ক কমিটিতে চার বছর পার ইবি ছাত্রদলের

আপডেট সময় : ০৩:৪৫:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার চার বছর পূর্তি হয়েছে। ২০২১ সালের ১৬ জুন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ৩১ সদস্যের তিন মাস মেয়াদি আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হলেও দীর্ঘ চারটি বছর পেরিয়ে গেলেও বিভিন্ন কারণে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করতে পারেননি তারা। এতে সাংগঠনিক নিষ্ক্রিয়তার পাশাপাশি প্রতিযোগিতার রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়ছে ছাত্রদল। তবে অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বেশকিছু শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রম হাতে নিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে ছাত্রদল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালে লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের সাহেদ আহম্মেদকে আহবায়ক এবং ইংরেজি বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের মাসুদ রুমী মিথুনকে সদস্য সচিব করে করে আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল। তবে কমিটি ঘোষণার পরপরই সংবাদ সম্মেলন করে পদ পাওয়া ১২ জন সদস্য দলীয় নীতিমালা না মেনে বিবাহিত, অছাত্রদের পদ দেয়ার অভিযোগ তুলে কমিটি প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে আহবায়ক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ, আহসান হাবীব, সবুজ হোসাইন ও সদস্য সাব্বির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের হস্তক্ষেপে বিষয়টির সমাধান হয়। তবে একাংশের বিরোধীতার মুখে কমিটি টিকে গেলেও সাংগঠনিক কার্যক্রমে দেখা যায় স্থবিরতা।

আওয়ামী শাসনামলে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে না পারলেও কেন্দ্র ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করার চেষ্টা করেছে ইবি ছাত্রদল। দেশের বিভিন্ন স্থানের নেতাকর্মীদের উপর হামলা মামলা, পুলিশি হয়রানি ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করলেও তা ছিলো ক্যাম্পাসের বাইরে থানা গেট থেকে পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া বাজার পর্যন্ত। এতে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা ছাত্রদলের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে খুব কমই অবগত হতে পারতেন। তবে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে গতি ফিরতে থাকে ইবি ছাত্রদলের কর্মসূচীতে। কেন্দ্র ঘোষিত বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি, জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন ছাড়াও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যা এবং ঢাবির ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যার প্রতিবাদে লাগাতার কর্মসূচি প্রাণ ফিরিয়ে আনে ইবি ছাত্রদলের রাজনীতিতে। পাশাপাশি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় আগত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য হেল্প বুথ স্থাপন, সবার মাঝে পানি, কলম, নাস্তা, ওষুধ বিতরণ করে এবং পরীক্ষা শেষে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচী পালন করে প্রশংসা কুড়িয়েছে ছাত্রদল। সর্বশেষ, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে দীর্ঘ ২২ বছর পরে সদস্য ফরম বিতরণ করে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে ইবি ছাত্রদল।

তবে, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারলেও সাংগঠনিকভাবে এখনো কিছুটা পিছিয়ে ইবি ছাত্রদল। দীর্ঘ চার বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় বহু নেতাকর্মী একদিকে যেমন সাংগঠনিক পরিচয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তেমনি নতুন নেতৃত্ব তৈরির বিষয়টিও পিছিয়ে যাচ্ছে। দলের দুঃসময়ে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটির সিংহভাগ নেতাই ছিলেন কার্যত নিষ্ক্রিয়। পদ পাওয়ার পরেও অনেকেই বিবাহ করে সাংসারিক জীবনে প্রবেশ করেছেন, জীবিকার তাগিদে রাজনীতি ছেড়ে বেছে নিয়েছেন চাকরিজীবন। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দলের সুসময় ফেরার সাথে সাথে নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীদের কয়েকজনকে আবারো ক্যাম্পাসের কর্মসূচিতে দেখা গেলেও তার সংখ্যা খুবই কম৷ এছাড়া, বেশ কয়েকজন নেতাকে চেনেনই না বলে অভিযোগ ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। তারা আদৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কিনা বা জীবনে কোনদিন ছাত্রদলের রাজনীতি করেছেন কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কমিটির নেতারা।

এদিকে, ৩১ সদস্যের কমিটির অর্ধেকের বেশি নেতা দলের দুঃসময়ে নিষ্ক্রিয় থাকলেও দলের মধ্যে ছিল গ্রুপিংয়ের রাজনীতি যা অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আরো প্রকট ও দৃশ্যমান হয়। ইতোপূর্বেও বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মসূচি আলাদা আলাদা পালন করতেন আহবায়ক সাহেদ আহম্মেদ ও সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুনের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ এবং সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার পারভেজের গ্রুপ। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, তার মুক্তির দাবিতে মিছিল ও সুস্থতা কামনায় দোয়া থেকে শুরু করে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ, কেন্দ্রীয় কমিটিকে স্বাগত জানানো সব ই করেছেন আলাদা আলাদা। এবছরের রমজান মাসেও দুই গ্রুপকে দেখা যায় আলাদা আলাদা ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে মুখোমুখি অবস্থানে চলে যান তারা। সেদিন ইবি উপাচার্যের কার্যালয়ে তুমুল হট্টগোলের মধ্যেই আহবায়ক সাহেদ আহম্মেদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার পারভেজ। এছাড়াও সেদিন তিনি ইবি উপাচার্য ড. নকীব নসরুল্লাহকে ছাত্রদলের দুইটি অংশ মেইনটেইনের কথা উল্লেখ করেন।

ছাত্রদলের মতো একটা বৃহত্তর সংগঠন এভাবে চলতে পারে না বলে মত ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। আর অন্যান্য সংগঠনের সাথে রাজনীতির ময়দানে টিকে থাকতে হলে সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করার পক্ষে জোর দেন সাবেক নেতারা। দ্রুতই নিয়মিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠনের দাবি তাদের।

শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত কমিটি হওয়া উচিত। এতে তরুণরা উৎসাহিত হয়, নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। যারা এই কমিটিতে স্থান পায় না তারা নিজ এলাকায় নিজেকে তুলে ধরতে পারে। তবে কমিটি কবে হবে এবিষয়ে জবাব দিবে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।
আর নিয়মিত ছাত্রদের দিয়েই ছাত্রসংগঠন গুলোর কমিটি হওয়া উচিত উল্লেখ করে ইবি ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রাশেদ বলেন, ফ্যাসিজমের সময় ছাত্রদলের কর্মীরা হলে থাকতে পারেনি, নিয়মিত কার্যক্রম করতে পারেনি। এখন যেহেতু ক্যাম্পাসে সহাবস্থান আছে, আশাকরি নিয়মিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে দ্রুতই নতুন কমিটি হবে। আমাদের জায়গা থেকে কোথাও বলার সুযোগ থাকলে আমরা এব্যাপারে বলবো।

সার্বিক বিষয়ে প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেছেন শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক সাহেদ আহম্মেদ। ইবি ছাত্রদলের সাংগঠনিক অবস্থা সন্তোষজনক উল্লেখ করে তিনি জানান, ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে কেউ নিষ্ক্রিয় থাকলেও সংগঠনের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে না। দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর প্রতিকূল সময় অতিক্রম করলেও এখন আমাদের কর্মকাণ্ড গতিশীল হয়েছে, নতুন শিক্ষার্থীরা যুক্ত হচ্ছেন, ইতোমধ্যে প্রায় ৪৫০টি সদস্য ফরম বিতরণ করেছি। সামনে একটি স্বচ্ছ, মেধাভিত্তিক ও ক্লিন ইমেজের নেতৃত্বদের নিয়ে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলমান, যেখানে নিয়মিত ও অভিজ্ঞ শিক্ষার্থীরাই স্থান পাবে। একটি শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ইবি ছাত্রদল রাজনীতি করে যাচ্ছে।

এদিকে আহবায়ক কমিটি গঠনের ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে নতুন কমিটি গঠনের কোনো নির্দেশনা কিংবা নির্দিষ্ট সময়সূচি জানানো হয়নি। জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, সরকারি কলেজ মিলিয়ে দেড় হাজারের বেশি কমিটি করেছি; আগামী ২ মাসে আরো ১০০০ কমিটি করা হবে। ছাত্রদলের প্রতিটি কমিটি দ্রুততার সাথে করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিও সেই পরিকল্পনার অংশ। আমাদের সদস্য সংগ্রহ চলছে, পাশাপাশি আমরা নেতৃত্ব বাছাই করছি। খুব দ্রুতই ইবি ছাত্রদলের নতুন কমিটি করা হবে।