০১:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাদক কারবারিদের নজর এখন অনলাইন প্লাটফর্ম

  • বেচাকেনায় ব্যবহার হচ্ছে ভাইবার-থ্রিমারসহ অন্যান্য অ্যাপ
  • ব্যবহার হচ্ছে স্কুল ব্যাগ, টার্গেটে নারী ও শিশুরা
  • বাস চালকের পায়ের নিচে ইয়াবার চালান, বের করল বিজিবি’র ডগ স্কোয়াড

দেশের পটপরিবর্তনে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সরকার ব্যস্ত সরকারি-বেসরকারি আন্দোলন দমানো ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপক্ষে নির্বাচনের মাঠ তৈরিতে। একই সঙ্গে বিভিন্ন দপ্তরে সংস্কার কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। অপরদিকে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দও দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপে রাখছে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময় থেকে মাদক কাররারিরা থেমে নেই। নানা কৌশলে দেশের সীমান্ত এলাকা দিয়ে ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকের চালান সংগ্রহ করে স্কুল ব্যাগে ভরে নারী ও শিশুদের দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত অভিযানেও থামছে না মাদক বেচাকেনা। প্রতিদিনই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক সেবন ও বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে। গত ২৪ জুন কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত থেকে ইয়াবার বড় একটি চালান নিয়ে পায়রা সার্ভিস পরিবহনের চালক তার পায়ের নিচে লুকিয়ে কক্সবাজার আনার পথে ধরা পড়ে বিজিবি’র হাতে। টেকনাফ-উখিয়া-কক্সবাজার মহাসড়কের হোয়াইক্যং এলাকায় চেকপোস্ট বসায় বিজিবি। এরপর বিজিবি কে-৯ ডগ স্কোয়াডের সদস্য পুরো বাস তল্লাশি শেষে চালকের পায়ের সামনে গিয়ে সিগন্যাল দিতে থাকে। পরে বিজিবি সদস্যরা চালকের পায়ের নিচে থাকা কালো পলিথিন মোড়ানো কয়েকটি প্যাকেট থেকে ৯ হাজার ৮০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে। এ সময় চালক শাকের মিয়া ও হেলাপার আবদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে থানায় সোপর্দ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে খুচরা মাদক কারবারিরা ধরা পড়লেও মাদকের গডফাদাররা সবসময় আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় ঝামেলা এড়াতে মাদক কারবারিদের নজর পড়েছে এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। সামাজিক যোগাযোগের নিরাপদ মাধ্যমকে ব্যবহার করছে দেশের মাদক কারবারিরা। খুচরা কেনাবেচা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে এখন টেলিগ্রাম, সিগনাল, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার ও থ্রিমার মতো এনক্রিপটেড অ্যাপ ব্যবহার করছে কারবারিরা। সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক মাদক ক্রয়-বিক্রয় বন্ধে শুধু গ্রেপ্তারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, সামাজিকভাবে কাউন্সেলিং করে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অভিভাবকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। তবে পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, মাদকদ্রব্য নির্মূলে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা। তবে এ বিষয়ে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৭ জুন গোপন সংবাদে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুধাংশু শেখর হালদারের নেতৃত্বে এসআই মো. জামাল হোসেনসহ সঙ্গীয় ফোর্স চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানাধীন বাঁশখালী পৌরসভা থানার মূল গেইটের সামনে চেকপোস্ট বসায়। এ সময় সন্দেহভাজন একটি মোটরসাইকেল চেকপোস্ট অতিক্রমকালে তা থামিয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তখন মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে ৬ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরবর্তীতে বাঁশখালী থানায় মামলা করে পুলিশ।
একই দিন মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় গোপন সংবাদে সিরাজদিখান থানার এসআই মাসুদ রানার নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্স পশ্চিম আবিরপাড়ার মাদরাসাতুল রহ্মানিয়া ইসলামিয়া লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানার সামনের রাস্তায় অভিযান চালায়। এ সময় অভিযুক্ত কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী মো. জাহিদ শেখকে গ্রেপ্তার করে তার দেহ তল্লাশি চালিয়ে ১০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মামলা রুজু করা হয়।
এর আগে গত ২৪ জুন টেকনাফ-উখিয়া-কক্সবাজার মহাসড়কের বিজিবি হোয়াইক্যং ব্যাটালিয়নের একটি দল চেকপোস্ট বসিয়ে যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য পরিবহন ও সন্দেহভাজন যাত্রীওদের দেহ তল্লাশি শুরু করে। একপর্যায়ে পায়রা সার্ভিস নামের যাত্রীবাহী একটি বাস চেকপোস্টে পৌঁছালে বিজিবি তা থামিয়ে তল্লাশি শুরু করে। বিজিবি’র চৌকস ডগ স্কোয়াডের কে-৯ সদস্য চালকের আসনে গিয়ে পায়ের নিচে কিছু বস্তু দেখে সিগন্যাল দেয়। তখন বিজিবি’র সদস্যরা সেখান থেকে কালো পলিথিন মোড়ানো পোটলা খুলে ৯ হাজার ৮০০ পিস ইয়াবা উদ্ধারসহ চালক শাকের মিয়া ও হেলপার আবদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।
রামপুরার মাদককারবারি সুমি বলেন, ঢাকায় এখন ইয়াবা সর্বত্রই, বিশেষ করে এটির ডিলার আমরা যারা ছোট ডিলার আছি। কাস্টমাররা ফোন করলেই গন্তব্যে দিয়ে আসি। টাকা বাড়িয়ে দেয়। পুলিশের তেমন কোনো ঝামেলা থাকে না। তিনি বলেন, আমি যাদের চিনি এবং আমার যারা পরিচিত তারা যখন ইয়াবা চায়, তখন তাদের এটি দিয়ে আসি। ঝামেলা এড়াতে অপরিচিত কারও কাছে ইয়াবা পৌঁছাই না।
এদিকে গত ১৯ জুন রাজধানীর শ্যামপুর এলাকা থেকে পৃথক অভিযান পরিচালনা করে ২৫৫৬ পিস ইয়াবাসহ দুই নারী তামান্না আক্তার ও ফরিদা বেগমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ডিএমপির শ্যামপুর থানা পুলিশ জানায়, ধোলাইপাড় এলাকা থেকে তামান্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ধোলাইপাড় মোড়ের এক দোকানের সামনে থেকে ফরিদাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা সেবন ও বিক্রি করে আসছিল। পুলিশ যাতে তাদের ধরতে না পারে সেজন্য অপরাধীরা হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে মাদক বিক্রি করতে থাকে। পরে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
একই দিন দিনাজপুর সদর উপজেলার মাশিমপুর এলাকায় ১ হাজার ৪০০ পিস ইয়াবাসহ শিউলি মনি নামের এক নারীকে আটক করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. রাকিবুজ্জামান জানান, তাকে ধরতে একটু কষ্ট হয়, কারণ সে ইয়াবা ব্যবসায়ের কাজে ইমো ও টেলিগ্রাম ব্যবহার করত। মোবাইল নম্বর কম ব্যবহার করত। কাস্টমারদের বাসায় যোগাযোগ করে ইয়াবা বিক্রি করত এবং নিজেও সেবন করত। তল্লাশির সময় তার বাড়ি থেকে ১ হাজার ৪০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবে ধরার পর শিউলি মনি তাদের জানিয়েছে, এক বান্ধবীর খপ্পরে পড়ে সে ইয়াবায় আসক্ত হয় এবং পরে ব্যবসায়ে জড়িয়ে পড়ে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় প্রায় সব ধরনের মাদক মিলছে অবাধে। একসময় স্পটভিত্তিক মাদক বিক্রি হলেও এখন ছড়িয়ে গেছে সবখানে।
পুলিশের তথ্য বলছে, ইয়াবা ছোট হওয়ায় এটি বহনে বেশ আরামদায়ক মনে করে। এ জন্য তারা ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যান্য সামাজিক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনের মাধ্যমে ইয়াবা ক্রয়-বিক্রয় করছে মাদক কারবারিরা। ঘরে বসে অর্ডার করলেই পৌঁছে যাচ্ছে পছন্দের মাদক। গোয়েন্দা তথ্য বলছে, বর্তমানে স্মার্টনেস ধরে রাখার জন্য নারীরাই বেশি ইয়াবায় আসক্ত হচ্ছে।
এসব নিয়ে অভিজ্ঞ মহল বলছেন, বাংলাদেশে এখন পাড়া-মহল্লা ছাপিয়ে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে ইয়াবার মতো ভয়াবহ মাদক। এটি সেবনকারীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় মাদক। এই মাদকে বেশির ভাগ উঠতি বয়সি যুবক-যুবতীরা আসক্ত। মাদক বিষয়ে জনসচেতনতা গড়ে তোলা ও মাদকের অপব্যবহারবিরোধী অভিযান চলমান থাকলেও কিছুতেই থামছে না ইয়াবা সেবন। আইনে আছে, মাদক বিক্রি করা বা এ কাজে সহযোগিতা দণ্ডনীয় অপরাধ। অনেকে শাস্তি পাচ্ছেন এ মামলায়, অনেকেই বিচারাধীন। এরপরও মাদকের চাহিদা বেড়েই চলেছে বলে মনে করে সচেতন মহল।
গোয়েন্দা সংশ্লিষ্টরা জানান, ইয়াবা সেবনে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। তাছাড়া ইয়াবা সরবরাহের কাজে আগে পুরুষেরা বেশি ব্যবহার হতো, এখন শিশু ও নারীদের ব্যবহার করছে মাদক কারবারিরা। তাছাড়া অনেক উঠতি বয়সের নারীরা স্মার্টনেস ধরে রাখতে ইয়াবায় আসক্ত হচ্ছে।
এসব নিয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা জানান, সুরক্ষিত এসব অ্যাপ নজরদারির মতো কোনো প্রযুক্তি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নেই। বিশ্বে এখনও তেমন কোনো প্রযুক্তি তৈরি হয়নি। এ কারণে অ্যাপে গ্রুপ খুলে মাদক কারবারে কারা জড়িত, সে বিষয়ে একপ্রকার অন্ধকারেই দেখছে মাদক নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে করে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে তারা।
সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এনক্রিপটেড ম্যাসেজিং অ্যাপগুলো অত্যন্ত সুরক্ষিত। এতে সরাসরি কথোপকথনের সময় তথ্য বা ডেটা একটি সংকেতে বা কোডে রূপান্তর হয়ে আদান-প্রদান হয়। যারা তথ্য আদান-প্রদান করে শুধু তারাই বুঝতে পারে। মাঝখানে কেউ যদি প্রবেশও করে, তাহলে হিজিবিজি লেখা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায় না। কিছু বোঝার উপায়ও থাকে না।
পুলিশ সদর দপ্তর, র‌্যাব সদর দপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের গত ৬ মাসে দুই শতাধিক নারীকে ইয়াবা সরবরাহকালে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ী।
ডিএমপির একটি তথ্য মতে, ২০২৪ সালে ডিএমপির মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় ১৭ হাজারের ও বেশি মাদক কারবারি ও সেবনকারীকে। এর মধ্যে ইয়াবার মামলা বেশি এবং নারীর সংখ্যাও বেশি। ডিএমপি বলছে, এসব ঘটনায় বেশির ভাগ যুবতী নারী ও মহিলারা জড়িত আছে। ডিএমপির তথ্য বলছে, শুধু রাজধানীতেই প্রতিদিন মাদক মামলা হয় শতাধিক।
এদিকে কারাগার সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কারাগারে অন্য অপরাধীর চেয়ে মাদক সেবন ও কারবারির সংখ্যা বেশি। কারাগারে প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ কয়েদিই মাদক মামলার আসামি।
পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সারা দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ লাখেরও বেশি। তিনি বলেন, কিন্তু সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলে নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে মাত্র ৭ হাজারের মতো।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, শুধু ইয়াবা নয়, প্রতিটা মাদক কারবারি কৌশল পাল্টাচ্ছে। তবে এখন ইয়াবা সেবনের চাহিদা বাড়ছে বললে ভুল হবে না। এটি ছোট হওয়ায় অপরাধীরা প্রযুক্তির সুযোগ নিচ্ছে। এসব কারণে তাদের ধরতে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে গোয়েন্দাদের। তবে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বেশির ভাগই যুবক-যুবতী।
তিনি বলেন, মাদক কারবারিরা একে অন্যকে বিশ্বাস করে না। তারা এনক্রিপটেড ম্যাসেজিং অ্যাপে নিজেদের মধ্যে যেসব বার্তা আদান-প্রদান করে, সেগুলো মুছে দিচ্ছে। তাই কোনো মাদক কারবারি গ্রেপ্তার হলেও অন্যদের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। যে সিম ব্যবহার করে অ্যাপ খোলা হয়, সেটাও ফেলে দেয়। যে নামে ওই সিম তোলা হয়, তা-ও ভুয়া।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, জুলাই-আগস্টে যে বিপ্লব হয়েছে, সেই বিপ্লবের বিপরীত ভূমিকার কারণে পুলিশের মনোবল ভেঙে গেছে এবং তাদের নৈতিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীরা। মাদক ক্রয়-বিক্রয় বন্ধে শুধু গ্রেপ্তারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, সামাজিকভাবে কাউন্সেলিং করে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অভিভাবকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলছেন, মাদকদ্রব্য নির্মূলে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা। তবে এ বিষয়ে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

মাদক কারবারিদের নজর এখন অনলাইন প্লাটফর্ম

আপডেট সময় : ০৭:৩৫:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
  • বেচাকেনায় ব্যবহার হচ্ছে ভাইবার-থ্রিমারসহ অন্যান্য অ্যাপ
  • ব্যবহার হচ্ছে স্কুল ব্যাগ, টার্গেটে নারী ও শিশুরা
  • বাস চালকের পায়ের নিচে ইয়াবার চালান, বের করল বিজিবি’র ডগ স্কোয়াড

দেশের পটপরিবর্তনে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সরকার ব্যস্ত সরকারি-বেসরকারি আন্দোলন দমানো ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপক্ষে নির্বাচনের মাঠ তৈরিতে। একই সঙ্গে বিভিন্ন দপ্তরে সংস্কার কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। অপরদিকে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দও দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপে রাখছে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময় থেকে মাদক কাররারিরা থেমে নেই। নানা কৌশলে দেশের সীমান্ত এলাকা দিয়ে ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকের চালান সংগ্রহ করে স্কুল ব্যাগে ভরে নারী ও শিশুদের দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত অভিযানেও থামছে না মাদক বেচাকেনা। প্রতিদিনই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক সেবন ও বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে। গত ২৪ জুন কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত থেকে ইয়াবার বড় একটি চালান নিয়ে পায়রা সার্ভিস পরিবহনের চালক তার পায়ের নিচে লুকিয়ে কক্সবাজার আনার পথে ধরা পড়ে বিজিবি’র হাতে। টেকনাফ-উখিয়া-কক্সবাজার মহাসড়কের হোয়াইক্যং এলাকায় চেকপোস্ট বসায় বিজিবি। এরপর বিজিবি কে-৯ ডগ স্কোয়াডের সদস্য পুরো বাস তল্লাশি শেষে চালকের পায়ের সামনে গিয়ে সিগন্যাল দিতে থাকে। পরে বিজিবি সদস্যরা চালকের পায়ের নিচে থাকা কালো পলিথিন মোড়ানো কয়েকটি প্যাকেট থেকে ৯ হাজার ৮০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে। এ সময় চালক শাকের মিয়া ও হেলাপার আবদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে থানায় সোপর্দ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে খুচরা মাদক কারবারিরা ধরা পড়লেও মাদকের গডফাদাররা সবসময় আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় ঝামেলা এড়াতে মাদক কারবারিদের নজর পড়েছে এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। সামাজিক যোগাযোগের নিরাপদ মাধ্যমকে ব্যবহার করছে দেশের মাদক কারবারিরা। খুচরা কেনাবেচা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে এখন টেলিগ্রাম, সিগনাল, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার ও থ্রিমার মতো এনক্রিপটেড অ্যাপ ব্যবহার করছে কারবারিরা। সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক মাদক ক্রয়-বিক্রয় বন্ধে শুধু গ্রেপ্তারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, সামাজিকভাবে কাউন্সেলিং করে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অভিভাবকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। তবে পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, মাদকদ্রব্য নির্মূলে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা। তবে এ বিষয়ে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৭ জুন গোপন সংবাদে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুধাংশু শেখর হালদারের নেতৃত্বে এসআই মো. জামাল হোসেনসহ সঙ্গীয় ফোর্স চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানাধীন বাঁশখালী পৌরসভা থানার মূল গেইটের সামনে চেকপোস্ট বসায়। এ সময় সন্দেহভাজন একটি মোটরসাইকেল চেকপোস্ট অতিক্রমকালে তা থামিয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তখন মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে ৬ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরবর্তীতে বাঁশখালী থানায় মামলা করে পুলিশ।
একই দিন মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় গোপন সংবাদে সিরাজদিখান থানার এসআই মাসুদ রানার নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্স পশ্চিম আবিরপাড়ার মাদরাসাতুল রহ্মানিয়া ইসলামিয়া লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানার সামনের রাস্তায় অভিযান চালায়। এ সময় অভিযুক্ত কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী মো. জাহিদ শেখকে গ্রেপ্তার করে তার দেহ তল্লাশি চালিয়ে ১০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মামলা রুজু করা হয়।
এর আগে গত ২৪ জুন টেকনাফ-উখিয়া-কক্সবাজার মহাসড়কের বিজিবি হোয়াইক্যং ব্যাটালিয়নের একটি দল চেকপোস্ট বসিয়ে যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য পরিবহন ও সন্দেহভাজন যাত্রীওদের দেহ তল্লাশি শুরু করে। একপর্যায়ে পায়রা সার্ভিস নামের যাত্রীবাহী একটি বাস চেকপোস্টে পৌঁছালে বিজিবি তা থামিয়ে তল্লাশি শুরু করে। বিজিবি’র চৌকস ডগ স্কোয়াডের কে-৯ সদস্য চালকের আসনে গিয়ে পায়ের নিচে কিছু বস্তু দেখে সিগন্যাল দেয়। তখন বিজিবি’র সদস্যরা সেখান থেকে কালো পলিথিন মোড়ানো পোটলা খুলে ৯ হাজার ৮০০ পিস ইয়াবা উদ্ধারসহ চালক শাকের মিয়া ও হেলপার আবদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।
রামপুরার মাদককারবারি সুমি বলেন, ঢাকায় এখন ইয়াবা সর্বত্রই, বিশেষ করে এটির ডিলার আমরা যারা ছোট ডিলার আছি। কাস্টমাররা ফোন করলেই গন্তব্যে দিয়ে আসি। টাকা বাড়িয়ে দেয়। পুলিশের তেমন কোনো ঝামেলা থাকে না। তিনি বলেন, আমি যাদের চিনি এবং আমার যারা পরিচিত তারা যখন ইয়াবা চায়, তখন তাদের এটি দিয়ে আসি। ঝামেলা এড়াতে অপরিচিত কারও কাছে ইয়াবা পৌঁছাই না।
এদিকে গত ১৯ জুন রাজধানীর শ্যামপুর এলাকা থেকে পৃথক অভিযান পরিচালনা করে ২৫৫৬ পিস ইয়াবাসহ দুই নারী তামান্না আক্তার ও ফরিদা বেগমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ডিএমপির শ্যামপুর থানা পুলিশ জানায়, ধোলাইপাড় এলাকা থেকে তামান্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ধোলাইপাড় মোড়ের এক দোকানের সামনে থেকে ফরিদাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা সেবন ও বিক্রি করে আসছিল। পুলিশ যাতে তাদের ধরতে না পারে সেজন্য অপরাধীরা হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে মাদক বিক্রি করতে থাকে। পরে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
একই দিন দিনাজপুর সদর উপজেলার মাশিমপুর এলাকায় ১ হাজার ৪০০ পিস ইয়াবাসহ শিউলি মনি নামের এক নারীকে আটক করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. রাকিবুজ্জামান জানান, তাকে ধরতে একটু কষ্ট হয়, কারণ সে ইয়াবা ব্যবসায়ের কাজে ইমো ও টেলিগ্রাম ব্যবহার করত। মোবাইল নম্বর কম ব্যবহার করত। কাস্টমারদের বাসায় যোগাযোগ করে ইয়াবা বিক্রি করত এবং নিজেও সেবন করত। তল্লাশির সময় তার বাড়ি থেকে ১ হাজার ৪০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবে ধরার পর শিউলি মনি তাদের জানিয়েছে, এক বান্ধবীর খপ্পরে পড়ে সে ইয়াবায় আসক্ত হয় এবং পরে ব্যবসায়ে জড়িয়ে পড়ে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় প্রায় সব ধরনের মাদক মিলছে অবাধে। একসময় স্পটভিত্তিক মাদক বিক্রি হলেও এখন ছড়িয়ে গেছে সবখানে।
পুলিশের তথ্য বলছে, ইয়াবা ছোট হওয়ায় এটি বহনে বেশ আরামদায়ক মনে করে। এ জন্য তারা ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যান্য সামাজিক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনের মাধ্যমে ইয়াবা ক্রয়-বিক্রয় করছে মাদক কারবারিরা। ঘরে বসে অর্ডার করলেই পৌঁছে যাচ্ছে পছন্দের মাদক। গোয়েন্দা তথ্য বলছে, বর্তমানে স্মার্টনেস ধরে রাখার জন্য নারীরাই বেশি ইয়াবায় আসক্ত হচ্ছে।
এসব নিয়ে অভিজ্ঞ মহল বলছেন, বাংলাদেশে এখন পাড়া-মহল্লা ছাপিয়ে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে ইয়াবার মতো ভয়াবহ মাদক। এটি সেবনকারীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় মাদক। এই মাদকে বেশির ভাগ উঠতি বয়সি যুবক-যুবতীরা আসক্ত। মাদক বিষয়ে জনসচেতনতা গড়ে তোলা ও মাদকের অপব্যবহারবিরোধী অভিযান চলমান থাকলেও কিছুতেই থামছে না ইয়াবা সেবন। আইনে আছে, মাদক বিক্রি করা বা এ কাজে সহযোগিতা দণ্ডনীয় অপরাধ। অনেকে শাস্তি পাচ্ছেন এ মামলায়, অনেকেই বিচারাধীন। এরপরও মাদকের চাহিদা বেড়েই চলেছে বলে মনে করে সচেতন মহল।
গোয়েন্দা সংশ্লিষ্টরা জানান, ইয়াবা সেবনে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। তাছাড়া ইয়াবা সরবরাহের কাজে আগে পুরুষেরা বেশি ব্যবহার হতো, এখন শিশু ও নারীদের ব্যবহার করছে মাদক কারবারিরা। তাছাড়া অনেক উঠতি বয়সের নারীরা স্মার্টনেস ধরে রাখতে ইয়াবায় আসক্ত হচ্ছে।
এসব নিয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা জানান, সুরক্ষিত এসব অ্যাপ নজরদারির মতো কোনো প্রযুক্তি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নেই। বিশ্বে এখনও তেমন কোনো প্রযুক্তি তৈরি হয়নি। এ কারণে অ্যাপে গ্রুপ খুলে মাদক কারবারে কারা জড়িত, সে বিষয়ে একপ্রকার অন্ধকারেই দেখছে মাদক নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে করে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে তারা।
সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এনক্রিপটেড ম্যাসেজিং অ্যাপগুলো অত্যন্ত সুরক্ষিত। এতে সরাসরি কথোপকথনের সময় তথ্য বা ডেটা একটি সংকেতে বা কোডে রূপান্তর হয়ে আদান-প্রদান হয়। যারা তথ্য আদান-প্রদান করে শুধু তারাই বুঝতে পারে। মাঝখানে কেউ যদি প্রবেশও করে, তাহলে হিজিবিজি লেখা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায় না। কিছু বোঝার উপায়ও থাকে না।
পুলিশ সদর দপ্তর, র‌্যাব সদর দপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের গত ৬ মাসে দুই শতাধিক নারীকে ইয়াবা সরবরাহকালে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ী।
ডিএমপির একটি তথ্য মতে, ২০২৪ সালে ডিএমপির মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় ১৭ হাজারের ও বেশি মাদক কারবারি ও সেবনকারীকে। এর মধ্যে ইয়াবার মামলা বেশি এবং নারীর সংখ্যাও বেশি। ডিএমপি বলছে, এসব ঘটনায় বেশির ভাগ যুবতী নারী ও মহিলারা জড়িত আছে। ডিএমপির তথ্য বলছে, শুধু রাজধানীতেই প্রতিদিন মাদক মামলা হয় শতাধিক।
এদিকে কারাগার সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কারাগারে অন্য অপরাধীর চেয়ে মাদক সেবন ও কারবারির সংখ্যা বেশি। কারাগারে প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ কয়েদিই মাদক মামলার আসামি।
পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সারা দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ লাখেরও বেশি। তিনি বলেন, কিন্তু সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলে নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে মাত্র ৭ হাজারের মতো।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, শুধু ইয়াবা নয়, প্রতিটা মাদক কারবারি কৌশল পাল্টাচ্ছে। তবে এখন ইয়াবা সেবনের চাহিদা বাড়ছে বললে ভুল হবে না। এটি ছোট হওয়ায় অপরাধীরা প্রযুক্তির সুযোগ নিচ্ছে। এসব কারণে তাদের ধরতে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে গোয়েন্দাদের। তবে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বেশির ভাগই যুবক-যুবতী।
তিনি বলেন, মাদক কারবারিরা একে অন্যকে বিশ্বাস করে না। তারা এনক্রিপটেড ম্যাসেজিং অ্যাপে নিজেদের মধ্যে যেসব বার্তা আদান-প্রদান করে, সেগুলো মুছে দিচ্ছে। তাই কোনো মাদক কারবারি গ্রেপ্তার হলেও অন্যদের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। যে সিম ব্যবহার করে অ্যাপ খোলা হয়, সেটাও ফেলে দেয়। যে নামে ওই সিম তোলা হয়, তা-ও ভুয়া।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, জুলাই-আগস্টে যে বিপ্লব হয়েছে, সেই বিপ্লবের বিপরীত ভূমিকার কারণে পুলিশের মনোবল ভেঙে গেছে এবং তাদের নৈতিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীরা। মাদক ক্রয়-বিক্রয় বন্ধে শুধু গ্রেপ্তারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, সামাজিকভাবে কাউন্সেলিং করে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অভিভাবকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলছেন, মাদকদ্রব্য নির্মূলে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা। তবে এ বিষয়ে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে।