০২:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফলাফল আশানুরূপ না হওয়ায় মিষ্টির দোকানে নেই বিক্রির চাপ

  • সবুজ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৫:২১:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
  • 139

যে কোন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলে খুশিতে মিষ্টমুখ করানো হবে না, তা কী হয়? তবে এবার এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলেও মিষ্টির দোকানে নেই সেই চিরচেনা ভিড়। মনে হচ্ছে কিছুটা ব্যতিক্রম। হ্যাঁ, পাবলিক পরীক্ষার ফল বের হলে সাধারণত মিষ্টিমুখ করার একটা রেওয়াজ দেখা যায়। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী প্রথা যা সাধারণত আনন্দ উদযাপন এবং শুভকামনা জানানোর জন্য করা হয়। বিশেষ করে ভালো ফলাফলের পর এই রীতি বেশি দেখা যায়। তবে আজ ১০ জুলাই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলেও মিষ্টির দোকানে নেই বিক্রির তেমন চাপ।

 

রিফাত রহমান আলভী
‘এখন আর আগের মতো রেজাল্টের আমেজ নেই। করোনার পরে সবকিছুই পাল্টে গেছে। আগে রেজাল্ট ঘোষণা হওয়ার পর থেকে রাত পর্যন্ত মিষ্টির দোকানে ভিড় লেগে থাকত। অভিভাবকরা হাসিমুখে এসে কেজি কেজি মিষ্টি নিয়ে যেত। দোকানিরাও আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে বেশি করে মিষ্টি তৈরি করে রাখতেন। এখন আর তার ছিটেফোঁটাও নেই। রেজাল্টকে ঘিরে যে উৎসবের আমেজ তৈরি হতো সেটি হারিয়ে গেছে বললেও ভুল হবে না।’ আজ দুপুর দুইটাই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এবার রাজধানীর মিষ্টির দোকানগুলোতে সেভাবে বেচা-বিক্রির ধুম নেই। বরং অনেক দোকান ছিল ক্রেতারশূন্য। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাজধানীর বেশ কিছু এলাকার মিষ্টির দোকান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
মিষ্টি বিক্রেতারা বলেছেন, বৈরী আবহাওয়া, পাসের হার কম, ভালো রেজাল্টের হারও কম হওয়ার কারণে এবার মিষ্টি বেচাকেনায় রেজাল্টের আমেজ পড়েনি। একাধিক মিষ্টি ব্যবসায়ীরা জানান, এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন মিষ্টি বিক্রি সাধারণ সময়ের তুলনায় দুই থেকে আড়াইগুণ বেশি হয়। তবে আজ সেটি হয়নি। তারা বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিনও মিষ্টির দোকানে বেচাকিক্রি আগের মতো বাড়ে না। যদিও পয়লা বৈশাখ, পবিত্র ঈদুল ফিতর, এসএসসি ও এইচএসসির ফল প্রকাশের দিনগুলোতে সবচেয়ে বেশি মিষ্টি বিক্রি হতো আগে।

রামপুরা এলাকায় ফুলকলি ও মধুবন জনপ্রিয় মিষ্টির দোকানে বিকেল সাড়ে তিনটায়ও ক্রেতার আনাগোনা চোখে পড়েনি। জানতে চাইলে ফুলকলির ম্যানেজার বলেন, ক্রেতা দেখে বোঝার উপায় নাই যে আজ এসএসসির ফল প্রকাশ হয়েছে। আগেও যেমন টুকটাক বিক্রি হতো, এখনো তেমনই হচ্ছে। রেজাল্টের আমেজ এখন আর মিষ্টির দোকানে পড়ে না।
তবে মুসলিম সুইটসে কিছুটা বেশি ক্রেতা দেখা গেছে। সেখানে কোম্পানির অপারেশনাল ম্যানেজার বলেন, আগের চেয়ে বেশি উৎপাদন করে প্রস্তুতি নিয়েছি। এদিন সাধারণত এক দেড় লাখ টাকা বেশি বিক্রি হয়। তবে তিনি বলেন, আগে রেজাল্টের সময় এখানে লাইন দিয়ে মিষ্টি বিক্রি হয়েছে, এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। বিক্রি কিছুটা বাড়লেও প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। রাজধানীর এসব বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিষ্টির দোকানে ৪৪০ টাকা থেকে ৯৬০ টাকা কেজিতে মিষ্টি বিক্রি হচ্ছে। আদি টাঙ্গাইল মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে যা একটু বিক্রি হতো বৃষ্টির কারণে সেটাও হচ্ছে না। কয়েকদিন ধরেই টানা আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে বেশি মিষ্টি বানানো হয়নি।
এবারের প্রতিবারের মতো আশানুরূপ রেজাল্ট না হওয়ার পেছনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, অংকে অনেকেই ৮০ নিচে নাম্বার পেয়েছে যে কারণে ফলাফল বিপর্যয়।

এদিকে, আয়েশা আক্তার মিথিলার মা স্কুল শিক্ষিকা শিউলী আক্তার জানান, আশানুরূপ সন্তানের রেজাল্ট হয়নি। তার সন্তান একরামুনন্নেসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৪.৫৮ পেয়েছে। জিপিএ-৫ না পাওয়ায় মিথিলার মন খারাপ। কাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট না হওয়ায় আগামীতে ভর্তিযুদ্ধে তাকে পিছিয়ে পড়তে হবে এ চিন্তায় মা-মেয়ের চেহারায় কষ্টের ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। আশ-পাশের অনেক শিক্ষার্থীইর আশানুরূপ রেজাল্ট হয়নি। মিষ্টির দোকানে বেচা-বিক্রির পেছনে অনেকের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণাই পাওয়া গেল। মানে জিপি-৫ পেলে বুক ফুলিয়ে যেভাবে মিষ্টির দোকানে দাম যাই হোক মিষ্টি কিনে তবেই বাসায় ফেরেন এবার কিছুটা হলেও ব্যতিক্রম।
তবে এ পরিস্থিতিতেও অনেকেই রেজাল্টের খুশিতে মিষ্টি কিনতে এসেছেন। শীলা আক্তার নামের এক নারী বলেন, সন্তানের রেজাল্ট শুনে অফিস ছুটি নিয়ে বাসায় ফিরছি। মিষ্টি না নিয়ে গেলে কী হয়! বাসা ও আশপাশে প্রতিবেশীদের জন্য মিষ্টি নিচ্ছি। পরে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পাঠাবো।
এসআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

ফলাফল আশানুরূপ না হওয়ায় মিষ্টির দোকানে নেই বিক্রির চাপ

আপডেট সময় : ০৫:২১:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

যে কোন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলে খুশিতে মিষ্টমুখ করানো হবে না, তা কী হয়? তবে এবার এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলেও মিষ্টির দোকানে নেই সেই চিরচেনা ভিড়। মনে হচ্ছে কিছুটা ব্যতিক্রম। হ্যাঁ, পাবলিক পরীক্ষার ফল বের হলে সাধারণত মিষ্টিমুখ করার একটা রেওয়াজ দেখা যায়। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী প্রথা যা সাধারণত আনন্দ উদযাপন এবং শুভকামনা জানানোর জন্য করা হয়। বিশেষ করে ভালো ফলাফলের পর এই রীতি বেশি দেখা যায়। তবে আজ ১০ জুলাই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলেও মিষ্টির দোকানে নেই বিক্রির তেমন চাপ।

 

রিফাত রহমান আলভী
‘এখন আর আগের মতো রেজাল্টের আমেজ নেই। করোনার পরে সবকিছুই পাল্টে গেছে। আগে রেজাল্ট ঘোষণা হওয়ার পর থেকে রাত পর্যন্ত মিষ্টির দোকানে ভিড় লেগে থাকত। অভিভাবকরা হাসিমুখে এসে কেজি কেজি মিষ্টি নিয়ে যেত। দোকানিরাও আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে বেশি করে মিষ্টি তৈরি করে রাখতেন। এখন আর তার ছিটেফোঁটাও নেই। রেজাল্টকে ঘিরে যে উৎসবের আমেজ তৈরি হতো সেটি হারিয়ে গেছে বললেও ভুল হবে না।’ আজ দুপুর দুইটাই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এবার রাজধানীর মিষ্টির দোকানগুলোতে সেভাবে বেচা-বিক্রির ধুম নেই। বরং অনেক দোকান ছিল ক্রেতারশূন্য। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাজধানীর বেশ কিছু এলাকার মিষ্টির দোকান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
মিষ্টি বিক্রেতারা বলেছেন, বৈরী আবহাওয়া, পাসের হার কম, ভালো রেজাল্টের হারও কম হওয়ার কারণে এবার মিষ্টি বেচাকেনায় রেজাল্টের আমেজ পড়েনি। একাধিক মিষ্টি ব্যবসায়ীরা জানান, এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন মিষ্টি বিক্রি সাধারণ সময়ের তুলনায় দুই থেকে আড়াইগুণ বেশি হয়। তবে আজ সেটি হয়নি। তারা বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিনও মিষ্টির দোকানে বেচাকিক্রি আগের মতো বাড়ে না। যদিও পয়লা বৈশাখ, পবিত্র ঈদুল ফিতর, এসএসসি ও এইচএসসির ফল প্রকাশের দিনগুলোতে সবচেয়ে বেশি মিষ্টি বিক্রি হতো আগে।

রামপুরা এলাকায় ফুলকলি ও মধুবন জনপ্রিয় মিষ্টির দোকানে বিকেল সাড়ে তিনটায়ও ক্রেতার আনাগোনা চোখে পড়েনি। জানতে চাইলে ফুলকলির ম্যানেজার বলেন, ক্রেতা দেখে বোঝার উপায় নাই যে আজ এসএসসির ফল প্রকাশ হয়েছে। আগেও যেমন টুকটাক বিক্রি হতো, এখনো তেমনই হচ্ছে। রেজাল্টের আমেজ এখন আর মিষ্টির দোকানে পড়ে না।
তবে মুসলিম সুইটসে কিছুটা বেশি ক্রেতা দেখা গেছে। সেখানে কোম্পানির অপারেশনাল ম্যানেজার বলেন, আগের চেয়ে বেশি উৎপাদন করে প্রস্তুতি নিয়েছি। এদিন সাধারণত এক দেড় লাখ টাকা বেশি বিক্রি হয়। তবে তিনি বলেন, আগে রেজাল্টের সময় এখানে লাইন দিয়ে মিষ্টি বিক্রি হয়েছে, এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। বিক্রি কিছুটা বাড়লেও প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। রাজধানীর এসব বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিষ্টির দোকানে ৪৪০ টাকা থেকে ৯৬০ টাকা কেজিতে মিষ্টি বিক্রি হচ্ছে। আদি টাঙ্গাইল মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে যা একটু বিক্রি হতো বৃষ্টির কারণে সেটাও হচ্ছে না। কয়েকদিন ধরেই টানা আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে বেশি মিষ্টি বানানো হয়নি।
এবারের প্রতিবারের মতো আশানুরূপ রেজাল্ট না হওয়ার পেছনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, অংকে অনেকেই ৮০ নিচে নাম্বার পেয়েছে যে কারণে ফলাফল বিপর্যয়।

এদিকে, আয়েশা আক্তার মিথিলার মা স্কুল শিক্ষিকা শিউলী আক্তার জানান, আশানুরূপ সন্তানের রেজাল্ট হয়নি। তার সন্তান একরামুনন্নেসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৪.৫৮ পেয়েছে। জিপিএ-৫ না পাওয়ায় মিথিলার মন খারাপ। কাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট না হওয়ায় আগামীতে ভর্তিযুদ্ধে তাকে পিছিয়ে পড়তে হবে এ চিন্তায় মা-মেয়ের চেহারায় কষ্টের ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। আশ-পাশের অনেক শিক্ষার্থীইর আশানুরূপ রেজাল্ট হয়নি। মিষ্টির দোকানে বেচা-বিক্রির পেছনে অনেকের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণাই পাওয়া গেল। মানে জিপি-৫ পেলে বুক ফুলিয়ে যেভাবে মিষ্টির দোকানে দাম যাই হোক মিষ্টি কিনে তবেই বাসায় ফেরেন এবার কিছুটা হলেও ব্যতিক্রম।
তবে এ পরিস্থিতিতেও অনেকেই রেজাল্টের খুশিতে মিষ্টি কিনতে এসেছেন। শীলা আক্তার নামের এক নারী বলেন, সন্তানের রেজাল্ট শুনে অফিস ছুটি নিয়ে বাসায় ফিরছি। মিষ্টি না নিয়ে গেলে কী হয়! বাসা ও আশপাশে প্রতিবেশীদের জন্য মিষ্টি নিচ্ছি। পরে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পাঠাবো।
এসআর/সবা