০৮:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাধ্যমিকের পাঠ্যবই মূদ্রণে অনিশ্চয়তা

২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য ছাপানো হবে ৩০ কোটিরও বেশি

বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই না পাওয়ার শঙ্কায়

মূদ্রণ শেষ হয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের নবম-দশম শ্রেণির

ধীর গতিতে চলছে মাধ্যমিকের সপ্তম-অষ্টম শ্রেণির পাঠবই মূদ্রণ

জানুয়ারির বাকি একসপ্তাহ, এখনও শেষ হয়নি বাঁধাই ও সরবরাহ প্রক্রিয়া

‘সম্প্রতি এনসিটিবি টিম পরিদর্শনে গিয়ে প্রচুর খারাপ বই পেয়েছে। এসব বই কেটে ফেলা হবে, তবে এ মাসের মধ্যে বাকি বই দেওয়া সম্ভব হবে না’
– তোফায়েল খান, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি (বিএমএসএস)
‘মূদ্রণ শিল্প মালিকরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে বছরের শুরুতেই বিনামূল্যের সব পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো সম্ভব হবে’
– মোহাম্মদ মতিউর রহমান খান পাঠান, বিতরণ নিয়ন্ত্রক, এনসিটিবি

দড়জায় কড়া নাড়ছে নতুন বছরের। বিদায় নিচ্ছে ২০২৫। ইংরেজি নতুন বছর শুরু হতে আর মাত্র বাকি ৭ দিন। নতুন বছরের শুরুকে বিনাম্যূলের পাঠ্যবইয়ের ঘ্রাণ নিতে মুখিয়ে রয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা। ২০২৬ সালের শিক্ষাবর্ষের জন্য ছাপানো হচ্ছে ৩০ কোটিরও বেশি বিনামূল্যের পাঠ্যবই। ইতোমধ্যেই যেসব প্রতিষ্ঠানে বই ছাপানোর কাজ দেওয়া হয়েছে, সেখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের নবম-দশম শ্রেণির মূদ্রণ শেষ হলেও এখনও পিছিয়ে রয়েছে সপ্তম-অষ্টম শ্রেণি ও ইবতেদায়ি’র পাঠ্যবই। অধিকাংশ বইয়ের বাঁধাই কাজ শেষ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা রয়েই গেছে।
জানা যায়, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের (প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম) বিনামূল্যের পাঠ্যবই মূদ্রণের কাজ শেষ হয়েছে। তবে মধ্য ডিসেম্বর পার হয়ে গেলেও মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ থেকে নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার কাজ শেষ করতে পারেনি প্রিন্টিং প্রেসগুলো। সাধারণত বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়া হয়। এ রেওয়াজ চলে আসছে অনেক বছর ধরে। তবে ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২০২৫ সালের পাঠ্যবই মূদ্রণ ও সরবরাহ করতে দেরি হওয়ায় সঠিক সময়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। ২০২৬ সালের পাঠ্যবই যথা সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে আগেই জানানো হয়েছিল।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাধ্যমিক পর্যায়ের সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার কাজ পিছিয়ে রয়েছে। ছাপা শেষ হলে বাঁধাই ও সরবরাহ কাজে সময় লাগবে। নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার কাজ এগিয়ে থাকলেও শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ের মূদ্রণ কাজ শেষ হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের প্রাক্-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের (প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি) শতভাগ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও সরবরাহ কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।
এদিকে প্রাথমিক স্তরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার কাজ শেষ হলেও ইবতেদায়ি মাদ্রাসার (প্রথম থেকে পঞ্চম) বইয়ের ছাপার কাজ পিছিয়ে রয়েছে।
এনসিটিবি জানায়, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য বিন্যামূলের পাঠ্যবই ছাপা হবে ৩০ কোটির কিছু বেশি। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের চেয়ে এবার প্রায় ১০ কোটি কম। সরকারের পলিসি অনুযায়ী এবারও আন্তর্জাতিক টেন্ডার বাদ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে পাঠ্যবইয়ের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে শুরু থেকেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান না করায় সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না এনসিটিবি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির (বিএমএসএস) সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক স্তরের প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপা শেষ হয়েছে। তবে মাধ্যমিকের পাঠ্যবই এখনও ছাপা শেষ হয়নি। তিনি বলেন, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপা ও সরবরাহের চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে গত ৪ ডিসেম্বর। চুক্তি হওয়ার পর বই ছেপে সরবরাহ করতে প্রেসগুলো সময় পায় ৫০ দিন। এক মাসের জরিমানা দিয়ে পাঠ্যবই সরবরাহের আরও ২৮ দিন গ্রেস পাবে। ফলে এ মাসের মধ্যে বাকি বই দেওয়া সম্ভব হবে না। এ সময়ের আগে সরকার তো অন্য কোনও অ্যাকশনও নিতে পারবে না।
তোফায়েল খান বলেন, আমাদের মধ্যে যারা খারাপ লোক আছে, তারা শেষ সময়ে গিয়ে বই ছাপবে। যাতে খারাপ কাগজে বই দিতে পারে। সম্প্রতি এনসিটিবি টিম পরিদর্শনে গিয়ে প্রচুর খারাপ বই পেয়েছে। এসব বই কেটে ফেলা হবে। এছাড়া আরও একটি বিষয় আছে, গত বছর এনসিটিবি কিছু প্রেস মালিককে দিয়ে কাগজ কিনিয়েছে। প্রেসের বিল আকটে রেখে এখনকার বাজার দরের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে তাদেরকে কাগজ কেনানো হয়েছে, যা এখনকার বাজারের চেয়ে প্রতি টনে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি। এখন তারা এই কাগজ দিয়ে বই ছাপাবে কিনা, এনসিটিবি সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না। নতুন করে কাগজ কেনার জন্য ব্যাংক তাদের আর লোনও দেবে না। এসব কারণে কম করে ২০ থেকে ২৫টা প্রেসের বই ছাপাতে দেরি হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনসিটিবির উৎপাদন নিয়ন্ত্রক আবু নাসের টুকু বলেন, প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপা ও সরবারাহ শেষ হয়েছে।
মাধ্যমিকের পাঠ্যবই ছাপা সম্পর্কে জানতে চাইলে এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মতিউর রহমান খান পাঠান বলেন, ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার শেষের দিকে। নবম শ্রেণির চেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের ছাপার কাজ বেশি হয়েছে। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার কাজও এগিয়ে গেছে।
তিনি দাবি করেন, জানুয়ারিতেই পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো যাবে। তবে তিনি বলেন, মূদ্রণ শিল্প মালিকরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে বছরের শুরুতেই সব পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপতে প্রথম টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল চলতি বছরের (২০২৫) গত ৪ মে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপা ও সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত ১৮ মে প্রাক-প্রাথমিকের দরপত্র আহ্বানের পর তা উন্মুক্ত করা হয় গত ১৭ জুন। এরপর প্রথম থেকে তৃতীয় শেণির বই ৩০ জুন এবং চতুর্থ-পঞ্চম শেণির বইয়ের দরপত্র উন্মুক্ত হয়েছে ১৫ জুলাই। ষষ্ঠ শ্রেণির বই ২ জুন, সপ্তম শ্রেণির বই ৪ জুন, অষ্টম শ্রেণির বই ২৩ জুন, নবম শ্রেণির বই ২৪ জুলাই এবং ইবতেদায়ির বইয়ের দরপত্র উন্মুক্ত হয়েছে গত ১০ জুলাই। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর একটি লটের বইয়ের দরপত্র উন্মুক্ত করা হয়েছে গত ১৯ জুন। তবে ক্রয় সংস্ত্রান্ত মন্ত্রিসভায় ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন না হওয়ায় পুনদরপত্র আহ্বান করে পাঠ্যবই ছাপার কার্যক্রম চালায় এনসিটিবি। এ কারণে মাধ্যমিকের পাঠ্যবই ছাপতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে দাবি করেন মূদ্রণ শিল্প মালিকরা।

জনপ্রিয় সংবাদ

সানজিদা তন্বীর বিয়ের খবর জানালেন ফেসবুকে নিজের হৃদয়গ্রাহী পোস্টে

মাধ্যমিকের পাঠ্যবই মূদ্রণে অনিশ্চয়তা

আপডেট সময় : ০৭:৫৫:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫

২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য ছাপানো হবে ৩০ কোটিরও বেশি

বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই না পাওয়ার শঙ্কায়

মূদ্রণ শেষ হয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের নবম-দশম শ্রেণির

ধীর গতিতে চলছে মাধ্যমিকের সপ্তম-অষ্টম শ্রেণির পাঠবই মূদ্রণ

জানুয়ারির বাকি একসপ্তাহ, এখনও শেষ হয়নি বাঁধাই ও সরবরাহ প্রক্রিয়া

‘সম্প্রতি এনসিটিবি টিম পরিদর্শনে গিয়ে প্রচুর খারাপ বই পেয়েছে। এসব বই কেটে ফেলা হবে, তবে এ মাসের মধ্যে বাকি বই দেওয়া সম্ভব হবে না’
– তোফায়েল খান, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি (বিএমএসএস)
‘মূদ্রণ শিল্প মালিকরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে বছরের শুরুতেই বিনামূল্যের সব পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো সম্ভব হবে’
– মোহাম্মদ মতিউর রহমান খান পাঠান, বিতরণ নিয়ন্ত্রক, এনসিটিবি

দড়জায় কড়া নাড়ছে নতুন বছরের। বিদায় নিচ্ছে ২০২৫। ইংরেজি নতুন বছর শুরু হতে আর মাত্র বাকি ৭ দিন। নতুন বছরের শুরুকে বিনাম্যূলের পাঠ্যবইয়ের ঘ্রাণ নিতে মুখিয়ে রয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা। ২০২৬ সালের শিক্ষাবর্ষের জন্য ছাপানো হচ্ছে ৩০ কোটিরও বেশি বিনামূল্যের পাঠ্যবই। ইতোমধ্যেই যেসব প্রতিষ্ঠানে বই ছাপানোর কাজ দেওয়া হয়েছে, সেখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের নবম-দশম শ্রেণির মূদ্রণ শেষ হলেও এখনও পিছিয়ে রয়েছে সপ্তম-অষ্টম শ্রেণি ও ইবতেদায়ি’র পাঠ্যবই। অধিকাংশ বইয়ের বাঁধাই কাজ শেষ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা রয়েই গেছে।
জানা যায়, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের (প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম) বিনামূল্যের পাঠ্যবই মূদ্রণের কাজ শেষ হয়েছে। তবে মধ্য ডিসেম্বর পার হয়ে গেলেও মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ থেকে নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার কাজ শেষ করতে পারেনি প্রিন্টিং প্রেসগুলো। সাধারণত বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়া হয়। এ রেওয়াজ চলে আসছে অনেক বছর ধরে। তবে ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২০২৫ সালের পাঠ্যবই মূদ্রণ ও সরবরাহ করতে দেরি হওয়ায় সঠিক সময়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। ২০২৬ সালের পাঠ্যবই যথা সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে আগেই জানানো হয়েছিল।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাধ্যমিক পর্যায়ের সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার কাজ পিছিয়ে রয়েছে। ছাপা শেষ হলে বাঁধাই ও সরবরাহ কাজে সময় লাগবে। নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার কাজ এগিয়ে থাকলেও শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ের মূদ্রণ কাজ শেষ হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের প্রাক্-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের (প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি) শতভাগ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও সরবরাহ কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।
এদিকে প্রাথমিক স্তরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার কাজ শেষ হলেও ইবতেদায়ি মাদ্রাসার (প্রথম থেকে পঞ্চম) বইয়ের ছাপার কাজ পিছিয়ে রয়েছে।
এনসিটিবি জানায়, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য বিন্যামূলের পাঠ্যবই ছাপা হবে ৩০ কোটির কিছু বেশি। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের চেয়ে এবার প্রায় ১০ কোটি কম। সরকারের পলিসি অনুযায়ী এবারও আন্তর্জাতিক টেন্ডার বাদ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে পাঠ্যবইয়ের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে শুরু থেকেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান না করায় সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না এনসিটিবি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির (বিএমএসএস) সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক স্তরের প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপা শেষ হয়েছে। তবে মাধ্যমিকের পাঠ্যবই এখনও ছাপা শেষ হয়নি। তিনি বলেন, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপা ও সরবরাহের চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে গত ৪ ডিসেম্বর। চুক্তি হওয়ার পর বই ছেপে সরবরাহ করতে প্রেসগুলো সময় পায় ৫০ দিন। এক মাসের জরিমানা দিয়ে পাঠ্যবই সরবরাহের আরও ২৮ দিন গ্রেস পাবে। ফলে এ মাসের মধ্যে বাকি বই দেওয়া সম্ভব হবে না। এ সময়ের আগে সরকার তো অন্য কোনও অ্যাকশনও নিতে পারবে না।
তোফায়েল খান বলেন, আমাদের মধ্যে যারা খারাপ লোক আছে, তারা শেষ সময়ে গিয়ে বই ছাপবে। যাতে খারাপ কাগজে বই দিতে পারে। সম্প্রতি এনসিটিবি টিম পরিদর্শনে গিয়ে প্রচুর খারাপ বই পেয়েছে। এসব বই কেটে ফেলা হবে। এছাড়া আরও একটি বিষয় আছে, গত বছর এনসিটিবি কিছু প্রেস মালিককে দিয়ে কাগজ কিনিয়েছে। প্রেসের বিল আকটে রেখে এখনকার বাজার দরের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে তাদেরকে কাগজ কেনানো হয়েছে, যা এখনকার বাজারের চেয়ে প্রতি টনে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি। এখন তারা এই কাগজ দিয়ে বই ছাপাবে কিনা, এনসিটিবি সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না। নতুন করে কাগজ কেনার জন্য ব্যাংক তাদের আর লোনও দেবে না। এসব কারণে কম করে ২০ থেকে ২৫টা প্রেসের বই ছাপাতে দেরি হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনসিটিবির উৎপাদন নিয়ন্ত্রক আবু নাসের টুকু বলেন, প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপা ও সরবারাহ শেষ হয়েছে।
মাধ্যমিকের পাঠ্যবই ছাপা সম্পর্কে জানতে চাইলে এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মতিউর রহমান খান পাঠান বলেন, ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার শেষের দিকে। নবম শ্রেণির চেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের ছাপার কাজ বেশি হয়েছে। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার কাজও এগিয়ে গেছে।
তিনি দাবি করেন, জানুয়ারিতেই পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো যাবে। তবে তিনি বলেন, মূদ্রণ শিল্প মালিকরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে বছরের শুরুতেই সব পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপতে প্রথম টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল চলতি বছরের (২০২৫) গত ৪ মে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপা ও সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত ১৮ মে প্রাক-প্রাথমিকের দরপত্র আহ্বানের পর তা উন্মুক্ত করা হয় গত ১৭ জুন। এরপর প্রথম থেকে তৃতীয় শেণির বই ৩০ জুন এবং চতুর্থ-পঞ্চম শেণির বইয়ের দরপত্র উন্মুক্ত হয়েছে ১৫ জুলাই। ষষ্ঠ শ্রেণির বই ২ জুন, সপ্তম শ্রেণির বই ৪ জুন, অষ্টম শ্রেণির বই ২৩ জুন, নবম শ্রেণির বই ২৪ জুলাই এবং ইবতেদায়ির বইয়ের দরপত্র উন্মুক্ত হয়েছে গত ১০ জুলাই। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর একটি লটের বইয়ের দরপত্র উন্মুক্ত করা হয়েছে গত ১৯ জুন। তবে ক্রয় সংস্ত্রান্ত মন্ত্রিসভায় ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন না হওয়ায় পুনদরপত্র আহ্বান করে পাঠ্যবই ছাপার কার্যক্রম চালায় এনসিটিবি। এ কারণে মাধ্যমিকের পাঠ্যবই ছাপতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে দাবি করেন মূদ্রণ শিল্প মালিকরা।