০৭:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে আট দফা দাবিতে প্রতীকী অনশন প্রশাসনিক ভবনে তালা শিক্ষার্থীদের

বিগত ১৯ বছর ধরে চলে আসা শিক্ষার সঙ্গে প্রতারণার প্রতিবাদে পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা আট দফা দাবি নিয়ে গত ১৭ জুলাই আন্দোলনে নামে কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস না পেয়ে প্রশাসনিক ভবনের তালা দেয়, ২২-২৩ সেশনের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাসহ সকল প্রকার একাডেমিক কার্যক্রম শাটডাউন ঘোষণা করে। দাবি পূরণের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা শনিবার অধ্যক্ষের সঙ্গে দুই দফায় আলোচনায় বসলেও সমাধান দিতে ব্যর্থ হয় কলেজ প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের সমাধানের আশ্বাস দিলে, শিক্ষার্থীরা তা মানেনি। তারা লিখিত প্রজ্ঞাপন দাবি করে এবং শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষার্থীরা হাতে দড়ি বেঁধে, গলায় ফাঁস ঝুলিয়ে, বুটেক্স, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়, ও কলেজ প্রশাসন এর আচরণের প্রতিবাদে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করে।
দাবিগুলো প্রসঙ্গে পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু রায়হান জানান, আমাদের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করতে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় লাগে। ফলে আমাদের সেশন জটে ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে, আমাদের ছয় মাসের সেমিস্টার শেষ করতে সাত মাস সময় লেগে যাচ্ছে। আমাদের দাবি তিন মাসের মধ্যে ফল প্রকাশ করতে হবে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের শুধু সিজিপিএ প্রকাশ করে, কোনো বিষয়ে কত মার্ক পেয়েছি, সেটা জানতে পারি না। কোনো বিষয়ে খারাপ করেছি এসব জানতে পারি না। তাই আমাদের দাবি গ্রেডসহ ফলাফল প্রকাশ করতে হবে। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বায়জিদ হাসান হামিম জানান, আমাদের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম যে দাবি শিক্ষক সংকট নিরসন করতে হবে, বর্তমানে দেখা যায় ৮ থেকে ১২ জন শিক্ষক দিয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ পরিচালিত হচ্ছে, যা চাহিদার তুলনায় সীমিত। শিক্ষক সংকট থাকায় ৬ মাসের কোর্স অতিথি শিক্ষক দিয়ে ৪-৫ দিনে শেষ করানো হয়। ল্যাব সঠিকভাবে শেষ করতে হিমসিম খেতে হয়। কিন্তু পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়, নতুন কোনো প্রকার শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে, একের পর এক নতুন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ খুলে যাচ্ছে। এই বছর সিলেট ও মাদারীপুরে শুধুমাত্র অধ্যক্ষ এবং বাবুর্চি দিয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ১২০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। যেটা শিক্ষার সঙ্গে প্রহসন। পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় বারবার স্মারকলিপি দেওয়ার পরেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি। প্রথম বর্ষের অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদ খান বলেন, সংশোধিত নতুন কারিকুলাম ও একাডেমিক নিয়মাবলী সম্পর্কে ক্যাম্পাস থেকে আমাদের জানানো হয় না অথচ সেগুলো প্রয়োগ হচ্ছে। আমরা চাই না একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত নোটিশ বা বিজ্ঞপ্তি আকারে কলেজের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানানো হোক।
দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল জানান, যদি কোনো বিষয়ে ফেল থাকে সে বিষয়ের পরীক্ষার জন্য এক বছর অপেক্ষা করতে হয় অনেক সময় সেমিস্টার পরীক্ষা এবং রিটেক পরীক্ষা একই দিনে দিতে হয়। সেটা একজন শিক্ষার্থীর মানসিক পীড়া দেয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের থেকে জানতে চাওয়া হয় কতদিন এভাবে আনদোলন করবেন শিক্ষার্থীরা জানায়, যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি সম্পূর্ণরূপে পূরণ না হচ্ছে ততদিন আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষে মো. বখতিয়ার হোে নের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, আমার ছাত্ররা যে দাবিগুলো নিয়ে আন্দোলন করছে, শিক্ষার্থী হিসেবে এটা তাদের অধিকার। আমি তাদের দাবি পূরণের সর্বদা সহযোগিতা করব। ইতোমধ্যেই আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে এ বিষয়ে কথা বলবেন। তিনি শিক্ষার্থীদের ‘তার’ প্রতি বিশ্বাস রাখতে বলেন এবং ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।

জনপ্রিয় সংবাদ

মালিকানা বদলের পর ১ কোটি ১০ লাখ টাকা কী পাবেন নাঈম?

পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে আট দফা দাবিতে প্রতীকী অনশন প্রশাসনিক ভবনে তালা শিক্ষার্থীদের

আপডেট সময় : ০৮:১৩:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

বিগত ১৯ বছর ধরে চলে আসা শিক্ষার সঙ্গে প্রতারণার প্রতিবাদে পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা আট দফা দাবি নিয়ে গত ১৭ জুলাই আন্দোলনে নামে কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস না পেয়ে প্রশাসনিক ভবনের তালা দেয়, ২২-২৩ সেশনের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাসহ সকল প্রকার একাডেমিক কার্যক্রম শাটডাউন ঘোষণা করে। দাবি পূরণের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা শনিবার অধ্যক্ষের সঙ্গে দুই দফায় আলোচনায় বসলেও সমাধান দিতে ব্যর্থ হয় কলেজ প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের সমাধানের আশ্বাস দিলে, শিক্ষার্থীরা তা মানেনি। তারা লিখিত প্রজ্ঞাপন দাবি করে এবং শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষার্থীরা হাতে দড়ি বেঁধে, গলায় ফাঁস ঝুলিয়ে, বুটেক্স, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়, ও কলেজ প্রশাসন এর আচরণের প্রতিবাদে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করে।
দাবিগুলো প্রসঙ্গে পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু রায়হান জানান, আমাদের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করতে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় লাগে। ফলে আমাদের সেশন জটে ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে, আমাদের ছয় মাসের সেমিস্টার শেষ করতে সাত মাস সময় লেগে যাচ্ছে। আমাদের দাবি তিন মাসের মধ্যে ফল প্রকাশ করতে হবে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের শুধু সিজিপিএ প্রকাশ করে, কোনো বিষয়ে কত মার্ক পেয়েছি, সেটা জানতে পারি না। কোনো বিষয়ে খারাপ করেছি এসব জানতে পারি না। তাই আমাদের দাবি গ্রেডসহ ফলাফল প্রকাশ করতে হবে। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বায়জিদ হাসান হামিম জানান, আমাদের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম যে দাবি শিক্ষক সংকট নিরসন করতে হবে, বর্তমানে দেখা যায় ৮ থেকে ১২ জন শিক্ষক দিয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ পরিচালিত হচ্ছে, যা চাহিদার তুলনায় সীমিত। শিক্ষক সংকট থাকায় ৬ মাসের কোর্স অতিথি শিক্ষক দিয়ে ৪-৫ দিনে শেষ করানো হয়। ল্যাব সঠিকভাবে শেষ করতে হিমসিম খেতে হয়। কিন্তু পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়, নতুন কোনো প্রকার শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে, একের পর এক নতুন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ খুলে যাচ্ছে। এই বছর সিলেট ও মাদারীপুরে শুধুমাত্র অধ্যক্ষ এবং বাবুর্চি দিয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ১২০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। যেটা শিক্ষার সঙ্গে প্রহসন। পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় বারবার স্মারকলিপি দেওয়ার পরেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি। প্রথম বর্ষের অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদ খান বলেন, সংশোধিত নতুন কারিকুলাম ও একাডেমিক নিয়মাবলী সম্পর্কে ক্যাম্পাস থেকে আমাদের জানানো হয় না অথচ সেগুলো প্রয়োগ হচ্ছে। আমরা চাই না একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত নোটিশ বা বিজ্ঞপ্তি আকারে কলেজের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানানো হোক।
দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল জানান, যদি কোনো বিষয়ে ফেল থাকে সে বিষয়ের পরীক্ষার জন্য এক বছর অপেক্ষা করতে হয় অনেক সময় সেমিস্টার পরীক্ষা এবং রিটেক পরীক্ষা একই দিনে দিতে হয়। সেটা একজন শিক্ষার্থীর মানসিক পীড়া দেয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের থেকে জানতে চাওয়া হয় কতদিন এভাবে আনদোলন করবেন শিক্ষার্থীরা জানায়, যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি সম্পূর্ণরূপে পূরণ না হচ্ছে ততদিন আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষে মো. বখতিয়ার হোে নের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, আমার ছাত্ররা যে দাবিগুলো নিয়ে আন্দোলন করছে, শিক্ষার্থী হিসেবে এটা তাদের অধিকার। আমি তাদের দাবি পূরণের সর্বদা সহযোগিতা করব। ইতোমধ্যেই আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে এ বিষয়ে কথা বলবেন। তিনি শিক্ষার্থীদের ‘তার’ প্রতি বিশ্বাস রাখতে বলেন এবং ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।