০৫:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘৫ অগাস্টের মত পরিস্থিতি’র অপেক্ষায় ছিলেন ৩ ফাঁসির আসামি, নিচ্ছিলেন প্রস্তুতি

২০২৪ সালে ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর নৈরাজ্যকর মুহূর্তের মধ্যে যেভাবে কারাগার থেকে বন্দিরা পালিয়ে গিয়েছিলেন, সেই একই পরিস্থিতির অপেক্ষায় থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি পলানোর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

তিন বন্দির কারাগার থেকে পালানোর প্রস্তুতির অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে একটি মামলা হয়েছে বলে কোনাবাড়ী থানার ওসি মো. সালাহউদ্দিন জানান।

তিনি বলেন, হাই সিকিউরিটি কারাগারের জেলার মো. আসাদুল রহমান বাদী মামলাটি করেছেন।

মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি টাঙ্গাইল সদর থানার চৌবাড়িয়া এলাকার শাহাদাত হোসেন, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানার মাঝিনা এলাকার রনি মহন্ত এবং কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী থানার দিয়াডাঙ্গা এলাকার নজরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারের বরাতে পুলিশ জানায়, ৫ অগাস্ট রাত সোয়া ৮টার দিকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে দায়িত্ব পালন করছিলেন সহকারী প্রধান কারারক্ষী মোখলেছুর রহমান। এ সময় তিনি ‘তমাল’ ভবনের নিচতলায় ১২ নম্বর কক্ষ থেকে দেয়ালে আঘাতের শব্দ শুনতে পান।

পর দিন ৬ অগাস্ট সকালে ওই কক্ষে তল্লাশি করে একটি লোহার পাত, দুই টুকরা রড, কম্বল কেটে বানানো ২৮ ফুট লম্বা একটি রশি, ২৫ ফুট লম্বা একটি বেল্ট, লোহার তৈরি দুটি আংটা, ১০ ফুট লম্বা একটি খুঁটিসহ বিভিন্ন উপরকরণ জব্দ করা হয়। মামলায় বলা হয়, এ বিষয়ে বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা কারা কর্তৃপক্ষকে জানান, কারাগার থেকে পালানোর প্রস্তুতি হিসেবে ওই উপকরণগুলো তারা সংগ্রহে রেখেছিলেন। ২০২৪ সালের ৫ অগাস্টের মতো পরিস্থিতির তৈরি হলে তারা কারাগার থেকে পালাতেন বা পালানোর সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী হাই সিকিউরিটি কারাগারের জেলার মো. আসাদুল রহমান জানান, গত বছরের ৬ অগাস্ট এ কারাগার থেকে ২০২ জন আসামি পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরে তাদের মধ্য থেকে ৬১ জনকে আটক করা সম্ভব হয়েছে।

এখনও পলাতক ৭২৪ আসামি, উদ্ধার হয়নি ২৯ অস্ত্র

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের অগাস্টে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। সে সময় সারাদেশে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি কারাগার থেকে বন্দি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।

সেসব ঘটনায় কারারক্ষীদের গুলিতে ১৩ জন বন্দি নিহত হন। নিহতদের মধ্যে জামালপুর জেলা কারাগারে সতজন এবং গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার ছয়জন ছিলেন। আহত হন দুই শতাধিক কারারক্ষী। এ ছাড়া কারাগারের অস্ত্র, গোলাবারুদ থেকে শুরু করে চাল-ডাল পর্যন্ত লুটের ঘটনা ঘটে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় দেশের ১৭টি কারাগারে ‘বিদ্রোহের’ ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার, সাতক্ষীরা, শেরপুর, কুষ্টিয়া ও নরসিংদী কারাগার থেকে দুই হাজারের বেশি বন্দি পালিয়ে যান।

পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া আসামি ছাড়াও বিভিন্ন নিষিদ্ধ ‘জঙ্গি’ সংগঠনের আসামিরাও ছিলেন। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার ও নিজ ইচ্ছায় অনেকে ফিরে এলেও বড় একটা অংশ এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ মোতাহের হোসেন গত ১০ মার্চ বলেছিলেন, জেল পালানো সাতশর মত বন্দি এখনও পলাতক, যাদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন ও জঙ্গি মিলে ৬৯ জন রয়েছেন।

এর প্রায় তিন মাস পর ১৫ জুন যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এখনও পলাতকের সংখ্যাটা ৭২৪ ই আছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ও জঙ্গি মিলে পলাতকের সংখ্যাটাও ৬৯ জন।”

এর মধ্যে জঙ্গি কতজন, সেটা আলাদাভাবে জানাতে না পারলেও নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়াদের মধ্যে নয়জন জঙ্গি ছিলেন বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

কারা সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তার ভাষ্য, “নরসিংদী ও শেরপুর কারাগারের আসামি পালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছিল। সেই কারাগার দুটির সার্ভারও ধ্বংস হয়ে যায়, যে কারণে সেখানকার বন্দিদের সংখ্যা এবং বিস্তারিত তথ্য খোয়া গেছে।”

সে সময় কারারক্ষীদের ব্যবহৃত ৯৪টি অস্ত্র লুট হয়েছিল। এর মধ্যে ৬৫টি পরে উদ্ধার সম্ভব হলেও এখনও হদিস মেলেনি ২৯টি অস্ত্রের।

তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নরসিংদী কারাগার থেকে পলাতক দেড় শতাধিক, কাশিমপুর কারাগারের শতাধিক, কুষ্টিয়ার ২০ জন, শেরপুরের সাড়ে তিন শতাধিক এবং সাতক্ষীরা কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া অন্তত ৫০ জন এখনও পলাতক রয়েছেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

একনেক সভায় ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন

‘৫ অগাস্টের মত পরিস্থিতি’র অপেক্ষায় ছিলেন ৩ ফাঁসির আসামি, নিচ্ছিলেন প্রস্তুতি

আপডেট সময় : ০৯:২১:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫

২০২৪ সালে ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর নৈরাজ্যকর মুহূর্তের মধ্যে যেভাবে কারাগার থেকে বন্দিরা পালিয়ে গিয়েছিলেন, সেই একই পরিস্থিতির অপেক্ষায় থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি পলানোর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

তিন বন্দির কারাগার থেকে পালানোর প্রস্তুতির অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে একটি মামলা হয়েছে বলে কোনাবাড়ী থানার ওসি মো. সালাহউদ্দিন জানান।

তিনি বলেন, হাই সিকিউরিটি কারাগারের জেলার মো. আসাদুল রহমান বাদী মামলাটি করেছেন।

মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি টাঙ্গাইল সদর থানার চৌবাড়িয়া এলাকার শাহাদাত হোসেন, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানার মাঝিনা এলাকার রনি মহন্ত এবং কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী থানার দিয়াডাঙ্গা এলাকার নজরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারের বরাতে পুলিশ জানায়, ৫ অগাস্ট রাত সোয়া ৮টার দিকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে দায়িত্ব পালন করছিলেন সহকারী প্রধান কারারক্ষী মোখলেছুর রহমান। এ সময় তিনি ‘তমাল’ ভবনের নিচতলায় ১২ নম্বর কক্ষ থেকে দেয়ালে আঘাতের শব্দ শুনতে পান।

পর দিন ৬ অগাস্ট সকালে ওই কক্ষে তল্লাশি করে একটি লোহার পাত, দুই টুকরা রড, কম্বল কেটে বানানো ২৮ ফুট লম্বা একটি রশি, ২৫ ফুট লম্বা একটি বেল্ট, লোহার তৈরি দুটি আংটা, ১০ ফুট লম্বা একটি খুঁটিসহ বিভিন্ন উপরকরণ জব্দ করা হয়। মামলায় বলা হয়, এ বিষয়ে বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা কারা কর্তৃপক্ষকে জানান, কারাগার থেকে পালানোর প্রস্তুতি হিসেবে ওই উপকরণগুলো তারা সংগ্রহে রেখেছিলেন। ২০২৪ সালের ৫ অগাস্টের মতো পরিস্থিতির তৈরি হলে তারা কারাগার থেকে পালাতেন বা পালানোর সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী হাই সিকিউরিটি কারাগারের জেলার মো. আসাদুল রহমান জানান, গত বছরের ৬ অগাস্ট এ কারাগার থেকে ২০২ জন আসামি পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরে তাদের মধ্য থেকে ৬১ জনকে আটক করা সম্ভব হয়েছে।

এখনও পলাতক ৭২৪ আসামি, উদ্ধার হয়নি ২৯ অস্ত্র

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের অগাস্টে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। সে সময় সারাদেশে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি কারাগার থেকে বন্দি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।

সেসব ঘটনায় কারারক্ষীদের গুলিতে ১৩ জন বন্দি নিহত হন। নিহতদের মধ্যে জামালপুর জেলা কারাগারে সতজন এবং গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার ছয়জন ছিলেন। আহত হন দুই শতাধিক কারারক্ষী। এ ছাড়া কারাগারের অস্ত্র, গোলাবারুদ থেকে শুরু করে চাল-ডাল পর্যন্ত লুটের ঘটনা ঘটে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় দেশের ১৭টি কারাগারে ‘বিদ্রোহের’ ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার, সাতক্ষীরা, শেরপুর, কুষ্টিয়া ও নরসিংদী কারাগার থেকে দুই হাজারের বেশি বন্দি পালিয়ে যান।

পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া আসামি ছাড়াও বিভিন্ন নিষিদ্ধ ‘জঙ্গি’ সংগঠনের আসামিরাও ছিলেন। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার ও নিজ ইচ্ছায় অনেকে ফিরে এলেও বড় একটা অংশ এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ মোতাহের হোসেন গত ১০ মার্চ বলেছিলেন, জেল পালানো সাতশর মত বন্দি এখনও পলাতক, যাদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন ও জঙ্গি মিলে ৬৯ জন রয়েছেন।

এর প্রায় তিন মাস পর ১৫ জুন যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এখনও পলাতকের সংখ্যাটা ৭২৪ ই আছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ও জঙ্গি মিলে পলাতকের সংখ্যাটাও ৬৯ জন।”

এর মধ্যে জঙ্গি কতজন, সেটা আলাদাভাবে জানাতে না পারলেও নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়াদের মধ্যে নয়জন জঙ্গি ছিলেন বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

কারা সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তার ভাষ্য, “নরসিংদী ও শেরপুর কারাগারের আসামি পালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছিল। সেই কারাগার দুটির সার্ভারও ধ্বংস হয়ে যায়, যে কারণে সেখানকার বন্দিদের সংখ্যা এবং বিস্তারিত তথ্য খোয়া গেছে।”

সে সময় কারারক্ষীদের ব্যবহৃত ৯৪টি অস্ত্র লুট হয়েছিল। এর মধ্যে ৬৫টি পরে উদ্ধার সম্ভব হলেও এখনও হদিস মেলেনি ২৯টি অস্ত্রের।

তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নরসিংদী কারাগার থেকে পলাতক দেড় শতাধিক, কাশিমপুর কারাগারের শতাধিক, কুষ্টিয়ার ২০ জন, শেরপুরের সাড়ে তিন শতাধিক এবং সাতক্ষীরা কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া অন্তত ৫০ জন এখনও পলাতক রয়েছেন।