১২:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইনক্লুসিভে নতুন ইতিহাস গড়ার স্বপ্নে শিবির; প্যানেলে আছেন নারী, সমন্বয়ক ও সংখ্যালঘু

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের যাত্রা শুরুর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন হয়েছে মোট তিনবার, যেসব নির্বাচনের দুটিতেই দলীয় প্যানেল দেয় শিবির। তবে এর কোনোটিতেই উল্লেখযোগ্য সাফল্য পায়নি এই ছাত্রসংগঠনটি। এ সময়ে হল সংসদ ব্যতীত কেন্দ্রীয় সংসদে কোন পদ  পাওয়ার নজির নেই তাদের। এমন প্রেক্ষাপটে রাকসুতে নিজেদের ইতিহাস ছাপিয়ে নতুন করে ইতিহাস লেখার স্বপ্ন দেখছেন তারা।
এরই মধ্যে ‘ইনক্লুসিভ’ বা অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল ঘোষণা করেছে ছাত্রশিবির। এতে  বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সম্মুখসারীরতে থাকা এবং জুলাই যুদ্ধে আহত শিক্ষার্থী রয়েছেন তেমনি ভিন্ন মতাদর্শ ও সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীসহ ‘ক্লিন ইমেজের’ প্রার্থীদের এই প্যানেলে রাখা হয়েছে।
রাবি শিবির সংশ্লিষ্ট নেতাদের দাবি, ১৯৭৭ সালে ইসলামী ছাত্রশিবিরের যাত্রা শুরুর পর যতগুলো রাকসু নির্বাচন হয়েছে, তার দুটিতে অংশ নিয়েছেন তারা। রাকসু নির্বাচনের এবারের আগে রাকসুর অন্তত দুটিতে নির্বাচনে প্রকাশ্যে প্রার্থী ঘোষণা ও নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছে ছাত্রশিবির, যে নির্বাচনগুলো হয় ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালে। এর মধ্যে সর্বশেষ ১৯৯০ সালের নির্বাচনে ছাত্রশিবির থেকে সহসভাপতি পদে নির্বাচন করেন মো. আব্দুল লতিফ ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে নির্বাচন করেন মো. রফিকুল ইসলাম খান এবং সহ সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে নির্বাচন করেন মো. সাইফুল ইসলাম। ওই নির্বাচনে রাকসুতে কেন্দ্রীয় পদে ছাত্র শিবিরের কোন প্রার্থী নির্বাচিত হননি। তবে হল সংসদের শহীদ শামসুজ্জোহা হলে সবকটিতে জয় লাভ ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা।
ছাত্রশিবির নেতাকর্মীরা বলছেন, সংগঠনের বাইরের দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষার্থীদের প্রার্থী করেছে তারা। এ বৈচিত্র্যই তাদের প্যানেলকে ইনক্লুসিভ (অন্তর্ভুক্তিমূলক) করেছে। এটাই তাদের শক্তির জায়গা।
রাকসুতে এবার শিবিরের ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ নামে এই প্যানেলে সহসভাপতি (ভিপি) পদে রয়েছেন ছাত্রশিবিরের রাবি শাখার  সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রার্থী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাবি’র সাবেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজা। সোচ্চার স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক রাবি শাখার সভাপতি এস এম সালমান সাব্বির লড়বেন সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে। এজিএস প্রার্থী সালমান সাব্বির যে ‘শিবিরের লোক’, তা প্রথম জানা যায় প্যানেল ঘোষণার সময়। এটিকে চমক হিসেবেই দেখছেন শিক্ষার্থীরা।
এই প্যানেলে ব্যতিক্রম হিসেবে জুলাইয়ে চোখ হারানো দ্বীপ মাহবুব ও সনাতন ধর্মাবলম্বী সুজন চন্দ্রকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। প্যানেলে নারী প্রার্থী রয়েছেন তিনজন। নির্ধারিত দুই নারী পদ ছাড়াও সহসমাজসেবা সম্পাদক পদে লড়বেন একজন নারী।
ছাত্রশিবিরের ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করছেন মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। তিনি কালবেলাকে বলেন, ছাত্রশিবির যাত্রা শুরুর পর রাকসুতে ২টি নির্বাচনে নিজস্ব প্যানেলে অংশগ্রহণ করে। তখন সংগঠনের যাত্রার শুরু সময়, আমাদের জনপ্রিয়তা খুব একটা ছিল না, কর্মীর সংখ্যাও সীমিত ছিল। তাই বড় পদে জয় পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সর্বশেষ রাকসু নির্বাচনে শহীদ শামসুজ্জোহা হল সহ বেশ কয়েকটি হলে বিভিন্ন পদে জয়ী হয়েছিলাম। তবে এবারের রাকসু নির্বাচনে  ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের সর্বোচ্চ  সাফল্য নিয়ে আমরা আশাবাদী।
তিনি বলেন, আমাদের প্যানেলের শক্তি ‘ইনক্লুসিভিটি’ (অন্তর্ভুক্তিমূলক)। আমরা যাকে-তাকে বা শুধু শিবির করার কারণে রাখিনি। শিবির করুক বা না করুক, একজনের যেন দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকে,  নেতৃত্বগুণ দেখেই প্যানেলে জায়গা দেওয়া হয়েছে।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘শিবির এবার অন্তত নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে নারী ও সংখ্যালঘু প্রার্থী রাখা ইতিবাচক উদ্যোগ। এতে বোঝা যায়, তারা ভিন্নধারার রাজনীতি নিয়ে ভাবছে।’
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী নিশাত তাবাসসুমের মন্তব্য, ‘শিবিরের ইমেজ অনেক শিক্ষার্থীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। তবে এবারের বৈচিত্র্যময় প্যানেল হয়তো সেই ভাবমূর্তি বদলাতে সাহায্য করতে পারে।’
ইতিহাস বিভাগের ছাত্র অনিন্দ্য রায় বলেন, ‘দলীয় রাজনীতির বাইরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রার্থী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা প্রশংসনীয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের অবস্থান কতটা স্বাধীন থাকবে, সেটাই দেখার বিষয়।’
শিক্ষার্থীদের এই ভিন্নমুখী প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই শিবির তাদের নতুন কৌশল নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামছে। সংগঠনটির নেতাদের প্রত্যাশা, এবার তাদের ইনক্লুসিভ প্যানেলই রাকসু নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এনে দেবে।
জনপ্রিয় সংবাদ

মেঘনায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষে ৮ জন নিহত

ইনক্লুসিভে নতুন ইতিহাস গড়ার স্বপ্নে শিবির; প্যানেলে আছেন নারী, সমন্বয়ক ও সংখ্যালঘু

আপডেট সময় : ০৩:৫০:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের যাত্রা শুরুর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন হয়েছে মোট তিনবার, যেসব নির্বাচনের দুটিতেই দলীয় প্যানেল দেয় শিবির। তবে এর কোনোটিতেই উল্লেখযোগ্য সাফল্য পায়নি এই ছাত্রসংগঠনটি। এ সময়ে হল সংসদ ব্যতীত কেন্দ্রীয় সংসদে কোন পদ  পাওয়ার নজির নেই তাদের। এমন প্রেক্ষাপটে রাকসুতে নিজেদের ইতিহাস ছাপিয়ে নতুন করে ইতিহাস লেখার স্বপ্ন দেখছেন তারা।
এরই মধ্যে ‘ইনক্লুসিভ’ বা অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল ঘোষণা করেছে ছাত্রশিবির। এতে  বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সম্মুখসারীরতে থাকা এবং জুলাই যুদ্ধে আহত শিক্ষার্থী রয়েছেন তেমনি ভিন্ন মতাদর্শ ও সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীসহ ‘ক্লিন ইমেজের’ প্রার্থীদের এই প্যানেলে রাখা হয়েছে।
রাবি শিবির সংশ্লিষ্ট নেতাদের দাবি, ১৯৭৭ সালে ইসলামী ছাত্রশিবিরের যাত্রা শুরুর পর যতগুলো রাকসু নির্বাচন হয়েছে, তার দুটিতে অংশ নিয়েছেন তারা। রাকসু নির্বাচনের এবারের আগে রাকসুর অন্তত দুটিতে নির্বাচনে প্রকাশ্যে প্রার্থী ঘোষণা ও নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছে ছাত্রশিবির, যে নির্বাচনগুলো হয় ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালে। এর মধ্যে সর্বশেষ ১৯৯০ সালের নির্বাচনে ছাত্রশিবির থেকে সহসভাপতি পদে নির্বাচন করেন মো. আব্দুল লতিফ ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে নির্বাচন করেন মো. রফিকুল ইসলাম খান এবং সহ সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে নির্বাচন করেন মো. সাইফুল ইসলাম। ওই নির্বাচনে রাকসুতে কেন্দ্রীয় পদে ছাত্র শিবিরের কোন প্রার্থী নির্বাচিত হননি। তবে হল সংসদের শহীদ শামসুজ্জোহা হলে সবকটিতে জয় লাভ ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা।
ছাত্রশিবির নেতাকর্মীরা বলছেন, সংগঠনের বাইরের দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষার্থীদের প্রার্থী করেছে তারা। এ বৈচিত্র্যই তাদের প্যানেলকে ইনক্লুসিভ (অন্তর্ভুক্তিমূলক) করেছে। এটাই তাদের শক্তির জায়গা।
রাকসুতে এবার শিবিরের ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ নামে এই প্যানেলে সহসভাপতি (ভিপি) পদে রয়েছেন ছাত্রশিবিরের রাবি শাখার  সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রার্থী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাবি’র সাবেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজা। সোচ্চার স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক রাবি শাখার সভাপতি এস এম সালমান সাব্বির লড়বেন সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে। এজিএস প্রার্থী সালমান সাব্বির যে ‘শিবিরের লোক’, তা প্রথম জানা যায় প্যানেল ঘোষণার সময়। এটিকে চমক হিসেবেই দেখছেন শিক্ষার্থীরা।
এই প্যানেলে ব্যতিক্রম হিসেবে জুলাইয়ে চোখ হারানো দ্বীপ মাহবুব ও সনাতন ধর্মাবলম্বী সুজন চন্দ্রকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। প্যানেলে নারী প্রার্থী রয়েছেন তিনজন। নির্ধারিত দুই নারী পদ ছাড়াও সহসমাজসেবা সম্পাদক পদে লড়বেন একজন নারী।
ছাত্রশিবিরের ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করছেন মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। তিনি কালবেলাকে বলেন, ছাত্রশিবির যাত্রা শুরুর পর রাকসুতে ২টি নির্বাচনে নিজস্ব প্যানেলে অংশগ্রহণ করে। তখন সংগঠনের যাত্রার শুরু সময়, আমাদের জনপ্রিয়তা খুব একটা ছিল না, কর্মীর সংখ্যাও সীমিত ছিল। তাই বড় পদে জয় পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সর্বশেষ রাকসু নির্বাচনে শহীদ শামসুজ্জোহা হল সহ বেশ কয়েকটি হলে বিভিন্ন পদে জয়ী হয়েছিলাম। তবে এবারের রাকসু নির্বাচনে  ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের সর্বোচ্চ  সাফল্য নিয়ে আমরা আশাবাদী।
তিনি বলেন, আমাদের প্যানেলের শক্তি ‘ইনক্লুসিভিটি’ (অন্তর্ভুক্তিমূলক)। আমরা যাকে-তাকে বা শুধু শিবির করার কারণে রাখিনি। শিবির করুক বা না করুক, একজনের যেন দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকে,  নেতৃত্বগুণ দেখেই প্যানেলে জায়গা দেওয়া হয়েছে।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘শিবির এবার অন্তত নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে নারী ও সংখ্যালঘু প্রার্থী রাখা ইতিবাচক উদ্যোগ। এতে বোঝা যায়, তারা ভিন্নধারার রাজনীতি নিয়ে ভাবছে।’
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী নিশাত তাবাসসুমের মন্তব্য, ‘শিবিরের ইমেজ অনেক শিক্ষার্থীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। তবে এবারের বৈচিত্র্যময় প্যানেল হয়তো সেই ভাবমূর্তি বদলাতে সাহায্য করতে পারে।’
ইতিহাস বিভাগের ছাত্র অনিন্দ্য রায় বলেন, ‘দলীয় রাজনীতির বাইরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রার্থী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা প্রশংসনীয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের অবস্থান কতটা স্বাধীন থাকবে, সেটাই দেখার বিষয়।’
শিক্ষার্থীদের এই ভিন্নমুখী প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই শিবির তাদের নতুন কৌশল নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামছে। সংগঠনটির নেতাদের প্রত্যাশা, এবার তাদের ইনক্লুসিভ প্যানেলই রাকসু নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এনে দেবে।