০১:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অভাবকে জয় করে স্বর্ণপদক — লালমনিরহাটের লালচাঁন বাদশা এখন সবার গর্ব

oplus_0

দারিদ্র্যের সংসারে জন্ম হলেও থেমে থাকেনি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার আলহাজ্ব গহের আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী লালচাঁন বাদশা। তার বাবা একজন অটোচালক।

সম্প্রতি ৫২তম স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে ৪×৫০ মিটার রিলে সাঁতরে প্রথম স্থান অর্জন করে স্বর্ণপদক জয় করেছেন লালচাঁন। এই সাফল্য যেন দারিদ্র্যকে হার মানানো এক অনন্য উদাহরণ।

দিনে ক্লাস, বিকেলে অনুশীলন এবং রাতে বড় স্বপ্ন— একদিন দেশের পতাকা বুকে ধারণ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাঁতরে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখেন লালচাঁন।

তার অনুশীলন শিক্ষক রায়হান বলেন, “নানা প্রতিকূলতার মাঝেও জাতীয় পর্যায়ে খেলে সাফল্য অর্জন করেছে লালচাঁন। তার সাফল্য শুধু আমাদের বিদ্যালয়ের নয়, এটি বাংলাদেশের এবং পুরো জেলার জন্য গর্বের। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম, হয়ত এখানেই থেমে যাবে, কিন্তু লালচাঁন জেলা, বিভাগ এবং শেষে জাতীয় পর্যায়ে স্বর্ণপদক জিতে আমাদের সকলকে গর্বিত করেছে।”

প্রতিবেশি মেহেরুল জানান, “বাড়ির পাশে আমরা ছোট বেলা থেকে নদীতে সাঁতার কেটেছি। লালচাঁন আমাদের কাছেই সাঁতার শিখেছে এবং দেশের জন্য আরও বড় কিছু করতে পারবে, যদি সরকারের সহযোগিতা থাকে।”

লালচাঁনের বাবা বলেন, “আমি চাই আমার ছেলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলতে পারে। যদি পড়াশোনা ও খেলাধুলার জন্য সরকার সাহায্য করে, তাহলে খুব ভালো হতো। অটো চালিয়ে যা আয় করি, তা মাঝে মাঝে যথেষ্ট হয় না। তবু আমার ছেলে হাল ছাড়ে না।”

লালচাঁনের সহপাঠীরাও তার এই অর্জনে অনুপ্রাণিত। তারা বলেন, “আমরাও একদিন বিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল করতে চাই।”

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রওশন আরা বলেন, “তার সফলতায় আমরা গর্বিত। লালচাঁন অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। আশা করি প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের সুনাম রক্ষা করতে সক্ষম হবে।”

লালচাঁনের মা নাছিমা খাতুন দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে বলেন, “আমরা খুব আনন্দিত। বাবা অটো চালিয়ে আমাদের লেখাপড়ার খরচ চালান, তারপরও লালচাঁন পরিশ্রম করে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।”

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিম মিঞা বলেন, “লালচাঁন আমাদের জন্য গৌরব। উপজেলা প্রশাসন সবসময় তার প্রতিভাকে পৃষ্ঠপোষকতা দেবে যাতে সে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলতে পারে।”

এখন প্রয়োজন শুধু একটু সহযোগিতা ও ভালোবাসা, যাতে লালচাঁনের প্রতিভা দারিদ্র্যের অন্ধকারে হারিয়ে না যায়।

লালচাঁন বাদশার পাশে দাঁড়ান—কারণ এমন সন্তানরাই একদিন বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

অভাবকে জয় করে স্বর্ণপদক — লালমনিরহাটের লালচাঁন বাদশা এখন সবার গর্ব

আপডেট সময় : ০৫:৫১:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

দারিদ্র্যের সংসারে জন্ম হলেও থেমে থাকেনি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার আলহাজ্ব গহের আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী লালচাঁন বাদশা। তার বাবা একজন অটোচালক।

সম্প্রতি ৫২তম স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে ৪×৫০ মিটার রিলে সাঁতরে প্রথম স্থান অর্জন করে স্বর্ণপদক জয় করেছেন লালচাঁন। এই সাফল্য যেন দারিদ্র্যকে হার মানানো এক অনন্য উদাহরণ।

দিনে ক্লাস, বিকেলে অনুশীলন এবং রাতে বড় স্বপ্ন— একদিন দেশের পতাকা বুকে ধারণ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাঁতরে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখেন লালচাঁন।

তার অনুশীলন শিক্ষক রায়হান বলেন, “নানা প্রতিকূলতার মাঝেও জাতীয় পর্যায়ে খেলে সাফল্য অর্জন করেছে লালচাঁন। তার সাফল্য শুধু আমাদের বিদ্যালয়ের নয়, এটি বাংলাদেশের এবং পুরো জেলার জন্য গর্বের। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম, হয়ত এখানেই থেমে যাবে, কিন্তু লালচাঁন জেলা, বিভাগ এবং শেষে জাতীয় পর্যায়ে স্বর্ণপদক জিতে আমাদের সকলকে গর্বিত করেছে।”

প্রতিবেশি মেহেরুল জানান, “বাড়ির পাশে আমরা ছোট বেলা থেকে নদীতে সাঁতার কেটেছি। লালচাঁন আমাদের কাছেই সাঁতার শিখেছে এবং দেশের জন্য আরও বড় কিছু করতে পারবে, যদি সরকারের সহযোগিতা থাকে।”

লালচাঁনের বাবা বলেন, “আমি চাই আমার ছেলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলতে পারে। যদি পড়াশোনা ও খেলাধুলার জন্য সরকার সাহায্য করে, তাহলে খুব ভালো হতো। অটো চালিয়ে যা আয় করি, তা মাঝে মাঝে যথেষ্ট হয় না। তবু আমার ছেলে হাল ছাড়ে না।”

লালচাঁনের সহপাঠীরাও তার এই অর্জনে অনুপ্রাণিত। তারা বলেন, “আমরাও একদিন বিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল করতে চাই।”

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রওশন আরা বলেন, “তার সফলতায় আমরা গর্বিত। লালচাঁন অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। আশা করি প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের সুনাম রক্ষা করতে সক্ষম হবে।”

লালচাঁনের মা নাছিমা খাতুন দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে বলেন, “আমরা খুব আনন্দিত। বাবা অটো চালিয়ে আমাদের লেখাপড়ার খরচ চালান, তারপরও লালচাঁন পরিশ্রম করে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।”

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিম মিঞা বলেন, “লালচাঁন আমাদের জন্য গৌরব। উপজেলা প্রশাসন সবসময় তার প্রতিভাকে পৃষ্ঠপোষকতা দেবে যাতে সে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলতে পারে।”

এখন প্রয়োজন শুধু একটু সহযোগিতা ও ভালোবাসা, যাতে লালচাঁনের প্রতিভা দারিদ্র্যের অন্ধকারে হারিয়ে না যায়।

লালচাঁন বাদশার পাশে দাঁড়ান—কারণ এমন সন্তানরাই একদিন বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।

এমআর/সবা