০৪:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফেনীর পরশুরামে টিসিবি’র পন্যে  নিম্নমানের চাল বিক্রির  অভিযোগ 

ফেনীর পরশুরামে টিসিবির (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) ভর্তুকি মূল্যের পন্যে পঁচা, পোঁকাধরা, দূর্গন্ধযুক্ত, নিম্ন মানের চাউল ও কালার নষ্ট চাল বিক্রির অভিযোগ করছে ভুক্তভোগী ক্রেতারা।
গত একসপ্তাহ উপজেলায় একটি পৌরসভা ও তিনটি ইউনিয়নে টিসিবির ডিলাররা নিম্ন মানের চাল বিক্রি করেন।।
ভোক্তারা অল্প দামে অধিক খরচ পাওয়ার আশায় টিসিবির পন্য ক্রয় করেন।কিন্তু দেখা যায় ক্রয় কৃত চাল খাওয়ারতো দূরের কথা বাসায় নেওয়ার উপযোগী নয়।
ভোক্তারা পঁচা, দুর্গন্ধ এবং চালের কালার নষ্ট এসব চাল নিতে অস্বীকার জানালেও যারা দিনে আয় করে রাতে খায়, বাধ্য হয়ে, এসব চাল নিতে হচ্ছে।
পরশুরাম পৌরসভা ডিলার মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজর কামরুল হাসান বাবু জানান, নিম্ন মানের চাল বিক্রি স্বীকার করলেও কিন্তু দায় নিতে আপত্তি জানিয়েছেন।তিনি জানান, উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে ওএমএস ডিলার এই চালই গ্রহণ করে। তারা আমাদেরকে যে চাল বুঝিয়ে দেয় আমরা সে সব চাল ও পন্য সামগ্রি বিক্রি করি।
তিনি আরও জানান, আমরা নজরুল টেড্রার্স স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম এবং মেসার্স আলম ট্রের্ডাস নুরুল আলম কে  নিম্ন মানের চালের বিষয় অবগত করছি। কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, পরশুরাম উপজেলায় ৬৫৭৮ জন ভোক্তা  টিসিবির  কার্ডের মাধ্যমে  পন্যসামগ্রি ক্রয় করেন। প্রতি প্যাকেজে ২ লিটার সয়াবিন তেল, ২ কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, ৫ কেজি চাল ক্রয় করতে পারেন। কিন্তু এসব পন্যের মধ্যে চিনি, ডাল, তেলের মান মোটামুটি ভালো থাকলেও নিম্ন মানের চাল বিক্রি হচ্ছে। যা খাওয়ার জন্য অনুপযোগী।
স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে পরশুরাম পৌরসভা ডিলার পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, কার্ডধারীরা লাইনে দাঁড়িয়ে মালপত্র কিনছেন। কিন্তু চালের মান অত্যন্ত নিম্নমানের। এসব চাল পেয়ে কার্ডধারীরা খুবই হতাশ।
সুবিধা ভোগী জয়নাল জানান, টিসিবির যে চাল পাওয়া গেছে খাওয়াতো দূরের কথা, বাসায়ও নেয়া যাবে না। আমি আমার দোকানে টেবিলের নিচে পেলে রাখছি।এই চাল কি করমু চিন্তায় আছি।
সুবিধা ভোগী কলিমার মা জানান, আমরা দিনে আনি বিকেলে খাই।আমরা গরীব মানুষ। জীবন রক্ষার জন্য কম দামে টিসিবির মাল নিতে আসি।এখানে দুর্গন্ধযুক্ত চাল,নিম্ন মানের চাল দিচ্ছে,খাওয়া লাগবে কিছু করার নেই। আমরা নিরুপায়। তাই উপায় না পেয়ে এই চাল নিতে হচ্ছে।
নসির আহমেদ নামে একজন ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আমরা গরীব, আমরা অসহায়, আমাদের জন্য কেউই ধরে। সবাই গরীবের মাথা বিক্রি করে খায়। যে দিন টিসিবির মাল দিবে ঐ দিন আর কোনো কাজ করা যায় না। সারা দিন লাইনে দাঁড়িয়ে কম দামের সুবিধা নেওয়ার জন্য। কিন্তু ভালো চালের বদলে নষ্ট চাল বিক্রি হচ্ছে। এটি আমাদের সাথে প্রতারণা। তারা মনে করে আল্লাহ ওয়াস্তে দিচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন জেনে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
নিম্ন মানের চাল বিষয়ে জানতে চাইলে  সরবারাহ কারী ডিলার নজরুল ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম জানান, গুদাম থেকে সরকারি ভাবে যে চাল দিয়েছে আমরা তা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করেছি। প্রতি বার চাল ভালো দিলেও এবারের চাল গুলো নিম্ন মানের আমরা উপরে জানাইছি।
মেসার্স আলম ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী নুরুল আলম জানান,উপজেলা প্রশাসনের স্বাক্ষরে যে চাল দিয়েছে আমরা সরকারি বস্তা, সরকারি মোড়কের চাল ডিলার কে দিয়েছি। আমাদের কিছুই করার নেই। প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে সমস্যা সমাধান করা যাবে। আর না হয় কিছু করার নেই। কিন্তু চাল যে নিম্ন মানের তা সত্য।
খাদ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ খাদ্য পরিদর্শক  নাজমা বেগম জানান, আমি এই চাল রিসিভ করি নাই। এই চাল সাত মাস আগে মহিবুল হাসান নোমান স্যার রিসিভ করেছে। আমি শুধু বিতরণ করছি। ব্যবস্থা নিব এখন সময় নেই। বিতরণ শেষ পর্যায়ে। গুদামে বেশি চাল নেই।  ভবিষ্যতে ভালো মানের চাল সরবরাহ করার চেষ্টা করব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া সুলতানা জানান , এব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয় টি খতিয়ে দেখছি। সামনে ভালো মানের চাল সরবরাহ করার চেষ্টা করব।
শু/সবা
জনপ্রিয় সংবাদ

ফেনীর পরশুরামে টিসিবি’র পন্যে  নিম্নমানের চাল বিক্রির  অভিযোগ 

আপডেট সময় : ০৬:৩৬:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
ফেনীর পরশুরামে টিসিবির (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) ভর্তুকি মূল্যের পন্যে পঁচা, পোঁকাধরা, দূর্গন্ধযুক্ত, নিম্ন মানের চাউল ও কালার নষ্ট চাল বিক্রির অভিযোগ করছে ভুক্তভোগী ক্রেতারা।
গত একসপ্তাহ উপজেলায় একটি পৌরসভা ও তিনটি ইউনিয়নে টিসিবির ডিলাররা নিম্ন মানের চাল বিক্রি করেন।।
ভোক্তারা অল্প দামে অধিক খরচ পাওয়ার আশায় টিসিবির পন্য ক্রয় করেন।কিন্তু দেখা যায় ক্রয় কৃত চাল খাওয়ারতো দূরের কথা বাসায় নেওয়ার উপযোগী নয়।
ভোক্তারা পঁচা, দুর্গন্ধ এবং চালের কালার নষ্ট এসব চাল নিতে অস্বীকার জানালেও যারা দিনে আয় করে রাতে খায়, বাধ্য হয়ে, এসব চাল নিতে হচ্ছে।
পরশুরাম পৌরসভা ডিলার মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজর কামরুল হাসান বাবু জানান, নিম্ন মানের চাল বিক্রি স্বীকার করলেও কিন্তু দায় নিতে আপত্তি জানিয়েছেন।তিনি জানান, উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে ওএমএস ডিলার এই চালই গ্রহণ করে। তারা আমাদেরকে যে চাল বুঝিয়ে দেয় আমরা সে সব চাল ও পন্য সামগ্রি বিক্রি করি।
তিনি আরও জানান, আমরা নজরুল টেড্রার্স স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম এবং মেসার্স আলম ট্রের্ডাস নুরুল আলম কে  নিম্ন মানের চালের বিষয় অবগত করছি। কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, পরশুরাম উপজেলায় ৬৫৭৮ জন ভোক্তা  টিসিবির  কার্ডের মাধ্যমে  পন্যসামগ্রি ক্রয় করেন। প্রতি প্যাকেজে ২ লিটার সয়াবিন তেল, ২ কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, ৫ কেজি চাল ক্রয় করতে পারেন। কিন্তু এসব পন্যের মধ্যে চিনি, ডাল, তেলের মান মোটামুটি ভালো থাকলেও নিম্ন মানের চাল বিক্রি হচ্ছে। যা খাওয়ার জন্য অনুপযোগী।
স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে পরশুরাম পৌরসভা ডিলার পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, কার্ডধারীরা লাইনে দাঁড়িয়ে মালপত্র কিনছেন। কিন্তু চালের মান অত্যন্ত নিম্নমানের। এসব চাল পেয়ে কার্ডধারীরা খুবই হতাশ।
সুবিধা ভোগী জয়নাল জানান, টিসিবির যে চাল পাওয়া গেছে খাওয়াতো দূরের কথা, বাসায়ও নেয়া যাবে না। আমি আমার দোকানে টেবিলের নিচে পেলে রাখছি।এই চাল কি করমু চিন্তায় আছি।
সুবিধা ভোগী কলিমার মা জানান, আমরা দিনে আনি বিকেলে খাই।আমরা গরীব মানুষ। জীবন রক্ষার জন্য কম দামে টিসিবির মাল নিতে আসি।এখানে দুর্গন্ধযুক্ত চাল,নিম্ন মানের চাল দিচ্ছে,খাওয়া লাগবে কিছু করার নেই। আমরা নিরুপায়। তাই উপায় না পেয়ে এই চাল নিতে হচ্ছে।
নসির আহমেদ নামে একজন ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আমরা গরীব, আমরা অসহায়, আমাদের জন্য কেউই ধরে। সবাই গরীবের মাথা বিক্রি করে খায়। যে দিন টিসিবির মাল দিবে ঐ দিন আর কোনো কাজ করা যায় না। সারা দিন লাইনে দাঁড়িয়ে কম দামের সুবিধা নেওয়ার জন্য। কিন্তু ভালো চালের বদলে নষ্ট চাল বিক্রি হচ্ছে। এটি আমাদের সাথে প্রতারণা। তারা মনে করে আল্লাহ ওয়াস্তে দিচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন জেনে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
নিম্ন মানের চাল বিষয়ে জানতে চাইলে  সরবারাহ কারী ডিলার নজরুল ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম জানান, গুদাম থেকে সরকারি ভাবে যে চাল দিয়েছে আমরা তা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করেছি। প্রতি বার চাল ভালো দিলেও এবারের চাল গুলো নিম্ন মানের আমরা উপরে জানাইছি।
মেসার্স আলম ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী নুরুল আলম জানান,উপজেলা প্রশাসনের স্বাক্ষরে যে চাল দিয়েছে আমরা সরকারি বস্তা, সরকারি মোড়কের চাল ডিলার কে দিয়েছি। আমাদের কিছুই করার নেই। প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে সমস্যা সমাধান করা যাবে। আর না হয় কিছু করার নেই। কিন্তু চাল যে নিম্ন মানের তা সত্য।
খাদ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ খাদ্য পরিদর্শক  নাজমা বেগম জানান, আমি এই চাল রিসিভ করি নাই। এই চাল সাত মাস আগে মহিবুল হাসান নোমান স্যার রিসিভ করেছে। আমি শুধু বিতরণ করছি। ব্যবস্থা নিব এখন সময় নেই। বিতরণ শেষ পর্যায়ে। গুদামে বেশি চাল নেই।  ভবিষ্যতে ভালো মানের চাল সরবরাহ করার চেষ্টা করব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া সুলতানা জানান , এব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয় টি খতিয়ে দেখছি। সামনে ভালো মানের চাল সরবরাহ করার চেষ্টা করব।
শু/সবা