০৮:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ

ঘুষ দেওয়ার শীর্ষে নোয়াখালী জেলা, সবচেয়ে কম দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ

দেশে সরকারি সেবা নিতে গিয়ে সবচেয়ে ধনী জনগোষ্ঠীই সবচেয়ে বেশি ঘুষ দিচ্ছে। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

জরিপে দেখা গেছে, গত ১২ মাসে যারা সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং ঘুষ দিয়েছেন, তাদের মধ্যে ৩৫ দশমিক ১৬ শতাংশই হলেন সবচেয়ে ধনী শ্রেণির। তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে দরিদ্র শ্রেণিতে এই হার ২৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের মানুষের আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঘুষ দেওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে।

আজ বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভের (সিপিএস) ২০২৫’ শীর্ষক এই জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিবিএস। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার।

বিবিএসের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এস এম শাকিল আখতার এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে জরিপের তথ্য তুলে ধরেন সিপিএস প্রকল্পের পরিচালক রাশেদ-ই মাসতাহাব। স্বাগত বক্তব্য দেন বিবিএসের সেন্সাস উইংয়ের পরিচালক মো. মাহামুদুজ্জামান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিবিএসের এসডিজি সেলের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা (উপপরিচালক) মো. আলমগীর হোসেন।

বিবিএস জানায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের ৬৪ জেলার ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ১৮ বছর ও তার বেশি বয়সের ৮৪ হাজার ৮০৭ নারী-পুরুষ এই জরিপে অংশ নেন। জরিপে নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিরাপত্তা, সুশাসন, সরকারি সেবার মান, দুর্নীতি, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার ও বৈষম্যবিষয়ক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) ১৬ অভীষ্টের ৬টির অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়।

ঘুষ প্রদানের ক্ষেত্রে জেলা পর্যায়ে বড় ধরনের বৈষম্য দেখা গেছে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, এক বছরে ঘুষ লেনদেনে শীর্ষে আছে নোয়াখালী জেলা। এই জেলায় সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগকারী নাগরিকদের মধ্যে ৫৭ দশমিক ১৭ শতাংশ ঘুষ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কুমিল্লা জেলা, যেখানে ঘুষ দেওয়া-নেওয়ার হার ৫৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এরপর ফরিদপুরে ৫১.৭০ শতাংশ, ভোলায় ৪৯.০১ শতাংশ এবং সিরাজগঞ্জে ৪৮.৩৭ শতাংশ মানুষ ঘুষ দেন। এসব জেলায় সরকারি সেবা পেতে ঘুষ দেওয়ার হার জাতীয় গড়ের (৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ) চেয়ে অনেক বেশি।

অন্যদিকে, কিছু জেলায় ঘুষের হার তুলনামূলক কম। সবচেয়ে কম ঘুষ দেওয়ার জেলা হিসেবে উঠে এসেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাম। সেখানে এই হার ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া মাগুরায় ১৩.৯৮ শতাংশ, লালমনিরহাটে ১৪.৫০ শতাংশ, গাজীপুরে ১৫.২৪ শতাংশ ও সিলেটে ১৫.৬১ শতাংশ মানুষ সরকারি সেবা পেতে ঘুষ প্রদান করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেওয়ার এই প্রবণতা উদ্বেগজনক। কারণ, সাধারণভাবে ধারণা ছিল যে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেশি ঘুষ দিতে বাধ্য হন। কিন্তু তথ্য বলছে, উচ্চ আয়ের মানুষ সরকারি কাজ দ্রুত করাতে কিংবা সুবিধা পেতে তুলনামূলক বেশি ঘুষ দিচ্ছেন কিংবা এই শ্রেণির কাছ থেকে বেশি ঘুষ নেওয়া হচ্ছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঘুষ দেওয়ার হার ৩২ দশমিক ২৪ শতাংশ। উচ্চ-মধ্যম আয়ের ক্ষেত্রে এই হার ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ।

বিবিএসের কর্মকর্তারা মনে করেন, এ চিত্র প্রমাণ করে যে দুর্নীতি শুধু দারিদ্র্যজনিত সমস্যা নয়; বরং এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও আচরণগত সংকট।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ

ঘুষ দেওয়ার শীর্ষে নোয়াখালী জেলা, সবচেয়ে কম দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ

আপডেট সময় : ০৭:০১:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫

দেশে সরকারি সেবা নিতে গিয়ে সবচেয়ে ধনী জনগোষ্ঠীই সবচেয়ে বেশি ঘুষ দিচ্ছে। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

জরিপে দেখা গেছে, গত ১২ মাসে যারা সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং ঘুষ দিয়েছেন, তাদের মধ্যে ৩৫ দশমিক ১৬ শতাংশই হলেন সবচেয়ে ধনী শ্রেণির। তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে দরিদ্র শ্রেণিতে এই হার ২৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের মানুষের আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঘুষ দেওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে।

আজ বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভের (সিপিএস) ২০২৫’ শীর্ষক এই জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিবিএস। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার।

বিবিএসের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এস এম শাকিল আখতার এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে জরিপের তথ্য তুলে ধরেন সিপিএস প্রকল্পের পরিচালক রাশেদ-ই মাসতাহাব। স্বাগত বক্তব্য দেন বিবিএসের সেন্সাস উইংয়ের পরিচালক মো. মাহামুদুজ্জামান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিবিএসের এসডিজি সেলের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা (উপপরিচালক) মো. আলমগীর হোসেন।

বিবিএস জানায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের ৬৪ জেলার ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ১৮ বছর ও তার বেশি বয়সের ৮৪ হাজার ৮০৭ নারী-পুরুষ এই জরিপে অংশ নেন। জরিপে নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিরাপত্তা, সুশাসন, সরকারি সেবার মান, দুর্নীতি, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার ও বৈষম্যবিষয়ক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) ১৬ অভীষ্টের ৬টির অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়।

ঘুষ প্রদানের ক্ষেত্রে জেলা পর্যায়ে বড় ধরনের বৈষম্য দেখা গেছে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, এক বছরে ঘুষ লেনদেনে শীর্ষে আছে নোয়াখালী জেলা। এই জেলায় সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগকারী নাগরিকদের মধ্যে ৫৭ দশমিক ১৭ শতাংশ ঘুষ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কুমিল্লা জেলা, যেখানে ঘুষ দেওয়া-নেওয়ার হার ৫৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এরপর ফরিদপুরে ৫১.৭০ শতাংশ, ভোলায় ৪৯.০১ শতাংশ এবং সিরাজগঞ্জে ৪৮.৩৭ শতাংশ মানুষ ঘুষ দেন। এসব জেলায় সরকারি সেবা পেতে ঘুষ দেওয়ার হার জাতীয় গড়ের (৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ) চেয়ে অনেক বেশি।

অন্যদিকে, কিছু জেলায় ঘুষের হার তুলনামূলক কম। সবচেয়ে কম ঘুষ দেওয়ার জেলা হিসেবে উঠে এসেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাম। সেখানে এই হার ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া মাগুরায় ১৩.৯৮ শতাংশ, লালমনিরহাটে ১৪.৫০ শতাংশ, গাজীপুরে ১৫.২৪ শতাংশ ও সিলেটে ১৫.৬১ শতাংশ মানুষ সরকারি সেবা পেতে ঘুষ প্রদান করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেওয়ার এই প্রবণতা উদ্বেগজনক। কারণ, সাধারণভাবে ধারণা ছিল যে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেশি ঘুষ দিতে বাধ্য হন। কিন্তু তথ্য বলছে, উচ্চ আয়ের মানুষ সরকারি কাজ দ্রুত করাতে কিংবা সুবিধা পেতে তুলনামূলক বেশি ঘুষ দিচ্ছেন কিংবা এই শ্রেণির কাছ থেকে বেশি ঘুষ নেওয়া হচ্ছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঘুষ দেওয়ার হার ৩২ দশমিক ২৪ শতাংশ। উচ্চ-মধ্যম আয়ের ক্ষেত্রে এই হার ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ।

বিবিএসের কর্মকর্তারা মনে করেন, এ চিত্র প্রমাণ করে যে দুর্নীতি শুধু দারিদ্র্যজনিত সমস্যা নয়; বরং এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও আচরণগত সংকট।

এমআর/সবা