- ২০১৯ সালে পরিবেশদূষণে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে
- মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে
ঢাকার একটি হোটেলে গতকাল বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে ‘দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালাইসিস (সিইএ)’ নামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশে ২০১৯ সালে বায়ুদূষণসহ চার ধরনের পরিবেশদূষণে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বায়ুদূষণের কারণে। এছাড়া দূষণের কারণে ওই বছর দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দূষিত বায়ুর, শহরের তালিকায় উপরের দিকে থাকছে ঢাকা। এই পরিস্থিতিতে গতকাল প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র উঠে এসেছে। ‘দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালাইসিস (সিইএ)’ নামের প্রতিবেদনটি গতকাল দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণ, অনিরাপদ পানি, নিম্নমানের পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি এবং সিসা দূষণে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকালমৃত্যুর কারণ। ঘরের ও বাইরের বায়ুদূষণ স্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এই ক্ষতির পরিমাণ ২০১৯ সালের জিডিপির ৮ দশমিক ৩ শতাংশের সমান। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ উদ্বেগজনক মাত্রার দূষণ ও পরিবেশগত স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। এটা তুলনামূলক বেশি ক্ষতি করছে দরিদ্র, পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু, বয়স্ক ও নারীদের। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি এই প্রতিবেদনের তথ্য ও উপাত্তগুলো পুরোপু- রি গ্রহণ করেননি, আবার একেবারে সত্য নয় তাও বলেননি। মন্ত্রী বলেন, ‘সমস্যা যে নেই তা আমরা কখনোই বলবো না। আমরা স্বীকার করছি, অবশ্যই পরিবেশের নানা সমস্যা আছে। কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ এতটা কি না তা আমাদের অবশ্যই নিজেদের মূল্যায়ন করতে হবে।’ মন্ত্রীর বক্তব্যের আগে প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, কোনো অনুষ্ঠানে মোড়ক উন্মোচন একটা উদযাপনের বিষয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজকের এই প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচনের মধ্যে কোনো আনন্দ নেই। এটা আমাদের একটা মারাত্মক ভাবনার বিষয়কে তুলে ধরছে। তবে প্রতিবেদনটি তাৎপর্যপূর্ণ সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। সংবিধানের ১৮ অনুচ্ছেদ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘সাংবিধানিকভাবেই আমরা মানুষের সুস্থ সুন্দর জীবনযাপন নিশ্চিত করার জন্য দায়বদ্ধ। কিন্তু আমাদের নানা ধরনের সমস্যা আছে।
আমাদের অর্থের সমস্যা আছে, দক্ষতার সমস্যা আছে। পরিবেশগত সমস্যা নিরসনে অর্থ ও দক্ষতা উভয়েরই দরকার।’ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অসহায় শিকার উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু খাতে যে অর্থায়ন হয়েছে, তার ৪০ শতাংশ এসেছে ঋণ হিসেবে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বড় বড় দেশ যারা জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে তাদের কোনো দায় নেই, কিন্তু দায়টা আমাদের নিতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের হয় অনুদান দিতে হবে কিংবা সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে। দেশের সব উন্নয়নতৎপরতার মধ্যে সবুজ ও জলবায়ুসহিষ্ণতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। বায়ুদূষণে মৃত্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, দেশের জিডিপি বায়ুদূষণের কারণে নষ্ট হয়। এটা একটা বড় ধরনের ক্ষতি। ৮ শতাংশ বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে আন্তঃসীমান্ত দূষিত বায়ু প্রবাহের উৎস নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ভারতের পাঞ্জাবের দূষিত বায়ু পাকিস্তানের পাঞ্জাবে যায়। তেমনিভাবে এক দেশের দূষিত বায়ু অপর দেশে যায়। এতে কাউকে দোষ দেওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে ‘দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালাইসিস (সিইএ)’ নামের এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে ‘দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালাইসিস (সিইএ)’ নামের এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য পরিবেশের ঝুঁকি মোকাবিলা একই সঙ্গে উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার। । আমরা পৃথিবীর নানা দেশে দেখেছি যে, পরিবেশের ক্ষতি করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলে তা টেকসই হতে পারে না।’ তিনি বলেন, শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির গতিপথ টেকসই রাখতে এবং শহর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নতি করতে বাংলাদেশ কোনোভাবেই পরিবেশকে উপেক্ষা করতে পারবে না। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে পরিবেশের ক্ষয় রোধ এবং জলবায়ু সহিষ্ণুতা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

























