০৪:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দ্বিতীয় দফার ভোটের ৩৯০ প্রার্থীই কোটিপতি

লোকসভা নির্বাচন

➤ মোদির বিরুদ্ধে ইসিতে ২২০৯ নাগরিকের চিঠি
➤ ভিন্ন মতাবলম্বীদের হয়রানি করছে মোদি সরকার : যুক্তরাষ্ট্র

ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে। গত ১৯ এপ্রিল নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ হয়; যা চলবে আগামী ১ জুন পর্যন্ত। সাত দফার নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় দেশটির ১৩ রাজ্যের ৮৯টি লোকসভা আসনের ভোটগ্রহণ হবে আগামী ২৬ এপ্রিল। নির্বাচনে এবার নজর কাড়ছেন কোটিপতি প্রার্থীরা। দ্বিতীয় দফার ভোটে ৩৯০ জন প্রার্থীই কোটিপতি।

 

 

এদিকে ভারতের হাজার হাজার নাগরিক নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি লিখে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কংগ্রেস ও মুসলমানদের নিয়ে নির্বাচনী জনসভায় যা বলেছেন, তা ভয়ংকর। ভারতীয় মুসলমানদের প্রধানমন্ত্রী সরাসরি আক্রমণ করেছেন। বিশিষ্ট নাগরিকদের চিঠি সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন কিন্তু নির্বিকার। অন্যদিকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে গত বছর সংঘটিত দাঙ্গায় সংখ্যালঘুদের ওপর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে নির্যাতন চালানোর প্রমাণ পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া সরকার ও এর সমর্থকরা ভিন্ন মতাবলম্বী ও সরকারের সমালোচকদের ওপর চাপ প্রয়োগ ও হয়রানি করেছে।

 

প্রথম দফায় ভোটে দুই হাজার প্রার্থীর মধ্যে অনেকেই শতকোটি রুপির বেশি মালিক ছিলেন। এবার দ্বিতীয় দফার ভোটে প্রায় ৭০০ কোটির সম্পদের মালিকও প্রার্থী রয়েছেন। আগামী শুক্রবার লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় দফার ভোটে দুজন প্রার্থী ৫০০ কোটি রুপি সম্পদের মালিক। তারা কংগ্রেস থেকে প্রার্থিতা করছেন। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ধনী প্রার্থী বিজেপির, অভিনেত্রী হেমা মালিনী। কংগ্রেসের দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কর্ণাটকের মাগু এবং ব্যাঙ্গালুরুর গ্রামীন আসন থেকে। আর হেমা মালিনী উত্তরপ্রদেশের মথুরা লোকসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবার।

 

দ্বিতীয় দফার ভোটে ১৩ রাজ্যে মোট ১১৯৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ১১৯২ জনের হলফনামা বিশ্লেষণ করেছে দেশটির নির্বাচনী তথ্য সংক্রান্ত পর্যবেক্ষক সংস্থা এডিআর। সেই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, দ্বিতীয় দফার ভোটে ৩৯০ জন প্রার্থীই এবার কোটিপতি। আর এমন ছয়জন প্রার্থী রয়েছেন, যাদের কোনও সহায়-সম্পদ নেই। কারো হাতে নগদ ৫০০, কারও ১ হাজার রুপি আছে। তাদের নেই কোনো বাড়ি, থাকার জায়গা এমনকি মোবাইল ফোনও।

 

এডিআর বলছে, শীর্ষ তিন ধনী প্রার্থীর দুজন কংগ্রেসের। তাদের নাম ভেঙ্কাটারামানে গৌড়া এবং ডি কে সুরেশ। গৌড়ার মোট সম্পদের পরিমান ৭১৫ কোটি রুপি। ডি কে সুরেশের আছে ৬২২ কোটি রুপির সম্পদ। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ধনী প্রার্থী হেমা মালিনীর রয়েছে ২৭৮ কোটি রুপির সম্পদ।

 

এর আগে প্রথম দফার ভোটে ২৭৮ কোটি রুপির মালিক হিসেবে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ধনী প্রার্থীর রেকর্ড তৈরি করেছিলেন। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে সবচেয়ে দরিদ্র প্রার্থীর রেকর্ডও রয়েছে। মাত্র ৫০০ রুপি পকেটে নিয়ে মহারাষ্ট্রের নান্দের লোকসভা আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নির্দল প্রার্থী লক্ষণ নাগরাও।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের দাবি নিয়ে একটি মন্তব্যও তারা করেনি। অথচ এই কমিশনই মাত্র কয়েক দিন আগে এক বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্যে জন্য কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরযেওয়ালাকে ৪৮ ঘণ্টা প্রচার না করার শাস্তি দিয়েছিল। তাঁর অপরাধ, উত্তর প্রদেশের মথুরা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী হেমা মালিনীর বিরুদ্ধে তিনি কিছু ‘কুমন্তব্য’ করেছিলেন।

 

ইসির কাছে গত সোমবার দুটি আবেদন পৌঁছেছে। একটি ‘সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল’ নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে। তাতে সই করেছেন ২২০৯ বিশিষ্ট নাগরিক। ইসিকে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলে তারা জানিয়েছেন, যে ভাষায় মোদি কথা বলেছেন, তাতে বিশ্বের কাছে ‘গণতন্ত্রের ধাত্রী’র মর্যাদা হানি হয়েছে ভয়ংকরভাবে। দ্বিতীয় আবেদন পাঠিয়েছে ‘সংবিধান বাঁচাও নাগরিক অভিযান’ নামের আরেকটি সংগঠন। তাতে সই করেছেন ১৭ হাজার ৪০০ মানুষ। সেই আবেদনে বলা হয়েছে, এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের পাশাপাশি ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনও ভঙ্গ করেছেন। কারণ, ওই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শুধু সাম্প্রদায়িকতাতেই উসকে দেননি, মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের ঘৃণাও বাড়িয়ে দিয়েছেন।

 

এই সংগঠনের স্বাক্ষরদাতারা বলেছেন, কংগ্রেস দল, তাদের ইশতেহার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে মোদি শুধু নির্জলা মিথ্যাই বলেননি, মুসলমানদের তিনি অনুপ্রবেশকারী বলেছেন। অসম্মান করেছেন গাদা গাদা সন্তান উৎপাদন করে বলে। আবেদনে তারা বলেছেন, এখনই মোদিকে ভর্ৎসনা করা হোক। তাঁর প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক, যা এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে কমিশন করেছে। কিন্তু কমিশন অদ্ভুতভাবে নির্বিকার ও নিরুত্তর। এত গুরুতর মন্তব্যের পর ৪৮ ঘণ্টা কেটে গেলেও ব্যবস্থা গ্রহণ তো দূরের কথা, কোনো মন্তব্য পর্যন্ত তারা করেনি। দ্বিতীয় দফার নির্বাচন আগামী শুক্রবার।

 

আচরণবিধি অনুযায়ী, নির্বাচনী প্রচারে ধর্মের ব্যবহার অনৈতিক ও অন্যায় হলেও এবার রাম নবমীতে আসামে প্রচারে গিয়ে মোদি সরাসরি ধর্মের আধারে ভোট চেয়েছেন। সেদিন অযোধ্যা মন্দিরে ‘সূর্য তিলক’ অনুষ্ঠান ছিল। তার উল্লেখ করে ও ‘জয় শ্রীরাম ধ্বনি’ দিয়ে নির্বাচনী জনসভায় মোদি সবাইকে ওই সময় মুঠোফোনের আলো জ্বালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। জনসভার পর রামলালার কপালে পরা সূর্য তিলকের ছবি দিয়ে বিজেপির সরকারি ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে লেখা হয়েছিল, ‘আপনার একটি ভোটের ক্ষমতা এমনই।’

 

অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত বার্ষিক মানবাধিকার মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মণিপুরে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনায় এবং সাংবাদিক-ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর নির্যাতনের ‘উল্লেখযোগ্য’ প্রমাণ পেয়েছে। গত বছরের মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সংঘটিত দাঙ্গায় অন্তত ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ভারতের অন্যান্য অংশেও সরকার ও এর সমর্থকেরা গণমাধ্যম ও সরকারের সমালোচকদের ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি ও হয়রানি করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ২০২৩ সালে বিবিসি মোদি সরকারের সমালোচনামূলক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশের পর ভারতের আয়কর বিভাগ সংবাদমাধ্যমটির কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়েছে। ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা তাঁদের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য ছড়িয়ে সহিংসতার আহ্বান জানানোসহ নানা অভিযোগ করেছেন। তবে মোদি সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, তার নীতিমালা সব ভারতীয়র উপকারের লক্ষ্যেই প্রণীত।

 

মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর অভিযোগ, মোদির শাসনামলে জলবায়ু পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তাদের অভিযোগ, মোদির আমলে বিদ্বেষী বক্তব্য, মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রয়োগ এবং অবৈধ স্থাপনা অপসারণের নামে মুসলিম স্থাপনা ভেঙে ফেলার মতো কাজ করা হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় দফার ভোটের ৩৯০ প্রার্থীই কোটিপতি

আপডেট সময় : ০৭:৫৯:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

➤ মোদির বিরুদ্ধে ইসিতে ২২০৯ নাগরিকের চিঠি
➤ ভিন্ন মতাবলম্বীদের হয়রানি করছে মোদি সরকার : যুক্তরাষ্ট্র

ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে। গত ১৯ এপ্রিল নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ হয়; যা চলবে আগামী ১ জুন পর্যন্ত। সাত দফার নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় দেশটির ১৩ রাজ্যের ৮৯টি লোকসভা আসনের ভোটগ্রহণ হবে আগামী ২৬ এপ্রিল। নির্বাচনে এবার নজর কাড়ছেন কোটিপতি প্রার্থীরা। দ্বিতীয় দফার ভোটে ৩৯০ জন প্রার্থীই কোটিপতি।

 

 

এদিকে ভারতের হাজার হাজার নাগরিক নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি লিখে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কংগ্রেস ও মুসলমানদের নিয়ে নির্বাচনী জনসভায় যা বলেছেন, তা ভয়ংকর। ভারতীয় মুসলমানদের প্রধানমন্ত্রী সরাসরি আক্রমণ করেছেন। বিশিষ্ট নাগরিকদের চিঠি সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন কিন্তু নির্বিকার। অন্যদিকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে গত বছর সংঘটিত দাঙ্গায় সংখ্যালঘুদের ওপর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে নির্যাতন চালানোর প্রমাণ পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া সরকার ও এর সমর্থকরা ভিন্ন মতাবলম্বী ও সরকারের সমালোচকদের ওপর চাপ প্রয়োগ ও হয়রানি করেছে।

 

প্রথম দফায় ভোটে দুই হাজার প্রার্থীর মধ্যে অনেকেই শতকোটি রুপির বেশি মালিক ছিলেন। এবার দ্বিতীয় দফার ভোটে প্রায় ৭০০ কোটির সম্পদের মালিকও প্রার্থী রয়েছেন। আগামী শুক্রবার লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় দফার ভোটে দুজন প্রার্থী ৫০০ কোটি রুপি সম্পদের মালিক। তারা কংগ্রেস থেকে প্রার্থিতা করছেন। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ধনী প্রার্থী বিজেপির, অভিনেত্রী হেমা মালিনী। কংগ্রেসের দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কর্ণাটকের মাগু এবং ব্যাঙ্গালুরুর গ্রামীন আসন থেকে। আর হেমা মালিনী উত্তরপ্রদেশের মথুরা লোকসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবার।

 

দ্বিতীয় দফার ভোটে ১৩ রাজ্যে মোট ১১৯৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ১১৯২ জনের হলফনামা বিশ্লেষণ করেছে দেশটির নির্বাচনী তথ্য সংক্রান্ত পর্যবেক্ষক সংস্থা এডিআর। সেই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, দ্বিতীয় দফার ভোটে ৩৯০ জন প্রার্থীই এবার কোটিপতি। আর এমন ছয়জন প্রার্থী রয়েছেন, যাদের কোনও সহায়-সম্পদ নেই। কারো হাতে নগদ ৫০০, কারও ১ হাজার রুপি আছে। তাদের নেই কোনো বাড়ি, থাকার জায়গা এমনকি মোবাইল ফোনও।

 

এডিআর বলছে, শীর্ষ তিন ধনী প্রার্থীর দুজন কংগ্রেসের। তাদের নাম ভেঙ্কাটারামানে গৌড়া এবং ডি কে সুরেশ। গৌড়ার মোট সম্পদের পরিমান ৭১৫ কোটি রুপি। ডি কে সুরেশের আছে ৬২২ কোটি রুপির সম্পদ। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ধনী প্রার্থী হেমা মালিনীর রয়েছে ২৭৮ কোটি রুপির সম্পদ।

 

এর আগে প্রথম দফার ভোটে ২৭৮ কোটি রুপির মালিক হিসেবে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ধনী প্রার্থীর রেকর্ড তৈরি করেছিলেন। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে সবচেয়ে দরিদ্র প্রার্থীর রেকর্ডও রয়েছে। মাত্র ৫০০ রুপি পকেটে নিয়ে মহারাষ্ট্রের নান্দের লোকসভা আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নির্দল প্রার্থী লক্ষণ নাগরাও।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের দাবি নিয়ে একটি মন্তব্যও তারা করেনি। অথচ এই কমিশনই মাত্র কয়েক দিন আগে এক বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্যে জন্য কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরযেওয়ালাকে ৪৮ ঘণ্টা প্রচার না করার শাস্তি দিয়েছিল। তাঁর অপরাধ, উত্তর প্রদেশের মথুরা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী হেমা মালিনীর বিরুদ্ধে তিনি কিছু ‘কুমন্তব্য’ করেছিলেন।

 

ইসির কাছে গত সোমবার দুটি আবেদন পৌঁছেছে। একটি ‘সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল’ নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে। তাতে সই করেছেন ২২০৯ বিশিষ্ট নাগরিক। ইসিকে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলে তারা জানিয়েছেন, যে ভাষায় মোদি কথা বলেছেন, তাতে বিশ্বের কাছে ‘গণতন্ত্রের ধাত্রী’র মর্যাদা হানি হয়েছে ভয়ংকরভাবে। দ্বিতীয় আবেদন পাঠিয়েছে ‘সংবিধান বাঁচাও নাগরিক অভিযান’ নামের আরেকটি সংগঠন। তাতে সই করেছেন ১৭ হাজার ৪০০ মানুষ। সেই আবেদনে বলা হয়েছে, এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের পাশাপাশি ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনও ভঙ্গ করেছেন। কারণ, ওই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শুধু সাম্প্রদায়িকতাতেই উসকে দেননি, মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের ঘৃণাও বাড়িয়ে দিয়েছেন।

 

এই সংগঠনের স্বাক্ষরদাতারা বলেছেন, কংগ্রেস দল, তাদের ইশতেহার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে মোদি শুধু নির্জলা মিথ্যাই বলেননি, মুসলমানদের তিনি অনুপ্রবেশকারী বলেছেন। অসম্মান করেছেন গাদা গাদা সন্তান উৎপাদন করে বলে। আবেদনে তারা বলেছেন, এখনই মোদিকে ভর্ৎসনা করা হোক। তাঁর প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক, যা এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে কমিশন করেছে। কিন্তু কমিশন অদ্ভুতভাবে নির্বিকার ও নিরুত্তর। এত গুরুতর মন্তব্যের পর ৪৮ ঘণ্টা কেটে গেলেও ব্যবস্থা গ্রহণ তো দূরের কথা, কোনো মন্তব্য পর্যন্ত তারা করেনি। দ্বিতীয় দফার নির্বাচন আগামী শুক্রবার।

 

আচরণবিধি অনুযায়ী, নির্বাচনী প্রচারে ধর্মের ব্যবহার অনৈতিক ও অন্যায় হলেও এবার রাম নবমীতে আসামে প্রচারে গিয়ে মোদি সরাসরি ধর্মের আধারে ভোট চেয়েছেন। সেদিন অযোধ্যা মন্দিরে ‘সূর্য তিলক’ অনুষ্ঠান ছিল। তার উল্লেখ করে ও ‘জয় শ্রীরাম ধ্বনি’ দিয়ে নির্বাচনী জনসভায় মোদি সবাইকে ওই সময় মুঠোফোনের আলো জ্বালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। জনসভার পর রামলালার কপালে পরা সূর্য তিলকের ছবি দিয়ে বিজেপির সরকারি ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে লেখা হয়েছিল, ‘আপনার একটি ভোটের ক্ষমতা এমনই।’

 

অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত বার্ষিক মানবাধিকার মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মণিপুরে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনায় এবং সাংবাদিক-ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর নির্যাতনের ‘উল্লেখযোগ্য’ প্রমাণ পেয়েছে। গত বছরের মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সংঘটিত দাঙ্গায় অন্তত ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ভারতের অন্যান্য অংশেও সরকার ও এর সমর্থকেরা গণমাধ্যম ও সরকারের সমালোচকদের ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি ও হয়রানি করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ২০২৩ সালে বিবিসি মোদি সরকারের সমালোচনামূলক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশের পর ভারতের আয়কর বিভাগ সংবাদমাধ্যমটির কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়েছে। ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা তাঁদের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য ছড়িয়ে সহিংসতার আহ্বান জানানোসহ নানা অভিযোগ করেছেন। তবে মোদি সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, তার নীতিমালা সব ভারতীয়র উপকারের লক্ষ্যেই প্রণীত।

 

মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর অভিযোগ, মোদির শাসনামলে জলবায়ু পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তাদের অভিযোগ, মোদির আমলে বিদ্বেষী বক্তব্য, মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রয়োগ এবং অবৈধ স্থাপনা অপসারণের নামে মুসলিম স্থাপনা ভেঙে ফেলার মতো কাজ করা হয়েছে।