০৩:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভিটামিন ডি সংকটে দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী

◉জটিল রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি দেখছেন চিকিৎসাবিদরা
◉নিয়মমতো সূর্যের আলো গ্রহণে এই ঘাটতি পূরণ সম্ভব

বিশ্বজুড়ে মানব শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি একটি বড় সমস্যা। এর অভাবে শরীরে বিভিন্ন ধরণের মারাত্মক অসুখ হতে পারে। বিশ্বের  ১ বিলিয়ন জনগোষ্ঠী ভিটামিন ডি’র ঘাটতিতে ভুগছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ভিটামিন ডি এর অভাব অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বর্তমানে দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী এই ঘাটতিতে ভুগছে। তবে, এই অবস্থা পরিবর্তনে ভিটামিন ডি বিষয়ক নীতিমালা তৈরির কথা বলছেন, সংশ্লিষ্টরা।
চিকিৎসকেরা বলছেন, ভিটামিন ডি’র অন্যতম প্রধান উৎস সূর্যের আলো। শুধু নিয়মমতো সূর্যের আলো শরীরে গ্রহণ করার মাধ্যমে এই ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যানুযায়ী, ভারতে ৫৯ শতাংশ, সৌদি আরবে ৬০ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ৭৩ শতাংশ। পুরো ইউরোপেই এই সমস্যাটি খুবই সচরাচরদৃষ্ট, উত্তরাংশে <২০ শতাংশ এবং বাকি অংশগুলোতে ৩০-৬০ শতাংশ মানুষের মধ্যে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা যায়।

রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটি বলছে, একটি হিসেবে দেখা যায় বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ শিশু ভিটামিন ডি এর অভাবে ভুগছে। আরেক গবেষণায় দেখা যায়, গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী ১-৬ মাস বয়সী শিশুদের এক-তৃতীয়াংশই ভিটামিন ডি এর অভাবে ভুগছে। শূণ্য থেকে এক বছর বয়সী ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ শিশুদের রক্তে ২৫ হাইড্রক্সি ভিটামিনের মাত্রা ডেফিশিয়েন্ট অর্থাৎ ২০ ন্যানোগ্রাম বা মিলিলিটারের নিচে এবং ৫২ দশমিক ২ শতাংশ শিশুদের মাঝে ইন্সাফিশিয়েন্ট অর্থাৎ ২০-৩০ ন্যানোগ্রাম বা মিলিলিটার। দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মাঝে ডেফিশিয়েন্ট এবং ইন্সাফিশিয়েন্ট এর হার যথাক্রমে ৩৮দশমিক দুই শতাংশ এবং ৫০ শতাংশ। উপরন্তু দেখা গিয়েছে, ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সীদের মাঝে এই ডেফিশিয়েন্সি ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ইন্সাফিশিয়েন্সি ৫১ দশমিক ৯ শতাংশ। ‘বাংলাদেশী জনগণের মাঝে ভিটামিন ডি এর অবস্থা’ নামক একটি গবেষণা বলছে, ৮৬ শতাংশ মানুষের হাইপোভিটামিনোসিস ডি রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. হারিসুল হক দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, হাড়, জয়েন্ট এগুলোর উন্নয়নের সাথে ভিটামিন ডি জড়িত। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও ভিটামিন ডি ভূমিকা রাখে। এটা আমরা করোনার সময় দেখেছি। আর আমাদের হৃদরোগীদের নিয়ে একটা গবেষণা আছে যেখানে আমরা দেখেছি, ভিটামিন ডি’র সংখ্যা কমে গেলে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায়। আমার হার্ট ফেইলিয়র রোগীদের দেখেছি, তাদের সবারই শরীরে ভিটামিন ডির ঘাটতি দেখা গেছে।

ভিটামিন ডি’র উৎস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভিটামিন ডি’র একটা ভাল সোর্স হচ্ছে সূর্যের আলো। স্বল্পালোকে যে সূর্য থাকে, সকাল ও বিকালের নরম রোদে ১৫-২০ মিনিট আমরা হাঁটতে বলি। চামড়ার মধ্যে এটা যেতে হবে এবং ভিটামিন ডি শরীরে যাবার পয়েন্টগুলো হচ্ছে ঘাড়, হাতের দুই বাহু, বুক, পেট। এই যে আমরা বিদেশীদের রোদ্রস্নান নিতে দেখি এটা শরীরে ভিটামিন নেয়ার একটা আদর্শ পন্থা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ড. বে-নজীর আহমেদ দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, সূর্যের আলো ছাড়াও কিছু খাদ্য আছে যেগুলোর মধ্যে ভিটামিন ডি বেশি। যেমন ডিম, এগুলো সবমিলিয়ে আমাদের শরীরের চাহিদাটা একেক জনের একেক রকম হয় সেই অনুযায়ী খাদ্যের পাশাপাশি, রোদ্র তো অবশ্যই একটা ফ্যাক্টর। সবমিলিয়ে যদি শরীরে ব্যালান্স না থাকে তাহলে সমস্যা হবে। সেই ঘটনাটা এখন ঘটছে। আমরা যে ব্যালান্স ডায়েটের কথা বলি, সেটার ঘাটতি আছে। আমরা হয়ত খাবার খাচ্ছি কিন্তু সুষম খাদ্য উপাদান যেটা যতটুকু উপাদান প্রয়োজন সেটা গ্রহণ করার ব্যাপারে আমাদের ঘাটতি আছে। একেকজন একেক গোষ্ঠী একেক ধরণের খাবার খায়, সেই খাবারে সুষম খাবারটা আসেনা। সুষম খাবারটা নিশ্চিত করতে পারলে ভিটামিন এ, সি, ডি এগুলোর ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।
ভিটামিন ডি’র ঘাটতি হলে তা পূরণ প্রসঙ্গে ডা. হারিসুল হক বলেন, যাদের শরীরে ঘাটতি আছে তাদের আমরা বলি, সূর্যের আলোতে থাকতে হবে। ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে এবং এখন ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণে ওষুধ পাওয়া যায়। ইনজেকশনও পাওয়া যায়, আবার ক্যাপসুল কিনতে পাওয়া যায়। রোগীকে তার চাহিদা অনুযায়ী এটা দিতে হবে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

ভিটামিন ডি সংকটে দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী

আপডেট সময় : ০৮:৫১:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ জুলাই ২০২৪

◉জটিল রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি দেখছেন চিকিৎসাবিদরা
◉নিয়মমতো সূর্যের আলো গ্রহণে এই ঘাটতি পূরণ সম্ভব

বিশ্বজুড়ে মানব শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি একটি বড় সমস্যা। এর অভাবে শরীরে বিভিন্ন ধরণের মারাত্মক অসুখ হতে পারে। বিশ্বের  ১ বিলিয়ন জনগোষ্ঠী ভিটামিন ডি’র ঘাটতিতে ভুগছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ভিটামিন ডি এর অভাব অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বর্তমানে দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী এই ঘাটতিতে ভুগছে। তবে, এই অবস্থা পরিবর্তনে ভিটামিন ডি বিষয়ক নীতিমালা তৈরির কথা বলছেন, সংশ্লিষ্টরা।
চিকিৎসকেরা বলছেন, ভিটামিন ডি’র অন্যতম প্রধান উৎস সূর্যের আলো। শুধু নিয়মমতো সূর্যের আলো শরীরে গ্রহণ করার মাধ্যমে এই ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যানুযায়ী, ভারতে ৫৯ শতাংশ, সৌদি আরবে ৬০ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ৭৩ শতাংশ। পুরো ইউরোপেই এই সমস্যাটি খুবই সচরাচরদৃষ্ট, উত্তরাংশে <২০ শতাংশ এবং বাকি অংশগুলোতে ৩০-৬০ শতাংশ মানুষের মধ্যে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা যায়।

রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটি বলছে, একটি হিসেবে দেখা যায় বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ শিশু ভিটামিন ডি এর অভাবে ভুগছে। আরেক গবেষণায় দেখা যায়, গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী ১-৬ মাস বয়সী শিশুদের এক-তৃতীয়াংশই ভিটামিন ডি এর অভাবে ভুগছে। শূণ্য থেকে এক বছর বয়সী ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ শিশুদের রক্তে ২৫ হাইড্রক্সি ভিটামিনের মাত্রা ডেফিশিয়েন্ট অর্থাৎ ২০ ন্যানোগ্রাম বা মিলিলিটারের নিচে এবং ৫২ দশমিক ২ শতাংশ শিশুদের মাঝে ইন্সাফিশিয়েন্ট অর্থাৎ ২০-৩০ ন্যানোগ্রাম বা মিলিলিটার। দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মাঝে ডেফিশিয়েন্ট এবং ইন্সাফিশিয়েন্ট এর হার যথাক্রমে ৩৮দশমিক দুই শতাংশ এবং ৫০ শতাংশ। উপরন্তু দেখা গিয়েছে, ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সীদের মাঝে এই ডেফিশিয়েন্সি ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ইন্সাফিশিয়েন্সি ৫১ দশমিক ৯ শতাংশ। ‘বাংলাদেশী জনগণের মাঝে ভিটামিন ডি এর অবস্থা’ নামক একটি গবেষণা বলছে, ৮৬ শতাংশ মানুষের হাইপোভিটামিনোসিস ডি রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. হারিসুল হক দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, হাড়, জয়েন্ট এগুলোর উন্নয়নের সাথে ভিটামিন ডি জড়িত। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও ভিটামিন ডি ভূমিকা রাখে। এটা আমরা করোনার সময় দেখেছি। আর আমাদের হৃদরোগীদের নিয়ে একটা গবেষণা আছে যেখানে আমরা দেখেছি, ভিটামিন ডি’র সংখ্যা কমে গেলে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায়। আমার হার্ট ফেইলিয়র রোগীদের দেখেছি, তাদের সবারই শরীরে ভিটামিন ডির ঘাটতি দেখা গেছে।

ভিটামিন ডি’র উৎস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভিটামিন ডি’র একটা ভাল সোর্স হচ্ছে সূর্যের আলো। স্বল্পালোকে যে সূর্য থাকে, সকাল ও বিকালের নরম রোদে ১৫-২০ মিনিট আমরা হাঁটতে বলি। চামড়ার মধ্যে এটা যেতে হবে এবং ভিটামিন ডি শরীরে যাবার পয়েন্টগুলো হচ্ছে ঘাড়, হাতের দুই বাহু, বুক, পেট। এই যে আমরা বিদেশীদের রোদ্রস্নান নিতে দেখি এটা শরীরে ভিটামিন নেয়ার একটা আদর্শ পন্থা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ড. বে-নজীর আহমেদ দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, সূর্যের আলো ছাড়াও কিছু খাদ্য আছে যেগুলোর মধ্যে ভিটামিন ডি বেশি। যেমন ডিম, এগুলো সবমিলিয়ে আমাদের শরীরের চাহিদাটা একেক জনের একেক রকম হয় সেই অনুযায়ী খাদ্যের পাশাপাশি, রোদ্র তো অবশ্যই একটা ফ্যাক্টর। সবমিলিয়ে যদি শরীরে ব্যালান্স না থাকে তাহলে সমস্যা হবে। সেই ঘটনাটা এখন ঘটছে। আমরা যে ব্যালান্স ডায়েটের কথা বলি, সেটার ঘাটতি আছে। আমরা হয়ত খাবার খাচ্ছি কিন্তু সুষম খাদ্য উপাদান যেটা যতটুকু উপাদান প্রয়োজন সেটা গ্রহণ করার ব্যাপারে আমাদের ঘাটতি আছে। একেকজন একেক গোষ্ঠী একেক ধরণের খাবার খায়, সেই খাবারে সুষম খাবারটা আসেনা। সুষম খাবারটা নিশ্চিত করতে পারলে ভিটামিন এ, সি, ডি এগুলোর ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।
ভিটামিন ডি’র ঘাটতি হলে তা পূরণ প্রসঙ্গে ডা. হারিসুল হক বলেন, যাদের শরীরে ঘাটতি আছে তাদের আমরা বলি, সূর্যের আলোতে থাকতে হবে। ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে এবং এখন ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণে ওষুধ পাওয়া যায়। ইনজেকশনও পাওয়া যায়, আবার ক্যাপসুল কিনতে পাওয়া যায়। রোগীকে তার চাহিদা অনুযায়ী এটা দিতে হবে।