যশোর নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজের অধ্যক্ষ (নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর) খুকু বিশ্বাস পদত্যাগ করেছেন। রোববার (১৮ আগস্ট) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে টানা কয়েক ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর তিনি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। এর আগে কলেজ ক্যাম্পাসে আন্দোলরতরা খুকু বিশ্বাসের নানা অনিয়ম ওদুর্নীতি তুলে ধরেন। পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে নার্সিং ইনস্ট্যাক্টর খুকু বিশ্বাস জানান, তাকে অবরুদ্ধ করে জোরপূর্বক পদত্যাগ পত্রে সই করানো হয়েছে।
জানা গেছে, সকাল ৯ টা থেকে শিক্ষার্থীরা দিকে কলেজের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন। পরে তারা বিভিন্ন স্লোগানের মধ্য দিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। এসময় কলেজ ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে তারা নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর ইনচার্জ খুকু বিশ্বাসের অফিস কক্ষের সামনে বিক্ষোভ করেন। আন্দোলনকারীরা কক্ষে ঢুকে তার চারপাশ ঘিরে রেখে পদত্যাগের স্লোগান দিতে থাকেন। তিনি পদত্যাগে সাড়া না দেয়ায় দুপুর ২ টা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলে। একপর্যায়ে খুকু বিশ্বাস পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। এসময় সেখানে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ ও সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। খুকু বিশ্বাসের পদত্যাগের পর ভারপ্রাপ্ত নার্সিং ইন্সট্রাক্টরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন আরজিনা খাতুন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, খুকু বিশ্বাস ২০২২ সালের ৩০ আগস্ট যোগদান করার পর থেকে নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। শিক্ষার্থীদের মাসিক স্টাইপেন্ডের (উপবৃত্তি) টাকা নানা অজুহাতে কেটে আত্মসাত করেন। বলা হয় কেটে নেওয়া টাকা সরকারের ফান্ডে জমা দেওয়া হয়। হোস্টেলের মেসে মেয়েরা মাসে ১০ দিন খেলেও পুরো মাসের জন্য ১৫০০ টাকা আদায় করা হয়। একজন শিক্ষার্থীর বাবা মারা যাওয়ার পরও তার ছুতি দিতে তালবাহানা করা হয়। এমনি তাকে বলা হয়, মাটি দিতে বলো দুই দিন পর কলেজ বন্ধ হলে বাসায় যেও।
আন্দোলনরতরা আরও জানান, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী আশিষের এক বয়স্ক কর্মচারীর সাথে অশ্লীল আচরণ করার লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও ইনস্ট্রাক্টর খুকু বিশ্বাস আশিষের পক্ষে কথা বলেছেন। কর্মচারী আশিষ রাতে ডিউটি করার সময় মাদক সেবনসহ নানা অনৈতিকতায় লিপ্ত থাকে। ছাত্রীরা লিখিত অভিযোগ দিলেও নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। অনিয়মের প্রতিবাদ করলেই ভাইভা ও ফরমেটিভ মার্ক কম দিবে এমন ভয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের দমন করেন।
তারা জানান, শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন ও খেলাধুলা বাবদ সরকারের বরাদ্দ অর্থের সিংহভাগ তছরুপ করা হয়। নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর খুকু বিশ্বাসের অত্যাচারে শিক্ষার্থীরা রীতিমতো অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন। ফলে তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামেন।
এই বিষয়ে নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর খুকু বিশ্বাস জানান, তার প্রতিষ্ঠানে ৪৫৪ জন শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত। প্রতিষ্ঠানের নিয়ম না প্রীতম বিশ্বাস, মিথিলা , রুনা খানম, সুরাইয়া বিনতে আনোয়ার, রমজান ও সায়মা গাজীসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে অর্ধশত শিক্ষার্থী মনগড়া অনিয়মের অভিযোগে আন্দোলন করেছেন। প্রতিষ্ঠানের সিংহভাগ শিক্ষার্থী আন্দোলনে যাননি। তিনি কোন ধরণের অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িত না দাবি করে বলেছেন, কিছু শিক্ষার্থী অফিস কক্ষে ঢুকে তার চারপাশ ঘিরে রাখে। এসময় তার কাছ থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া হয়। পদত্যাগের কপিটাও আন্দোলনরতরা লিখে আনেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে তদন্ত করলে সত্যতা বেরিয়ে আসবে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান জানান, আন্দোলনের সময় নার্সিং ইনস্ট্রাক্টরকে অবরুদ্ধ রাখার খবর শুনে সেখানে যান। তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথাও বলেছেন। কিন্তু তাদের একটাই দাবি ছিলো নার্সিং ইনস্ট্রাক্টরের পদত্যাগ। অন্যথায় তাদের শান্ত করা যাচ্ছিলোনা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ইনচার্জ খুকু রানী বিশ্বাস নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সাথে মুঠোফোনে কথা বলেন। পরে তিনি পদত্যাগ পত্রে সই করে আরেকজন ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর খুকু বিশ্বাসের পদত্যাগের কপি তিনি হাতে পেয়েছেন। উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে চিঠিটি মেইল করা হবে। তিনি আরও জানান, খুকু বিশ্বাস পদত্যাগ না করা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে ছিলেন।
























